পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
স্টাফ রিপোর্টার : দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে হলে নতুন করে আন্দোলন শুরুর কোনো বিকল্প নেই বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গতকাল সোমবার বিকেলে এক আলোচনা সভায় তিনি এই মন্তব্য করেন।
মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, গণতন্ত্রকে সামনে নিয়ে যে ভাষা আন্দোলন শুরু হয়েছিল, গণতান্ত্রিক চেতনা নিয়ে আমরা মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলাম, আজকে সেই গণতন্ত্র পুরোপুরিভাবে নির্বাসিত। এই অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে হলে গণতন্ত্র ছাড়া উপায় নেই। এই গণতন্ত্রকে পেতে হলে আন্দোলন ছাড়া কোনো বিকল্প নেই।
বিএনপির এই নেতা বলেন, আজকে বাংলাদেশে নতুন করে আন্দোলন শুরু করতে হবে। যে আন্দোলনের মধ্য দিয়ে একদিকে আমাদের সাংস্কৃতিকে রক্ষা করব, স্বাধীনতা-সাবভৌমত্ব রক্ষা করব আর অন্যদিকে আমরা আমাদের হারিয়ে যাওয়া যে অধিকারগুলো সেই অধিকারগুলোকে আমরা ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হবো।
রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে বিএনপির উদ্যোগে মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে এই আলোচনা সভা হয়।
আওয়ামী লীগের অতীত ইতিহাস তুলে ধরে মির্জা আলমগীর বলেন, যারা গণতন্ত্রের কথা মুখে বলতেন, যারা গণতন্ত্রকে ভর করে ক্ষমতায় এসেছিলেন, তারা সেই গণতন্ত্রকে আজ গলাটিপে হত্যা করছেন। এটা তাদের ঐতিহ্য। অতীতেরও তারা একদলীয় শাসনব্যবস্থা কায়েম করেছেন। আবার আজকে ভিন্ন মোড়কে একদলীয় শাসন ব্যবস্থা চালিয়ে যাচ্ছেন।
আজকে একটা ভয়াবহ শ্বাসরুদ্ধকর পরিবেশে আমরা বাস করছি। আমরা কণ্ঠরোধ করে দেয়া হচ্ছে, আমাদের কথা বলতে দেয়া হয় না। আমাদের সমাবেশ করতে দেয়া হয় না। আমাদের সম্মেলন (জাতীয় কাউন্সিল) করার জন্য জায়গা দেয়া হয় না। আজ সেই অবস্থার মধ্যে আমাদেরকে এগিয়ে যেতে হচ্ছে।
তিনি বলেন, আমাদের দলের প্রতিষ্ঠাতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান যে পথ দেখিয়ে গেছেন, সেই পথে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। আমাদের বীর শহীদরা যে পথ দেখিয়ে গেছেন, সেই পথে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। দীর্ঘ ৯ বছর স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া যে আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন এবং পরে সব আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন, তাকে সামনে রেখে আমাদের দেশে গণতান্ত্রিক অধিকারগুলো ফিরিয়ে আনতে হবে।
নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, আসুন আজকে আমাদের শপথ হউক, যেকোনো ত্যাগের বিনিময়ে আমরা আমাদের গণতান্ত্রিক অধিকারগুলো ফিরিয়ে আনবো, মানুষের মৌলিক অধিকার ফিরিয়ে আনবো এবং জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা করবো।
২১ ফেব্রুয়ারি বর্তমান অবস্থা প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব বলেন, গতকাল বদরউদ্দিন ওমর সাহেবের একটি লেখা পড়ছিলাম। সেই লেখার মূল যে সুরটি ছিলো- ফিরিয়ে দাও আমাদের প্রভাত ফেরী। অর্থাৎ প্রভাত ফেরীতে আমাদের জাতির যে ঐতিহ্য ও আমাদের আবেক প্রকাশিত হতো, আমরা মহান ভাষা শহীদদের প্রতি সেই ভোর বেলা শ্রদ্ধা নিবেদন করতাম আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো ২১ ফেব্রুয়ারি গানটি গেয়ে। এটি এখন প্রায় চলে গেছে। এখন ২১ ফেব্রুয়ারি একটি অনুষ্ঠানে একটি উৎসবে পরিণত হয়েছে। বলতে এতটুকু দ্বিধা নেই এটা এখন কপটতায় পরিপূর্ণ হয়ে গেছে। যদিও ২১ ফেব্রুয়ারিকে উপলক্ষ করে শিল্প-বাণিজ্যের প্রসার ঘটেছে। আমরা দেখছি, সুন্দর সুন্দর কালো-সাদা পোশাক তৈরি হয় তার মধ্যে অনেক বর্ণমালা লিখিত থাকে। আমাদের ছেলে-মেয়ে থেকে শুরু করে আমাদের বাড়ির পর্যন্ত সেইসব পোশাক পড়ে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান দেখতে যান অথবা বাজার করতে যান। এটা কপটতা ছাড়া কিছু নয়।
