বাংলাদেশের জনজীবন ও অর্থনীতিতে ফারাক্কা বাঁধের বিরূপ প্রতিক্রিয়া
ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে প্রবাহিত গঙ্গার ওপর নির্মিত ভারতের ফারাক্কা বাঁধের প্রতিক্রিয়া যেমন বাংলাদেশের অর্থনৈতিক
মুহাম্মদ আবদুল কাহহার : রামপালে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প বাতিলের কর্মসূচি একটি জাতীয় ইস্যু। এই ইস্যুতে গত ২৬ জানুয়ারি সুন্দরবন রক্ষার দাবিতে রাজধানীতে হরতালপালনকারী দুই জনকে আটক করে পুলিশ। এই ফুটেজ নেওয়ার সময় এটিএন নিউজের ক্যামেরা পারসন আব্দুল আলীম ও রিপোর্টার এহসান বিন দিদারকে শাহবাগ থানার সামনে মারধর করে পুলিশের একটি টিম। নির্যাতন থেকে মুক্তি, সাংবাদিকদের পেশাগত অধিকার ও মর্যাদার দাবিতে ১৯৯৩ সাল থেকে প্রতিবছর ৩ মে বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস পালিত হয়ে আসছে। অথচ এরপরও অবস্থার কোনো উন্নতি হচ্ছে না, বরং এদেশে সাংবাদিকদের পেশাগত দায়িত্বপালনকালে নিরাপত্তাহীনতার ঝুঁকি ক্রমশই বাড়ছে। আসকের পরিসখান মতে, ২০১৬ সালে ১১৭ জন সাংবাদিক নির্যাতন, হয়রানি ও আক্রমণের শিকার হয়েছেন। এদের বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অপরাধের খবর প্রকাশ করায় সাংবাদিকদের ওপর হামলা-মামলা দিয়ে নির্যাতন করা হচ্ছে। ২০১৩ সালে বাংলাদেশে রাষ্ট্রযন্ত্রের মাধ্যমে সাংবাদিক নির্যাতনের হার ছিল ১২ শতাংশ এবং ২০১৪ সালে ছিল ৩৩ শতাংশ। এর প্রায় ২৩ শতাংশ নির্যাতনই হয়েছে পুলিশ, র্যাব ও গোয়েন্দা পুলিশের হাতে। (সূত্র : দৈনিক প্রথম আলো, ৪ মে, ২০১৫)
শাহবাগের ঘটনার পর স্বরাষ্টমন্ত্রী বলেছেন, “পুলিশ সাংবাদিক নির্যাতন করে না, মাঝে মধ্যে ধাক্কাধাক্কি লেগে যায়।” তাঁর এ কথার সাথে আপনি কি একমত? এমন প্রশ্নের মতামত যাচাইয়ের জন্য দৈনিক ইনকিলাব এর অনলাইন জরিপের ফলাফল থেকে জানা যায়, ৪৩৭ জন পাঠকের মধ্যে ৯৩.১৪% শতাংশ ‘না’ ভোট দিয়েছেন। তিনি আরও বলেছেন, এটা স্বাভাবিক। আপনারা দুজন বন্ধু যদি একসঙ্গে চলেন ধাক্কাধাক্কি তো লেগেই যায়। এই ধরনের কিছু একটা হয়েছে। সংবাদকর্মীকে কিল, ঘুষি, রাইফেল এর বাট দিয়ে বেধরড়ক পিটুনি এবং পেছন থেকে পিঠের ওপর বুট দিয়ে লাথি মারার ছবি ও ভিডিও চিত্র দেখার পরেও শুধু ধাক্কাধাক্কি হয়েছে বলাটা একজন দায়িত্বশীল মন্ত্রীর কাছ থেকে কীভাবে আশা করা যায়? এই নির্যাতনের ঘটনার ছবি ও ভিডিও যদি না থাকতো তাহলে হয়তো নির্যাতনের সত্য চিত্রটি ধাক্কাধাক্কি শব্দের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকতো। পুলিশি নির্যাতনের চিত্র গণমাধ্যমে ব্যাপকভাবে প্রকাশিত ও প্রচারিত হওয়ায় মন্ত্রীর দুঃখ প্রকাশের মধ্য দিয়ে সাংবাদিক নির্যতনের বর্ণনার সত্যতা মিলেছে। এ ঘটনায় জড়িত এক এএসআইকে সমাময়িক বরখাস্ত এবং ১২ পুলিশ সদস্যকে প্রাথমিকভাবে চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে চিঠি দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। প্রকৃত অর্থে তারা কি শাস্তি পাচ্ছেন নাকি আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে ছাড় পেয়ে যাবেন তা নিয়েও সংশয় রয়েছে।
গত ২৩ জানুয়ারি পুলিশ সপ্তাহ শুরু হলো আর ২৬ জানুয়ারি পুলিশের এমন কাজ আসলেই উদ্বেগজনক। ঐতিহাসিক নারায়ণগঞ্জে সাত খুনের সঙ্গেও জড়িত পুলিশ ও র্যাব সদস্যরা আদালত কর্তৃক চিহ্নিত হয়েছে। এভাবে কতিপয় পুলিশের বেপরোয়া আচরণে সরকারও বিব্রত বলে গণমাধ্যমে ওঠে এসেছে। পুলিশকে বারবার জনবান্ধব বলা হলেও কতিপয় পুলিশ সদস্য তা যেন ভুলে যান। এমন অতি উৎসাহী সদস্যদেরকে থামিয়ে দেওয়া না হলে তারা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠতে পারেন। মতপ্রকাশের স্বাধীনতার কথা বলা হলেও তা আজ পদে পদে বাধাগ্রস্থ। সুযোগ পেলেই গণমাধ্যম কর্মীদের ওপর হামলা চালানো হয়। ক্যামেরা অন করা মাত্রই কারো কারো ভিতরের পশুত্ববোধ জেগে ওঠে। সংবাদকর্মীরা তাদের দায়িত্ববোধের কারেণেই তাদেরকে ধৈর্য্যধারণ করতে হয়ে। সাংবাদিকরা আইন হাতে তুলে নিতে পারেন না বলেই তাদের এই করুণ দশা। সাংবাদিক নির্যাতনের সংবাদ কিছু দিন পরপরই শোনা যায়। কখনো দুষ্টলোকদের হাতে আবার কখনো প্রভাবশালী নেতা কিংবা আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্যদের হাতে। কিন্তু অপরাধীদেরকে আড়াল করলে অপরাধ বাড়তে থাকে।
সর্বোপরি, নির্যাতনকরীদেরকে বিচারের আওতায় না নেওয়ায় তাদের অপরাধপ্রবণতা থেমে নেই। সাংবাদিকরা জাতির চোখ হলেও তাদেরকেই জুলুম-নির্যাতন নিরবে সহ্য করতে হচ্ছে। যারা সত্যকে তুলে ধরতে অপরের জুলুমকে সহ্য করেন তাদের প্রতি রইল সালাম। আইনের শাসন বাস্তবায়নে যারা দায়িত্বপালন করছেন তাদেরকে বিনয়ের সাথে বলছি, আপনারা আক্রমণাত্মক আচরণ থেকে বিরত থাকুন। সাংবাদিকদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতে সহযোগিতা করুন।
লেখক : শিক্ষক ও কলামিস্ট
[email protected]
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।