Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

পঞ্চগড়ে ধর্মগুরু হত্যাকান্ডে জড়িত সন্দেহে গ্রেফতার ৩

হত্যাকারীদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবিতে মানববন্ধন

প্রকাশের সময় : ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম

পঞ্চগড় জেলা সংবাদদাতা : পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জে হিন্দু ধর্মগুরুকে গলা কেটে হত্যায় জড়িত সন্দেহে তিনজনকে আটকের কথা জানিয়েছে পুলিশ। এদের দু’জন ‘জেএমবি সদস্য’ এবং অন্যজন ইসলামী ছাত্রশিবিরের স্থানীয় নেতা বলে দাবি করেছেন দেবীগঞ্জ থানার ওসি বাবুল আক্তার। আটকরা হলেন খলিলুর রহমান (৫৫), বাবুল হোসেন (২৮) ও জাহাঙ্গীর হোসেন। এর মধ্যে খলিলুর ২০০৫ সালের ১৭ আগস্টের বোমা হামলা মামলার আসামি।
রোববার সকালে দেবীগঞ্জের সোনাপোতা গ্রামের সন্তগৌরীয় মঠের অধ্যক্ষ যজ্ঞেশ্বর রায়কে গলা কেটে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। তারা গুলি ও বোমার বিস্ফোরণও ঘটায়। ধারালো অস্ত্র ও আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে তিন মোটরসাইকেল আরোহী এই হামলায় অংশ নিয়েছিল বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছে।
ওসি বাবুল বলেন, ঘটনার পর থেকে সোমবার সকাল পর্যন্ত জেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে জেএমবি সদস্য খলিলুর ও বাবুল এবং শিবির নেতা জাহাঙ্গীরকে আটক করা হয়েছে। এ ঘটনায় থানায় দুটি মামলা হয়েছে বলে জানান তিনি। নিহতের বড় ভাই রবীন্দ্রনাথ একটি হত্যা মামলা করেছেন। অস্ত্র ও বিস্ফোরক আইনে পুলিশ অন্য মামলাটি করে। দুটি মামলাতেই অজ্ঞাত পরিচয়ের তিনজনকে আসামি করা হয়েছে বলে জানান ওসি বাবুল।
বিদেশি হত্যা এবং আহমদিয়া মসজিদ ও শিয়া সমাবেশে হামলার মতো পঞ্চগড়ের পুরোহিত খুনের দায় স্বীকার করেও আইএসের নামে বার্তা এসেছে বলে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে খবর এসেছে। তবে মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক এই জঙ্গি সংগঠনের তৎপরতা বাংলাদেশে নেই দাবি করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বরাবরই জেএমবি কিংবা আনসারুল্লাহ বাংলাটিমকে সন্দেহের কথা জানিয়ে আসছে।
পঞ্চগড়ের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহ উদ্দিন রোববার বলেছিলেন, দুষ্কৃতকারীরা শান্তিপূর্ণ পরিবেশকে অস্থিতিশীল করতেই এই হত্যাকা- চালিয়েছে বলে মনে হচ্ছে।
পুলিশ সুপার গিয়াস উদ্দিন আহাম্মেদ বলেছেন, কারা হত্যাকারী এবং কী কারণে এমন হলো তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তদন্তের মাধ্যমে দুষ্কৃতকারী খুঁজে বের করা হবে এবং যত দ্রুতসম্ভব প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
গুলিবিদ্ধ গোপালকে পঙ্গু হাসপাতালে স্থানান্তর
পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জে দুর্বৃত্তদের হামলায় নিহত মহারাজ যজ্ঞেশ্বরের সহকারী গুলিবিদ্ধ গোপালচন্দ্র রায়কে সোমবার বিকেলে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় স্থানান্তর করা হয়েছে। রংপুর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. হযরত আলী জানান, আহত গোপালের শারীরিক অবস্থা প্রথমদিকে ভালো ছিল। কিন্তু হঠাৎ করে সকাল থেকে তার হাতের নখগুলোতে তেমন কোনো শক্তি পাচ্ছে না। ফলে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালে স্থানান্তর করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
গত রোববার সকালে দেবীগঞ্জের বোদা সড়কের পাশে সোনাপাতা এলাকায় সন্ত্রাসী হামলায় আহত হন তিনি। হামলার সময় প্রতিদিনের মতো শ্রী শ্রী সন্ত গৌড়ীয় মঠে ছোট মন্দিরে পূজা চলছিল। পরে দুর্বৃত্তরা মঠের থাকা ঘরে ঢুকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে মঠের অধ্যক্ষ মহারাজ যজ্ঞেশ্বরকে এলোপাতাড়িভাবে কোপাতে থাকে। পরে দুর্বৃত্তরা পালানোর সময় মহারাজ যজ্ঞেশ্বর সহকারী গোপালচন্দ্র রায়কে গুলি করে পালিয়ে যায়। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
গোপালচন্দ্র রায়ের স্ত্রী কুন্তি রানী জানান, রংপুর মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষ সরকারিভাবে চিকিৎসার ব্যবস্থা করায় আমি তাদের ধন্যবাদ জানাই। তবে যারা এই হামলা করেছে তাদের বিচার করতে হবে।
এদিকে স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী আলহাজ মশিউর রহমান রাঙা সোমবার তাকে দেখতে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যান এবং তার চিকিৎসার খোঁজখবর নেন। তিনি এ সময় ৫০ হাজার টাকা দেন। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন রংপুরের জেলা প্রশাসক মো. রাহাত আনোয়ার, হিন্দুকল্যাণ ট্রাস্টি অ্যাডভোকেট রথীশ চন্ত্র ভৌমিক বাবুসোনা।
হত্যাকারীদের গ্রেফতার দাবিতে মানববন্ধন
শ্রী শ্রী গৌড়ীয় মঠ মন্দিরে পুরোহিত জগেশ্বরের হত্যাকারীদের গ্রেফতারের দাবিতে পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জের বিজয় চত্বরে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সভা করেছে দেবীগঞ্জ উপজেলাবাসী। সোমবার সকাল ১১টায় দেবীগঞ্জ বিজয় চত্বর মোড়ে ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধনে দেবীগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক/শিক্ষার্থী ও সকল শ্রেণীর পেশার মানুষ অংশ নেন। এ সময় জেলা হিন্দু-বৌদ্ধ ঐক্য পরিষদের সভাপতি অর্জুন ভৌমিক, দেবীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবু হাসনাৎ জামান চৌধুরী জজ, দেবীগঞ্জ উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি পরিমল কুমার দে সরকারসহ প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
এদিকে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার দ্বীন মোহাম্মদকে প্রধান করে ৮ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত টিম গঠন করা হয়েছে। সংবাদ কর্মীরা আটক দুই জেএমবি সদস্য ও জামায়াত কর্মীর ছবি নিতে চাইলে তা দিতে অস্বীকার করে পুলিশ। দীর্ঘক্ষণ সংবাদ কর্মীরা অপেক্ষা করে চলে যান।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: পঞ্চগড়ে ধর্মগুরু হত্যাকান্ডে জড়িত সন্দেহে গ্রেফতার ৩
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