দেশে দেশে রোজার উৎসব
মাহে রমজান আরবী নবম মাসের নাম। চাঁদের আবর্তন দ্বারা যে এক বৎসর গণনা করা হয়,
অধ্যক্ষ, এম. জায়েদ হোছাইন ফারুকী : সাম্প্রতিককালে আমাদের দেশে বারেবারে মসজিদ, মাদরাসায়, অফিস-আদালত, কর্মক্ষেত্রে স্বামী-স্ত্রী, বাবা-মা, ভাইবোন আত্মীয়দের মধ্যে হাজার বছরের প্রতিষ্ঠিত মাছআলা মাছায়েল নিয়ে দ্বন্দ্ব বিরোধ, দ্বিধা, সংশয়, ঘৃণা, বিদ্বেষ এবং বিত-া সৃষ্টি হয়েছে। সৃষ্টি হয়েছে বাকবিত-া যানবাহন, মাহফিল, মজলিস, স্ট্যাডি সার্কেল এমনকি টিভি চ্যানেলগুলোতে। ধর্মীয় বিষয়াদী নিয়ে তরুণ, ব্যবসায়ী, শিক্ষিত ও বিভিন্ন স্তরের পেশাজীবীরা ক্ষেত্র বিশেষে মহিলা মহলেও এ বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। গুটিকয় অপরিণামদর্শী আলেম ও অনধিকার চর্চায় ধর্মীয় চিন্তার জগতে ওদের সঙ্গে গলা মেলানোর প্রয়াস চালায়। তারা মাযহাবের ইমাম, মুজতাহেদ, অলি আওলিয়াগণের বিরুদ্ধে বিষোদগার শুরু করে। তারা বলে কুরআন-হাদিস থাকতে ‘‘মাযহাব’’ মানতে হবে কেন? তারা আরো বলেন, কোটি কোটি মুসলমানের নামাজ হচ্ছে না, ঈমান নষ্ট হয়ে গেছে। অমুক রাত্রে নফল নামাজ পড়া যাবে না, অমুক সময়ে হাত তুলে দোয়া করা যাবে না, মিলাদ পড়া যাবে না, এগুলো বেদআত।
কথায় কথায় বিপরীত ইসলামী গবেষকদের বেদআতী, মুশরিক, কাফির হিসেবে আখ্যায়িত করে। মানুষকে সংশয় ও বিভ্রান্তির বেড়াজালে আবদ্ধ করে। শতাব্দীর পর শতাব্দী পর্যন্ত যেসব ইসলামী গবেষক কোটি কোটি মুসলিম উম্মার সম্মানিত মাযহাবী ইমাম তাদেরকে ভ্রান্ত বলে আখ্যা দেয়, নিজের মতের বিপরীত হলেই কাফের বলতে দ্বিধা সঙ্কোচ করে না। প্রায় ১৪০০ বৎসর পর্যন্ত চলে আসা বিশ্ব বরেন্য ওলামা, বিদগ্ধ মনীষী কর্তৃক স্বীকৃত গ্রহণযোগ্য, তাদের এক নিমিষে অস্বীকার করে। গালমন্দ করে নিজের ইচ্ছার অন্ধ অনুকরণ করে। এসব বিষয়গুলি বর্তমানে সারা দেশে সৃষ্টি করছে ভয়াবহ ফিতনা। এ ফিতনা থেকে জাতিকে রক্ষা করা সচেতন আলেম সমাজ, বিশেষত মুফতি মোহাদ্দিস ও ইসলামী চিন্তাবিদ এবং দার্শনিকগণের দায়িত্ব ও কর্তব্য। আমাদের দেশের ৯৯.