Inqilab Logo

রোববার, ০৭ জুলাই ২০২৪, ২৩ আষাঢ় ১৪৩১, ৩০ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

এক মাসেও হত্যা রহস্য উন্মোচিত হয়নি : জনমনে হতাশা-আতঙ্ক

এমপি লিটন হত্যা

| প্রকাশের সময় : ১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

সুন্দরগঞ্জ উপজেলা সংবাদদাতা : গাইবান্ধা-১, (সুন্দরগঞ্জ) আসনের এমপি মঞ্জুরুল ইসলাম লিটন দুর্বৃত্তের হাতে খুন হওয়ার এক মাস একদিন পেরিয়ে গেলেও খুনের রহস্য উন্মোচিত হয়নি। ধরা পড়েনি প্রকৃত খুনিরা। এজন্য চরম হতাশায় ভুগছেন তার পরিবার পরিজন। অপর দিকে, হতাশা ও আতঙ্কে ভুগছেন সাধারণ জনগণ। বেশি আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে উঠেছেন রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও সচেতন মানুষ। তাদের আশঙ্কা, যদি প্রকৃত খুনিরা ধরা না পড়ে, তাহলে ওই খুনিরা সুন্দরগঞ্জে হুমকির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। এমপি লিটন খুন হওয়ার পর থেকে পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি, পিবিআইসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার তীক্ষè মেধাসম্পন্ন বিশেষায়িত দল হত্যাকাÐের মূল রহস্য উদ্ঘাটনসহ খুনিদের গ্রেফতারে ব্যাপক তৎপরতা শুরু করে। এই তৎপরতার জের ধরেই হত্যাকাÐে সম্পৃক্ত সন্দেহে এ পর্যন্ত ১৯ জনকে গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এরমধ্যে ১২ জনকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ। পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ এমপির স্ত্রী সৈয়দা খুরশিদ জাহান স্মৃতি, শ্যালক বেদারুল আহসান বেতার, মামলার বাদী ফাহমিদা বুলবুল কাকলী, বড় বোন আফরোজা বারীসহ নিকট আত্মীয়স্বজন, বন্ধু-বান্ধব, দলীয় সহচরদের একাধিকবার জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। এ ছাড়া এমপির ব্যক্তিগত গাড়ি চালক খন্দকার ফোরকান আলী ও কাজের লোক ইউসুফ আলীকে গত কয়েকদিন ধরে থানায় আটকে রেখে জিজ্ঞাসাবাদ অব্যাহত রেখেছে পুলিশ। অপর দিকে, খুনের আগে এমপির বাড়ির উঠানে ক্রিকেট খেলারত সপ্তম শ্রেণির ছাত্র জুয়েলকেও থানায় ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এই জুয়েলের সাথেই খুনিদের বাগি¦তÐা হয়েছিল। লিটনকে খুন করার আগে খুনিরা সেসহ অন্যান্য ছেলেদের ক্রিকেট খেলা বন্ধ করে যেতে বললে জুয়েল প্রতিবাদ করেছিল। খুনের সময় এমপির বাড়িতে অবস্থানরত বড় শ্যালক বেদারুল আহসান বেতারকেও বেশ কয়েকবার জিজ্ঞাসাবাদ করা হলেও এখনো তাকে নানাভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করছেন। জানা গেছে, খুনিরা ঘরে প্রবেশ করা থেকে গুলি করে পালিয়ে যাওয়ার সময় পর্যন্ত ওই বাড়িতেই অবস্থান করছিল বেতার। লিটনকে গাড়িতে করে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার সময়ও বেতার সাথে ছিল। মামলার বাদীসহ এমপির পরিবারের দাবি, খুনিরা কেন নিজ বাড়িকেই নিরাপদ মনে করে খুন করে গেল। খুনের সময় এমপির অতন্দ্র প্রহরী জার্মান শেফার্ড কুকুর দু’টি ছিল না কেন? গুলির সময় কেন এমপির কাছে কেউ গেল না? ইত্যাদি নানা প্রশ্ন তাদের মনে সন্দেহের দানা বেঁধেছে। তারা বেশি বিচলিত হয়েছেন নিবেদিত প্রাণ নেতাকর্মীরা, কেউ কেন তার পাশে ছিল না প্রতিদিনের মতো। পরিবারের দাবি, সহচর নেতাকর্মীদের কেউ কি দূরে সরিয়ে দিয়েছিল।
