পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
হাসান-উজ-জামান : পুরান ঢাকা থেকে কেরানীগঞ্জ। ঘিঞ্জি থেকে মুক্ত পরিবেশ। কিন্তু ভেতরের চিত্র মোটেও পাল্টায়নি ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের। টাকা ছাড়া কিছুই মেলে না। মানহীন খাবার, সিট বাণিজ্য, মোবাইল ফোনের ব্যবহার- সবই চলছে আগের মতো। তবে জেলার নেছার আলমের দাবি, নতুন এ কারাগারে বন্দিরা খুবই ভালো আছে।
উত্তরা থানায় দায়ের করা লিফট চুরির মামলায় নতুন এ কারাগারে দুই মাসের বেশি সময় বন্দি রুবেল হোসেন। গতকাল মঙ্গলবার স্ত্রী রুমা তার সাথে দেখা করেন। কারাগারের কেন্টিনে রুবেলের স্ত্রী জানান, তার স্বামী বর্তমানে কারাগারের বকুল সেলে বন্দি। জেলখানার বরাদ্দকৃত খাবার খেতে না পারায় ওই সেলে থাকা এবং খাওয়া-বাবদ সপ্তাহে ১০ হাজার টাকা করে দিতে হয়। তিনি জানান, পিসির মাধ্যমে জেলখানায় টাকা পাঠানো হয়। কিন্তু সেই টাকা নিমিষেই শেষ হয়ে যায়। কারণ কারাগারের ভেতরের কেন্টিনের সবকিছু গলাকাটা দামে বিক্রি হয়। তিনি বলেন, অতিরিক্ত টাকা দেই বলেই আমার স্বামীকে গাদাগাদি করে থাকতে হয় না। বকুল সেলের একটি রুমে আমার স্বামীসহ মাত্র তিনজন বন্দি থাকে।
মঙ্গলবার বেলা ১টার দিকে কারাগার থেকে মুক্তি পান কদমতলী থানার মাদক মামলার আসামি হাফিজুল (২৫)। জেল গেটেই কথা হয় তার সাথে। জেলখানার পদ্মা ভবনে হাজতবাসের অভিজ্ঞতা প্রসঙ্গে হাফিজুল বলেন, ওই ভবনে ৩১ জন মিলে গাদাগাদি করে থাকতে হয়েছে। এরপরও প্রতি মাসে এক হাজার টাকা করে দিতে হয়েছে। যারা টাকা দিতে না পারেন, তাদেরকে আরো বেশি বন্দির সাথে থাকতে হয়। যেখানে কাৎ হয়ে ছাড়া ঘুমানোর উপায় নেই। জেলখানার খাবার প্রসঙ্গে হাফিজুল বলেন, সকালে আধা-কাঁচা রুটির সাথে সামান্য গুড় দেয়া হয়। দুপুরে শুধু ডাল-ভাত। রাতে সবজির সাথে এক টুকরো মাছ। তিনি বলেন, এক ইঞ্চি মাপের লম্বা মাছের টুকরো খুবই পাতলা। তাও অনেক সময় বাসি-পচা হয়। সপ্তাহে একদিন গোশত দিলেও তা নামমাত্র।
এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অতি সম্প্রতি জেল থেকে বের হওয়া (বকুল সেলে থাকা) কেরানীগঞ্জের এক বাসিন্দা বলেন, জেলখানার খাবার এতটাই মানহীন, কেবল ভূক্তভোগীরাই তা জানেন। মুখে দেয়া যায় না। বমি আসে। জীবন বাঁচাতে তাই পারিবারিকভাবে সচ্ছল বন্দিদের অধিকাংশই জেলখানার ভেতরের খাবার কিনে খেতে বাধ্য হন। কিন্তু চড়া দাম। এক প্লেট ভূনা খিচুড়ি ১০০ টাকা, ভাত আধা-কেজি ৭৫ টাকা, রান্না করা গরুর গোশত ৮০০ টাকা কেজি। মাসে এক হাজার টাকা করে দিতে হয় সিট ভাড়া। এক প্যাকেট বেনসন সিগারেটের দাম ২২০ টাকা হলেও জেলখানার দোকানে এর দাম ৩৫০ টাকা। পিসি করে নেয়া টাকা খাবারের দোকানেই শেষ হয়। তার অভিযোগ, খাবার কিনে খেতে বাধ্য করার জন্যই কারাগারে কৌশলে মানহীন খাবার সরবরাহ করা হয়। কারারক্ষীদের মাধ্যমে টাকা পাঠালে হাজারে ১০০ টাকা করে কমিশন কেটে রাখে।
