Inqilab Logo

বুধবার ২০ নভেম্বর ২০২৪, ০৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত আর নেই

| প্রকাশের সময় : ৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

স্টাফ রিপোর্টার : বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের অধিকারী ও আওয়ামী লীগের উপদেষ্টাম-লীর সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত আর নেই। গতকাল রবিবার ভোর চারটা ২৫ মিনিটে রাজধানীর ল্যাব এইড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৮ বছর।
সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠন।
এর আগে শনিবার রাত ৯টার দিকে তাকে লাইফ সাপোর্টে নেয়া হয়। সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের চিকিৎসার দায়িত্বে থাকা ডা. বরেন চক্রবর্তী জানান, লাইফ সাপোর্টে থাকা অবস্থায় শনিবার রাত ১০ টার দিকে ১৫ মিনিটের জন্য তার হার্টবিট ছিল না। চিকিৎসকদের চেষ্টায় পুনরায় হার্টবিট ফিরে আসলেও তার শারীরিক অবস্থা সংকটাপন্ন হয়ে পড়ে। ডা. বরেন চক্রবর্তী বলেন, তাকে দেশের বাইরে নিয়ে যাওয়ার জন্য পরিবারের সদস্যদের আগ্রহ ছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে থাকায় দেশের বাইরে নিয়ে যাওয়ার বিষয়টি অনিশ্চিত হয়ে পড়ে।
সংসদ চত্বরে সুরঞ্জিত সেনগুপ্তকে প্রেসিডেন্ট-প্রধানমন্ত্রীর শেষ শ্রদ্ধা
আওয়ামী লীগের বর্ষীয়ান নেতা সদ্য প্রয়াত সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের মরদেহ শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় নেয়া হয়। সেখানে তার প্রতি শেষ শ্রদ্ধা নিবেদন করেন প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ দলমত নির্বিশেষে সব সংসদ সদস্য এবং রাজনৈতিক নেতারা। গতকাল দুপুর ২টা ৫৫ মিনিটে বর্ষীয়ান এই নেতার মরদেহ জাতীয় সংসদ চত্বরে আনা হয়। সেখানে সংক্ষিপ্ত আনুষ্ঠানিকতা শেষে সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের জীবনী পাঠ করেন সংসদের ক্ষমতাসীন দলের চিফ হুইফ আসম ফিরোজ। এরপর পরিবারের পক্ষ থেকে তার বিষয়ে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন ছেলে সৌমেন সেনগুপ্ত। তিনি বলেন, আমার পিতা অসাম্প্রদায়িক চিন্তা-চেতনার মানুষ ছিলেন। তার কাছে কোনও কাজ নিয়ে গিয়ে কেউ খালি হাতে ফিরেননি। আমি আজ অভিভাবকহীন, তবে আমি নিজে তা মনে করি না। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সবসময় আমাদের পরিবারের পাশে ছিলেন। আমি আশাকরি তিনি এখনও আমাদের পরিবারের পাশে থাকবেন। এরপর আওয়ামী লীগের উপদেষ্টাম-লীর সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্তকে গার্ড অব অনার দেয়া হয়। গার্ড অব অনার শেষে বিকাল পৌনে ৪টায়  প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রয়াত সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এরপর স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী, প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ, ডেপুটি স্পিকার, সংসদে বিরোধীদলীয় নেতার নেতৃত্বে জাতীয় পার্টির নেতৃবৃন্দ এবং পরে ১৪ দলের নেতৃবৃন্দ শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এরপর বিশেষ প্রার্থনা অনুষ্ঠিত হয়। পরে বিভিন্ন সংগঠন ও সর্বস্তরের মানুষ প্রয়াত নেতার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
প্রসঙ্গত, গত বৃহস্পতিবার হৃদযন্ত্রের সমস্যা নিয়ে ল্যাব এইড কার্ডিয়াক হাসপাতালে ভর্তি হন সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত। তিনি হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. বরেন চক্রবর্তীর তত্ত্বাবধানে চিকিৎসাধীন ছিলেন। সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের ব্যক্তিগত সহকারী কামরুল ইসলাম শনিবার সন্ধ্যার দিকে বলেন, স্যার জানিয়েছিলেন যে, তার (সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত) ফুসফুসে ইনফেকশন হয়েছে।