০৯% মুসলমান মাযহাবের হানাফীর অনুসারী। উপমহাদেশের ৪০ কোটি মুসলমান হানাফী মাযহাবের আলোকে ইসলামী জীবনযাপন করে আসছে। বিশ্বের ৯৯ ভাগ মুসলমান চার মাযহাবের আলোকে ইসলামী ফিকাহ (কুরআন-সুন্নাহর উৎসরিত) অনুসারী। তার পরেও ‘‘মাযহাব মানবেন কেন’’? আজ এ প্রশ্ন আমাদের সম্মুখে কেন? আসুন এ প্রসংগে একটু এগিয়ে যাই। মাযহাব কোন মনগড়া চিন্তাচেতনার নাম নয়, মাযহাব কোন ব্যক্তি বিশেষের স্বকীয় সৃজিত কল্পনা প্রসূত কোন গবেষণার নামও নয়। মাযহাব হচ্ছে সম্পূর্ণ কুরআন-সুন্নাহর আদলে গড়া একটি চিন্তা দর্শন তথা একটি নীতিমালার নাম। কুরআন-সুন্নাহ থেকে উৎসারিত নির্যাস ব্যাখ্যা, বোধগম্যতা, ব্যাখ্যা, গবেষণা যেটি ব্যতীত কুরআন-সুন্নাহর উপর আমল সম্ভব নয়। পবিত্র হাদিস কুরআনেরই ব্যাখ্যা। সেই হাদিস স্থান, কাল-পাত্র ভেদে সময়ের প্রেক্ষাপট, আগ-পর, অবস্থান, অবস্থা, বক্তব্য, কার্যকলাপ, সমর্থন, শুদ্ধাশুদ্ধি, সাহাবায়ে কেরামের আমল, আখলাক সবকিছু যে কোন বাছাই ছাড়া আমল যোগ্য হবে তা নয়, বরং হাদীসটি ছহিহ কিনা? হাদীসটির আমল রহিত কিনা? হাদীসটি অন্য হাদীসের সঙ্গে সাংঘর্ষিক কিনা? তা বুঝবার জ্ঞান, বুদ্ধি, বিবেচনা শক্তি, মুজতাহিদ বা গবেষক হওয়ার সকল গুণাবলী বিদ্যমান থাকলে তিনি একজন গবেষক বা মুজতাহিদ এবং তার নীতিমাল বা মতাদর্শ হচ্ছে ‘‘মাযহাব’’।
মাযহাব কোন মুজতাহিদ নিজের স্বেচ্চাকৃত মতামত নয় বরং উহা সম্পূর্ণ কোরআন ও হাদীস, যার নির্যাস হলো ফিক্হ। সুতরাং যাদের ঐ পরিমাণ জ্ঞান নেই তাদের অবশ্যই বিশ্বের প্রধান ৪টি মাযহাবের যে কোন একটি মাযহাবের অনুসরণ অবশ্যই করতে হবে। নিজের ইচ্ছামত যেখানে একটি হাদীস দেখবে সেটাই আমল করবে। নিজের প্রবৃত্তির অনুসরণ করবে তা কখনও হতে পারে না। কারণ তার দেখা হাদীসটি ছহীহ নাও হইতে পারে। অন্য ছহীহ হাদীসের বিপরীতও হইতে পারে। এ কারণেই যে কোন একজন মুজতাহিদ/গবেষকের (যিনি কুরআন-সুন্নাহর জ্ঞানে পূর্ণাঙ্গ সমৃদ্ধ, মহাপা-িত্যের অধিকারী, আরবী ভাষা, ইতিহাস হাদীস বিশারদগণের জীবনী বিষয়ে জ্ঞান সমুদ্র) অনুকরণ আবশ্যক। নিজে পড়ে নিজে দেখে, আমল করলে তা হবে প্রচ- বিভ্রান্তি। মহান আল্লাহ বলেন; তুমি যদি না জান তাহলে জ্ঞানীদের জিজ্ঞাসা কর (সূরা আম্বিয়া, আয়াত নং-৭)। নিজের প্রবৃত্তির অনুসরণ কর না- (আল-কুরআন)। এ কারণে যে কোন এক মহাইসলামী গবেষকের