Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মশায় জীবন দুর্বিষহ

প্রকাশের সময় : ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১১:৪২ পিএম, ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬

মশা মারতে ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনের বাজেট ২৭ কোটি টাকা। এই টাকা দিয়েও মশা নির্মূল হচ্ছে না। বরং দিন দিন মশার যন্ত্রণা বাড়ছেই। ঢাকার বাসিন্দারা যেনো মশার কাছে অসহায়।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে নগরীতে মশানিধন কার্যক্রম নিয়মিত পরিচালনার কথা থাকলেও তা কার্যতবন্ধ। অভিযোগ উঠেছে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মশা নিধনের জন্য বরাদ্দ টাকার সিংহভাগই হাতিয়ে নিচ্ছে সংঘবদ্ধ সিন্ডিকেট। তবে সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে এ বিষয়টি অস্বীকার করা হয়েছে। তাদের দাবি, নিয়মিতই চলছে মশকনিধন কার্যক্রম। একই অবস্থা চট্টগ্রাম, খুলনা, চট্টগ্রাম, সিলেট ও কুমিল্লায়। সেখানকার বাসিন্দারাও মশার অত্যাচারে অতিষ্ঠ। চট্টগ্রাম মহানগরীর অভিজাত এলাকা থেকে শুরু করে সর্বত্রই মশার উপদ্রব আশংকাজনকহারে বৃদ্ধি পেয়েছে। মশার উপদ্রব খুলনাবাসীর নগর জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলেছে। মশার যন্ত্রণায় সিলেটবাসী অতিষ্ঠ হয়ে উঠলেও টনক নড়ছে না সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক) কর্তৃপক্ষের। কুমিল্লায় দিন দিন মশার যন্ত্রণা অসহনীয় পর্যায়ে গিয়ে ঠেকেছে।
রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে ও এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানা যায়, সিটি কর্পোরেশনের মশক নিধন কার্যক্রম অনেকটাই বন্ধ। বেড়ে গেছে মশার উপদ্রব। রাজধানীর অধিকাংশ এলাকার মানুষ মশার যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ। এসএসসি পরীক্ষা চলছে, কয়েকদিন পর থেকে এইচএসসি শুরু হবে। দুয়েক সপ্তাহের মধ্যে শুরু হবে স্কুল মাদ্রাসার ছাত্র-ছাত্রীদের প্রথম সাময়িক পরীক্ষা। মশার অত্যাচারে পরীক্ষার্থীদের লেখাপড়ায় মারাত্মক বিঘœ ঘটছে। সন্ধ্যার পর কোথাও একটু বসার উপায় নেই।
রাজধানীতে মশার উপদ্রব সহনীয় পর্যায়ে রাখতে ও এডিস মশার বংশবিস্তার রোধে প্রতি বছর জানুয়ারি থেকে মার্চ মাস সময়ে রাজধানীর বদ্ধজলাশয়, কচুরিপানা, নর্দমা পরিষ্কার এবং অ্যাডাল্টিসাইড ওষুধ স্প্রে করে থাকে ঢাকা সিটি কর্পোরেশন। কিন্তু এবার তা করা হয়নি। ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনে বিশেষ কোনো পরিচ্ছন্নতা অভিযানও পরিচালনা করা হয়নি। এতে রাজধানীতে অবাধে বেড়েছে মশার দৌরাত্ম্য এবং মশার যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ নগরবাসী। এডিস মশার উপস্থিতিও দেখা গেছে। বিভিন্ন হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগী ভর্তির খবরও পাওয়া যাচ্ছে। জানা গেছে, বর্তমানে দুই সিটির মশা নিধন কাজে অনেকটা স্থবিরতা নেমে এসেছে। যে কারণে দিন দিন বেড়েছে মশার বিস্তার। সিটি কর্পোরেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ধারণা, বৃষ্টিতে মশার ডিম নষ্ট হওয়ার পাশপাশি মশারও মৃত্যু হয়। তাই বর্ষা মৌসুমে উভয় কর্পোরেশন ওষুধ না ছিটিয়ে তারা পার পেতে চেয়েছিলেন। এছাড়া গত বছর মশকনিধন দিবসেও দুই সিটি কর্পোরেশনেরই এ নিয়ে কোনো কর্মসূচি ছিল না। ভুক্তভোগীদের মতে, মূলত দায়িত্বে অবহেলা ও এসব উদাসীনতার কারণেই রাজধানীতে বেড়েছে মশার যন্ত্রণা।
