পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
স্টালিন সরকার : সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া। চলার পথে প্রতিটি ক্ষেত্রে সময়ের প্রয়োজনে সংস্কার অত্যাবশ্যক। কিন্তু ১/১১ পরবর্তী সময়ে সংস্কারের নামে ‘মাইন্যাস টু ফর্মুলা’ হাজির করে কিছু রাজনীতিক সংস্কার শব্দটির ওপর কাঁদা লেপ্টে দিয়েছেন। এখন সংস্কারবাদী নাম শুনলে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতাদেরতো বটেই সাধারণ মানুষের মুখ থেকে মনের অজান্তে বেরিয়ে আসে ‘দালাল’ ‘বেঈমান’ ‘বিশ্বাসঘাতক’ শব্দ। সংস্কার শব্দটি কার্যত এখন গালিতে পরিণত হয়েছে। তারপরও ১/১১ পট-পরিবর্তনের পর কেউ পরিস্থিতির শিকার, কেউ ইচ্ছা-অনিচ্ছায় সংস্কারবাদী হন। ২০০৭ সালের ৭ মার্চ তারেক রহমানকে গ্রেফতার এবং একই বছর ৩ সেপ্টেম্বর খালেদা জিয়া ও তাঁর ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোকেও গ্রেফতারের পর বিএনপির যারা হঠাৎ করে সংস্কারবাদী হন তাদের প্রতি বিএনপি তৃণমূলের ঘৃণা এখনো কমেনি। তবে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক শক্তির অর্জনের কৌশল আবশ্যক। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করেন এমন এক রাষ্ট্রবিজ্ঞানীর মতে, দলকে শক্তিশালী করার স্বার্থে পরিস্থিতির শিকার হয়ে যারা সংস্কারবাদী হয়েছেন তাদের ব্যাপারে বিএনপির নমনীয় হওয়া উচিত। তবে যারা এখনো খালেদা-তারেক মাইন্যাস বিএনপির স্বপ্ন দেখছেন তাদের ব্যাপারে সতর্ক থাকা আবশ্যক।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ, মাঠের বিরোধী দল বিএনপি ও জাতীয় সংসদের গৃহপালিত বিরোধী দল জাতীয় পার্টির কাউন্সিলের প্রস্তুতি চলছে। ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন নিয়ে তিন দলের তৃণমূলের নেতাদের ব্যস্ততার মধ্যেই কাউন্সিল নিয়ে দৌড়ঝাঁপ চলছে।
সংসদের ভিতরের দল দু’টির কাউন্সিল নিয়ে দলের অভ্যন্তরের নেতাদের মধ্যে উৎসাহ উদ্দীপনা থাকলেও বিএনপির কাউন্সিল নিয়ে নেতাকর্মীদের পাশাপাশি জল্পনা কল্পনা সাধারণ মানুষের মধ্যেও লক্ষণীয়। কারণ স্থান না পেলে নির্ধারিত সময়ে কাউন্সিল হবে কিনা এবং কাউন্সিল হলেও দলটির কোমর সোজা করে দাঁড়াতে পারবে কিনা তা নিয়ে সংশয় রয়ে গেছে। দলটির সাংগঠনিক শক্তি অর্জনের ওপর নির্ভর করছে আগামী দিনের রাজনীতি। ফলে দেশের সবচেয়ে বেশি জনসমর্থিত রাজনৈতিক দল বিএনপির নেতাকর্মীদের উৎসাহ উদ্দীপনার পাশাপাশি দলের সংস্কারবাদী হিসেবে পরিচিতরাও বেশ আশাবাদী। ওরা ১/১১ পট-পরিবর্তনের পর মাইন্যাস টু ফর্মুলায় নিজেদের জড়ানোয় সংস্কারবাদী হিসেবে পরিচিতি পান। আবদুল মান্নান ভূঁইয়ার পক্ষে অবস্থান নিয়ে সংস্কারের নামে নীল নকশা করে শীর্ষ নেত্রী খালেদা জিয়াকে ‘মাইন্যাস’ করার প্রস্তাব দেন। এতে কেন্দ্র থেকে শুরু করে দলটির শেকড়ের নেতারা তাদের ওপর (সংস্কারবাদী) ক্ষুব্ধ। যার জন্য নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ১০৫ জন সিটিং এমপিকে বিএনপি মনোনয়ন দেয়নি। শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের সংস্কারবাদী এবং র্যাটস খ্যাতদের ক্ষমা না করলেও দলকে শক্তিশালী রাখতেই তাদের প্রার্থী করার কৌশল গ্রহণ করেন। অতঃপরের ইতিহাস সবার জানা।