সম্প্রতি জেল থেকে মুক্তি লাভ করা অপর একজন জানান, টাকা থাকলে জেলখানায়ও ভালো থাকা-খাওয়া যায়। অসাধু ‘মিয়া সাবরা’ কারাগারে দেড় হাজার টাকার মোবাইল ১৫ হাজার টাকায় বিক্রি করে। কিন্তু ধরা পড়লে শুধু বন্দিদের শাস্তি পেতে হয়। কখনো কখনো ১৫০ থেকে ২০০ টাকার বিনিময়ে মোবাইল ফোনে মিনিট খানেক কথা বলার সুযোগ মেলে। এক হাজার টাকার বিনিময়ে রাতভর মোবাইল ফোনে কথা বলার সুযোগ মেলে। নতুন এ কারাগারে থাকা-খাওয়া থেকে শুরু করে সব কিছুতেই যেন ব্যবসা। টাকার বিনিময়ে মাদকও পাওয়া যায়। চুক্তিতে সেলের সিট মেলে। সিট পেতেও টাকা লাগে। সেল বদলি ঠেকাতেও আড়াই হাজার টাকা দিতে হয়। জাহিদ চেয়ারম্যান নামে পরিচিত চিফ রাইটার এসব বাণিজ্যের হোতা। তিনি বলেন, নতুন এ কারাগারে কয়েকটি সেল এবং ওয়ার্ড এখনো খালি পড়ে আছে। অথচ সিটের কৃত্রিম সঙ্কট দেখিয়ে টাকা হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে। অনেককে গাদাগাদি করে বন্দিজীবন কাটাতে হচ্ছে।
এদিকে কাফরুল থানায় জমি সংক্রান্ত একটি মামলার আসামি ইকবাল হোসেনের স্ত্রী ফরিদা ইয়াসমিন মঙ্গলবার দুপুরে স্বামীর সাথে দেখা করেন। তিনি বলেন, আমার স্বামী অসুস্থ। ইচ্ছে ছিল ঘরের তৈরি কিছু খাবার পাঠাব। কিন্তু সেই সুযোগ নেই। নির্ধারিত কারাকেন্টিন থেকে জিনিসপত্র পাঠানো যায়। কিন্তু কারাকেন্টিন কর্তৃপক্ষ তাদের ইচ্ছেমতো দাম রাখে। গতকাল তিনি কারাকেন্টিন থেকে আধা-কেজি শসা ও টমেটো পাঠান তার স্বামীর কাছে। এর দাম নেয়া হয়েছে ১৩৫ টাকা। তিনি বলেন, অতিরিক্ত দাম রাখা হয়েছে।
এদিকে কারাগারের এসব অনিয়ম প্রসঙ্গে জেলার নেছার আলম বলেন, নতুন এ কারাগারে বন্দিরা খুবই ভালো আছে। সেলের সিট বাণিজ্য প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এরকম কোনো ঘটনা নেই। কারাগারে সিটের অভাব নেই। প্রতিটি ওয়ার্ডে ১৩ জন করে বন্দি থাকছে। কেন সিট কিনে থাকতে হবে। বর্তমানে কারাগারটিতে সাত হাজার বন্দি রয়েছে। তারা এখন নিজ সেলের বাইরেও ঘোরাঘুরি করে সময় কাটায়। রয়েছে বিনোদনের ব্যবস্থা। সুযোগ পাচ্ছে সংশোধনের। পরিবারের সাথে বন্দিদের যোগাযোগের জন্য মোবাইল ফোন চালুর প্রক্রিয়াটি এখনো চালু হয়নি। তবে বন্দিদের পরিবারের সদস্যরা এখন প্রতিদিনই সাক্ষাত করার সুযোগ পাচ্ছেন। ইচ্ছে করলে দিনে একাধিকবারও। জেলার বলেন, এখানে কোনো ধরনের হয়রানি নেই। নিয়ম অনুযায়ী সবকিছু হচ্ছে। পুরনো কারাগার থেকে দ্বিগুণের বেশি পরিসরের এখানের কারাবন্দি উপভোগ করছে মুক্ত বাতাস ও পরিচ্ছন্ন পরিবেশ। অধূমপায়ী, বৃদ্ধ ও কিশোরদের জন্য রয়েছে পৃথক থাকার ব্যবস্থা। গোসল ও খাবারের জন্য রয়েছে পর্যাপ্ত পানির ব্যবস্থা এবং দিন-রাত সবসময়ের জন্য টয়লেট ব্যবহারের সুবিধা। এক কথায় বন্দিরা অনেক ভালো আছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।