পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
নূরুল ইসলাম : রাজধানীর গুলিস্তান, মতিঝিল ও আশপাশের এলাকার ফুটপাথের দোকানগুলো থেকে আবারও চাঁদা তোলা হচ্ছে। চিহ্নিত চাঁদাবাজ সেই লাইনম্যানরাই ফুটপাথের হকারদের কাছে থেকে আগের মতোই চাঁদা আদায় করছে। চাঁদা না দিলে সন্ত্রাসী দিয়ে হকারদের হুমকি-ধমকি ও মারধর করা হচ্ছে বলে গতকাল বুধবার বেশ কয়েকজন হকার অভিযোগ করেছেন। তারা জানান, বিষয়টি পুলিশকে তারা জানিয়েছেন। কিন্তু পুলিশ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গত মঙ্গলবার ডিএসসিসির দু’জন কর্মকর্তা তালিকাভুক্ত চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে মামলা করতে গেলে পুলিশ এজাহারে ত্রুটি আছে বলে তা ফিরিয়ে দিয়েছে। গতকাল সেই ত্রুটিগুলো সংশোধন করে মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে মতিঝিল ও পল্টন থানার ডিউটি অফিসাররা তা নিশ্চিত করতে পারেননি। তবে ডিএসসিসির একজন কর্মকর্তা জানান, চিহ্নিত চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে মামলা অবশ্যই হবে। চাঁদাবাজদের সংখ্যা ৮০ জনের উপরে বলে ওই কর্মকর্তা জানান, মতিঝিল, পল্টন ও শাহবাগ থানায় পৃথক তিনটি মামলা হবে।
ফুটপাতের চাঁদাবাজির কাঁচা টাকার লোভ সামলানো এতো সহজ নয়। প্রতিদিন লাখ লাখ টাকা কে ছাড়তে চায় বলেন, গুলিস্তানের হকার তোরাব আলী এভাবেই শুরু করলেন। বললেন, এখানে রাত-দিন বলে কিছু নেই। সবই সমান। আগের মতোই চাঁদা দিতে হচ্ছে। টাকার পরিমাণও ওই আগেরটাই। এক পয়সাও ছাড় নাই। দিনের বেলায় বেচাকেনা বেশি হতো। এজন্য ২শ’ টাকা থেকে শুরু করে ঈদ মৌসুমে ৬শ’ টাকাও দিয়েছি। গায়ে লাগেনি। এখন বেচাকেনা খারাপ। এখনও যদি সেই আগের মতো চাঁদা দিতে হয় তাহলে আমরা যাবো কোথায়। কারা চাঁদা নিচ্ছে জানতে চাইলে তোরাব আলী বলেন, আগে যারা নিতো তারাই। নতুন মানুষতো আর আসে নাই। কথা হয় বায়তুল মোকাররম মসজিদের স্বর্ণের মার্কেটের সামনের ফুটপাতের এক হকারের সাথে। পত্রিকায় নাম লেখা হলে কালকেই আবার ঝামেলায় পড়বেন জানিয়ে তিনি নাম গোপন রাখার অনুরোধ করেন। এই হকার জানান, আগেও এই ফুটপাথের দোকান থেকে চাঁদা তুলতো চাঁটগাইয়া বাবুল, এখনও সেই তোলে। চাঁদা না দিলে মাস্তান দিয়ে ভয়ভীতি দেখায় মারধর করে। গুলিস্তানের আরও দু’জন হকার জানান, গুলিস্তান থেকে হকারদের উচ্চেদের প্রতিবাদে আন্দোলন চলছে। সেই আন্দোলনের দোহাই দিয়েও টাকা তোলা হচ্ছে। বলা হচ্ছে, সভা-সমাবেশ করতে টাকা লাগে। উপরের মহলে ম্যানেজ করার জন্যও টাকা দরকার। তোমরা টাকা না দিলে এগুলো কীভাবে করবো।