বিএনপির জাতীয় কাউন্সিলকে কেন্দ্র করে সংস্কারবাদী হিসেবে পরিচিত নেতাদের দৃষ্টি এখন বেগম খালেদা জিয়ার দিকে। তারা তাকিয়ে রয়েছেন বেগম জিয়া তাদের ব্যাপারে কি সিদ্ধান্ত নেন সেটা জানতে। ওয়ান-ইলেভেনের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে দলে সংস্কারের প্রস্তাব দিয়ে বিএনপি থেকে ছিটকে পড়েন সে সময়ের এক নম্বর যুগ্ম মহাসচিব আশরাফ হোসেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) জেড এ খান, মোফাজ্জল করিম, সাবেক প্রতিতমন্ত্রী শাহ মো. আবুল হোসাইন, কেন্দ্রীয় তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক জহিরউদ্দিন স্বপন, দপ্তর সম্পাদক মফিকুল হাসান তৃপ্তি, কেন্দ্রীয় নেতা সরদার সাখাওয়াত হোসেন বকুল, নারায়ণগঞ্জের আতাউর রহমান আঙ্গুর, সুনামগঞ্জ জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি নজির হোসেন, বগুড়ার ডা. জিয়াউল হক মোল্লা, জিএম সিরাজ, কাজী রফিকুল ইসলাম, কক্সবাজারের প্রকৌশলী শহিদুজ্জামান, ময়মনসিংহের দেলোয়ার হোসেন দুলু, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আনোয়ার হোসেন, চাঁদপুরের এসএ সুলতান টিটু, বরগুনার নূরুল ইসলাম মনি, শামীম কায়সার লিঙ্কন, মোশাররফ হোসেন মঙ্গু, বরগুনার ইলেন ভুট্টো, চট্টগ্রামের এমএ জিন্নাহ, কুমিল্লার শাহরিয়ার আখতার বুলু, শাম্মী শেরসহ প্রায় দেড় শতাধিক নেতা। এদের অধিকাংশই জাতীয় সংসদের এমপি ছিলেন। তারা দলের মহাসচিব আবদুল মান্নান ভূঁইয়ার অনুসারী হিসেবে ১/১১ সরকারের নীল নকশা বাস্তবায়নের মাধ্যমে বেগম খালেদা জিয়াকে মাইন্যাস করার কৌশলে শামিল হন। এদের মধ্যে আবার বিভিন্ন ‘প্রজাতি’ রয়েছে। কেউ বাধ্য হয়েই সংস্কারবাদী হন, কেউ ইচ্ছা করে সংস্কারবাদী হন, কেউ পরিস্থিতির শিকার হয়ে সংস্কারবাদী হন, আবার কেউ অতি উৎসাহী হয়ে বেগম জিয়াকে মাইন্যাস করার লক্ষ্যে সংস্কারের ফর্মুলা হাজির করেন। পরবর্তীতে বিএনপি থেকে ছিঁটকে পড়লেও সরকারের নানা টোপ ও ভয়ভীতিতেও এরা বিএনপির বাইরে যাননি। নাজমুল হুদার প্রলোভনে পা দেননি। দীর্ঘদিন থেকে নিষ্ক্রিয় থাকলেও বিএনপির রাজনীতি থেকে সরে যাননি। এদের মধ্যে দু’একজন এখনো তথাকাথিত সংস্কারবাদী হিসেবে বেগম জিয়া ও তারেক মাইন্যাস বিএনপির স্বপ্ন দেখছেন। সংরক্ষিত আসনের একজন সাবেক মহিলা এমপির স্বামীর (বিএনপির দলীয় মুখপত্রের সম্পাদক ছিলেন) এখনো সংস্কারের নামে বেগম জিয়া ও তারেক মাইন্যাস বিএনপির স্বপ্নে বিভোর। টকশোর বক্তব্য ও তার লেখালেখিতে এমন ভাব যে বেগম জিয়া দূরের কথা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের চেয়েও বেশি মেধাবী নেতা ছিলেন আবদুল মান্নান ভূঁইয়া। আশরাফ আলীসহ সংস্কারবাদীদের এই মনোভাবাপন্ন আরো দু’চারজন রয়েছে। কিন্তু অধিকাংশ নেতার নিষ্ক্রিয় থাকলেও তাদের ধ্যানজ্ঞান বিএনপির রাজনীতি ঘিরেই। আর ব্যারিষ্টার নাজমূল হুদা ও শহিদুল হক জামালের নানা ফন্দিফিকির করেও এদের নিজের পক্ষে ভিড়াতে পারেননি। সংস্কারপন্থি হিসেবে পরিচিত এসব কেন্দ্রীয় নেতা ও সাবেক সংসদ সদস্যদের মধ্যে বড় একটি অংশ এখনো বিএনপিতে ফেরার ব্যাপারে আগ্রহী। তাদের দাবি পরিস্থিতির শিকার হয়েই তারা সংস্কারবাদী হন। এখন রয়েছেন দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ডাকের অপেক্ষায়। তাদের কেউ কেউ প্রত্যাশা করছেন বিএনপির আসন্ন ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিলে ডাক পড়বে। কিন্তু এখনো ডাক পড়েনি। সংস্কারবাদী হিসেবে পরিচিত একজন নেতা আক্ষেপ করে বলেন, ১/১১ পর আমরা মামলা-জেল থেকে বাঁচতে যেমন সংস্কারবাদীর