ঢাকা শহরের মশক নিধনের দায়িত্বে রয়েছে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনসহ স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের মশক নিবারণী দফতর। এই তিন প্রতিষ্ঠান মিলেও নগরবাসীকে মশার হাত থেকে রক্ষা করতে পারছে না। অথচ এ তিনটি নাগরিক সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান প্রতিবছর মশক নিধন খাতে কোটি কোটি টাকা খরচ করে। যা নিয়ে নগরবাসীর অভিযোগের শেষ নেই। চলতি অর্থবছরেও ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে এ খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে প্রায় ২৬ কোটি ৫০ লাখ টাকা। এর মধ্যে ডিএসসিসি বরাদ্দ রেখেছে ১২ কোটি ৫০ লাখ টাকা এবং ডিএনসিসির এ খাতে বরাদ্দ রয়েছে ১৪ কোটি টাকা। এছাড়া এক্ষেত্রে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের মশক নিবারণী দফতর বরাদ্দ না রাখলেও লোকবল দেয়াসহ এ বিষয়ে দুই ডিসিসিকে সার্বিক সহায়তা করে আসছে।
এদিকে গত কয়েক বছরের বাজেট পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে নগরীর মশক নিধনে বরাদ্দ রাখা হয় ডিসিসি দক্ষিণের ১০ কোটি ৫০ লাখ টাকা। উত্তরের ৮ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। এছাড়া, ২০১২-১৩ অর্থবছরে বরাদ্দ রাখা হয়েছিল ১৭ কোটি টাকা। ২০১১-১২ অর্থবছরে ১৪ কোটি টাকা। এভাবে নগরীর মশা নিধনের জন্য কোটি কোটি টাকার বরাদ্দ রাখা সত্ত্বেও সন্তোষজনক সুফল পাচ্ছে না নগরবাসী।
ডিএসসিসি ও ডিএনসিসি এবং ঢাকা মশক নিবারণী দফতরের সাতশ’র অধিক মশক নিধন শ্রমিক কাজ করছেন। এতে প্রতিটি ওয়ার্ডে অন্তত ৭ জন করে শ্রমিক কাজ করার কথা রয়েছে। এসব শ্রমিক সকালে নালা-নর্দমায় ওষুধ ছিটাবেন এবং বিকেলে স্প্রের মাধ্যমে মশাপ্রবণ এলাকাসহ প্রায় সব এলাকায় ঘুরে ঘুরে উড়ন্ত মশা নিধন করবেন। কিন্তু মশক নিধন শ্রমিকরা সঠিকভাবে তাদের দায়িত্ব পালন করছেন না বলে অভিযোগ রয়েছে। যদিও কেউ কেউ সপ্তাহে এক বা দু’দিন ওষুধ ছিটাচ্ছেন। বরাদ্দ ওষুধ সংঘবদ্ধ সিন্ডিকেট বিক্রি করে দেয় বলেও অভিযোগ উঠেছে। এর ফলে মশক নিধনে প্রতিবছর বিপুল পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ থাকলেও সুফল পাচ্ছে না নগরবাসী।
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এসএম সালেহ ভূঁইয়া বলেন, সংস্থার ৫টি অঞ্চলেই নিয়মিত মশক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এছাড়া মশক নিধন কার্যক্রম অধিকতর জোরদার করার লক্ষ্যে ডিএনসিসির স্বাস্থ্য বিভাগ গত ২০ থেকে ২৫ জানুয়ারি পর্যন্ত ৫ দিনের বিশেষ ক্রাশ প্রোগ্রামের মাধ্যমে মশক নিধন করেছে। কাউন্সিলরদের সহযোগিতা নিয়ে মশক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম আরও জোরদার করা হবে। এ জন্য পর্যাপ্ত জনবল ও ওষুধ রয়েছে। আরো ওষুধ আমদানি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এ কার্যক্রমে কেউ অনিয়ম করলে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
রাজধানীর অভিজাত এলাকা উত্তরা, বনানী, বারিধারা, গুলশান ১ ও ২, মহাখালী, খিলগাঁও, তেজগাঁও শিল্প এলাকা, সাততলা বস্তি, রামপুরা, বাড্ডা, মধ্যবাড্ডা, বনশ্রী, টিটিপাড়া, মদিনাবাগ, মাদারটেক, আহম্মদবাগ, মুগদাপাড়া, গোড়ান, কুড়িল, গাবতলী, পাইকপাড়া, রূপনগর, মিরপুর-১, ২, ১০ ও ১২ নম্বর, কালশী, পল্লবী, কাফরুল, ক্যান্টনমেন্টের মাটিকাটা, ধানমন্ডি, মোহাম্মদপুর, শ্যামলী, কল্যাণপুর, পুরান ঢাকা, লক্ষ্মীবাজার, সদরঘাট, পল্টন, মতিঝিল, গোপীবাগ, মানিকনগর, কমলাপুর, মগবাজার, যাত্রাবাড়ী, ওয়াপদা কলোনি, দনিয়া, জুরাইন, সায়েদাবাদ, শাহজাহানপুর, আজিমপুর, লালবাগ ও বেড়িবাঁধসংলগ্ন এলাকা, হাজারীবাগ, কামরাঙ্গীরচর এলাকাবাসীর মশা নিয়ে অভিযোগের শেষ নেই।
বনানী এফ ব্লকের বাসিন্দা আমজাদ হোসেন বলেন, গোডাইন বস্তি এলাকায় দুটি ডোবা গত দুই বছরেও পরিষ্কার করা হয়নি। সিটি কর্পোরেশনকে বারবার জানানোর পরও কোনো কাজ হচ্ছে না।
