মটর সাইকেল: নিউ নরমাল পরিস্থিতিতে (নতুন বাস্তবতায়)
মটরসাইকেল নিরাপদ, অধিক সুবিধাজনক, খরচ এবং সময় বাঁচায়। গণপরিবহনে একে অন্যের গা ঘেঁষে চলাচলে প্রতিদিন
হেলেনা জাহাঙ্গীর : দেশের চাহিদা অনুযায়ী ধারাবাহিক চাল উৎপাদন সন্তোষজনক। এ বিষয়ে দুশ্চিন্তার কিছু নেই। বাংলাদেশি ও বিদেশি দুটি উন্নয়ন সংস্থার গবেষণায় চালের ইতিবাচক তথ্যটি পাওয়া গেছে। তবে ওই গবেষণায় পুষ্টিকর খাদ্য উৎপাদন নিয়ে আশঙ্কা করার কারণ ধরা পড়েছে। চলতি ধারা বজায় থাকলে ২০৩০ সালের মধ্যে দেশে চালের উৎপাদন হবে ৩ কোটি ৮৭ লাখ টন। ওই সময় চাহিদা থাকবে ৩ কোটি ৭৬ লাখ টন।
অন্যদিকে পুষ্টি চাহিদা পূরণকারী খাদ্য গম, আলু, ডাল, সবজি, মাংস, ডিম ও মিঠাপানির মাছ উৎপাদন চাহিদা অনুযায়ী বাড়ছে না। ওই সময়টায় গোলআলুর উৎপাদন হবে ১ কোটি ১৮ লাখ টন, ডাল ৪ লাখ টন, সবজি ৬৪ লাখ টন আর ফলের উৎপাদন দাঁড়াবে ৩৬ লাখ টন। যা ওই সময়ের মোট চাহিদার চেয়ে ১৫ থেকে ২০ শতাংশ কম থাকবে। এতে দেশের খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা নিয়ে দুশ্চিন্তা থেকে যাবে।
‘স্ট্র্যাটেজিক এগ্রিকালচারাল সেক্টর অ্যান্ড ফুড সিকিউরিটি ডায়াগনস্টিক ফর বাংলাদেশ’ শীর্ষক গবেষণাটিতে আরও দেখা যায়, দেশের দারিদ্র্য বিমোচনে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখছে কৃষি খাত। কৃষি খাতে ১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হলে দেশে দারিদ্র্য কমে শূন্য দশমিক ৩৯ শতাংশ। আর অকৃষি খাতে এক শতাংশ প্রবৃদ্ধি হলে দারিদ্র্য কমে শূন্য দশমিক ১১ শতাংশ। দারিদ্র্যমোচনে কৃষি খাতের ফলপ্রদ এই ভূমিকা সত্ত্বেও ধারাবাহিকভাবে দেশের অর্থনীতিতে কৃষি খাতের অবদান কমে আসছে। গেল ১৫ বছরে দারিদ্র্য কমেছে ৩৫ শতাংশ; এর মধ্যে ২০ শতাংশ কমেছে ২০০৫ থেকে ২০১০-এর মধ্যে। কারণ ওই সময়ে কৃষি খাতে প্রবৃদ্ধি বেশি ছিল এবং চালের দাম বেশি ছিল।
স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের জনসংখ্যা বেড়েছে দ্বিগুণেরও বেশি। বাড়তি জনসংখ্যার প্রয়োজনে এ সময়ে বাসস্থান, স্কুল-কলেজ, হাটবাজার, কলকারখানা এবং অন্যান্য স্থাপনা নির্মাণে চাষাবাদের জমি বহুলাংশে হ্রাস পেয়েছে। তবে এ সময়ে শুধু চালের উৎপাদন বেড়েছে ৩ দশমিক ১৬ গুণ। একই সময়ে গমের উৎপাদন বেড়েছে ১২ দশমিক ২৫ গুণ। ভুট্টা উৎপাদন ৭৫৭ গুণ। আলুর উৎপাদন বেড়েছে ১০ পয়েন্ট ১১ গুণ।
একদিকে জনসংখ্যা দ্বিগুণেরও বেশি হয়ে যাওয়া, অন্যদিকে জনপ্রতি খাদ্যগ্রহণের পরিমাণ বৃদ্ধি পেলেও হেক্টরপ্রতি ধানের উৎপাদন তিনগুণের বেশি বৃদ্ধি পাওয়ায় বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো ধান রপ্তানিকারক দেশে পরিণত হয়েছে। ধান উৎপাদনে দেশের পরিশ্রমী কৃষকদের কৃতিত্ব যেমন অনস্বীকার্য তেমনি ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধিক ফলনশীল বিভিন্ন জাতের ধানও অবদান রাখছে।
খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে এবং কৃষি খাতের উন্নয়নে জননেত্রী শেখ হাসিনা সরকারের নানামুখী পদক্ষেপে দেশে খাদ্যশস্য উৎপাদন প্রতিবছর বাড়ছে। সরকারের সময়োপযোগী পদক্ষেপ এবং কৃষি খাতের উন্নয়নে সরকারের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা বাস্তবায়নের ফলে গত আট বছরের ব্যবধানে দেশে খাদ্যশস্য উৎপাদন বেড়েছে ৩০ দশমিক ৪৮ শতাংশ। সব জাতের ধান, গম ও ভুট্টার উৎপাদনে ব্যাপক অগ্রগতি হয়েছে। আর খাদ্যশস্য উৎপাদন বাড়ায় দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ রাষ্ট্রে পরিণত করার পাশাপাশি ভবিষ্যতে খাদ্যশস্য রপ্তানিকারক দেশে পরিণত হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।
ওয়েবসাইটে ২০১৩ সালের উৎপাদনে তথ্যের ভিত্তিতে তৈরি করা হয়েছে বিশ্বের ২০টি দেশের তালিকা। তাতে ৫ কোটি ৫০ লাখ টন খাদ্যশস্য উৎপাদন করে বাংলাদেশকে বিশ্বের দশম বৃহত্তম খাদ্য উৎপাদনকারী দেশ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। তালিকায় শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে দুনিয়ার সবচেয়ে জনবহুল দেশ চীন। চীনের খাদ্য উৎপাদনে ৫৫ কোটি ১১ লাখ টন। ৪৩ কোটি ৬৫ লাখ টন খাদ্য উৎপাদনকারী যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান দ্বিতীয়, ২৯ কোটি ৩৯ লাখ টন খাদ্য উৎপাদন করে ভারত তৃতীয়, ১০ কোটি ১০ লাখ টন খাদ্য উৎপাদনকারী ব্রাজিল চতুর্থ, রাশিয়ার স্থান পঞ্চম ৯ কোটি ৩ লাখ টন খাদ্য উৎপাদন করে এ দেশটি। ষষ্ঠ স্থানে ৮ কোটি ৯৭ লাখ টন খাদ্য উৎপাদনকারী ইন্দোনেশিয়া, সপ্তম স্থানে ৬ কোটি ৭৫ লাখ টন খাদ্য উৎপাদনকারী ফ্রান্স, অষ্টম স্থানে কানাডা, যে দেশের উৎপাদন ৬ কোটি ৬৩ লাখ টন এবং নবম স্থানে ইউক্রেন ২০১৩ সালে যে দেশটির খাদ্য উৎপাদন ছিল ৬ কোটি ৩১ লাখ। বাংলাদেশ কয়েক বছর ধরে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ দেশ হিসেবে পরিচিত। সামান্য কিছু খাদ্য বিদেশ থেকে আমদানি হলেও একইভাবে বিদেশে খাদ্যও রপ্তানি করে বাংলাদেশ। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার আগে দেশের লোকসংখ্যা ছিল ৭ কোটি। গত ৪৪ বছরে জনসংখ্যা দ্বিগুণেরও বেশি বৃদ্ধি পেলেও খাদ্য উৎপাদন বেড়েছে অন্তত তিনগুণ।