চন্দন কাঠে দাহ হবে সুরঞ্জিতের মরদেহ
শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতা সুরঞ্জিত সেনগুপ্তকে চন্দন কাঠের চিতায় দাহ করার চেষ্টা করছেন স্বজনরা। তবে এই কাঠ অপ্রতুল হওয়ায় তা সংগ্রহের চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছেন সুরঞ্জিতের মেছতুতো ভাই জয়ন্ত সেন। তিনি বলেন, তার (সুরঞ্জিত) শেষ ইচ্ছা ছিল চন্দন কাঠ দিয়ে যেন তাকে দাহ করা হয়। এখন তো এ কাঠ খুব একটা পাওয়া যায় না। তবে সংগ্রহের চেষ্টা চলছে। আজ সোমবার বেলা ১১টায় সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের মরদেহ নিজ জেলা সুনামগঞ্জে নিয়ে যাওয়া হবে। এ দিন বেলা ১টায় তার নির্বাচনী এলাকা শাল্লা এবং বিকাল ৩টায় দিরাই উপজেলায় সাধারণ মানুষ তাদের নেতার প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানাবেন। দিরাইয়ে তার শেষকৃত্য অনুষ্ঠিত হবে।
ঢাকেশ্বরী মন্দিরে সুরঞ্জিতকে সর্বস্তরের শ্রদ্ধা
রাজধানীর ঢাকেশ্বরী মন্দিরে হিন্দু ধর্মীয় আনুষ্ঠানিক শেষে আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা, বিভিন্ন ধর্ম-বর্ণের ভক্ত-শুভানুধ্যায়ী সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের মরদেহে ফুলেল শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। প্রথমেই ফুলেল শ্রদ্ধা নিবেদন করেন শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু। শ্রদ্ধা নিবেদন করেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য মুকুল বোস, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের মেয়র সাঈদ খোকন, সংসদ সদস্য হাজি সেলিম, ছবি বিশ্বাস, দলের ত্রাণ ও সমাজ কল্যাণ সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, আওয়ামী লীগের উপ-দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক পঙ্গজ দেবনাথ, অভিনেতা এটিএম শামসুজ্জামান, গণতন্ত্রী পার্টির নেতা মাহমুদুর রহমান, ন্যাপের নেতা ইসমাইল হোসেন, গণ আজাদী লীগের এসকে শিকদার, ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এসএম জাকির হোসাইনসহ সব শ্রেণির মানুষ। শ্রদ্ধা নিবেদন করেন রামকৃষ্ণ মিশনের মহারাজসহ ঢাকেশ্বরী মন্দিরের লোকজন। এ ছাড়া খ্রিস্টান মিশনারিজ, উদীচী, আদিবাসী ফোরাম, মহিলা পরিষদ, ঢাকা ক্লাব, কুমুদিনী ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট, পূজা উদযাপন কমিটি, স্থানীয় আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ, তাঁতী লীগসহ বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন শ্রদ্ধা নিবেদন করে। এ সময় আমির হোসেন আমু বলেন, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত চলে যাওয়ায় সিলেট তো বটেই সমগ্র রাজনৈতিক অঙ্গনেও শুন্যতা তৈরি হয়েছে। তিনি বলেন, আইনের বিষয়ে কোনো জটিলতা তৈরি হলে সবাই তার কাছে যেত। এমনকি স্পিকার নিজেও তার কাছে আইনি সহায়তা চাইতেন। তিনি চলে যাওয়ায় তার মতো আস্থা ভাজন একজন লোক পেতে হয়তো আমাদের অনেকদিন অপেক্ষা করতে হবে। প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী বলেন, মাত্র ২৬ বছর বয়সে তিনি সংসদ সদস্য হয়েছেন। এরপর নিজ যোগ্যতায় ৭ বার সংসদ সদস্য হয়েছেন। সংসদ, আইন এবং সংবিধান বিষয়ে অগাধ ধারণা রাখতেন। এমন বিরল প্রায় রাজনীতিকের চলে যাওয়া বড় শুন্যতা। সিপিবি নেতা হায়দার আকবর রনো বলেন, তিনি খুবই প্রাণবন্ত মানুষ ছিলেন। যা জানতেন তা বলতেন এবং মনে প্রাণে তা বিশ্বাস করতেন।