অনুকরণ অপরিহার্য। নিজের ইচ্ছামত কুরআন-হাদীসের অর্থ করে আমল করা যাবে না। আমল করতে হবে মহাজ্ঞানীদের অনুসরণ করে। কুরআন-সুন্নাহর জ্ঞান মহাসমুদ্রের ন্যায়, যার নেই কূলকিনারা। তাইতো একজন মুজতাহিদকে অনুসরণ করতে হবে আবশ্যিকভাবে। প্রখ্যাত মোহাদ্দিস হাদীস শাস্ত্র বিশারদ ইমাম তিরমিযি (রঃ) বলেছেন, কোন সাধারণ বা সাধারণ আলিম নয় কুরআন-সুন্নাহ গবেষণাকারী ফকীহগণই (মাযহাবের ইমাম) হাদীসের প্রকৃত অর্থ বুঝে থাকে। তাইতো ফকীহ, গবেষক, মুজতাহিদ ছাড়া কারো অনুসরণ করা যাবে না। নিজের ইচ্ছামত কুরআন-হাদীস পড়ে আমল করা যাবে না। বিশ্ববিখ্যাত হাদীস শাস্ত্র বিশারদ, বিশুদ্ধ হাদীস গ্রন্থের রচয়িতা ইমাম বুখারী (রঃ)র উস্তাদ ছুফিয়ান বিন উয়াইনা (রঃ), তিনি বলেছেন; ফিক্হ শাস্ত্র বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিবর্গ ছাড়া অন্যের জন্য হাদীস বিভ্রান্তি সৃষ্টিকারী। অর্থাৎ ফিকহর জ্ঞান না থাকলে হাদীস বুঝা যাবে না বরং একই প্রসংগে বিভিন্ন রকমের ছহীহ হাদীস দেখলে বিভ্রান্ত হওয়ার আশংকা রয়েছে। ব্যাখ্যা জানতে হবে মুজতাহিদ থেকে, নিজে থেকে নয়। প্রখ্যাত ইমাম, ইমামের ইমাম হযরত আ’মাশ (রাঃ) ইমাম আবু হানিফা (রঃ) কে লক্ষ্য করে বলেছেন, ‘‘আমরা হলাম ফার্মাসিস্ট আর তোমরা ফকীহগণ হলে চিকিৎসক’’। প্রকৃতপক্ষে কুরআন-সুন্নাহ থেকে ফিকার জ্ঞানার্জন করার জন্য নির্দেশ রয়েছে পবিত্র কুরআন ও হাদীসে। মহান আল্লাহ বলেন; ‘‘কেন তোমাদের বড় একটি দল হইতে ছোট একটি দল ফিকহর জ্ঞানার্জনে বেরিয়ে পড়ো না’’ ফিরে এসে জাতিকে সে আলোকে ভয়ভীতি তথা নির্দেশনা দেবে (সূরা তওবা, আয়াত নং-১২২)। ফিকহর গবেষণায় বিভিন্নতা থাকতেই পারে, যা উম্মার জন্য আশীর্বাদস্বরূপ। এ রকম গবেষণামূলক চিন্তাচেতনার ফসল হচ্ছে ‘‘মাযহাব’’।
এভাবে তৈরী হয়েছে অনেকগুলো মাযহাব, হানাফী, মালেকী, শাফী ও হাম্বলী, উম্মাহর মাপকাটিতে চারটি মাযহাব প্রসিদ্ধি লাভ করে বিশ্বের ইসলামী অঙ্গনে। প্রায় ২০০ কোটি মুসলমান ১৩০০ বৎসর পর্যন্ত এদের অনুসরণ করে আসছে। বিশ্ব মুসলিম উম্মার চারজন ইমামের মাযহাবের গ্রহণযোগ্যতা ও বিশুদ্ধতার উপর ‘‘ইজমা’’ অনুষ্ঠিত হয়েছে। অর্থাৎ ঐক্যবদ্ধ হয়েছে, এতে সকলেই একমত যে, এ চার