তিনি বলেন, আমাদের মধ্যে আজকালকার প্রজন্মের বেশিরভাগেই জানেন না, যে ২১ ফেব্রুয়ারিতে কোন অবস্থার প্রেক্ষিতে কারা কারা প্রাণ দিয়েছিলেন এবং কেনো সেদিন ভাষার জন্য প্রাণ দিয়েছিলেন। আজকে যখন এখানে আলোচনা হচ্ছিল, আমি দেখছিলাম আমাদের অনুষ্ঠানের হল আস্তে আস্তে খালি হচ্ছিল। আমি দেখছিলাম, অনেকের বেশ তন্দ্রভাব এসে গেছে। অর্থাৎ আমরা এই আলোচনাগুলো পছন্দ করি না। আমাদের জীবনে মধ্যে এটা কোনো প্রভাব বিস্তার করতে চায় না। এটা আনতে হবে। অতীতে যারা আমাদের এই দেশটাকে সৃষ্টি করার জন্য প্রাণ দিয়েছিলেন, তাদের সম্পর্কে জানতে হবে। আমাদের স্বাধীনতার মূলবীজটি বপণ করা হয়েছিল ২১ ফেব্রুয়ারিতে। সেই রক্তদিয়ে সেই বীজের মধ্যে জলসনচালন করা হয়েছিল। যার ফলে সেটা মহীরুহ হয়ে স্বাধীন বাংলাদেশে রূপান্তরিত হয়েছে। ২১ এর চেতনা বর্তমান নেই বলেও মন্তব্য করেন মির্জা ফখরুল।
ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ভাষা আন্দোলনের চেতনার মূল উদ্দেশ্য ছিল এদেশে মানুষের আশা-আকাক্সক্ষার প্রতিফলন ঘটবে। সংখ্যাগরিষ্ট মানুষের মতামত অনুযায়ী সব কিছু চলবে। অর্থাৎ গণতন্ত্রকে সর্বক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত করা হবে। কিন্তু আমরা যে দেশে বসবাস করছি, সেখানে আজ গণতন্ত্র ভুলণ্ঠিত। আজকে অন্যায়, অত্যাচার, নির্যাতন নিত্যনৈমত্তিক ব্যাপার। একুশ মানে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানো। সকল অন্যায়-নির্যাতনের বিরুদ্ধে আমাদেরকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে হবে।
স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, স্বাধীন বাংলাদেশ করার যে দাবিটা আওয়ামী লীগ করে, সেটা সত্য নয়। তারা ১৯৬৬ সালে ৬ দফা দাবি দিয়েছে, সেখানেও বাংলাদেশের স্বাধীনতার কথা তারা বলেননি। এমনকি একাত্তর সালের নেগোসিয়েশনের সময়েও তারা স্বাধীনতার কথা বলে নাই। যাই হউক ঘটনাক্রমে সেই স্বাধীনতাযুদ্ধে আওয়ামী লীগ নেতৃত্ব দিয়েছে, সেটা অস্বীকার করার উপায় নেই।
শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে স্বাধীনতার ঘোষক অভিহিত করে তিনি বলেন, আজকে শহীদ জিয়াউর রহমানকে স্মরণ করতে হয়। তার কারণেই এদেশে আমরা একটি নতুন আর্দশ, নতুন দিক-নিদের্শনা আমরা পেয়েছিলাম, নতুন আশার আলো আমরা দেখতে পেয়েছিলাম। সেটা হচ্ছে বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের রাজনৈতিক দর্শন।
যদি আমরা বিএনপিকে সুসংগঠিত করতে পারি, শক্তিশালী করতে পারি, তাহলেই এদেশে রাজনীতিতে বিএনপি যুগ যুগ ধরে অনন্য ভূমিকা রেখে যাবে। তবে আমাদের যারা প্রতিপক্ষ অনেকগুলো ব্যর্থতা আছে। তারা প্রথমে একদলীয় শাসন করলেন, এখন তারা অনির্বাচিতভাবে রাষ্ট্র পরিচালনা করছেন। দেশে এখন কোনো গণতন্ত্র নেই, রাজনীতিও নেই।
মির্জা ফখরুলের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় দলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি প্রফেসর এমাজ উদ্দিন আহমেদ, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ইনাম আহমেদ চৌধুরী, কৃষক দলের শামসুজ্জামান দুদু, যুব দলের সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, মহিলা দলের শিরিন সুলতানা, ছাত্র দলের আসাদুজ্জামান আসাদ বক্তব্য রাখেন।
অনুষ্ঠানে দলের সিনিয়র নেতাদের মধ্যে ফজলুল হক মিলন, আসাদুল হাবিব দুলু, জয়নুল আবদিন ফারুক, খায়রুল কবির খোকন, নাজিমউদ্দিন আলম, হাবিবুর রহমান হাবিব, আব্দুস সালাম আজাদ, কাজী আবুল বাশার, এমএ মালেক, রফিকুল ইসলাম মাহতাব, হাফেজ আব্দুুল মালেক, শাহ নেসারুল হক প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।