পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
স্টাফ রিপোর্টার: জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতা মীর কাসেম আলীর বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও প্রসিকিউটরকে এনে আসামির সঙ্গে কাঠগড়ায় দাঁড় করানো উচিত বলে মন্তব্যে করেছেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এস কে) সিনহা। তিনি রাষ্ট্রের প্রধান আইনজীবী অ্যাটর্নি জেনারেলকে উদ্দেশ করে বলেছেন, এ মামলা আপনারা কোনো রকম দায়সারাভাবে পরিচালনা করে যাচ্ছেন। এটি দুঃখজনক। মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদ-াদেশ পাওয়া মীর কাসেম আলীর মামলার শেষ দিনের শুনানিতে গতকাল বুধবার প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের বেঞ্চে শেষ দিনের মতো শুনানিকালে প্রধান বিচারপতি এসব কথা বলেন। একই সঙ্গে জামায়াতের এই নেতার আপিলের রায় ৮ মার্চ ঠিক করেছেন প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের আপিল বেঞ্চ।
প্রধান বিচারপতির জবাবে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, মীর কাসেম আলী একজন মানিম্যান (টাকাওয়ালা)। মামলা থেকে বাঁচার জন্য অনেক জয়াগায় টাকার ব্যবহার করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের কাসেডিয়ান অ্যাসোসিয়েটস লবিস্ট ফার্মের সঙ্গে তিনি ২৫ মিলিয়ন ডলারের বিনিময়ে চুক্তি করেছেন মর্মে লিখিত একটি নথি রয়েছে। এ সময় লিখিত নথিটি তিনি আদালতে উপস্থাপন করেন। পরে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আপনারা তাহলে এ বিষয়ে মানি লন্ডারিং আইনে মীর কাসেম আলীর বিরুদ্ধে মামলা করেননি কেন?’ জবাবে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, দুদকের কাছে এ সংক্রান্ত একটি আবেদন করা হয়েছে।
এ সময় মীর কাসেম আলীর আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন দাঁড়িয়ে বলেন, ‘মাই লর্ড, দুদকের কাছে এ বিষয়ে আবেদন জমা পড়লে দুদক তদন্ত করে দেখে এটি ভুয়া ও মিথ্যা তথ্য। এ কারণে দুদক আবেদনটি বাতিল করেছে।’
প্রধান বিচারপতি অ্যাটর্নি জেনারেলকে বলেন, অপর একটি মামলায় (দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর) বরিশাল গিয়ে তথ্য সংগ্রহ করেছেন। কিন্তু এ মামলায় কোনো ভালো তথ্য দিতে পারলেন না। জবাবে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘আমি নিজে গিয়ে পিরোজপুরে তথ্য সংগ্রহ করেছি। কিন্তু প্রসিকিউশন ও তদন্ত কর্মকর্তা কেন পারল না, বুঝলাম না। তবে মীর কাসেম আলী আল-বদর নেতা হিসেবে ঘটনায় জড়িত ছিলেন। এটা সত্য কথা। তাদের পরিকল্পনা অনুযায়ী হত্যা করা হয়।
প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘১৯৭১ সালের ২৪ নভেম্বর ডালিম হোটেলে যে হত্যাকা- হয় সে সময়তো আপনাদের দেওয়া পত্রিকার কাটিংয়ে মীর কাসেম আলী ঢাকায় ছিলেন বলে উল্লেখ রয়েছে। তাহলে সে চট্টগ্রামে গেল কীভাবে?’ জবাবে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, তখন তো ট্রেন চলাচল ব্যবস্থা চালু ছিল। হয়তো ট্রেনে গেছেন।