আরামবাগের বাসিন্দা স্কুল ছাত্রী উর্মী আক্তার বলে, সন্ধ্যার পরে আমরা বাসায় পড়ার টেবিলে বসতে পারি না। মশার কয়েল জ্বালিয়েও মশার উৎপাত থেকে রেহাই পাওয়া যায় না। আম্মু সারাক্ষণ পাশে বসে থেকে মশা তাড়ান। রাজধানীর অভিজাত এলাকাসহ সারা ঢাকা শহরের চিত্র এটি।
বিশেষ করে ভিআইপি এলাকার বাসিন্দাদের ভয় আরও বেশি। কারণ এডিস মশার বিস্তার বনেদি এলাকাতেই বেশি। এসব এলাকার বাসিন্দারা জানান, বেশ কিছু দিন ধরে সিটি কর্পোরেশনের মশকনিধন কার্যক্রম তাদের চোখে পড়েনি। তাই ভুক্তভোগীরা এ ব্যাপারে দুই সিটি কর্পোরেশনকে সময়মতো প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
চট্টগ্রামে মশার যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ নগরবাসী
আইয়ুব আলী, চট্টগ্রাম ব্যুরো থেকে জানান, মশার যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে নগরবাসী। চট্টগ্রাম মহানগরীর অভিজাত এলাকা থেকে শুরু করে সর্বত্রই মশার উপদ্রব আশংকাজনকহারে বৃদ্ধি পেয়েছে। এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের সংশ্লিষ্ট বিভাগে উদাসীনতা পরিলক্ষিত হচ্ছে। মশার উপদ্রব বৃদ্ধি পাওয়ায় বর্তমানে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের লেখাপড়ায় গুরুতর ব্যঘাত ঘটছে। কয়েলসহ নানারকম ¯েপ্র ব্যবহার করেও রেহাই মিলছে না মশার উপদ্রব থেকে। মশার কামড়ে অতিষ্ঠ হয়ে বাসাবাড়িতে রাতে কয়েল জ্বালাতে গিয়ে অনেক জায়গায় অগ্নিকা-ের ঘটনা প্রতিনিয়ত ঘটছে।
নগরীর ঝোঁপ-ঝাড় ডোবা, নালা-নর্দমা, পুকুর, জলাশয়, মশার প্রজনন ক্ষেত্র। দীর্ঘদিন ধরে এগুলো পরিষ্কার না হওয়ায় মশার উৎপাত বৃদ্ধি পেয়েছে। এদিকে নগরীতে ম্যালেরিয়া আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। অভিজাত আবাসিক এলাকাগুলোতে মশার উপদ্রব যেমন আছে তেমনি নগরীর ঘনবসতি পাড়া-মহল্লা এবং বস্তিতে উপদ্রব আরও বেশী। সন্ধ্যার আগ থেকেই বাসা-বাড়িতে কয়েল জ্বালাতে হচ্ছে। কয়েল এবং ¯েপ্র দেয়ার পরও মশার উৎপাত কমছেনা। স্থানীয়রা জানায়, মশার প্রজনন ক্ষেত্রে নিয়মিত ওষুধ ছিটানো হচ্ছে না। মহানগরীর অনেক এলাকায় খাল-নালায় পানি জমে আছে। ডোবাগুলোতেও পানি এবং কচুরিপানাসহ আবর্জনা জমেছে। এসব এলাকায় মশার প্রজনন হচ্ছে। বিশেষ করে বস্তি এলাকায় বাসাবাড়ির আবর্জনা ও বর্জ্যরে পানিতে মশার প্রজনন বাড়ছে।
নগরীর বিভিন্ন ওয়ার্ডের বাসিন্দারা অভিযোগ করেছেন, সিটি কর্পোরেশনের কর্মীরা নিয়মিত মশার ওষুধ ¯েপ্র করছে না। তাছাড়া পরিচ্ছন্ন কর্মীদের অবহেলার কারণেও অনেক এলাকায় বিশেষ করে নগরীর অনুন্নত এলাকাগুলোর নালা-নর্দমা আবর্জনায় জমে আছে। এসব নালা-নর্দমাতেও মশার প্রজনন হচ্ছে।
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা শফিকুল মান্নান ছিদ্দিকী দৈনিক ইনকিলাবকে জানান, নগরীর ৪১ ওয়ার্ডে কাউন্সিলরদের তদারকিতে মশার ওষুধ ছিটানো হচ্ছে। প্রতি ওয়ার্ডে ৪/৫ জন ¯েপ্র ম্যান রয়েছে। তিনি বলেন, প্রতি ওয়ার্ডে পূর্ণাঙ্গ মশা ধ্বংসকারী ওষুধ এলআলডি ছিটানোর পাশাপাশি মশার ডিম ধ্বংসকারী ওষুধ লারভি সাইটও ছিটানো হচ্ছে। মশার উপদ্রব সম্পর্কে প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা প্রত্যেকের বাড়ির সেফটি ট্যাংক পরিষ্কার রাখার উপর বিশেষ গুরুত্বারোপ করেন। তিনি নগরবাসীকে স্বউদ্যোগে সেফটি ট্যাংকে কালো তেল বা কেরোসিন ছিটানোর আহ্বান জানিয়ে বলেন, নগরীর প্রত্যেক ওয়ার্ড অফিস থেকে কালো তেল সরবরাহ করা হচ্ছে।
এদিকে চট্টগ্রাম সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন ময়লা-আবর্জনা ও জঞ্জালমুক্ত সবুজ নগরী গড়তে মশার জন্মস্থান ঝোঁপ-ঝাড়, জলাশয়, ডোবা, পুকুর, নালা-নর্দমা বা পানি জমে থাকা এমন স্থানসমূহ পরিষ্কার রাখার জন্য নগরবাসীর প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি আবর্জনাদি প্রতিদিন সন্ধ্যা ৭টা হতে রাত ১১টার মধ্যে নিকটস্থ ডাস্টবিন ও কন্টেইনারে আবর্জনা ফেলার আহ্বান জানান। একইসাথে মেয়র নালা-নর্দমা, খাল, রাস্তা এবং ফুটপাতের জায়গা উন্মুক্ত রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। এসব নির্দেশনা অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে ‘স্থানীয় সরকার (সিটি কর্পোরেশন) আইন-২০০৯’ ও অন্যান্য আইন অনুযায়ী শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে তিনি সাফ জানিয়ে দিয়েছেন।
