মটর সাইকেল: নিউ নরমাল পরিস্থিতিতে (নতুন বাস্তবতায়)
মটরসাইকেল নিরাপদ, অধিক সুবিধাজনক, খরচ এবং সময় বাঁচায়। গণপরিবহনে একে অন্যের গা ঘেঁষে চলাচলে প্রতিদিন
এম এইচ খান মঞ্জু : দেশে উচ্চশিক্ষিত বেকার সংখ্যা ক্রমান্বয়ে বাড়ছে ও তা সমাজে অস্থিরতার আশঙ্কা সৃষ্টি করছে। সেন্টার ফর ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড এমপ্লয়মেন্ট রিসার্চের (সিডার) কর্মসংস্থান ও শ্রমবাজার পর্যালোচনা-২০১৭ শীর্ষক প্রতিবেদনে উচ্চশিক্ষিত বেকারদের সংখ্যা বৃদ্ধির যে তথ্য তুলে ধরা হয়েছে তা নিঃসন্দেহে উদ্বেগজনক। প্রতিবেদনে তুলে ধরা আরও একটি তথ্য অশনি সংকেত বলে বিবেচিত হওয়ার মতো। এ তথ্যটি হলো দেশের ১৫ থেকে ২৯ বছর বয়সী প্রায় ২৫ শতাংশ তরুণই নিষ্ক্রিয়। যারা কর্ম বাজারে নেই, শিক্ষায়ও নেই, প্রশিক্ষণেও নেই।
প্রতিবেদনে উল্লিখিত পরিসংখ্যান অনুযায়ী এ ধরনের নিষ্ক্রিয় তরুণদের সংখ্যা ২০১০ সালের তুলনায় ২০১৩ সালে কমলেও এর পরিমাণ ২৫ শতাংশ এবং তা দেশের জন্য একটি উদ্বেগজনক বিষয়। তরুণদের কর্মশক্তিই একটি দেশকে এগিয়ে নেয়। জনসংখ্যার ২৫ ভাগ তরুণ নিষ্ক্রিয় থাকা শুধু অর্থনীতির জন্যই হতাশাজনক নয়, সামাজিক ক্ষেত্রেও তার ক্ষতিকর প্রভাব অনস্বীকার্য।
দেশে আজ ইভটিজিং, ধর্ষণ ও মাদকাসক্ত, জঙ্গিবাদ ইত্যাদি যেসব সামাজিক সমস্যা মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে তার এক বড় অংশে যে নিষ্ক্রিয় তরুণদের একাংশের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে তা সহজেই অনুমেয়। বাংলাদেশে উচ্চশিক্ষিত তরুণদের এক বড় অংশ বেকারত্বের অভিশাপে ভুগলেও দেশের শিল্প-কলকারখানায় যোগ্য লোকের অভাবও প্রকট। চাহিদা অনুযায়ী প্রশিক্ষিত কর্মী সৃষ্টিতে দেশের প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থা অনেকাংশেই ব্যর্থ হচ্ছে। যে কারণে দেশে কয়েক লাখ বিদেশি কাজ করছে তৈরি পোশাকসহ বিভিন্ন শিল্পে। তারা প্রতি বছর এ দেশ থেকে শত শত কোটি টাকা নিজ দেশে পাঠাচ্ছে। দেশের শিক্ষা খাতের এই ব্যর্থতার অবসানে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার তাগিদও দেওয়া হয়েছে প্রতিবেদনে। প্রতিবেদনে কৃষি ও শিল্প খাতের শ্রমিকদের প্রকৃত মজুরি হ্রাস পাওয়ার তথ্যও সমানভাবে উদ্বেগজনক। মজুরি বৃদ্ধির চেয়ে মূল্যস্ফীতির হার বৃদ্ধি পাওয়ায় শ্রমজীবীরা শুভঙ্করের ফাঁকিতে পড়ছে। সম্প্রতি গার্মেন্ট শিল্পে অসন্তোষ দানা বেঁধে ওঠার পেছনেও শ্রমিকদের প্রকৃত মজুরি হ্রাস পাওয়ার ঘটনা ইন্ধন জুগিয়েছে। সিডারের প্রতিবেদনে উচ্চ শিক্ষিতদের বেকারত্ব বৃদ্ধি, দেশের অন্তত ২৫ শতাংশ তরুণের নিষ্ক্রিয় থাকা এবং শ্রমিকদের প্রকৃত মজুরি হ্রাস পাওয়ার যে তথ্য তুলে ধরা হয়েছে তা একটি অশনি সংকেত। এর মোকাবিলায় করণীয় কর্তব্য নির্ধারণে সরকার এবং সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে সক্রিয় হতে হবে।