ঢাকেশ্বরী মন্দিরে সুরঞ্জিত সেনের মরদেহে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, তারমতো অভিজ্ঞ, সৎ ও নিষ্ঠাবান নেতা বিরল। তার সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত সম্পর্ক বহুকালের। আমি তাকে মহৎ প্রাণের মানুষ হিসেবে জানতাম। রাজনৈতিক সঙ্কটে তিনি গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য রাখতেন। মানুষের মাঝে আস্থা তৈরি করতেন। এরকম একজন পার্লামেন্টারি রাজনীতির নেতা চলে যাওয়ায় আমি শোকাহত ও মর্মাহত।
সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের সংক্ষিপ্ত জীবনী:
বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের অধিকারী ও মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত ১৯৩৬ সালের ৫ মে সুনামগঞ্জের আনোয়ারাপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। বাংলাদেশের সংবিধান প্রণেতা কমিটির অন্যতম সদস্য সুরঞ্জিতের রাজনৈতিক জীবন শুরু হয় বামপন্থী রাজনীতির মধ্য দিয়ে। স্বাধীন দেশের প্রথম সংসদসহ তিনি ৭ বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। তুখোড় পার্লামেন্টারিয়ান সুরঞ্জিত ছিলেন বর্তমান সংসদে আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি। সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত ১৯৬৫ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ও পরে ঢাকা সেন্ট্রাল ল কলেজ থেকে আইনে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। ল পাসের পর কিছু দিন তিনি আইন পেশায়ও যুক্ত ছিলেন। ছাত্রজীবনে ছাত্র ইউনিয়নের পক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলের ভিপি প্রার্থী হয়েছিলেন। ১৯৬৭ সালে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ) পিকিং ও মস্কো ধারায় দুই টুকরা হলে মওলানা ভাসানীকে ত্যাগ করে সুরঞ্জিত অধ্যাপক মোজাফফর আহমদের নেতৃত্বাধীন অংশে যোগ দেন। ১৯৭০-এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বাইরে ন্যাপ থেকে জয়ী হয়ে দেশবাসীকে তাক লাগিয়ে দেন তিনি। পরে ন্যাপের ভাঙনের পর গণতন্ত্রী পার্টি প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৮৬ ও ১৯৯১-এর জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সাথে জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচনে জয়ী হন। পঞ্চম সংসদের সদস্য থাকাকালেই আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে প্রথমে কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য এবং পরে দলটির সভাপতিম-লীর সদস্য হন। ১৯৯৬ সালের সংসদ নির্বাচনে সুরঞ্জিত ভোটে হেরে গেলেও পরে হবিগঞ্জের একটি আসনে উপ-নির্বাচন করে তিনি বিজয়ী হন। ওই সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা নিযুক্ত হন তিনি। ২০০১ ও ২০০৮ সালের নির্বাচনেও তিনি আওয়ামী লীগের মনোনয়নে নির্বাচিত হন। দলীয় মনোনয়নে এমপি হলেও ওয়ান-ইলেভেনের পরিবর্তিত রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে অন্য চার জন সিনিয়র নেতার সাথে সুরঞ্জিতও আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর পদটি হারান। ২০০৮ সালের নির্বাচনে মহাজোটের নিরঙ্কুশ বিজয়ের পর সুরঞ্জিতকে আইন মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পান। পরে ২০১১ সালের ২৮ নভেম্বর রেলমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন সুরঞ্জিত। কিন্তু ব্যক্তিগত সহকারীর দুর্নীতির দায় মাথায় নিয়ে পরের বছর (২০১২) ১৬ এপ্রিল মন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার পদত্যাগপত্র গ্রহণ না করে দফতরবিহীন মন্ত্রী হিসেবে তার মন্ত্রীসভায় রেখে দেন। এ সময় নির্দোষ প্রমাণিত না হলে সক্রিয় রাজনীতি করবেন না বলে সুরঞ্জিত ঘোষণা দেন। এপিএস’র অর্থ কেলেঙ্কারীর ঘটনা তদন্ত করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সুরঞ্জিত সেনকে নির্দোষ ঘোষণা করলে আবারও রাজনীতিতে সক্রিয় হন তিনি। ২০১৬ সালে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের সম্মেলন তিনি পুনরায় উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য মনোনীত হয়েছেন। তিনি ছিলেন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বোর্ডের একজন সদস্য। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বিজয়ী হলে তিনি আবারও আইন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি এ দায়িত্ব পালন করে গেছেন। সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের স্ত্রী জয়া সেনগুপ্ত একটি বেসরকারি সংস্থার শিক্ষাবিভাগে সমন্বয়কারী পদে দায়িত্ব পালন করেন। তাদের একমাত্র সন্তান সৌমেন সেনগুপ্ত কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার। পুত্রবধূ রাখী মৈত্রী সেনগুপ্ত পেশায় চিকিৎসক।
রাজনৈতিক অঙ্গনে শোক
বর্ষীয়ান রাজনীতিক সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের মৃত্যুতে রাজনীতি অঙ্গনে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী, বিএনপি চেয়ারপরসন, স্পীকার, সংসদের বিরোধীদলীয় নেতাসহ শোক জানিয়েছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা।
প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ প্রবীণ রাজনীতিবিদ ও বিশিষ্ট পার্লামেন্টারিয়ান সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। এক শোক বার্তায় প্রেসিডেন্ট বলেন, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত শুধুমাত্র একজন রাজনীতিবিদই ছিলেন না, তিনি ছিলেন একজন প্রবীণ পার্লামেন্টারিয়ান। তিনি দেশের প্রথম সংবিধান রচনার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। তিনি বলেন, দেশের সংসদীয় রাজনীতির ক্ষেত্রে সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের বিশাল অবদান জনগণ তাদের স্মরণে রাখবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক মন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত’র মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। এক শোক বার্তায় প্রধানমন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের কথা স্মরণ করে বলেন, তার মৃত্যুতে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে এক অপূরণীয় ক্ষতি হলো। তিনি বলেন, তার মৃত্যুতে দেশ এক নিবেদিতপ্রাণ রাজনীতিবিদকে হারালো আর আওয়ামী লীগ হারালো দলের একজন নিবেদিতপ্রাণ  নেতাকে। শেখ হাসিনা সংসদীয় গণতন্ত্র শক্তিশালী ও সুসংহত করতে সুরঞ্জিত  সেনগুপ্তের অবদানের কথাও স্মরণ করেন। তিনি বলেন, সুরঞ্জিত দেশের প্রথম সংবিধান রচনার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, তার এই মৃত্যুতে দেশ একজন অভিজ্ঞ সংসদ সদস্যকে হারালো।
আওয়ামী লীগের উপদেষ্টাম-লীর সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। তিনি বলেন, বাংলাদেশের জন্য সুরঞ্জিতের যে অবদান তা কখনও ভোলার নয়।
গতকাল দুপুরে এক শোকবার্তায় খালেদা জিয়া বলেন, স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন সংগঠক হিসেবে রাজনৈতিক জীবনে দেশমাতৃকার মুক্তির জন্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত যে অবদান  রেখেছেন তা জাতি কোনদিন ভুলবে না।