খুলনা মহানগরবাসী মশার দাপটে চরম অতিষ্ঠ
এ, টি, এম, রফিক, খুলনা থেকে জানান,
মশার দাপটে নগরবাসীর জন-জীবন দারুণভাবে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। অসহনীয় এই মশার উপদ্রবে নগর জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলেছে। কেসিসি তাদের সাধ্যমত মশা নিধন করতে আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়েও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে চরম ভাবে ব্যর্থ হচ্ছে। সে কারণে মশার কামড়ে নাকাল হচ্ছে নগরবাসী। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কেসিসির কঞ্জারভেন্সি বিভাগ প্রতিদিন বিকালে ৮টি দলে বিভক্ত হয়ে ৮টি ওয়ার্ডে ফগার মেশিন দিয়ে মশা মারার ওষুধ প্রয়োগ করছে। ৩১টি ওয়ার্ডসহ নগরীতে মশা মারার কর্মসূচি চললেও মশার দাপট কোনভাবেই কমছে না। বরং তা দিন দিন বেড়েই চলেছে। বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে উঠেছে স্বয়ং এবং কেসিসিও।
কর্পোরেশনের কঞ্জারভেন্সি শাখা সূত্রে জানা গেছে, নগরীর মশার প্রকোপ কমিয়ে আনতে মশক নিধনে কর্পোরেশন প্রতিটি ওয়ার্ডে ৮টি মেশিন দিয়ে লার্ভিসাইড ¯েপ্র করছে। লার্ভিসাইড ¯েপ্র’র ক্ষেত্রে হুইল মাউটেন্ড মেশিনও ব্যবহার করা হচ্ছে। সাধারণ নাগরিকদের অভিযোগ, মশক নিধনে কেসিসি কার্যতঃ তেমন পদক্ষেপ না নেয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। ফলে মশার অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে নগর জীবন। মানুষের অশান্তি বেড়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে শিক্ষার্থীরা। কার্যকরী পদক্ষেপের অভাবে মশার উপদ্রবে অতিষ্ঠ নগর জীবন। কয়েল বা ¯েপ্র ব্যবহার করেও কোন সুরাহা পাচ্ছেন না সাধারণ মানুষ। রাত বা সন্ধ্যায়ই নয় দিনের বেলায়ও এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পাচ্ছেন না তারা। তবে সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে পরীক্ষার্থীরা। কেসিসি বলছে, ঋতু পরিবর্তন ও নগরবাসীর অসচেতনতার কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি হচ্ছে। মশক নিধনের কাজ চলছে। আপাতত অপচয় রোধে ওষুধ কিছুটা কম প্রয়োগ হচ্ছে। তবে সময়মতো সঠিকভাবে ওষুধ প্রয়োগ করলে মশা কমে যাবে। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে মশা নিধনে কেসিসি’র তেমন কোন পদক্ষেপ চোখে পড়ছে না। নগরীর জনগণ জানান ঘরে-বাইরে সর্বত্র মশা। দিন নেই, রাত নেই সব সময় মশার উৎপাত। ছেলেমেয়েরা মশার কারণে সঠিকভাবে লেখাপড়া করতে পারছে না।
নগরীর টুটপাড়া এলাকার বিল্লাল আহম্মেদ জানান, ইদানিং মশা খুব বিরক্ত করছে। রাতে তো মশা বিরক্ত করছেই আর দিনের বেলাও মশার কয়েল না জ্বালিয়ে লেখাপড়া করতে পারছে না। খুলনা সদর (জেনারেল) হাসপাতালের কয়েকজন চিকিৎসক জানান, মশার কামড়ে ম্যালেরিয়া ও ডেঙ্গু জ্বরসহ বিভিন্ন রোগ হতে পারে। এজন্য সকলকে সচেতন হতে হবে। মশক নিধনে মুখ্য ভূমিকা রাখতে হবে সংশ্লিষ্ট সংস্থার। কেসিসি’র কঞ্জারভেন্সি অফিসার মোঃ আনিসুর রহমান জানান, ঋতু পরিবর্তন, সেফটি ট্যাংকের আউট-লেট উন্মুক্ত রাখা, ড্রেনের পানি নিষ্কাশনে ব্যবস্থা না থাকায় ও ঝোঁপ-ঝাড় বা ফুলের বাগান পরিষ্কার না করার কারণে মশার উপদ্রব বেড়েছে। এছাড়া শহরের আশপাশ থেকেও মশা আসছে।
সিলেট কমেছে শীত, বেড়েছে মশা সুখনিদ্রায় সিটি করপোরেশন !