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের এক পরিসংখ্যানে জানা যায়, দেশে ২০০৬-০৭ অর্থবছরে মোট খাদ্যশস্যের উৎপাদন হয়েছিল ২৮৯ দশমিক ৫৪ লাখ মেট্রিক টন। ২০০৭-০৮ অর্থবছরে তা বেড়ে ৩১১ দশমিক ২১ লাখ মেট্রিক টনে দাঁড়ায়। ২০০৮-০৯ অর্থবছরে উৎপাদন হয় ৩২৮ দশমিক ৯৬ লাখ মেট্রিক টন, ২০০৯-১০ অর্থবছরে উৎপাদন হয়েছে ৩৪১ দশমিক ১৩ লাখ মেট্রিক টন, ২০১০-১১ অর্থবছরে উৎপাদনের পরিমাণ ৩৬০ দশমিক ৬৫ লাখ মেট্রিক টন, ২০১১-১২ অর্থবছরে উৎপাদন হয়েছে ৩৬১ দশমিক ৮২ লাখ মেট্রিক টন, ২০১২-১৩ অর্থবছরে উৎপাদনের পরিমাণ ৩৭২ দশমিক ৬৬ লাখ মেট্রিক টন। আর ২০১৩-১৪ অর্থবছরে খাদ্যশস্য উৎপাদনের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়ায় ৩০ শতাংশ ৩৭৭ দশমিক ৮২ লাখ মেট্রিক টন। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্যানুযায়ী, ২০১৩-১৪ অর্থবছরে খাদ্যশস্যের মোট উৎপাদন হয়েছে ৩৭৭ দশমিক ৮২ লাখ মেট্রিক টন। যা আগের অর্থবছরের (২০১২-১৩) চেয়ে ৫ দশমিক ১৬ মেট্রিক টন বেশি। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে দেশে ২ লাখ ৭৮ হাজার ২০০ টন খাদ্যশস্য বেশি উৎপাদিত হয়েছে। তবে ওই অর্থবছরে দেশে খাদ্যশস্যের চাহিদা ছিল ৩ কোটি ৫৮ লাখ ২০ হাজার টন। এর মধ্যে চালের চাহিদা ছিল ৩ কোটি ১৭ টন ও গম ৪১ লাখ ২০ হাজার টন। এর বিপরীতে মোট উৎপাদন হয়েছে ৩ কোটি ৬০ লাখ ৫৮ হাজার টন। এর মধ্যে চাল উৎপাদিত হয়েছে ৩ কোটি ৪৭ লাখ ১০ হাজার টন এবং গম ১৩ লাখ ৪৮ হাজার টন। কৃষি মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৩-১৪ অর্থবছরে দেশে আউশ ধান উৎপাদন হয়েছে ২৩ দশমিক ২৬ লাখ মেট্রিক টন, আট বছর আগে যার উৎপাদনের পরিমাণ ছিল ১৫ দশমিক ১২ লাখ মেট্রিক টন।
অন্যদিকে, ২০০৬-০৭ অর্থবছরে আমন ধান উৎপাদন হয়েছে ১০৮ দশমিক ৪১ লাখ মেট্রিক টন, যা ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ২১ দশমিক ৮২ লাখ মেট্রিক টন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৩০ দশমিক ২৩ লাখ মেট্রিক টনে। বর্তমানে দেশের মোট ৭৫ ভাগ জমিতে ব্রি-ধানের চাষ হয় এবং এ থেকে দেশের মোট ধান উৎপাদনের শতকরা ৮৫ ভাগ আসে। ১৯৭০-৭১ সালে দেশে মোট উৎপাদিত ধানের পরিমাণ ছিল এক কোটি ১০ লাখ টন।
যে দেশের মানুষ বিগত বহু বছর ধরে অর্ধাহারে-অনাহারে কাটাত সে দেশে খাদ্য গ্রহণের পরিমাণ স্বাধীনতার পর প্রায় দ্বিগুণের বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। আধুনিক চাষাবাদ পদ্ধতি অনুসরণ কৃষি ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে ঈর্ষণীয় সাফল্য অর্জনে সহায়তা করেছে। বর্তমান সরকারের কৃষিবান্ধব নীতিও এ কৃতিত্বের অন্যতম দাবিদার।
য় লেখক : চেয়ারম্যান, জয়যাত্রা ফাউন্ডেশন
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।