পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
সাখাওয়াত হোসেন বাদশা : উজানে ভারত পানি প্রত্যাহার করে নেয়ায় গঙ্গা-তিস্তার পানি সংকট দেখা দিয়েছে। এর প্রভাবে দেশের সেচ কার্যক্রম যেমন মুখ থুবড়ে পড়ছে, তেমনি নদীর পর নদী শুকিয়ে যাচ্ছে। হারিয়ে যাচ্ছে অনেক নদী-শাখা নদী।
গঙ্গার পানি বণ্টন নিয়ে ৩০ বছর মেয়াদি চুক্তির ইন্ডিকেটিভ সিডিউল অনুযায়ী ফারাক্কা পয়েন্টে গত মাসে (৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত) তিনটি দশ দিনে বাংলাদেশ ২৮২৮৭ কিউসেক পানি কম পেয়েছে। চুক্তি মোতাবেক প্রথম দশদিনে বাংলাদেশ ৬৭ হাজার ৫১৬ কিউসেক পানি পাওয়ার কথা থাকলেও পেয়েছে ৫৭ হাজার ৭৬৬ কিউসেক। দ্বিতীয় দশদিনে বাংলাদেশ ৫৭ হাজার ৬৭৩ কিউসেক পানি পাওয়ার কথা থাকলেও পেয়েছে ৪৫ হাজার ২৯৭ কিউসেক। আর তৃতীয় দশদিনে ৫০ হাজার ১৫৪ কিউসেক পানি পাওয়ার কথা থাকলেও পেয়েছে ৬১৬১ কিউসেক পানি।
একইভাবে তিস্তায় প্রাপ্ত পানির পরিমাণ কমে যাচ্ছে। এভাবে কমতে থাকলে চলতি মাসের শেষদিকে যেয়ে তিস্তায় পানির পরিমাণ ৪শ’ কিউসেকের নিচে গিয়ে ঠেকবে। তিস্তায় গত কয়েক বছরের পানি সঙ্কটকে কেন্দ্র করে সেখানে সেচযোগ্য জমির পরিমাণ কমিয়ে দেয়া হয়েছে। তিস্তা সেচ প্রকল্পে আবাদযোগ্য জমির পরিমাণ যেখানে ৬০ হাজার হেক্টর; সেখানে এই সেচযোগ্য জমির পরিমাণ কমিয়ে ১০ হাজার হেক্টরে আনা হয়েছে। তিস্তা সেচ প্রকল্পের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা জানান, ভারত গজলডোবা বাঁধের মাধ্যমে শুষ্ক মৌসুমে তিস্তার পানি প্রত্যাহার করে নেয়ায় এই নদীর পানি আশঙ্কাজনকভাবে হ্রাস পায়। নীলফামারী জেলার ডিমলা উপজেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত তিস্তা নদীর অববাহিকায় গত ১৫ দিনের ব্যবধানে ৫ হাজার কিউসেক থেকে কমে পানি নেমে এসেছে ৭শ’ কিউসেকে। এই পানি আরও কমে যাওয়ার আশঙ্কা করছে স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তা।
এদিকে, তিস্তায় পানিস্বল্পতার কারণে তিস্তা সেচ প্রকল্প মুখ থুবড়ে পড়ার উপক্রম হয়েছে। এই সেচ প্রকল্পের মাধ্যমে চলতি ইরি-বোরো মৌসুমে উত্তরাঞ্চলের নীলফামারী জেলাসহ রংপুর, বগুড়া, দিনাজপুর, জয়পুরহাট ও গাইবান্ধা জেলার ২৩টি উপজেলার ১ লাখ ১১ হাজার হেক্টর জমিতে সেচ টার্গেট পাউবোর হিসাবের খাতায় থাকলেও তা কোনোদিন বাস্তবায়িত হয়নি। বরং লক্ষ্যমাত্রা ৬০ হাজার হেক্টর ধরা হলেও এখন তা কমিয়ে ১০ হাজার হেক্টরে আনা হয়েছে।
যৌথ নদী কমিশন সূত্রে জানা গেছে, সেচ প্রকল্পের পানিসহ তিস্তাকে বাঁচিয়ে রাখতে ন্যূনতম ৫ হাজার কিউসেক পানি প্রয়োজন। অভিন্ন নদীর উজানে বিজনবিভুঁই এলাকায় ভারত তাদের গজলডোবা ব্যারাজ দিয়ে ১৯৮৭ সাল থেকে তিস্তার পানি একতরফা প্রত্যাহার করে আসছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তিস্তার পানি ভাগাভাগি নিয়ে একটি চুক্তিতে উপনীত হতে ভারত সরকারকে বারবার তাগিদ দিলেও দিল্লি তা আমলে নিচ্ছে না।