ফয়সাল আমীন, সিলেট থেকে জানান,
শীত কমার সঙ্গে সঙ্গে সিলেট নগরীতে মশার উপদ্রব বেড়েছে। বলতে গেলে যেন মশার রাজত্ব চলছে সিলেট নগরীতে। মশার যন্ত্রণায় নগরবাসী অতিষ্ঠ হয়ে ওঠলেও টনক নড়ছে না সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক) কর্তৃপক্ষের। দিব্যি তারা রয়েছেন সুখনিদ্রায়। সিটি করপোরেশেন সূত্রে জানা গেছে, এ বছর সিসিকের উদ্যোগে নগরীর কোথাও মশার ওষুধ ছিটানো হয়নি। ফলে মশার উপদ্রব বেড়েছে। সিটি করপোরেশনের নির্বাহী কর্মকর্তা এনামুল হাবীব জানিয়েছেন, গত নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসে নগরীতে মশার ওষুধ ছিটানো হয়েছে। ওই সময় নগরীর জিন্দাবাজার, চৌহাট্টা, বন্দবাজার, জল্লারপাড় এলাকায় মশার ওষুধ ছিটানো হয়েছে বলে দাবি করেছেন সিসিকের ওই কর্মকর্তা। তবে এনামুল হাবিবের এই দাবি মানতে নারাজ সংশ্লিষ্ট এলাকার লোকজন। তাদের এলাকায় কেউ মশার ওষুধ ছিটাতে যায়নি বলে অভিযোগ করছেন ওইসব এলাকার বাসিন্দারা। নগরীর জল্লারপাড়ের বাসিন্দা সোহেল আহমদ জানান, তাদের এলাকায় মশার উপদ্রব খুব বেশি বেড়েছে। মশার যন্ত্রনায় মহল্লাবাসী অতিষ্ঠ। কিন্তু সিটি করপোরেশন গত মঙ্গলবার বিকাল পর্যন্ত তাদের এলাকায় কোন মশার ঔধষ ¯েপ্র করেনি। শুধু সুহেল নয়, জিন্দাবাজারের কাজি ইলিয়াছের বাসিন্দা ফাহিম আহমদ, বন্দবাজার পুরান লেনের বাসিন্দা শাহীন আহমদ, চৌহাট্টার বাসিন্দা নূরুল মিয়া জানিয়েছেন, বিগত কয়েক ৬ মাসের মধ্যে তাদের এলাকায় কেউ মশা নিধনের ওষুধ দেয়নি। নগরীর শিবগঞ্জ লাকড়িপাড়া, লামাপাড়া, শাপলাবাগ, টিলাগড়, শাহী ঈদগাহ, মেজরটিলা, লামাবাজার, মধুশহীদ, মাছুদীঘিরপাড়, পশ্চিম পীর মহলা, কুমারপাড়া, মিরাবাজার, মির্জাজাঙ্গাল এবং লোহারপাড়াসহ বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, গত ১ বছর তাদের এলাকায় সিটি করপোরেশেনের পক্ষ থেকে কোন ধরনের মাশার ওষুধ ছিটানো হয়নি। তাই তাদের এলাকায় মশা উৎপাত বেড়ে গেছে। তারা জানিয়েছেন, শুধু রাতেই নয়, দিনের বেলায়ও মশার কবলে পড়তে হচ্ছে। মশার উপদ্রব অসহনীয় পর্যায়ে চলে যাওয়ায় নিরুপায় হয়ে অনেকে বাসাবাড়ি, অফিস ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে দিনেরবেলায়ও কয়েল জ্বালিয়ে রাখা হচ্ছে। এদিকে, সিটি করপোরেশনের একটি বিশ্বস্ত সূত্র জানিয়েছে, প্রতিবছরই সিটি করপোরেশেনর পক্ষ থেকে মশা নিধনের নামে আলাদা টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। বরাদ্দকৃত টাকা থেকে মশার ওষুধও ক্রয় করা হয়। কিন্তু ওইসব ওষুধ সঠিকভাবে ব্যবহার করা হয়না। আর যা ব্যবহার করা হয়, তা অনেক অল্প। এছাড়াও যে সব এলাকায় মশার ওষুধ ¯েপ্র করা হয় তাতে পানি মেশানো থাকে বলে জানিয়ে ওই সূত্র। সূত্র আরো জানায়, বরাদ্দকৃত টাকা থেকে যেসব মশার ওষুধ ক্রয় করা হয় তা অনেকটা সিটি করপোরেশনে পড়ে থাকে। প্রয়োজনবোধে ওইসব ওষুধ সিটি করপোরেশনসহ সরকারী উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বাসা বা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বাসার আশপাশে ¯েপ্র করা হয়। তাই তারা সারা বছর আরাম করে বসবাস করে থাকেন। সিসিক’র প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এনামুল হাবীব জানান, গত ভছরের শেষের দিকে নগরীর নালা, ডোবা, খাল, ফুটপাত ও ড্রেনগুলোতে মশার ওষুধ ¯েপ্র করা হয়। এবারও ফের মশার ওষুধ ¯েপ্র করা হবে। এরপরও যদি কোন এলাকায় মশা নিধন না হয়। এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে আবেদন করলে সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে মশার ওষুধ ছিটানোর যথাযথ ব্যবস্থা নেয় হবে জানান তিনি।
ওয়ার্ডকেন্দ্রিক ওষুধ স্প্রে কার্যক্রমে স্থবিরতা
মশার কামড় জ্বালায় অতিষ্ঠ কুমিল্লা নগরবাসী
সাদিক মামুন, কুমিল্লা থেকে জানান,
মশার পাল কেবল সন্ধ্যা নয়, সকাল, বিকেল, আর রাতে ভ্যান ভ্যান করে ঘিরে ধরছে মানুষকে। কুমিল্লা নগরীর বাসাবড়ি, ব্যবসাকেন্দ্র, সান্ধ্যকালীন অফিসসহ সর্বত্রই মশার উপদ্রব সহ্য করতে হচ্ছে লোকজনকে। মশার কামড় জ্বালায় অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে নগরবাসী। প্রতিটি ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের স্প্রে মেশিন দেয়া হলেও মশার উৎপাতের এসময়টিতে ড্রেন মেরামত, সংস্কার কাজের অজুহাতে স্থবির হয়ে আছে ওষুধ স্প্রে কার্যক্রম। স্থবিরতার বিষয়টি শুনে মেয়র ক্ষুব্ধ। তিনি বলেছেন নগর ভবনে মশা মারার পর্যাপ্ত ওষুধ রয়েছে। কিন্তু ওয়ার্ড কেন্দ্রিক কেনো স্প্রে কার্যক্রমে স্থবিরতা তা খতিয়ে দেখা হবে।
জানা গেছে, কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে প্রতিটি ওয়ার্ডে একটি করে ফগার মেশিন দেয়া হয়েছে ঠিকই। তবে এবারের শীত মৌসুমে ওয়ার্ডগুলোতে ফগার মেশিন থেকে স্প্রে কার্যক্রম যথাযথভাবে পরিচালিত হয়নি। ফলে মশার বংশ বৃদ্ধি রোধে লার্ভিসাইডিংয়ের কাজটি ব্যাপকভাবে না হওয়ায় নগরবাসীরা মশার জ্বালা থেকে রেহাই পাচ্ছেনা। নগরীর স্কুল, কলেজগুলোতে এসএসসি ও অনার্স পরীক্ষা পরীক্ষা চলছে। পরীক্ষার এসময়টিতে বাসা-বাড়িতে মশার উপদ্রবে পরীক্ষার্থীদের পড়ার টেবিলে মারাত্মক ব্যাঘাত ঘটছে।
নগরীর বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দারা জানান, বর্তমানে বাজারে প্রচলিত স্প্রে ও কয়েল ব্যবহার করেও মশার আক্রমন থেকে রক্ষা পাওয়া যাচ্ছে না। তাছাড়া মাস দুয়েক ধরে এলাকায় সিটি কর্পোরেশন থেকে মশার ওষুধ ছিটানোর কাজও চোখে পড়ছে না। ওয়ার্ড কাউন্সিলররা শীতের পুরো সময়টাতে মশার ওষুধ ছিটানোর কাজটা করলে মশার উৎপাত এতোটা বাড়তো না। তাই কাউন্সিলরদের প্রতি অনুরোধ, মশা মারতে কামান না দাগিয়ে মশার ওষুধ স্প্রে করার কাজটা যেন যথাযথ তদারকির মাধ্যমে পরিচালনা করা হয়’। এদিকে ওয়ার্ড পর্যায়ে স্প্রে কার্যক্রমে স্থবিরতা প্রসঙ্গে কয়েকজন ওয়ার্ড কাউন্সিলর জানান, চলতি শুষ্ক মৌসুমে ড্রেনের মেরামত ও সংস্কার কাজ শুরু হওয়ায় ড্রেনগুলোতে ফগার মেশিনের মাধ্যমে স্প্রে কার্যক্রম চালু রাখা যায়নি। আশা করা যাচ্ছে, এক সপ্তাহের মধ্যে স্প্রে কার্যক্রম চালু হবে এবং মশার উপদ্রবও কমে যাবে।