বছরের শেষ দিন থার্টি ফাস্ট নাইটের প্রথম প্রহরে (সন্ধ্যা পৌনে ছয়টা) এমপি লিটন গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। নতুন বছরের প্রথম দিনে থানার প্রথম মামলাটি রেকর্ড হয় এমপি খুনের। এমপির ছোট বোন ফাহমিদা বুলবুল কাকলী অজ্ঞাত পরিচয় পাঁচজনকে আসামির পাশাপাশি জামায়াত শিবিরের উপর দোষ চাপিয়েছেন মামলায়। মামলায় উল্লেখ করা হয়, ১৯৯৮ সালে সুন্দরগঞ্জ হাইস্কুল মাঠে জামায়াত নেতা গোলাম আযমের বক্তব্য দেয়ার কথা ছিল জনসভায়। সে সময় মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ লিটন সহকর্মীদের সাথে নিয়ে বন্ধুক হাতে গোলাম আযমকে লক্ষ্য কয়েক রাউন্ড গুলি ছোড়েন। এ কারণে লিটনকে হত্যার পরিকল্পনা করে থাকতে পারে জামায়াত-শিবির।
এমপির শ্যালক বেদারুল আহসান বেতার বলেন হত্যাকাÐের পর থেকে আমার বাড়িতে নজরদারি ও জিজ্ঞাসাবাদ দিন দিন বেড়েই চলেছে। তিনি আরও বলেন, এমপির বাড়িতে আমি যাদের এক ঝলক দেখেছি, আটককৃতদের সামনা সামনি করলে চিনতে পারব। এ ঘটনায় মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) আবু হায়দার মো. আশরাফুজ্জামান জানান, আমরা এমপির হত্যা ঘটনায় জড়িত সন্দেহে এ পর্যন্ত ১৯ জনকে গ্রেফতার করেছি। এরমধ্যে ১২ জনকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। প্রয়োজন হলে আবারও অনেককেই রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। আমরা সর্বোচ্চ মেধা খাটিয়ে বিভিন্ন কৌশল বিবেচনায় নিয়ে খুনের জট খোলাসহ খুনি গ্রেফতারের চেষ্টা করছি। তিনি আরও বলেন, ভাড়াটে খুনির ব্যাপারটিও মাথায় রেখে ইন্ধনদাতা ও অর্থদাতাদের সন্ধানে রয়েছি। থানার অফিসার ইনচার্জ আতিয়ার রহমান জানান, আমাদের চেষ্টার ত্রæটি নেই। তবে হত্যাকাÐটি পরিকল্পিত হওয়ায় খুনের জট খোলার বিষয়টি সময়সাপেক্ষ।
জামায়াত শিবিরের পাঁচ হাজার নেতাকর্মী পলাতক : এমপি লিটন হত্যার পর থেকে সুন্দরগঞ্জ উপজেলার প্রায় পাঁচহাজার জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মী সমর্থক পলাতক রয়েছে। ২০১৩ সালের ২৮ ফেব্রæয়ারি সংঘটিত পুলিশ হত্যা, ঘরবাড়ি ভাঙচুর, লুটপাট, অগ্নিসংযোগের প্রেক্ষিতে দায়েরকৃত মামলার আসামিরা জামিনে থাকা সত্তে¡ও তারা পালিয়ে বেড়াচ্ছেন নতুন করে কোনো মামলায় গ্রেফতার এড়াতে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: এক

২২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
২১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
৮ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