বরং উভয় দেশ সর্বসম্মতিক্রমে সমহিস্যার ভিত্তিতে তিস্তার পানি বন্টন চুক্তির খসড়া তৈরি করেও শেষ পর্যন্ত চুক্তি সই থেকে সরে দাঁড়িয়েছে ভারত। এক্ষেত্রে ভারতের পক্ষ থেকে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জিকে দায়ী করা হলেও দেশের পানি বিশেষজ্ঞদের অভিমত হচ্ছে, ভারতের রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের বেড়াজালে আটকে আছে তিস্তা চুক্তির ভবিষ্যৎ।
এদিকে নানা দেনদরবার সত্ত্বেও গঙ্গার পানির ন্যায্য হিস্যা পাচ্ছে না বাংলাদেশ। প্রয়োজনীয় পানি প্রবাহ না থাকায় বাংলাদেশের নদীগুলো নাব্য হারাচ্ছে। কোনো কোনোটি মরেও যাচ্ছে।
বিভিন্ন তথ্য ঘেঁটে দেখা গেছে, গত ৫০ বছরের ব্যবধানে দেশে নাব্য হারিয়েছে অন্তত ৮শ’ নদী হারিয়ে গেছে। দেশে এখন নদ-নদীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩০০-তে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নদীর নাব্য হারিয়ে যাওয়ায় কৃষি, মৎস্য, পশুসম্পদ, নদীর সঙ্গে সম্পৃক্ত শিল্পকারখানা, পরিবেশ সম্পূর্ণ বিপন্ন ও বিপর্যস্ত হয়ে পড়বে। জানা গেছে, একসময় বাংলাদেশে মোট নদীর সংখ্যা ছিল এক হাজারেরও বেশি।
জাতীয় সংসদে এক প্রশ্নোত্তর পর্বে বলা হয়, বর্তমানে দেশে মাত্র ২১২টি নদীর নাব্য আছে। এছাড়া ১টি নদী মৃত ও মৃতপ্রায় নদী রয়েছে ৯৭টি। আর ড. অশোক বিশ্বাসের বাংলাদেশ নদী কোষ-এর দেয়া তথ্যানুযায়ী, দেশে মৃতপ্রায় নদীর সংখ্যা ১৯০টি। এছাড়া ৯৯ ভাগ নদীর গভীরতা হ্রাস পাচ্ছে।
বেসরকারি সংস্থা বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) তথ্য অনুযায়ী, বিভিন্ন কারণে উত্তরাঞ্চলের ৬৭টি নদ-নদী হুমকির মুখে পড়েছে। এদিকে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ১২টি এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ৩২টি নদ-নদী দ্রুত বিলীন হয়ে যাচ্ছে। বাকি নদ-নদীর অবস্থাও করুণ।
পদ্মা, মেঘনা, যমুনা, ব্রহ্মপুত্র দেশের প্রধান এ ৪টি নদ-নদীও পলি জমে ক্রমেই ভরাট হয়ে যাচ্ছে। এসব নদ-নদীর বুকে জেগে উঠছে বিশাল বিশাল চর। বর্তমানে দেশের ছোট-বড় নদীর বুকে চলছে বোরো আবাদ।
কোথাও কোথাও আবার শুকিয়ে যাওয়া মরা নদীর তলদেশ দিয়ে বাস, ট্রাক চলাচল করছে। ফারাক্কার প্রভাবের পাশাপাশি জলবায়ুর পরিবর্তন এবং প্রাকৃতিকভাবে নদীর গতি পরিবর্তনও ভরাটের গতিকে ত্বরান্বিত করছে।
তবে পানি বিশেষজ্ঞ ও পাউবো’র সাবেক মহাপরিচালক মোজাদ্দেদ আল ফারুক বলেন, নদীর নাব্য হারানো কিংবা মৃতপ্রায় অবস্থায় চলে যাওয়ার মূল কারণ হচ্ছে ফারাক্কাসহ বাংলাদেশের উজানে ৪২টি নদীতে ভারতের বাঁধ দেয়া। সেই সাথে গঙ্গার পানি বণ্টন নিয়ে চুক্তি থাকলেও তার যথাযথ বাস্তবায়ন না হওয়া।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।