মশা প্রসঙ্গে কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন মেয়র মনিরুল হক সাক্কু বলেন, নগরীতে মশার উপদ্রব বেড়েছে এটা আমিও অনুভব করি। কিন্তু মশা নিধনের সব ব্যবস্থা রয়েছে সিটি কর্পোরেশনের। প্রতিটি ওয়ার্ডে মশার ওষুধ ছিটানোর মেশিন কাউন্সিলরদের অফিসে দেয়া আছে। নগর ভবনে মশা মারার পর্যাপ্ত ওষুধ রয়েছে। কাউন্সিলরগণ অনায়াসে এখান থেকে ওষুধ নিতে পারেন। আবার অফিস, আদালত বা ব্যক্তি পর্যায়ে কেউ আবেদন করলেও আমাদের লোকজন মেশিন নিয়ে সংশ্লিষ্ট স্থানে ওষুধ ছিটিয়ে আসে’। ওয়ার্ড পর্যায়ে বর্তমানে মশার ওষুধ স্প্রে কার্যক্রমে স্থবিরতার বিষয়টি শুনে ক্ষোভ প্রকাশ করে মেয়র সাক্কু বলেন, ‘ড্রেন মেরামত বা সংস্কার কাজের জন্য পাড়া মহল্লার নালা, ডোবা, বাড়ি-ঘরের ভেতরের ড্রেন, নর্দমায় মশার ওষুধ ছিটানোর কাজ বন্ধ থাকবে কেনো। এটা নিয়ে অবশ্যই কাউন্সিলরদের সঙ্গে কথা বলবো’। মেয়র সাক্কু আরও বলেন, ‘নগরীর বিভিন্ন এলাকায় ব্যক্তি মালিকানার পুকুর, বাড়ির ভেতরে ডোবা নালায় ময়লা আবর্জনা, কচুরিপানা জন্মিয়ে মশার চাষ করা হচ্ছে। আমি মনে করি, ওয়ার্ডবাসীরা নিজেদের বাড়ির আঙ্গিনা, বাড়ির ভেতরের ড্রেন, নর্দমা বা পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থার জায়গা সবসময় পরিষ্কার রাখার দায়িত্বটা নিজেরা করে নিলে এসব স্থানে মশা জন্মানোর কোন সুযোগ থাকবে না। সর্বোপরি সবার সহযোগিতায় আমাদের সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা থাকবে মশার যন্ত্রণা থেকে নগরবাসীকে মুক্ত করা।
শীত কমার সাথে শুরু হয়েছে মশার দাপট
রাজশাহী ব্যুরো জানায়,
শীত কমার সাথে সাথে স্বরূপে ফিরেছে রাজশাহী মহানগরীতে। শীতের জন্য জানালা বন্ধ থাকলেও এখন তা খুলেছে। আর সুযোগ নিয়ে মশাও দাপট দেখাচ্ছে। হঠাৎ করে মশার উৎপাত বেড়ে যাওয়ায় বিব্রত নগর জীবন। নগরীর ত্রিশটা ওয়ার্ড জুড়ে শুরু হয়েছে মশার দাপট। নগরীর ড্রেনগুলোর পানিবদ্ধতা আর দক্ষিণের মরা পদ্মার আবদ্ধ পানিতে মশার বংশ বিস্তার ঘটছে। বিকেল হতে না হতে ঝাঁক ঝাঁক মশার আক্রমণ শুরু হচ্ছে। মশক নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ সিটি কর্পোরেশন। মশা মারার জন্য প্রতি বছর থাকে প্রায় কোটি টাকার বাজেট। মশক নিধনের নামে চলে ক্র্যাস প্রোগ্রাম। কিন্তু মশার বংশ কতুটুকু ধ্বংস হয় তা প্রশ্ন রয়ে যায়।
আগে মশা মারার জন্য কামান দাগা হতো অর্থাৎ ফগার মেশিনের সাহায্যে ধোঁয়ার গোলা ছুড়ে। এখন তা বন্ধ রয়েছে। অভিজ্ঞজনরা বলছে মশক নিধনের জন্য যে ওষুধ ব্যবহার করা হয় তা মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর। বিশেষ করে শিশুদের জন্য। তাছাড়া এতে অন্য উপকারী কীট পতঙ্গ মরে যায়। তাছাড়া ক্ষতি হয় আমের মুকুলের। কুড়ি ও সাতাশ নম্বর ওয়ার্ডের কিছু অংশ জুড়ে রয়েছে রেশম ফ্যাক্টরী আর গবেষনাগার। আশেপাশে স্প্রে করলে তার প্রভাব পড়ে গুটি পোকার উপর। তাই ভিন্ন পদ্ধতিতে ড্রেনের মধ্যে মশা নিধন তেল ছিটানো হয়। লক্ষ উৎসেই ধ্বংস করা যায়। ফগার মেশিন দিয়ে ধোঁয়া ছাড়ার চেয়ে খরচ অনেক কম। তাছাড়া ফগার