মান নিশ্চিত না হলেও শিক্ষায় পাসের হার বেড়েছে। প্রাথমিক থেকে শুরু করে উচ্চশিক্ষার প্রতিষ্ঠান বেড়েছে। মাধ্যমিক পর্যায় পর্যন্ত বিনামূল্যে শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দেওয়া ও উপবৃত্তি প্রদানসহ সরকারের নেওয়া নানা পদক্ষেপের কারণে ঝরে পড়া শিক্ষার্থীর সংখ্যাও কমে এসেছে। তার ফল পেতে শুরু করেছে বাংলাদেশ। শুধু ২০১৪ সালেই দেশের সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পাস করেছেন পাঁচ লাখ ৫০ হাজার ৩০২ জন। উচ্চশিক্ষা নিতে আসা শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য থাকে নির্ভর করার মতো কর্মসংস্থান। কিন্তু সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে উচ্চশিক্ষা গ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের একটি বড় অংশ প্রতিবছর বেকার থেকে যাচ্ছেন। তাদের কর্মসংস্থান হচ্ছে না। বাধ্য হয়ে অনেকেই এমন কাজে ঢুকছেন, যে কাজ তাঁদের জন্য নয়। শিক্ষিত জনগোষ্ঠীর প্রধান আকর্ষণ সরকারি চাকরি। এর বাইরে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানেও কর্মসংস্থানের সুযোগ আছে। কিন্তু বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ কমে যাওয়ায় সেখানেও কর্মসংস্থানের সুযোগ কমে গেছে। ফলে এসএসসি পাস এমএলএসএস পদের জন্যও স্নাতক বা স্নাতকোত্তরদের আবেদন করতে দেখা যায়। উপযুক্ত কর্মসংস্থান না হওয়ায় দেশের একটি বড় অংশ হতাশায় ডুবে যাচ্ছে। তরুণদের হতাশা থেকে মুক্ত করতে তাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে। নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করতে না পারলে সমাজের অপশক্তি এই সুযোগ নিয়ে তরুণদের বিপথে চালিত করতে পারে।
প্রতি বছর যে বিপুলসংখ্যক তরুণ উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে বের হচ্ছেন, তাঁদের সিংহ ভাগই থেকে যাচ্ছেন উপযুক্ত কর্মসংস্থানের বাইরে। শিক্ষিত বেকার তরুণদের জন্য উপযুক্ত কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা খুব কঠিন কাজ নয়। এখনো সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে প্রায় আড়াই লাখ পদ শূন্য রয়েছে। এসব পদে নিয়োগ দিলে সমানসংখ্যক শিক্ষিত বেকারের কর্মসংস্থান হবে। তবে সবার আগে দরকার সরকারের সুনির্দিষ্ট নীতিমালা। সরকারের এক শীর্ষ কর্মকর্তা কালের কণ্ঠকে বলেছেন, এখানে কোনো হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট নেই। শূন্য পদ পূরণে কোনো নীতিমালা নেই। সময়মতো শূন্য পদ পূরণ হয় না। জনপ্রশাসন নিয়ে কোনো গবেষণাও নেই। সরকারি খাতের বাইরে বেসরকারি খাতে কর্মসংস্থানের সুযোগ থাকলেও তা সম্ভব হচ্ছে না। কারণ বিনিয়োগের অভাবে বেসরকারি খাত সম্প্রসারিত হচ্ছে না। অন্যদিকে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা বাড়লেও বেসরকারি খাতের উপযোগী কারিগরি জ্ঞানসম্পন্ন মানুষ পাওয়া যাচ্ছে না।
দেশে কর্মক্ষম শিক্ষিত জনসংখ্যা যে হারে বাড়ছে, সে হারে উপযুক্ত কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে। অন্যথায় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হবে। উন্নয়নের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে হলে জরুরি ভিত্তিতে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে উদ্যোগ নিতে হবে। আমরা আশা করব, সংশ্লিষ্ট মহল বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করবে।
ষ লেখক : প্রিন্সিপাল, এম এইচ খান ডিগ্রী কলেজ, গোপালগঞ্জ; সাবেক সংসদ সদস্য
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।