Inqilab Logo

শক্রবার ০৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ কার্তিক ১৪৩১, ০৬ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন ও তদন্ত সংস্থার প্রতি প্রধান বিচারপতির অসন্তোষ

প্রকাশের সময় : ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম

স্টাফ রিপোর্টার : আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুালের প্রসিকিউশন ও তদন্ত সংস্থার প্রতি অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এস কে) সিনহা। অ্যাটর্নি জেনারেলকে উদ্দেশ করে তিনি শুনানিতে বলেন, ‘রাষ্ট্র লাখ লাখ টাকা খরচ করে প্রসিকিউশন টিম নিয়োগ করেছে। কিন্তু তারা মামলা পরিচালনায় দক্ষতা দেখাতে পারেননি। বরং সাক্ষী হাজির করার পর তারা শুধু টেলিভিশনের সামনে চলে আসেন। প্রসিকিউশন বসে বসে এসব নিয়ে শুধু রাজনীতি খেলছেন?’ সাঈদীর মামলার শুনানির সময়ও এ রকম অসঙ্গতি ধরা পড়েছিল। গতকাল মঙ্গলবার প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে আপিল বিভাগের পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চে সকাল সাড়ে ১০টা থেকে দুপুর সোয়া ১টা পর্যন্ত জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতা মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় মৃত্যুদ-প্রাপ্ত মীর কাসেম আলীর আপিল শুনানি হয়। শুনানি শেষে বুধবার পর্যন্ত মামলার কার্যক্রম মুলতবি করা হয়।
শুনানিতে প্রধান বিচারপতি অ্যাটর্নি জেনারেলকে উদ্দেশ করে ওইসব কথা বলেন। এসময় অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, প্রসিকিউশন টিম এ চার্জের (অভিযোগ) বিষয়ে হয়তো ভালোভাবে কাজ করতে পারেনি। এ ছাড়া মীর কাসেম আলী তো লন্ডন থেকেও লবিস্ট নিয়োগ করেছেন। প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘তাহলে রাষ্ট্র লাখ লাখ টাকা খরচ করে এসব প্রসিকিউশন রেখেছে কেন? এদের সরিয়ে দেন।’ জবাবে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, সেটা দেখা হচ্ছে।
মীর কাসেম আলীর শুনানির একপর্যায়ে অ্যাটর্নি জেনারেলকে উদ্দেশ করে প্রধান বিচারপতি বলেন, আমরা মর্মাহত। আপনাদের এসব মামলা পরিচালনা দেখে আমাদের খারাপ লাগে। আমাদের কষ্ট হয়।
প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘মীর কাসেম আলীর অভিযোগের (৯ নম্বর) বিষয়ে আপনাদের দেওয়া পেপার কাটিংয়ে দেখা যায়, এ চার্জের ঘটনার সময় মীর কাসেম আলী ঢাকায় ছিলেন। তিনি ঢাকায় বিভিন্ন সমাবেশে বক্তব্য ও বিবৃতি দিয়েছেন। অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ১৯৭১ সালের ২৪ নভেম্বর মীর কাসেম আলী চট্টগ্রামের ডালিম হোটেলে নির্যাতন করেছেন। ২৩ নভেম্বর ঢাকা থেকে গিয়ে তিনি নির্যাতনে অংশ নেন। এ ছাড়া বিবৃতি দিয়েও সংবাদ প্রকাশ করা যায়।
প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘ওই সময় তো (১৯৭১ সালে) মিডিয়ার অবস্থা এত উন্নত ছিল না। এখন যেভাবে মুহূর্তে সংবাদ প্রকাশ করা যায়, সে সময় চাইলেও সংবাদ সম্মেলন করা যেত না। মীর কাসেম আলী ওই সময় ঢাকায় ছিলেন, বক্তব্য দিলেন, ওসব তো আপনাদের দেওয়া পেপারে রয়েছে।’ জবাবে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, বিবৃতি পাঠিয়েও সংবাদ প্রকাশ করা যায়।
প্রধান বিচারপতি বলেন, দেশে তখন মুক্তিযোদ্ধারা জেঁকে বসেছে। এ ছাড়া যাতায়াত ব্যবস্থাও ভালো ছিল না। এত অল্প সময়ে যাওয়া কি সম্ভব? অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে বলেন, যাওয়া অসম্ভব নয়। মীর কাসেম আলী ডালিম হোটেলে গিয়ে নির্যাতন করেছেন।
প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে আমরাও সিলেট থেকে ট্রেনে ঢাকায় আসতাম। কিন্তু তখন যাতায়াত ব্যবস্থা ভালো ছিল না। সহজে গাড়ি-ট্রেন চলত না।’ অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, যাতায়াত ব্যবস্থা ভালো ছিল না, কিন্তু মীর কাসেম আলী চট্টগ্রামে চলে যান।
এরপর অ্যাটর্নি জেনারেল প্রসিকিউশনের নথি পড়া শুরু করেন। নথিতে তিনি বলেন, বদর দিবস উপলক্ষে ১৯৭১ সালের ৭ নভেম্বর ঢাকার বায়তুল মোকাররম প্রাঙ্গণে তৎকালীন ইসলামী ছাত্রসংঘের উদ্যোগে আয়োজিত ছাত্র সমাবেশে বক্তব্য দেন মীর কাসেম আলী। পরের দিন ৮ নভেম্বর দৈনিক ইত্তেফাক, দৈনিক পাকিস্তানসহ তৎকালীন বিভিন্ন পত্রিকায় সে খবর প্রকাশিত হয়। খবরে মীর কাসেম আলীর নাম ও বক্তব্য ছাপা হয়।
এর আগে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ২০১৪ সালের ২ নভেম্বর মীর কাসেম আলীকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদন্ডাদেশ দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২। এ রায়ের বিরুদ্ধে ওই বছরের ৩০ নভেম্বর মীর কাসেম আলী আপিল করেন। মীর কাসেম তার দেড়শ’ পৃষ্ঠার মূল আপিলসহ ১ হাজার ৭৫০ পৃষ্ঠার আপিলে মোট ১৬৮টি কারণ দেখিয়ে ফাঁসির আদেশ বাতিল করে খালাস চেয়েছেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন ও তদন্ত সংস্থার প্রতি প্রধান বিচারপতির অসন্তোষ
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