পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
আবু হেনা মুক্তি, খুলনা থেকে : গত এক সপ্তাহে খুলনাঞ্চলের শতাধিক জেলেকে মুক্তিপণের দাবিতে আটক রেখেছে বনদস্যুরা। এসময় দস্যুদের গুলিতে ৩ বনদস্যু ও ১ জেলে নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে কমপক্ষে ১০ জন। আটককৃত জেলেদের পরিবারে চলছে চরম আহাজারি। র্যাব, কোস্টগার্ড, পুলিশ জ্যামিতিক হারে ডাকাত নিধন করলেও বাড়ছে গাণিতিক হারে। সুন্দরবনের কোলঘেঁষে গড়ে ওঠা গ্রাম কালাবগীর টোটা থেকে দলিল বৈদ্যর পুত্র শফিকুলকে গত ৫ দিন যাবৎ মাস্টার বাহিনী তুলে নিয়ে দু’লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে আসছে। ভিটেমাটি বিক্রি ছাড়া ছেলেকে ছাড়িয়ে আনার কোন সংগতি নেই পিতার।
কয়রার শহিদ ও বটিয়াঘাটা বুজবুনিয়া গ্রামের হায়দারের ৭ জন জেলেকে গত দু’দিন আগে অপহরণ করেছে সাগর বাহিনী। জেলে পরিবারগুলোর কাছ থেকে জনপ্রতি ৩০ হাজার টাকা করে দাবী করেছে দস্যুরা। অসহায় এ পরিবারগুলো অজানা আতংকে দিন কাটাছে। জেলে বাওয়ালীদের একটি সূত্র জানায় গত এক সপ্তাহে ৫টি দস্যুবাহিনী পৃথক পৃথকভাবে সুন্দরবন পূর্ব ও পশ্চিম বনবিভাগ এলাকা থেকে কমপক্ষে ১শ’ জেলেকে অপহরণ করেছে মুক্তিপনের আশায়। কয়েকজনকে মুক্তিপন আদায় করে ছেড়ে দেয়া হয়েছে।
সূত্রমতে, প্রতিনিয়ত ইলিশসহ সুন্দরবনের বিভিন্ন মৌসুমে বঙ্গোপসাগর ও উপকূলীয় অঞ্চলে নৌদস্যু বাহিনী বেপরোয়া হয়ে ওঠে। সাম্প্রতিক সময়ে র্যাব, কোষ্টগার্ড, পুলিশ ও বন বিভাগের সাড়াশি অভিযানের মুখেও অপ্রতিরোধ্য দস্যু বাহিনী। বাহিনীগুলোর হাতে রয়েছে বিপুল পরিমান ভারি ও হালকা বিদেশী আগ্নেয়াস্ত্র ও গোলাবারুদ। গত দু’মাসে কয়েক শতাধিক ফিসিং টলারে গন ডাকাতি ও কয়েক শত জেলেকে মুক্তি পনের দাবিতে জিম্মি করেছে ডাকাতরা। প্রতি বছর ইলিশ সহ বিভিন্ন মৌসুমে প্রায় দু’ডজন বন দস্যু বাহিনী কয়েক কোটি টাকা মুক্তি পন আদায় করে। না দিলে নৌদস্যুরা এদেরকে হত্যার আল্টিমেটাম দেয়।
সূত্রমতে, গত ১৭ ফেব্রুয়ারী সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জে সুপতি এলাকায় দুর্ধর্ষ বনদস্যু মাষ্টার ও জাহাঙ্গীর বাহিনীর মধ্যে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ঘন্টাব্যাপী বন্দুক যুদ্ধে ৩ বনদস্যু মারা গেছে। আহত হয়েছে জাহাঙ্গীর বাহিনীর প্রধান জাহাঙ্গীর সহ উভয় দলের ৭/৮ বনদস্যু। গত ১৯ ফেব্রুয়ারী রাতে বনদস্যুরা পূর্ব সুন্দরবনের সাগরতীরবর্তী পক্ষিদিয়ার চর এলাকায় বহরদরদের উপর হামলা চালায়। এ সময় দস্যুদের গুলিতে ইসমাঈল হোসেন (২৫) নামে এক জেলে নিহত হয়। বনদস্যুরা ৫ লাখ টাকা মুক্তিপনের দাবীতে ১০ জেলেকে অপরহরণ করে নিয়ে যায়। ডাকাতরা ঐসব ট্রলারে থাকা সাদা মাছ জাল ও অন্যান্য মালামাল সহ প্রায় কোটি টাকার মালামাল লুটে নেয়। হামলা ও অপহরণের ঘটনায় এসব জেলে পরিবারে আতংক বিরাজ করছে। নিহত জেলে পরিবারে কান্নার রোল পড়ে গেছে।