মেশিন দিয়ে এক সাথে সব এলাকায় নিধন কর্ম চালানো যায়না। ফলে এক ওয়ার্ড থেকে অন্য ওয়ার্ডে যাবার পর ফের পুরানো এলাকায় উৎপাত হয় মশার। ফলে মশা আর মরেনা। সরেজমিন পরিদর্শন করে দেখা গেছে নগরীর ড্রেনগুলো সবচেয়ে নিরাপদস্থল মশা প্রজননের জন্য। ময়লা ফেলার কারনে বড় বড় ড্রেনগুলোয় প্রবাহ নেই। সৃষ্ট হয়েছে পানিবদ্ধতার। গভীরতা হারিয়েছে। মহল্লার ড্রেনগুলো কর্পোরেশনের ওয়ার্ডের কর্মীরা মাঝে মধ্যে পরিস্কারও লারভা নিধন তেল ছিটালেও ভিন্ন চিত্র বড় রাস্তার পাশে বিপনী বিতানগুলোর সামনের ড্রেন। সব ড্রেন স্লাব দিয়ে ঢাকা। এসব স্লাবের উপর বসেছে দোকানপাট। অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সামনের স্লাবের উপর টাইলস বসিয়েছে। কেউ বাড়িয়েছে দোকানের পরিধি। নীচে যে ড্রেন আছে তা বোঝাই যায়না। ফলে এসব ড্রেন পরিষ্কার করা যায়না। কর্পোরেশনের কর্মীদের মাঝে মধ্যে ব্রাশ দিয়ে খোঁচা খুচি করে দায় সারে। এসব স্লাব ওঠানোর ক্ষমতা তাদের নেই। ফলে প্রায় প্রত্যেক ড্রেন মশা প্রজননের উত্তম আধারে পরিনত হয়েছে। সিটি কর্পোরেশনের সংশ্লিষ্ট সুত্র জানান নগরীর প্রধান প্রধান সড়কে বেশ কিছু বড় ড্রেন করেছি। কিন্তু এসব ড্রেনের উপর বসে গেছে দোকান পাট। নানামুখি চাপের কারনে এদের বিরুদ্ধে উচ্ছেদ অভিযান চালানো যায়না। আর নিয়মিত পরিস্কার করার সুযোগ না থাকার কারনে এসব ড্রেন কোন কাজে আসছেনা। বরং নগরবাসীর যন্ত্রণার কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
নগরীতে মশার দাপট শুরু হওয়ায় এর নিয়ন্ত্রণে ইতোমধ্যে দায়িত্বপ্রাপ্ত মেয়র নিযাম উল আযীম কর্পোরেশনের পরিচ্ছন্ন বিভাগ, কর্মকর্তা ও কাউন্সিলরদের নিয়ে বৈঠক করেছেন। কর্মীদের যার যার দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করার নির্দেশনা দেন। মশক নিয়ন্ত্রণে সাধ্যমত সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন। তিনি এজন্য নগরবাসীর সহযোগিতা কামনা করেন। ড্রেনের মধ্যে ময়লা ফেলা থেকে বিরত থাকার আহবান জানান। প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা শেখ মো: মামুন জানান, মশক নিধনের জন্য চারজন কর্মকর্তাসহ প্রায় একশো সাইত্রিশ জন কর্মী কাজ করে যাচ্ছে। মশার এখন প্রজনন মৌসুম। লারভা নিয়ন্ত্রণের জন্য কাজ শুরু করেছি। খুব শিঘ্রই ফগার মেশিন নিয়ে কাজ শুরু হবে। মশা মারা ওষুধ সম্পর্কে বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কর্তৃক অনুমোদিত ওষুধ ব্যবহার করা হয়। এতে জনস্বাস্থ্যের কোন হুমকি নেই। তিনিও সবার সহযোগিতা কামনা করেন।



 

Show all comments
  • সুজন ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ১২:৩০ পিএম says : 0
    বাস্তব অবস্থা এর চেয়েও খারাপ....
    Total Reply(0) Reply
  • Osman ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ১২:৩০ পিএম says : 0
    Thanks to The Daily Inqilab
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মশায় জীবন দুর্বিষহ

২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