ইমামের যে কোন একজনের অনুকরণেই মুক্তি। নতুন গবেষণায় বিভ্রান্তি ও বেদআতের আশংকা রয়েছে। এ মত প্রকাশ করেছেন যুগের শ্রেষ্ঠ মুজাদ্দিদ শাহ অলি উল্যাহ (রঃ)। এ প্রসংগে একটি কথা উল্লেখ্য যে, ইসলামের মূল উৎস ২টি হলেও ইসলামী আইন বাস্তবায়নে কুরআন-সুন্নাহর নিরিখে আরো ২টি উৎস রয়েছে, একটি এজমা অপরটি কিয়াস। কোন সমস্যার সমাধান কোরআন-সুন্নায় সরাসরি পাওয়া না গেলে উহার উপর বিশেষজ্ঞ গবেষকগণের ঐক্যবদ্ধ মতামত। আর তা না পাওয়া গেলে গবেষণা করে নিতে হবে এবং আমল করতে হবে তখন কিয়াসের উপর। এ বিষয়ের উপর বিশ্ব মুসলিম উম্মার সকল গবেষক একমত।
ইসলামের অপর ২টি উৎসকে উড়িয়ে দেয়ার সুযোগ অন্তত কুরআন-হাদীসে নেই। কারণ এজমা এবং কিয়াস উভয়ের কথা কুরআন-সুন্নায় নির্দেশনা রয়েছে। এসব বিষয়ে নির্দিদ্বায় আমাদেরকে যে কোন একজন মাযহাবের ইমামের অনুসারী হতে হবে। ইহা বেদআত নয় বরং ইহা কুরআন-হাদীসের নির্দেশ। আর এ অনুসরণের পথের নামই মাযহাব। বিশ্বনবীকে আল-কোরআনে নির্দেশ দেয়া হয়েছে, ‘‘ঐসব মানুষগুলোকে আল্লাহ হেদায়েত দান করেছেন, কাজেই আপনি তাদের হেদায়েত অনুসরণ করুন’’ (আল-কোরআন)। উম্মাহকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে; যে আমার দিকে প্রত্যাবর্তন করেছে তুমি তার অনুসরণকর (সুরা লোকমান- আয়াত নং-১১৫)। বিশ্বনবী (দঃ) এরশাদ করেন; তোমরা আমার আদর্শের ও খেলাফায়ে রাশেদীনের আদর্শের অনুকরণ কর (আল হাদীস)। অন্যত্র বলেছেন; তোমরা বড় দলের অনুসরণ কর (আল-হাদীস)। আমরা প্রত্যহ নামাজে দোয়া করি ছেরাতুল মুস্তাকীমের জন্য। ছেরাতুল মুসতাকীম হলো ঐপথ যে পথে নেয়ামত প্রাপ্তগণ রয়েছে, তারা হলেন নবীগণ, ছিদ্দিকগণ, শহীদগণ, নেককার বান্দাগণ। সুতরাং নেক বান্দাগণের পথ অনুকরণের কথা বলা হয়েছে। এটিতো মত পথ, এ হলো মাযহাব, এর উপর আমল করার নির্দেশ রয়েছে। নির্দেশ রয়েছে তাকলীদ বা আনগত্য করার। সুতরাং আমাদের মাযহাব মানা অবশ্যই কর্তব্য। সব স্বীকৃতি চিন্তানুযায়ী বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ ফিক্হর ইমাম, ২য় শতকের হাদীসের ইমাম আবু আজম আবু হানিফা (রঃ) মত-পথ, অভিমত মাযহাবই মেনে চলছে সহস্রাব্দ কাল থেকে বিশ্বের অধিকাংশ মুসলমান। যিনিই