প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘দেশে তখন রাস্তাঘাটের অবস্থা ভালো ছিল না।
নৌপথে মানুষ চলাচল করত। ১৯৭১ সালের ২৩ তারিখ ঢাকার সমাবেশে বক্তব্য দিয়েছেন মর্মে পত্রিকায় সংবাদ রয়েছে। তাহলে মীর কাসেম আলী কি চট্টগ্রামে হেলিকপ্টারে গেছে?’ অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘পাকিস্তানি বাহিনীর সহায়তায় যেতেও পারে।’
প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বা সাক্ষীও বলেননি মীর কাসেম আলী ১৯৭১ সালের ২৪ নভেম্বর চট্টগ্রামে ছিলেন। এসব তো আপনারা তাদের দিয়েও বলাতে পারতেন।’ অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, আল-বদর বাহিনীর নেতা হিসেবে মীর কাসেম আলী যা কমান্ড করত তাই হতো।
প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘কমান্ডের প্রয়োজন হতো না। ওই সময় যার হাতে একটি বন্দুক ছিল, সে ক্ষমতাবান হয়ে যেত। যে রাজাকার যত বেশি কিলিং মিশন করত, সে তত বেশি জনপ্রিয় হয়ে উঠত। তবে আপনারা প্রসিকউশন টিম এ মামলা একেবারে দায়সারাভাবে উপস্থাপন করেছেন, যা দুঃখজনক। ট্রাইব্যুনালের অন্য কোনো মামলায় এত দুর্বল তথ্য ছিল না।’
অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, ‘মীর কাসেম আলী যে একজন আল-বদর বাহিনীর নেতা হিসেবে অপরাধ করেছেন এতে কোনো সন্দেহ নেই। আমি আশা করি তার সর্বোচ্চ সাজা বহাল থাকবে।’
এরপর আসামিপক্ষের আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন ও এস এম শাহজাহান ২০ মিনিট কথা বলেন। এ সময় খন্দকার মাহবুব হোসেন মীর কাসেম আলীর পক্ষে বলেন, ‘মাই লর্ড, ১৯৭১ সালের ৭ নভেম্বরের আগ পর্যন্ত আমি মীর কাসেম আলী চট্টগ্রামে ছিলাম। মুক্তিযুদ্ধের এত বিশাল সময়ে আমার বিরুদ্ধে একটি অভিযোগও আনা হয়নি। ওই সময়ে আমি চট্টগ্রাম বিভাগের ছাত্র সংঘের সভাপতি ছিলাম। পরে ১৯৭১ সালের ৬ নভেম্বর থেকে ঢাকাতে থাকি। কেননা তখন আমি ছাত্রসংঘের কেন্দ্রীয় সেক্রেটারি জেনারেল নির্বাচিত হলাম। ৭ নভেম্বরের পর থেকে চট্টগ্রামে ছাত্রসংঘের দায়িত্বে ছিল আবু তাহের নামে অপর ব্যক্তি। আমি ডালিম হোটেলে যাব কীভাবে?’
প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘মীর কাসেম আলীর ভাগ্য ভালো দারোগা (তদন্ত কর্মকর্তা) বলেনি সে জড়িত ছিল। আমরা কারো পক্ষে বলছি না। বিচারকরা অন্ধ। আমরা নথি দেখে রায় দেব।’
খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, ‘সাক্ষী ও তদন্ত কর্মকর্তারা সঠিক কোনো তথ্য দিতে পারেননি। সুতরাং মীর কাসেম আলীকে বেকসুর খালাস দেওয়া হোক।’
প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘একেবারে বলবেন না দ- দেওয়া যাবে না। বরং এটা বলেন মৃত্যুদ- যেন দেওয়া না হয়। কেননা, ১৯৭১ সালে কমান্ড রেসপনসিবলিটি বলতে কোনো আইন ছিল না। বরং যার হাতে বন্দুক ছিল সে ক্ষমতাবান।’ প্রধান বিচারপতির ওই বক্তব্যের পর শুনানি শেষে ৮ মার্চ রায়ের দিন ধার্য করা হয়। প্রথমে ২ মার্চ রায়ের দিন ধার্য করা হয়েছিল।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।