Inqilab Logo

শুক্রবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

গ্রিক মূর্তি স্থাপন মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সংবিধান সংস্কৃতির সাথে সাংঘর্ষিক-শীর্ষ আলেম ও ওলামালীগ নেতৃবৃন্দ

মূর্তি স্থাপনের পক্ষের বিবৃতির নিন্দা

| প্রকাশের সময় : ৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

স্টাফ রিপোর্টার : সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে গ্রীক দেবী মূর্তি স্থাপনের তীব্র প্রতিবাদ করে ওলামালীগ ও ১৩ দলসহ ইসলামী নেতৃবৃন্দ বলেছেন, গ্রীক মূর্তি স্থাপন ইসলাম ধর্মের এমনকি বাঙালী সংস্কৃতিও নয়। বরং এদেশের সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক এমনকি রাষ্ট্রধর্ম ইসলামের সাথেও সাংঘর্ষিক। এটা সংবিধানের ২ (ক), ১২ এবং ২৩ অনুচ্ছেদের সম্পূর্ণ বিরোধী। ১৯৪৮ সালে সুপ্রিম কোর্ট প্রতিষ্ঠার পর থেকে যখন কোন মূর্তি ছিল যখন মূর্তি ছিল না যখন কি সুপ্রিম কোর্টে ন্যায় বিচার হয়নি? এটা সরকারের বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্র। সরকারের বিরোধী আন্দোলনের সুযোগ করে দিতেই এ ষড়যন্ত্র। অবিলম্বে মূর্তি অপসারণ করতে হবে।
এদিকে দেশের আলেম-ওলামা কর্তৃক সুপ্রিম কোর্টের সামনে মূর্তি স্থাপনের প্রতিবাদের বিরোধিতা করে নাস্তিক্যবাদী চেতনার ধারকবাহক ও ইসলামবিদ্বেষী বাম ও হিন্দু নেতাদের সাম্প্রতিক বক্তব্যের তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন নেতৃবৃন্দ। নেতৃবৃন্দ বলেছেন, এরা সকলেই ইসলামবিদ্বেষী এবং ইসলামধর্ম সম্পর্কে অজ্ঞ ও কুখ্যাত। সবসময় ইসলামের বিপক্ষে তাদের অবস্থান। রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম, পাঠ্যপুস্তক থেকে হিন্দুত্ববাদী লেখা বাদ দেয়া এবং অপসংস্কৃতির ধারক ভারতসহ সকল বিদেশী চ্যানেল নিষিদ্ধ করার বিপক্ষে তাদের অবস্থান।
বিবৃতিদাতারা হলেন, মাওলানা, মুফতি আব্দুর রহিম (পীর সাহেব) শেরপুর, বাংলাদেশ আওয়ামী ওলামা লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ মাওলানা মুহম্মদ আখতার হুসাইন বুখারী, সাধারণ সম্পাদক- আলহাজ কাজী মাওলানা মুহম্মদ আবুল হাসান শেখ শরীয়তপুরী, সম্মিলিত গবেষণা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ হাফেজ মাওলানা মুহম্মদ আব্দুস সাত্তার, মিরপুর নূর-এ মদীনা চিশতীয়া দরবারের পীর সাহেব মাওলানা মুজিবুর রহমান চিশতি, পীরজাদা মাওলানা সিরাজুল ইসলাম (হবিগঞ্জ), মাওলানা মুহম্মদ শওকত আলী টাঙ্গাইল, মাওলানা তাজুল ইসলাম (বড়নগরী) বাক্ষণবাড়ীয়া, সাপ্তাহিক ওলামা কণ্ঠের সম্পাদক আখতার হুসাইন বিন ফারুকী, বাংলাদেশ এতিমখানা কল্যান সমিতির সভাপতি হাফেজ মাওলানা মোস্তফা চৌধুরী বাগেরহাটি হুযূর, হাফেজ মাওলানা মুহাম্মদ আব্দুল জলিল নারায়নগঞ্জী, মাওলানা মুহাম্মদ আব্দুল কাদের শরীয়তপুরী, আলহাজ মাওলানা মাহবুবুর রহমান রংপুরী প্রমুখ।
বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ বলেন, যারা সুপ্রিম কোর্টে মূর্তি স্থাপনের পক্ষে সাফাই গেয়েছে তাদের অন্যতম হলো সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, অজয় রায়, পার্বত্য চট্টগ্রামে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের পক্ষাবলম্বনকারী সুলতানা কামাল, আব্দুল গাফফার চৌধুরী, বদরুদ্দীন উমর, বিচারপতি গোলাম রব্বানী, বোরহান উদ্দিন খান জাহাঙ্গীর, কামাল লোহানী প্রমুখ।
