Inqilab Logo

রোববার, ০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

দক্ষিণাঞ্চলে অসময়ে নদীতে ইলিশের প্রাচুর্য

প্রকাশের সময় : ২০ জানুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম

নাছিম উল আলম : অসময়ে সাগর উপকূলের মোহনাসহ দক্ষিণাঞ্চলের অভ্যন্তরীণ নদ-নদীর বিভিন্ন এলাকায় ইলিশের ব্যাপক বিচরণে বাজারেও আমদানীর প্রাচুর্যতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। দামও যথেষ্ট সহনীয় পর্যায়ে। এবারের ভরা শীত মৌসুমেও তাপমাত্রার পারদ স্বাভাবিকের চেয়ে কিছুটা কম থাকায় সাগর থেকে ঝাকে ঝাকে ইলিশ উপকূলের বিভিন্ন নদ-নদীর মোহনা হয়ে দক্ষিণাঞ্চলের অভ্যন্তরীণ নদীতে চলে আসায় জেলেদের জালে তা ধড়াও পড়ছে। তবে বর্তমানে জাটকা আহরণের নিষিদ্ধকালীন দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন নদ-নদীতে আইনশৃংখলা বাহিনীর অভিযানের ফলে অনেক সময়ই নির্বিচারে সব ধরনের জাল আটকের অভিযোগ রয়েছে। এতে জেলেদের চরম হয়রানিরও শিকার হতে হচ্ছে। উপরন্তু নভেম্বর থেকে জুন পর্যন্ত জাটকা আহরণের নিষিদ্ধকালীনের মধ্যে দক্ষিণাঞ্চলের কয়েকটি অভয়াশ্রম এলাকাতেও সব ধরনের মৎস্য আহরণ নিষিদ্ধ রয়েছে।
ইলিশ আমাদের জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। জিডিপিতে ইলিশের একক অবদান ১%-এরও বেশি। মৎস্য খাতে একক প্রজাতি হিসেবে এ মাছের অবদান প্রায় ১২-১৩%।
আমদানী বৃদ্ধির সাথে পাইকারী ও খুচরা বাজারে ইলিশের দামও অনেকটাই পড়ে গেছে গত এক সপ্তাহে। বরিশালের বাজারে গতকাল ৭শ’ থেকে সাড়ে ৮শ’ গ্রাম সাইজের প্রতি মণ ইলিশ বিক্রি হয়েছে ২৪ হাজার থেকে ২৮ হাজার টাকায়। যা মাত্র ৭ দিন আগেও ছিল ৩৪-৩৬ হাজার টাকা। ৫শ’ গ্রামের কম সাইজের প্রতি মণ ইলিশ বিক্রি হয়েছে গতকাল ২০ হাজার টাকা দরে।
অন্যান্য বছরের মত এবারও নিম্ন মেঘনা নদী, শাহবাজপুর চ্যানেল ও তেতুলিয়া নদীতে মার্চ ও এপ্রিল মাসে এবং পটুয়াখালীর আন্ধারমানিক নদীতে গত নভেম্বর চলতি জানুয়ারি মাসের সময়কালকে অভয়াশ্রম হিসেবে ঘোষণা করে সব ধরনের মাছ ধরা নিষেধাজ্ঞা বলবৎ রয়েছে। এছাড়াও শরীয়তপুর জেলার নড়িয়া ও ভেদরগঞ্জ উপজেলা এবং দক্ষিণে চাঁদপুর জেলার মতলব ও শরীয়তপুর উপজেলার ভেদরগঞ্জ উপজেলার মধ্যে অবিস্থিত পদ্মা নদীর ২০ কিলোমিটার এলাকায় আগামী মার্চ-এপ্রিল মাসকে অভয়াশ্রম ঘোষণা করায় সব ধরনের মৎস্য আহরণ নিষিদ্ধ থাকবে।
গত দিন পনের যাবৎ দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন অভ্যন্তরীণ নদ-নদীসহ উপকূলীয় এলাকায় ইলিশের প্রাচুর্য লক্ষ্য করা যাচ্ছিল। বিশেষ করে গত সপ্তাহখানেক ধরে এসব এলাকায় ব্যাপক বিচরণের ফলে জালে প্রচুর ইলিশ ধরা পড়ছে। বাজারে আমদানিও বছরের অন্য যেকোন সময়ের তুলনায় যথেষ্ঠ বেশি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বরিশাল, পাথরঘাটা, গলাচিপা, মহিপুর ও ভোলার কয়েকটি পাইকারী মোকামে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে গত কয়েকদিন ধরে উপকলীয় নদী মোহনায় ইলিশের বিচরণ অনেক বেশি। ফলে জেলেদের মুখেও যথেষ্ট হাসি ফুটেছে। অথচ বছরের এ সময়টিতে জেলেরা অনেকটা অলস সময়ই পার করেন। জাটকা আহরণ বন্ধের ফলে বেশিরভাগ জেলেই নৌকা ভাসায় না জাল নিয়ে। ফলে যথেষ্ট অভাব অনটনে দিন কাটে তাদের। কিন্তু গত মাসখানেক ধরেই ইলিশের আনাগোনায় জেলেদের অভাব লাঘব হচ্ছিল কিছুটা। গত সপ্তাহখানেক পরিস্থিতি আরো ভাল।
তবে ইলিশ নিয়ে গবেষণার সাথে সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল মহলের মতে তাপমাত্রার তারতম্যের কারণে ইলিশ উপকূলভাগ হয়ে দক্ষিণের অভ্যন্তরীণ নদ-নদীতে উঠে এলেও গত এক যুগ ধরে জাতীয় এ মাছ নিয়ে সংরক্ষণে মৎস্য অধিদফতর ও মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট কাজ করছে। পাশাপশি সরকারও এ লক্ষ্যে নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করায় গত এক যুগে দেশে ইলিশের উৎপাদন প্রায় দ্বিগুণ বেড়েছে। বর্তমানে দেশে ইলিশের উৎপাদন বছরে গড়ে ৫-৭ শতাংশ করে বাড়ছে বলে জানিয়েছেন মৎস্য বিজ্ঞানীগণ।
মৎস অধিদপ্তরের মতে, গত অর্থবছরে দেশে ইলিশের উৎপাদন ছিল ৩ লাখ ৮৫ হাজার টন। চলতি অর্থবছরে তা ৩.৯০ লাখ টন অতিক্রম করবে বলে মনে করছেন মৎস্য অধিদফতরের দায়িত্বশীল মহল। তবে অন্য একটি সূত্রের মতে তা ৪ লাখ টনেও উন্নীত হতে পারে। তবে এসব হিসেব সাগরপথে ভারতে পাচারকৃত ইলিশকে বাদ দিয়ে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: দক্ষিণাঞ্চলে অসময়ে নদীতে ইলিশের প্রাচুর্য
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