প্রথম ঘোষণা দিয়েছেন ‘‘ছহীহ হাদীস আমার নীতিমালা’’। যিনি কিয়াস থেকেও জয়ীফ হাদীসকে মূল্যায়ন করেছেন। অতএব ছহীহ হাদীসের উপর যে মাযহাব প্রতিষ্ঠিত সে মাযহাবই অনুকরণযোগ্য। অন্য মাযহাবের ইমামগণও স্বীকৃতি দিয়েছেন, যেমন ইমাম মালেক ও ইমাম শাফেয়ী (রঃ)। ইসলামের ২য় শতকে ছহীহ হাদীস ছিল। ছিল পবিত্র কুরআনে কারীম ও ব্যাখ্যা। সেই শতকের মানুষ খাটি ইসলামী জীবনযাপন করেছে। সেই যুগ থেকে ভাল জীবনযাপন এখনকার যুগে কী আদৌ সম্ভব? না কখনও না। কারন বিশ্বনবী সে যুগকে ‘‘খায়রুল কুরুন’’ আখায়িত করেছেন। এ কথা বলার সুযোগ নাই যে, এখন নতুন নতুন ছহীহ হাদীসগুলি পাওয়া যায়। সে যুগে পাওয়া যায়নি। এখন নাযিল হচ্ছে; ছহীহ হাদীসগুলো। না একথা বলার কোন সুযোগ নেই। কারণ ইমাম আযম (রঃ) একজন তাবেয়ী। নিঃসন্দেহে তিনি ছাহাবী (রাঃ) দেখেছেন। আর সাহাবায়ে কেরাম বিশ্বনবীকে দেখেছেন তাঁর থেকে বর্ণনা করেছেন। ইমাম আযম (রঃ) সাহাবায়ে কেরামের আমলগুলো জেনে শুনেই যে বিশাল জ্ঞান ভান্ডার তৈরী করেছেন। আজকের যুগে তা কী সম্ভব? ইমাম আযমের পরবর্তী যুগে হাদীস শাস্ত্রের গ্রন্থ সমৃদ্ধ হয়েছে, কলেবরে বৃদ্ধি হয়েছে, সুবিনাস্ত হয়েছে ঠিকই কিন্তু একথা বলা যাবে না চারজন মহান ইমামের যুগে হাদীসগুলো ছিলনা (নাউযুবিল্লাহ)। স্মরণ রাখা দরকার সকল হাদীস গ্রন্থকারের উস্তাদ, ইমামুল মোহাদ্দেসীন ইমাম বুখারী (রঃ), যার উস্তাদ ইমাম আহম্মদ বিন হাম্বল, তাঁর উস্তাদ ইমাম শাফেয়ী, তার উস্তাদ ইমাম মোহাম্মদ, তাঁর উস্তাদ ইমাম আবু হানিফা। ফিক্হ ও হাদীস শাস্ত্র দুটোরই উস্তাজুল আজাতেজা ইমাম আবু হানিফা (রঃ)। দুনিয়ার সর্বযুগের সর্বশ্রেষ্ঠ আলিম, মুজতাহিদ গবেষকগণ যেসব মাযহাবী ইমামগণের প্রতি অকুণ্ঠ শ্রদ্ধা প্রদর্শন করেছেন, তাদের অনুকরণ করে আসছেন, তিনিই আবু হানিফা (রঃ)। ইমাম শাফেঈ যে মহান ব্যক্তির কবর পার্শ্বে গিয়ে নিজের গবেষণা লব্দ মাযহাবী সিদ্ধান্ত পরিহার করে ফিক্হ শাস্ত্রের মহান প্রবর্তক ইমাম আবু হানিফার (রঃ) মাযহাব অনুসারে নামাজ আদায় করেন তাঁকে ইমাম আজমের মর্যাদায় সমাসীন করেছেন। তাঁদেরকে কস্মিনকালেও গাল মন্দ করা যাবে না। তাঁদের চিন্তাচেতনাকে কখনও খাটো করা যায় না, কস্মিনকালেও