Inqilab Logo

সোমবার, ২৭ মে ২০২৪, ১৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১৮ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

মনোনয়নপত্র ছিনতাই, হামলা ও বাধাদানের অভিযোগ

সুনির্দিষ্ট অভিযোগ এলেই ব্যবস্থা -ইসি সচিব

প্রকাশের সময় : ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম

আজিবুল হক পার্থ : নির্বাচনী বিধি-নিষেধ ভুলে নিজেদের ইচ্ছামতো নির্বাচনী প্রচারণা চলছে ইউনিয়ন পরিষদে (ইউপি)। আচরণবিধি পরিপালনের জন্য কোনো গাইড যেমন নেই, তেমনি নিয়মভঙ্গের বিরুদ্ধেও নেই কোনো কর্তৃপক্ষ। তৃণমূলের এই নির্বাচনে নীরব ভূমিকায় নির্বাচন অবলোকন করছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। দল ও প্রার্থীদের পক্ষে হাজারো অভিযোগ থাকলেও লিখিত অভিযোগ না পাওয়ায় ইসির অভিমত, নির্বাচনী পরিবেশ সুষ্ঠু রয়েছে। অন্যান্য নির্বাচনের মতো এই নির্বাচনে নেই ইসির কোনো তদারকি। তফসিলের খসড়ার সাথে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশের দিয়েই আপাতত হাঁফ ছেড়েছে ইসি। তবে ইসি সচিবের মতে, নির্বাচনের পরিবেশ অন্তত ভালো রয়েছে। এবারে নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ হবে। তবে কোনো অনিয়ম হলে বা কারো কাজে বাধা দেওয়া হলে সুনির্দিষ্টভাবে লিখিত অভিযোগ করলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এর আগে মনোনয়নপত্র জমাদানের সময় মিছিল, শোডাউন, জমায়েত, পথসভা ছাড়াও প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ও তার সমর্থকের ওপর হামলা, হুমকি, মনোনয়নপত্র জমাদানে বাধা প্রদান এবং মনোনয়নবঞ্চিতদের নানা কর্মসূচি পালনের মধ্য দিয়ে শেষ হয় প্রথম ধাপের ৭৩৯ ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) মনোনয়নপত্র দাখিল। নৌকা-ধানের শীষ ছাড়াও ১৯টি রাজনৈতিক দলের প্রার্থী এবং স্বতন্ত্র হিসেবে নির্দলীয় ও রাজনৈতিক দলের মনোনয়নবঞ্চিতরা মনোনয়পত্র জমা দিয়েছেন।
ইসি সচিবালয়ের কর্মকর্তাদের মতে, সচিবালয় থেকে মনিটরিং করে কার্যত কোনো কাজ হয় না। বিগত উপজেলা ও পৌর নির্বাচনে ইসি সচিবালয় থেকে সার্বক্ষণিক মনিটরিং করা হয়েছে। কয়েকজন ভিআইপিকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। এলাকা ছাড়ার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে, কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। এর কারণ হিসেবে দেখা গেছে, ইসির প্রাথমিক নির্দেশনা কেউ মানেনি। আর ইসিও চূড়ান্ত ব্যবস্থা নেয়নি। এতে কোনো উদ্যোগ নেওয়া না নেওয়া একই।
এছাড়া এবারের নির্বাচনের শুরুর দিক থেকেই ইসির শীর্ষ কর্মকর্তাদের গা-ছাড়া ভাব রয়েছে। পরপর দু’দফা তফসিলে যেমন কোনো কর্মকর্তারা ছিলেন না, তেমনি অন্তত অর্ধডজন নির্বাচনী কাজে ধরা পড়েছে কর্মকর্তাদের অসাবধানতা ও ভুল। এতে করে নির্বাচন মনিটরিংয়ে ইসির সদিচ্ছা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
এ প্রসঙ্গে গতকাল ইসি সচিব সিরাজুল ইসলাম বলেন, নির্বাচন নিয়ে ভুক্তভোগীদের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ দাখিল করতে হবে। ঢালাও অভিযোগ করলে ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব নয়। কখন, কোথায়, কে ঘটনা ঘটিয়েছে Ñ এগুলো থাকতে হবে অভিযোগে। অদৃশ্য কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগ করলে ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব নয়।
তিনি বলেন, খুব ক্লোজলি পরিস্থিতি মনিটরিং করা হচ্ছে। যেহেতু ইউপি অনেক বড় নির্বাচন, তাই সব জায়গায় আমাদের কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া সম্ভব হয়নি। তবে সরকারের প্রশাসনের জনবল নিয়োগ করা হয়েছে। এতে সমস্যা হবে না। তিনি জানান, সরকারি কর্মকর্তাদের মাধ্যমে আগেও সুচারুরূপে নির্বাচন সম্পাদন করা হয়েছে। এবারও হবে।
সিরাজুল ইসলাম বলেন, এক্ষেত্রে আমরা কেন্দ্র থেকে পর্যবেক্ষণ করব। এছাড়া আঞ্চলিক ও জেলা নির্বাচন কর্মকর্তারাও ভোটগ্রহণে দায়িত্বরতদের পর্যবেক্ষণ করবে। ইউপি নির্বাচন যেহেতু সংখ্যাগত দিক দিয়ে একটা বড় নির্বাচন, সেহেতু নির্বাচন কমিশনের কাছে সব প্রার্থী সমান, সে স্বতন্ত্র বা দলের প্রার্থী হোক। নির্বাচনে সবার জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করা হবে।