ইসলামী নেতৃবৃন্দ বলেন, অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বিবৃতিতে বলেছেন, মূর্তি অপসারণের দাবি নাকি আপোসযোগ্য নয় এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পরিপন্থী। এই বক্তব্য দিয়ে পবিত্র কোরআনের নির্দেশ এবং মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে এই লোক। রাষ্ট্রধর্ম ইসলামের বিরুদ্ধে রীটকারী ১৪ জন চিহ্নিত ইসলাম বিদ্বেষীর একজন এই অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী। বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকার এর কুরআন ও সুন্নাহবিরোধী কোন কাজ হবে না এই নির্বাচনী ওয়াদাকেও অবমাননাকারী। কারণ পবিত্র কোরআন শরীফে মূর্তি অপসারণের কথা বলা হয়েছে। রাসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি স্বয়ং মূর্তি ধ্বংসের কথা বলেছেন। আর স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে বঙ্গবন্ধু বলেছেন, ইসলামের সাম্য মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করছি। বঙ্গবন্ধু ইনশাআল্লাহ বলেই স্বাধীনতা ঘোষণা দিয়েছিলেন। তাছাড়া ৭০ সালের নির্বাচনী ওয়াদা ছিল “কোরআন সুন্নাহবিরোধী কোন আইন পাশ হবে না।” মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণাপত্রের কোথাও মূর্তি প্রতিষ্ঠার কথা বলা হয়নি। মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণাপত্রে বঙ্গবন্ধু বলেছেন, সর্বশক্তিমান আল্লাহর নামে আমি আপনাদের আদেশ দিচ্ছি শত্রুর বিরুদ্ধে সশস্ত্র যুদ্ধ চালিয়ে যান বিজয় না হওয়া পরন্ত। সুতরাং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা হলো ইনশাআল্লাহ’র চেতনা। মুক্তিযুদ্ধের এই ঘোষণাতে বঙ্গবন্ধু মূর্তির স্বপক্ষে কোন কথা বলেননি বরং আল্লাহ তায়ালার উপর ভরসা করেছেন। বঙ্গবন্ধু মূর্তির পক্ষে ছিলেন না বলেই প্রথম রাষ্ট্রপতি হওয়া সত্ত্বেও সুপ্রিম কোর্টের সামনে কোন মূর্তি স্থাপন করেননি। সুতরাং মূর্তি অপসারণের দাবি স্বাধীনতার ঘোষণার বিরোধী নয় বরং পক্ষে। অতএব সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর মূর্তির স্বপক্ষে যে বক্তব্য দিয়েছেন তা অবান্তর।  
বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ বলেন, শাহবাগী আন্দোলনের গডফাদার ইমরান এইচ সরকার বলেছেন, যে মূর্তি অপসারণের দাবিতে হেফাজতের বক্তব্য দেয়ার ক্ষেত্রে নাকি সরকার প্রশ্রয় দিয়েছে। অথচ এটা হেফাজতের কথা নয় বরং মূর্তি অপসারণ কোরআন সুন্নাহ কথা এবং এই দেশের সব মুসলমানদের মনের কথা। ইমরান সরকারের বক্তব্য এই দেশের ইসলামী জনতার নিকট হাস্যরসের খোরাক।
পার্বত্য চট্টগ্রামে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের পক্ষাবলম্বনকারী এবং হিন্দু স্বামীওয়ালা সুলতানা কামাল মূর্তির পক্ষে বলবে এটাই স্বাভাবিক। কারণ যার কাছে পাবর্ত্য বাঙালীদের কোন মূল্য নেই, দেশের কোন মূল্য নেই; তার কাছে ইসলাম ধর্মেরও কোন মূল্যায়ন থাকতে পারে না বরং মূর্তির পক্ষেই থাকবে।
নেতৃবৃন্দ বলেন, ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি, মূর্তিকে ন্যায় বিচারের প্রতীক হিসেবে বলে দাবি করেছে এবং এর বিরুদ্ধাচারী মুসলমানদেরকে মৌলবাদী বলেছে। এ বিষয়ে ঘাদানিক নেতৃবৃন্দের জানা থাকা দরকার, মূর্তি ন্যায় বিচারের প্রতীক অন্য ধর্মের হতে মুসলমানদের ধর্মে নয়। মুসলমানদের কিতাব পবিত্র কোরআনের নির্দেশ হচ্ছে মূর্তি ধ্বংস করা। মুসলমানদের শেষ নবী রাসুল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন যে, তিনি মূর্তি ধ্বংস করতে প্রেরিত হয়েছেন। সেখানে ৯৫ ভাগ মুসলমানদের চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা করা চরম দৃষ্টতা। ঘাদানিকরা তো নিজ বাড়ীতেই এখনো মূর্তি স্থাপন করেননি। তাহলে সর্বোচ্চ বিচারালয়ে মূর্তি স্থাপনের খাহেশ কাদের স্বার্থে? এদেশের সুপ্রিম কোর্টের সামনে মূর্তি থাকতে পারে না।



 

Show all comments
  • Amanullah bin tabaruk ৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ৭:০১ পিএম says : 0
    Thank you
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