চাঁদাবাজির কারণে গুলিস্তান, মতিঝিলসহ পুরো এলাকাকে বলা হতো টাকার খনি। এই এলাকার ফুটপাথ থেকে প্রতিদিন প্রায় ৬ লাখ টাকা চাঁদাবাজি হতো। মাস শেষে যার পরিমাণ দাঁড়ায় ১ কোটি ৮০ লাখ টাকা। এই টাকা যেতো রাজনৈতিক নেতা, পুলিশ, মাস্তান, প্রভাবশালী ও লাইনম্যানদের পকেটে। এ কারণে ফুটপাত উচ্ছেদ করতে গেলেই প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন গুলিস্তান, মতিঝিল, পল্টনসহ আশপাশের এলাকার ফুটপাতের দোকান উচ্ছেদের জন্য কঠোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। যে কোনো মূল্যে তিনি দিনের বেলায় ফুটপাতগুলোকে হকারমুক্ত রাখতে চান। মেয়রের এ সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে হকার্স নামধারী বেশ কয়েকটি সংগঠন সভা-সমাবেশ অব্যাহত রেখেছে। অথচ এসব সংগঠনের কোনো রেজিস্ট্রেশন নেই। নিবন্ধিত ৫টি হকার্স সংগঠন ইতোমধ্যে মেয়রের সিদ্ধান্তকে মেনে নিলেও যাদের নিবন্ধন নেই তারা উল্টো মেয়রের বিরুদ্ধে স্লোগান দিয়ে বেড়াচ্ছে। এদের নেপথ্যে রয়েছে চাঁদাবাজ লাইনম্যানরা। ডিএসসিসি সূত্র জানায়, ইতোমধ্যে চিহ্নিত চাঁদাবাজদের তালিকা করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির মামলা প্রক্রিয়াধীন। এদেরকে কোনোভাবেই ছাড় দেয়া হবে না।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, গুলিস্তানের ৩০টি ফুটপাথে আগেও ৩০ জন লাইনম্যান চাঁদা তুলত। প্রতিটি লাইনম্যানের আবার একজন করে সহকারী আছে। লাইনম্যান ও তাদের সহকারী মিলে ৬০ জনের আবার একজন নেতা, একজন ক্যাশিয়ার ও একজন সহকারী আছে। ৬০ জনের এই নেতার নাম বাবুল। ক্যাশিয়ার দুলাল এবং তাদের সহকারীর নাম আমীন। ৬৩ জনের এই সিন্ডিকেটকে রক্ষার জন্য রাজনৈতিকভাবে সরকার সমর্থক একটি সংগঠনও বানানো হয়েছে। যার সভাপতি আবুল হাশেম কবীর। এরা বরাবরই ফুটপাত উচ্ছেদের বিপক্ষে ছিল। আলাপকালে একজন হকার বলেন, যানজটে রাজধানীবাসীর জান গেলেও এসব লাইনম্যানদের কিছুই আসে যায় না। দিন শেষে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে এরা অভ্যস্ত। তাই ফুটপাথের মায়া ছাড়তে পারে না। গত মাসে ফুটপাথে উচ্ছেদ অভিযান শুরু হলে এই চাঁদাজি বন্ধ হয়ে যায়। এই শোকে একজন লাইনম্যান হার্টএটাক করে মারা গেছে জানিয়ে এক হকার বলেন, আরও একজনের অবস্থা খারাপ।
গুলিস্তান, মতিঝিলসহ আশপাশের এলাকায় ফুটপাথের চাঁদাবাজদের তালিকা করেছে ডিএসসিসি। ওই তালিকায় যাদের নাম আছে তারা হলো, আমীর হোসেন, ভোলা, কানা সিরাজ, লম্বা হারুন, হারুনের শ্যালক দেলোয়ার, খোরশেদ, হাসান, হিন্দু বাবুল, রব, সুলতান, লিপু, মনির, তরিক আলী, আখতার, জাহাঙ্গীর, কালা নবী, সর্দার ছালাম, শহীদ, দাড়িওয়ালা সালাম, আলী মিয়া, কাদের, খলিল, কোটন, জাহাঙ্গীর, নসু, তমিজ উদ্দিন, বাবুল ভূঁইয়া, সাজু, কবির হোসেন, সাইফুল মোল্লা, ঘাউরা বাবুল ও বিমল। কিছুদিন চাঁদাবাজি বন্ধ থাকার পর এরা রাতের হকারদের কাছে থেকে আবারও চাঁদা আদায় করছে। হকারদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, উচ্ছেদ অভিযান শুরু হলে এরা তৎপর হয়ে ওঠে। সরকারদলীয় রাজনৈতিক নেতাদের কাছে দৌড়ঝাঁপ শুরু করে। এমনকি উচ্ছেদ অভিযান প- করার জন্য তারা ‘মাস্তান’ বাহিনীও ঠিক করে রাখে। এজন্য এরা লাখ লাখ টাকা খরচ করতেও দ্বিধা করে না। এবারও তাই করেছে। কিন্তু কোনোভাবে উচ্ছেদ বন্ধ করতে না পেরে এখন রাতেই চাঁদাবাজি শুরু করেছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।