এদিকে, জেলেদের অপর একটি সূত্র জানায়, গত এক মাসের মধ্যে বঙ্গোপসাগর এলাকার কচিখালী থেকে ৪০-৪২ কি.মি. গভীরে জাহাঙ্গীর বাহিনীর ৩০/৩৫ জন নৌদস্যু ৩৬টি ফিসিং ট্রলারে হামলা চালায়। তারা ইলিশ ডিজেল, জাল, তেল, চালসহ ট্রলার থেকে ইঞ্জিন থেকে খুলে নেয়। ডাকাতরা প্রায় অর্ধকোটি টাকার মালামাল হাতিয়ে নেয়। নৌদস্যুরা ৩৫ জন জেলেকে জিম্মি করে জন প্রতি ১ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। খুলনা, বাগেরহাট ও পিরোজপুরের জিম্মিকৃত জেলেদের স্বজনরা মুক্তি পনের টাকা দিয়ে তাদেরকে উদ্ধার করে।
সূত্রমতে, অরক্ষিত হয়ে পড়েছে বঙ্গোপসাগর। প্রতিনিয়ত লুণ্ঠিত হচ্ছে বাংলাদেশের সমুদ্র সীমার মৎস্য সম্পদ। বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশের কয়েকশ’ নটিক্যাল মাইলের সমুদ্রসীমায় ৬০ হাজার ফিশিং ট্রলারের ৫ লক্ষাধিক মাঝি-মাল্লার কোনো নিরাপত্তা নেই। ভারত, মিয়ানমার, থাইল্যান্ড ও দেশীয় সাগর দস্যুদের অত্যাচার-নির্যাতন, লুন্ঠন, হত্যা, সাগরবক্ষে নিক্ষেপ, মুক্তিপণ আদায় ইত্যাদির কারণে জেলে ও মাঝি মালারা আতঙ্কিত ও উদ্বিগ্ন। দেশের মৎস্য সম্পদের খনি বঙ্গোপসাগরের বাংলাদেশী সীমানায় নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ডের তৎপরতা ও টহল বৃদ্ধি ছাড়া এ দস্যুতা বন্ধ করা সম্ভব নয় বলে সংশ্লিষ্টরা জানান। সাগরদস্যুদের অত্যাচার ও তৎপরতা দিনে দিনে বৃদ্ধি পাচ্ছে।
টেকনাফ থেকে সুন্দরবনসংলগ্ন দক্ষিণ তালপট্টী পর্যন্ত বঙ্গোপসাগর এবং শাখা নদীগুলোতে ফিশিং ট্রলারগুলো সারাবছরই মাছ ধরায় নিয়োজিত থাকে। প্রতিবছর এ ফিশিং ট্রলারগুলো প্রায় ১৫ লক্ষ টনেরও বেশী মাছ সাগর থেকে সংগ্রহ করে। গত ৫ বছরে সাগর দস্যুদের নিহত হয়েছে শতাধিক জেলে ও মাঝি মালা। অপহৃত হয়েছে কয়েক হাজার জেলে। সাগরদস্যুরা মুক্তিপণ বাবদ আদায় করেছে কোটি কোটি টাকা।
সাগরজীবীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, সাগরে এলাকাভিত্তিক সশস্ত্র দস্যু গ্রুপ ফিশিং ট্রলারে ডাকাতি করে ইঞ্জিনসহ মূল্যবান সামগ্রী লুট করে নিয়ে যায়। এদের মধ্যে রয়েছে জাহাঙ্গীর বাহিনী, জেহাদ বাহিনী, জুলফিকার বাহিনী, নাসির বাহিনী, মোতালেব বাহিনী, আক্কাস বাহিনী, জাহাঙ্গীর (রাজু) বাহিনী, ইলিয়াস বাহিনী, কাদের মাষ্টার বাহিনী, শ্যামল বাহিনী, সাগর বাহিনী, নান্নু বাহিনী ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।
একমাত্র সাগর দস্যুদের নির্মম নিষ্ঠুরতার কারণে উপকুলীয় এলাকায় হাজার হাজার পরিবার অভিভাবকহীন হয়ে পড়ছে। উপকূলের ঘরে ঘরে বাড়ছে আহাজারি, অভাব-অনটন। সাগর দস্যুরা ফিশিং ট্রলারে ডাকাতি করে শুধু যে মাঝি-মালাদের হত্যা করে তা নয়, বরং ডাকাতি করে ফিরে যাবার সময় মাঝে মধ্যে ট্রলারে আগুন ধরিয়ে দেয়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।