এদিকে ইসি সচিবালয় থেকে নির্বাচনী বিধি মনিটরিংয়ে ভিজিল্যান্স ও পর্যবেক্ষক দল, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাসংক্রান্ত টিম গঠন হয়নি। এতে করে প্রার্থীরা ও সমর্থকরা আচরণ বিধি লঙ্ঘনের মহোৎসব শুরু করেছেন। প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে আচরণ বিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ পাওয়া গেছে, কিন্তু এসবের বিরুদ্ধে কার্যত কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
তৃণমূলের একাধিক উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ইনকিলাবকে জানান, তারা উভয় সংকটে। একদিকে আচরণ বিধি লঙ্ঘন, অন্যদিকে ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করলেও আবার ভিন্ন ঝামেলা। তাই কোনো অ্যাকশনের পরিবর্তে যতটা শান্ত পরিবেশ রাখা যায় সেই প্রচেষ্টা করা হচ্ছে।
তাদের মতে, পৌরসভার নির্বাচনে আচরণ বিধি লঙ্ঘনের লিখিত অভিযোগ নেওয়ার পরে বাড়তি ঝামেলায় পড়তে হয়েছে। ফলে এবারে লিখিত অভিযোগের ক্ষেত্রেও নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। এছাড়া মনোনয়নপত্র বিতরণ ও জমাগ্রহণের কারণে বাড়তি চাপের রয়েছেন তারা। ২ মার্চ পর্যন্ত এই ঝামেলা থাকবে। এরপরে মাঠ মনিটরিং করা হবে।
নির্বাচন কমিশনার মো. শাহনেওয়াজ বলেন, আচরণবিধি লঙ্ঘনের বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। এখন মনোনয়নপত্র জমা দেয়া শুরু হয়েছে। প্রার্থী হওয়ার পর সবার দিকে সমান নজর দেয়া হবে। এখন পর্যন্ত বিধি লঙ্ঘনের কোনো অভিযোগ আমরা পাইনি।
কলারোয়া (সাতক্ষীরা) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, সহকারী রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়ে মনোনয়নপত্র ছিনতাই, এক চেয়ারম্যানের বাড়ি ভাঙচুর এবং রিটার্নিং অফিসে প্রবেশের সকল রাস্তায় তল্লাশি করায় প্রাণভয়ে শতাধিক প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা না দিয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন। প্রতক্ষ্যদর্শী সূত্র জানায়, গতকাল সোমবার দুপুর ১২টায় সহকারী রিটার্নিং অফিসার আমিনুল ইসলামের কার্যালয়ে তার সামনে দেয়াড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান প্রার্থী ইব্রাহিম হোসেনের মনোনয়নপত্র কেড়ে নেয়া হয়। উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান সেলিনা আনোয়ার এবং সরকারি দলের প্রার্থী মাহবুর রহমানের নেতৃত্বে এ ঘটনা সংঘটিত হয় বলে ইব্রাহিম হোসেন সাংবাদিকদের জানান। এর আগে উপজেলা চত্বর থেকে ইব্রাহিম হোসেনের স্ত্রী ও মেয়ের কাছ থেকে কাগজপত্র ছিনিয়ে নেয়া হয়। এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে সহকারী রিটার্নিং অফিসার কথা না বলে মোবাইল সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। এর আগে গত পরশু রোববার সোনাবাড়িয়া ইউপি চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম মনোনয়নপত্র জমা দিতে গেছেনÑ একথা জানতে পেরে তার বাড়ি ও আসবাবপত্র ভাঙচুর করা হয়। ফলে চেয়ারম্যান শহিদুল প্রাণভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন বলে সাংবাদিকদের জানান। গতকাল সোমবার সকাল থেকে উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিস এবং উপজেলা পরিষদে সহকারী রিটার্নিং অফিসে যাওয়ার সব রাস্তায় সরকারদলীয় শত শত ক্যাডার অবস্থান নিয়ে পথচারীদের তল্লাশি করতে থাকে। যাতে কোনো ফাঁক-ফোকর গলিয়ে বিরোধীরা কেউ মনোনয়ন জমা না দিতে পারেন। পুলিশ অদূরে দাঁড়িয়ে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান। ফলে বিরোধীদলীয় শতাধিক প্রার্থী মনোনয়ন জমা না দিয়ে বাড়ি ফিরে যেতে বাধ্য হন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মনোনয়নপত্র ছিনতাই
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