সুরঞ্জিতকে একজন দক্ষ ও প্রাজ্ঞ রাজনীতিক উল্লেখ করে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন,  দেশ ও দেশের মানুষের অধিকারের পক্ষে সবসময় সোচ্চার থেকেছেন। সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত ছিলেন জাতীয় রাজনীতির একজন বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব। তিনি তার বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনে গণমানুষের রাজনীতিতে নিজেকে সম্পৃক্ত রেখে বহুমাত্রিক গণতান্ত্রিক রাজনীতি ও সামাজিক অগ্রগতির পক্ষে ছিলেন বলিষ্ঠ কন্ঠস্বর। দেশের স্বাধিকারের আন্দোলন থেকে শুরু করে স্বাধীনতা ও মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকারের সংগ্রামে তার অবদান ছিল উল্লেখযোগ্য।
অপর এক শোকবাণীতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সুরঞ্জিত  সেনগুপ্তকে দেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন অনন্য সংগঠক ও প্রথিতযশা রাজনীতিক হিসেবে উল্লেখ করেন।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমাদের রাষ্ট্র গঠনে প্রয়াত সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের অনন্য ভূমিকা এ দেশবাসীর মনে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। এই দুঃসময়ে প্রয়াত সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের মতো একজন বর্ষীয়ান নেতা পৃথিবী থেকে বিদায় নেয়া দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে এক বড় ধরনের শুন্যতার সৃষ্টি হলো।
বিকল্পধারা বাংলাদেশের সভাপতি ও সাবেক প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী বলেছেন, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত তার সুন্দর ব্যঞ্জনাময় বক্তব্যের মাধ্যমে জাতীয় সংসদকে সমৃদ্ধ করেছেন। তিনি বলেন, সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের মৃত্যুর সংবাদ শুনে আমি মর্মাহত।
জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী প্রবীণ রাজনীতিবিদ, সাবেক মন্ত্রী ও সংসদ সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। তিনি এক  শোক বার্তায় দেশ ও গণমানুষের কল্যাণে সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের অবদানের কথা শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করে বলেন, তিনি (সুরঞ্জিত) ছিলেন গণমানুষের নেতা।
জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান ও সাবেক প্রেসিডেন্ট এইচএম এরশাদ প্রবীণ রাজনীতিবিদ ও সাবেক রেলপথ মন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, প্রবীণ এই পার্লামেন্টারিয়ানের মৃত্যুতে আমি গভীরভাবে শোকাহত।
জাতীয় সংসদে বিরোধী দলীয় নেতা বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ, সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের মৃত্যুতে শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের মৃত্যুতে জাতি আজ একজন অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদ হারালো যা সহজে পূরণ হবার নয়।
আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও সংসদ সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের মৃত্যুতে শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু। এক শোকবার্তায় মন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্তকে ষাটের দশকের উত্তাল রাজনীতি থেকে উঠে আসা বামপন্থি আন্দোলনের নেতা হিসেবে বর্ণনা করেন। ইনু বলেন, বিপুল জনপ্রিয়তায় ৭ বার নির্বাচিত সংসদ সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত দেশের জনসেবায় ও আইন প্রণয়নে যে ভূমিকা রেখেছেন, তা স্মরণীয় হয়ে থাকবে।
আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেছেন, সদ্য প্রয়াত সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত জাতীয় সংসদে একজন বিখ্যাত পার্লামেন্টেরিয়ান ছিলেন। তিনি যখন সংসদে বক্তৃতা করতেন, তখন সকলে তাকে তন্ময় হয়ে মন্ত্রমুগ্ধের মত শুনতেন। তার মৃত্যুতে দলেরও অনেক ক্ষতি হয়েছে।
অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত বলেন, পার্লমেন্ট লস্ট এ গ্রেট পার্লামেন্টেরিয়ান। সুরঞ্জিত খুবই জনপ্রিয় রাজনীতিক ছিলেন। তিনি দাঁড়ালে আর কেউ কথা বলতো না। তার চলে যাওয়া আমাদের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি।
বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন বলেন, পার্লামেন্ট সম্পর্কে তার যে জ্ঞান ছিল তা অতুলনীয়। পার্লমেন্টের সার্বভৌমত্বে আঘাত হয় এমন কিছু ভুল হলে তিনি সঙ্গে সঙ্গে তার প্রতিবাদ করতেন।
প্রবীণ রাজনীতিবিদ আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ।
বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার হর্ষ বর্ধন শ্রিংলাও সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের মৃত্যুতে  শোক প্রকাশ করেছেন। তিনি এক শোকবার্তায় বলেন, আমরা ড. জয়া সেনগুপ্ত ও তার পরিবারের অন্যান্য সদস্য, তার বন্ধুবান্ধব ও শুভাকাক্সক্ষীদের প্রতি আন্তরিক সমবেদনা জানাচ্ছি।
আওয়ামী  লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য প্রবীণ পার্লামেন্টারিয়ান সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (বাংলাদেশ ন্যাপ)। এক শোক বার্তায় দলের চেয়ারম্যান জেবেল রহমান গানি ও মহাসচিব গোলাম মোস্তফা ভুইয়া বলেছেন, সংসদীয় রাজনীতিতে সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত ছিলেন অন্যন্য প্রতিভার অধিকারী। তিনি ছিলেন অসাধারণ পার্লামেন্টারিয়ান। তার বাগ্মিতা, তীক্ষè যুক্তি আর উপস্থাপনার কোনো জুড়ি ছিল না।
আওয়ামী লীগ উপদেষ্টাম-লীর সদস্য, বিশিষ্ট পার্লামেন্টিয়ান সুরঞ্জিত সেন গুপ্ত’র মৃত্যুতে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ সভাপতি আবুল হাসনাত ও সাধারণ সম্পাদক মো. শাহে আলম মুরাদ এক যুক্ত বিবৃতিতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। নেতৃদ্বয় বলেন, বাবু সুরঞ্জিত সেন গুপ্তের মৃত্যুতে বাঙালী জাতি একজন অভিজ্ঞ দেশপ্রেমিক রাজনীতিক ও বিশিষ্ট সংবিধান বিশেষজ্ঞকে হারালো যা কখনোই পূরণীয় নয়।
সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের মৃত্যুতে দিরাই-শাল্লার সর্বত্র শোকের ছায়া
দিরাই উপজেলা সংবাদদাতা জানান, বর্ষিয়ান রাজনীতিক, সুনামগঞ্জ-২ (দিরাই-শাল্লা) আসনের সংসদ সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের মৃত্যুতে তার নির্বাচনী এলাকা দিরাই-শাল্লার সর্বত্র শোকের ছায়া বিরাজ করছে। ইতিমধ্যে এ দু’উপজেলার দলীয় কার্যালয়ে কালোপতাকা টাঙানো হয়েছে, শোক প্রকাশের অংশ হিসেবে দলীয় নেতাকর্মীরা বুকে কালো ব্যাজ ধারণ করেছেন। তাছাড়া আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীসহ দিরাই-শাল্লার সর্বস্তরের জনগণের মধ্যেও শোকের ছায়া নেমেছে। নেতাকর্মীরা অপেক্ষার প্রহর গুণছেন তাদের প্রিয় নেতার লাশ আসার। আর শেষ বারের মতো এক নজর দেখতে অপেক্ষায় রয়েছেন সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের নির্বাচনী এলাকা সুনামগঞ্জ-২ (দিরাই-শাল্লাবাসী)। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, (সোমবার) সকাল নয়টায় হেলিকপ্টারে করে লাশ সিলেটের উদ্দেশে নেয়া হবে। দশটায় সিলেটে লাশ শ্রদ্ধা প্রদর্শনের পর সাড়ে এগারোটায় লাশ নেয়া হবে সুনামগঞ্জে। সেখান থেকে লাশ শাল্লা নেয়া হবে দেড়টায়। সবশেষ বেলা তিনটায় মরদেহ পৌঁছাবে দিরাইয়ে। সেখানেই তার শেষকৃত্য সম্পন্ন হবে।
অনেক স্বপ্ন অপূর্ণই থেকে গেল : প্রাজ্ঞ ও বর্ষিয়ান এ রাজনীতিবিদের অনেক স্বপ্ন অপূর্ণই থেকে গেল। বিশেষ করে তার নির্বাচনী এলাকায় শেষ বয়সে এসে কিছু উন্নয়নমূলক কাজে হাত দিয়েছিলেন। এর কিছুটার শেষ দেখে যেতে পারলেও বেশ কয়েকটি বড় প্রকল্পের শেষ দেখতে পারলেন না। এরমধ্যে দিরাইয়ের কালনী নদীর ওপর নির্মিত কালনী সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন ও উদ্বোধন করলেও বাকি এপ্রোচ ও সংযোগ সড়ক দেখে যেতে পারেন নি। এছাড়া দিরাই থেকে শাল্লা পর্যন্ত রাস্তাটির শেষও দেখে যেতে পারলেন না এ এলাকার সন্তান সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত এমপি।
সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের বর্ণাঢ্য জীবন : সুনামগঞ্জ জেলার দিরাই উপজেলার বর্তমান পৌরশহরের আনোয়ারপুর নামক গ্রামে সেন পরিবারে ১৯৪৫ সালের ৫ মে সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের জন্ম হয়। তার বাবার নাম ডা. দেবেন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত ও মা শ্রীমতি বালা সেনগুপ্ত। দেবেন্দ্রনাথ ঢাকার বিক্রমপুর থেকে এসে সুনামগঞ্জের দিরাইয়ে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের স্ত্রীর নাম ড. জয়া সেন। তার পুত্র সৌমেন  সেনগুপ্ত ও পুত্রবধূ রাখী মৈত্রী ভৌমিক, সুরঞ্জিতের একমাত্র নাতি শুভজিত সেনগুপ্ত। দিরাই থানা সংলগ্ন দিরাই আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেন। এরপর রাজানগর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি, সুনামগঞ্জ কলেজ থেকে এইচএসসি, সিলেট এমসি কলেজ থেকে বিএ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৬৫ সালে ইতিহাসে এম এ ও সেন্ট্রাল ল’ কলেজ থেকে ১৯৭৩ সালে এলএলবি ডিগ্রি পাশ করে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবি হিসেবে পেশা জীবন শুরু করেন। এলএলবি ডিগ্রিধারী সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত ১৯৭১ সালে ৫নং সেক্টরের সাব-কমান্ডার হিসেবে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৭০ সালে ন্যাশনাল আওয়ামীপার্টি (ন্যাপ)-এর প্রার্থী হয়ে তৎকালীন সিলেট-২ (দিরাই-শাল্লা) আসনে নির্বাচন করে মেম্বার অব পার্লামেন্টারি এসেম্বলী (এমপিএ)-এর সদস্য নির্বাচিত হন। তার প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের বর্ষিয়ান রাজনীতিবিদ অক্ষয় কুমার দাস। ১৯৭৩ সালে আওয়ামী লীগের আরেক বর্ষীয়ান নেতা মরহুম আব্দুস সামাদ আজাদের কাছে পরাজিত হন। ১৯৭৯ সালে একতাপার্টি থেকে বর্ষিয়ান কমিউনিস্ট নেতা বরুণ রায়ের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে দ্বিতীয় বারের মতো বিজয়ী হন। ১৯৮৬ সালে তার প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন পিডিপির প্রার্থী গোলাম জিলানী চৌধুরী। তবে উচ্চ আদালতের এক আদেশের প্রেক্ষিতে কিছুদিন গোলাম জিলানী সংসদে দিরাই-শাল্লার প্রতিনিধিত্ব করেন। ১৯৯১ সালে জাতীয়পার্টির দবিরুল ইসলাম চৌধুরীকে পরাজিত করে ৪র্থ বারের মতো বিজয়ী হন। ১৯৯৫ সালে দীর্ঘ বাম রাজনীতির পাঠ চুকিয়ে আওয়ামী লীগে যোগদান করেন। ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে জাতীয় পার্টির নাছির উদ্দিন চৌধুরীর কাছে পরাজিত হন। পরে হবিগঞ্জ-২ (বানিয়াচং-আজমিরীগঞ্জ) থেকে উপ-নির্বাচনে বিজয়ী হন। ২০০১, ২০০৬ ও ২০০৮ সালের নির্বাচনে সুনামগঞ্জ-২ (দিরাই-শাল্লা) আসন থেকে নির্বাচিত হন। বর্ণাঢ্য দীর্ঘ ৫৫ বছরের রাজনৈতিক জীবনে তিনি ৭ বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এরমধ্যে শুধুমাত্র সুনামগঞ্জ-২ (দিরাই-শাল্লা) থেকে ৬ বার ও হবিগঞ্জ-২ (বানিয়াচং-আজমিরীগঞ্জ) থেকে ১ বার। সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বাংলাদেশের প্রথম খসড়া সংবিধান প্রণয়ন কমিটির সদস্য ও পঞ্চদশ সংবিধান সংশোধন কমিটির কো-চেয়ারম্যান ছিলেন। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত তিনি আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত

৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