খাতায় নাম লিখিয়েছিলাম। বর্তমানে অনেক সক্রিয় নেতাও গত কয়েক বছর বেগম জিয়ার আন্দোলনে সক্রিয় না হয়ে সরকারের সঙ্গে সমঝোতা করেছে। বেগম জিয়া আন্দোলনের ডাক দেন অথচ ওই নেতারা পালিয়ে থাকেন, সরকারী দলের নেতাদের সঙ্গে ব্যবসা করেন এবং তাদের সঙ্গে সমঝোতা করেন। যার কারণে দেশের শতকরা ৮০ মানুষ বেগম জিয়ার প্রতি সমর্থন দিলেও আন্দোলন সফল হয়নি। আমরা জেল জুলুমের ভয়ে মান্নান ভূঁইয়ার ফাঁদে পা দিয়ে অপরাধ করে থাকলে ওরা করেনি? ওদের কারণে বেগম জিয়ার ৯৩ দিনের কর্মসূচি প্রশ্নবিদ্ধ। মানুষ রাস্তায় নেমেছিল; অথচ যাদের হাতে নেতৃত্ব ছিল তারা পালিয়ে থেকেছে। ওরা এখন দলে থাকতে পারলে আমরা পারবো না কেন? আমরাতো সরকারের নানা প্রলোভনেও বিএনপি ছেড়ে যাইনি। বাম দল থেকে বিএনপিতে এসে এমপি হয়েছিলেন এমন এক নেতা বলেন, আমরা চাই বাংলাদেশে বহুদলীয় গণতন্ত্রের চর্চা হোক। সে জন্য প্রয়োজন আওয়ামী লীগের পাশাপাশি শক্তিশালী একটি বিএনপি। আর এ লক্ষ্যেই আমরা বিএনপির হয়ে কাজ করতে চাই। আমাদের আগ্রহের কথাও বিএনপির নীতি নির্ধারকদের জানিয়েছি। দেখা যাক ম্যাডাম কি সিদ্ধান্ত দেন। তবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সংস্কারপন্থিদের একটি অংশ বিএনপিতে আর ফিরতে চায় না। আসন্ন জাতীয় কাউন্সিল নিয়ে তাদের কোনো আগ্রহ নেই। বরং সরকারকে খুশি করতে এবং সরকারের আনুকুল্য পেতে এখনো বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান মাইন্যাস বিএনপির স্বপ্ন দেখেন। এ নিয়ে লেখালেখি করেন; টকশোতে গলাবাজী করছেন। কিন্তু সংস্কারবাদীদের বড় অংশ মনে করেন তারা নিছক পরিস্থিতির শিকার। কেউ কেউ নিজেদের বোকামীর কথাও জানান। ’৯১ সালে সিপিবি থেকে এমপি হয়ে পরবর্তীতে বিএনপিতে যোগদান করেন এমন এক নেতা দুঃখ করে বলেন, আমি পরিস্থিতির শিকার। আমি কখনই দায়ী ছিলাম না। বিএনপির কর্মী হিসেবে মরতে চাই। দল আমাকে ভুল বুঝলেও আমি দলের হয়ে নীরবে কাজ করেছি। ভবিষ্যতেও করব। সংস্কারবাদী হিসেবে পরিচিত ওই নেতা আক্ষেপ করে বলেন, এক-এগারোর পট পরিবর্তনের পর বিএনপিতে সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছিলেন দলের সাবেক মহাসচিব আব্দুল মান্নান ভূঁইয়া। মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ ছিলেন সংস্কারবাদীদের মহাসচিব। সংস্কারের উদ্যোগের কারণে মান্নান ভূঁইয়া মহাসচিব পদ হারালেও হাফিজ উদ্দিন আছেন বহাল তবিয়তে। গত নির্বাচনে দল থেকে মনোনয়নও পেয়েছিলেন। এখন তিনি দলের ভাইস চেয়ারম্যান। ওই সংস্কারবাদী নেতার অক্ষেপ খালেদা মাইন্যাস ষড়যন্ত্রে ছিলেন এমন অনেকে এখন বিএনপিতে ভাল অবস্থানে আছেন। আমরা কী দোষ করলাম? ‘অতীত’ ভুলে দলকে শক্তিশালী ও গতিশীল করা সময়ের দাবি। আমরা দেশনেত্রীর ডাকের অপেক্ষায় রয়েছি।
হামলা-মামলা, জেল-জুলুম নির্যাতনের কারণে বিএনপি নেতারা নিত্যদিন অভিযোগ করে থাকেন ক্ষমতাসীনরা জাতীয়তাবাদী ও ইসলামী মূল্যবোধে বিশ্বাসী মানুষের দল বিএনপিকে কার্যত ধ্বংসের চেষ্টায় রত। এ অবস্থায় বিভেদ-বিসম্বাদ নয়; ফুল খেলায় মেতে থাকা নয় বরং দলকে সুসংগঠিত শক্তিশালী করাই শ্রেয়। কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায় লিখেছেন, ‘প্রিয়, ফুল খেলবার দিন নয় অদ্য/ ধ্বংসের মুখোমুখি আমরা’। বর্তমান পরিস্থিতিতে বিএনপির জন্য এ কবিতাটি খুবই প্রাসঙ্গিক বটে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।