না। ইবনে তাইমিয়া (রঃ) ইবনুল কাইয়েম (রঃ), শওকানীর (রঃ) মতো শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ গবেষক হয়েও তাদের অবদানকে কী কখনও অবমূল্যায়ন করেছেন? না কখনই না। বরং আল্লামা ইবনে তাইমিয়া তাদের উপর আরোপিত উত্থাপিত অপবাদ ঘুচানোর জন্য কিতাব রচনা করে গেছেন, যার নাম ‘‘রাফউল মালাম আন আইম্মাতিল আলাম’’। পবিত্র কুরআন ছাড়া পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ হাদীস গ্রন্থের রচয়িতা ইমামুল মোহাদ্দেসীন ইমাম বুখারী (রঃ) যদিও ইমাম আবু হানিফা সূত্রে কোন হাদীস গ্রহণ করেননি তবে তাঁর ছাত্রদের নিকট থেকে শত সহস্র হাদীস সংকলন করেছেন তার রচিত ‘‘পবিত্র বোখারীতে’’ যেমন ইমাম ওয়াকী ও আবদুল্লাহ বিন মোবারক (রঃ)। ইমাম বোখারীর ছুলুছিয়াতের অধিকাংশই হানাফী মাযহাবের ইমামগণের সূত্রেই বর্ণিত হয়েছে।
খোলাফায়ে রাশেদীন ও মহাত্মা বড় বড় সাহাবীগণ থেকেও বর্ণিত হাদীস সংখ্যা নিতান্ত অল্প। এটি হতেই পারে, এরা সদা রাষ্ট্র পরিচালনায় ব্যস্ত, সর্বদা দ্বীনি কাজ থাকাই স্বাভাবিক। যে কারণে অন্যান্য সাহাবায়ে কেরাম জ্ঞান জগতের সেক্টর সমৃদ্ধ করেছেন পবিত্র হাদীস বর্ণনা ও সংরক্ষণের মাধ্যমে। যেমন আবু হুরায়রা (রাঃ), মা আয়েশা (রাঃ), আবদুল বিন ওমর প্রমুখ হাদীস বর্ণনাকারী নেতৃবৃন্দ। অনুরূপ একটি পর্যায়ে ইমাম আবু হানিফা বর্ণনার চেয়ে বেশী মনোনিবেশ করেছিলেন কুরআন-সুন্নাহ বিচার্য করে ফিক্হ গবেষণা করে ১২ লক্ষ মাছআলা চয়ন করে উম্মাকে বিশাল জ্ঞানভা-ার উপহার দিয়েছেন। শুধু তাই নয় তিনি পরবর্তী ফুকাহাদের পথিকৃৎ হয়েছেন। ২য় শতকের হাদীস সংকলনের প্রারম্ভজনিত কারণে থাকা সত্ত্বেও তিনি ‘‘মাছনাদে আবু হানিফা’’ নামক হাদীস গ্রন্থ রচনা করে তখনকার সময়ের ইমামুল মোহাদ্দেসীন হয়েছেন আল্লামা জাহাবীর (রঃ) মতে। এমন কোন দৃষ্টান্ত পৃথিবীতে খুঁজে পাওয়া যাবে না যে তিনি ছহীহ হাদীস সামনে থাকা সত্ত্বেও উহাকে বাদ দিয়ে কেয়াস/নিজস্ব গবেষণা দিয়ে মাযহাব তৈরী করেছেন। কারণ তিনিই এ পৃথিবীতে প্রথম ঘোষণা দিলেন ‘‘ছহীহ হাদীস আমার নীতিমালা’’। ‘‘কেয়াস থেকে জয়ীফ হাদীস উত্তম’’। (চলবে)
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।