পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বিশেষ সংবাদদাতা : মাইনাস টু ফর্মুলার জন্য দায়ী দুইজন সম্পাদকের বিচার হবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দু’টি পত্রিকা ডিজিএফআইয়ের লিখে দেয়া মিথ্যা সংবাদ ছাপিয়ে সে সময় রাজনীতি থেকে আমাকে এবং খালেদা জিয়াকে চিরদিনের জন্য সরিয়ে দেয়ার জন্য চেষ্টা চালিয়েছে। আর ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনাম আমাকে দুর্নীতিবাজ বানানোর জন্য বহু চেষ্টা করেছেন। এখন তিনি স্বীকারও করেছেন, ডিজিএফআইয়ের চাপে তিনি সেসব নিউজ পত্রিকায় ছেপেছিলেন। এখন ভুল স্বীকার করায় তার পদত্যাগ করে সাংবাদিকতা থেকে সরে আসা উচিত। গতকাল রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে একুশে ফেব্রুয়ারি শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগের আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন। প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা সংস্থার সরবরাহ করা তথ্য প্রচারের ষড়যন্ত্রে জড়িত সম্পাদকদের বিচারের আওতায় আনা হবে জানিয়ে এবং ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনামকে উদ্দেশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ডিজিএফআই-এর সঙ্গে তার (মাহফুজ আনাম) কী সখ্যতা ছিল? তাকে যা ধরিয়ে দিতেন তাই হুবহু ছাপিয়ে দিতেন। যুদ্ধাপরাধীদের যেমন বিচার হচ্ছে; ঠিক সেভাবে একদিন তাদেরও বিচার হবে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে গ্রেফতার হওয়ার পর তার ওপর চালানো নির্যাতনের বর্ণনা দিয়ে তিনি আরো বলেন, বিনা ওয়ারেন্টে আমাকে গ্রেফতার করে সলিটারি কনফাইনমেন্টে পাঠানো হয়। গ্রেফতারের সময় আমার অসুস্থ স্বামীকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়া হয়। কারাগারে কাউকে দেখা করতে দেয়া হয়নি। অসুস্থ হয়ে পড়লেও চিকিৎসা করানো হয়নি। তিনি বলেন, সত্য কখনো চাপা থাকে না। মাহফুজ আনামকে একটা কথাই বলবÑ অনেক চেষ্টা করেছেন। আপনার পিতৃতুল্য ওয়ার্ল্ড ব্যাংকও দুর্নীতিবাজ বানাতে পারেনি। আর আপনিও পারবেন না।
শেখ হাসিনা বলেন, ২০০১ সালে আমরা আর ক্ষমতায় আসতে পারলাম না। আমাদের সমস্ত অর্জন একে একে নস্যাৎ করা হলো। সেই ২০০১-এর অত্যাচার-নির্যাতনের কাহিনী, যেখানে ছয় বছরের রাজুফা গ্যাং র্যাপের শিকার হয়েছিল। রাজুফা থেকে বয়োবৃদ্ধসহ কেউই রেহাই পায়নি। একাত্তরে যেভাবে গণহত্যা চালানো হয়েছিল, ওই সময় একইভাবে সারা বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ওপর অত্যাচার-নির্যাতন চলেছে। তখন দু-একটি পত্রিকা হয়তো এ ঘটনা তুলে ধরেছে। অনেক পত্রিকাই বিএনপি-জামায়াতের ওই সব অত্যাচারের কথা লেখেনি। তিনি বলেন, সেই তত্ত্বাবধায়ক সরকার যাদের নির্বাচন দেয়ার কথা, তারা বেশ গেড়েই বসে গেল। তখন আমরা কী দেখলাম? রাজত্ব চালাচ্ছে কে? তত্ত্বাবধায়ক সরকার আছে। ফখরুদ্দীন-মইনউদ্দিন, এরা যাদের আপনজন, সেটা বিএনপিরই আপনজন। ওয়ার্ল্ড ব্যাংকে চাকরি করত ফখরুদ্দীন, খালেদা জিয়া তাকে এনে গভর্নর বানাল। নয়জন সেনা অফিসারকে ডিঙিয়ে মইনউদ্দিনকে সেনাপ্রধান বানায়। যখন তারা ক্ষমতায় বসল, ততক্ষণে তাদের ভিন্ন রূপ দেখা দিলো। ক্ষমতা কিভাবে পাকাপোক্ত করা যায়। আর এই ক্ষমতা পাকাপোক্ত করার জন্য দু’টি পত্রিকা আবার উঠেপড়ে লেগে গেল তাদের সাথে। এবং এই পত্রিকায় আপনারা ইতোমধ্যে েেদখেছেন, একজন সম্পাদক স্বীকার করেছেন, তিনি যা লিখতেন, ডিজিএফআই যা দিত, তা-ই লিখে দিতেন। ফখরুদ্দীন-মইনউদ্দিনের সরকারের আমলে ডিজিএফআই খুব শক্তিশালী হয়ে গিয়েছিল।
ডেইলি স্টারের সম্পাদকের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, যদি বুকের পাটা থাকে, সাহস থাকে জাতির কাছে স্বীকার করেন, ভয়ে লিখেছেন। তাহলে আর নির্ভীক সাংবাদিকতা থাকে না। আর যদি তাদের কাছে বিক্রি হয়ে থাকেন বা তাদের সাথে সখ্যতা থাকে সেখানে আমার কিছু বলার নেই। আর যদি ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থাকেন, তাহলে ষড়যন্ত্রকারীরা যারা এ দেশের গণতন্ত্র হত্যা করে ক্ষমতাকে দীর্ঘস্থায়ী করার চেষ্টা করেছিল, এ দেশের মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার কেড়ে নেয়ার চেষ্টা করেছিল, এ দেশের মানুষকে এভাবে নির্যাতনের শিকার করেছিলÑ যুদ্ধাপরাধীদের যেমন বিচার হচ্ছে ঠিক সেভাবেই একদিন এদের এই সংবিধান ধ্বংস করার বিচার হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, সম্পাদক সাহেব ডিজিএফআইয়ের লেখা ছাপিয়ে ভুল করেছেন বললেন কিন্তু সেই ভুলের খেসারত বাংলাদেশের মানুষ দিয়েছে, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা দিয়েছে। এর খেসারত দেশের ব্যবসায়ী মহল দিলো, ছাত্রসমাজ দিলো, সকলেই দিলো। আর যেহেতু আমার বিরুদ্ধে লিখেছে সে জন্য আমি ও আমার পরিবার তো দিয়েছি। কই তিনি ভুল স্বীকার করে পদত্যাগ করার সাহস তো দেখাতে পারলেন না। এতটুক আত্মমর্যাদা থাকলে তো নিশ্চয়ই তিনি এরপর পদত্যাগ করতেন। তিনি বলেন, ‘ডেইলি স্টারের মতো একটি পত্রিকা, ডিজিএফআইয়ের একজন অফিসার যা লিখে দেবে তা ছাপাবে এটা কোনো পাগল বিশ্বাস করে? কারণ, ডেইলি স্টার তার ভাষা সম্পর্কে খুবই সচেতন।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে গ্রেফতার হওয়ার পর তার ওপর চালানো নির্যাতনের বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, সেখানে স্যাঁতসেঁতে ঘরে তাকে থাকতে দেয়া হয়, ছেঁড়া কম্বলে তার গায়ে অ্যালার্জি উঠে যায়, চোখে সমস্যা দেখা দেয়। এরপর পরীক্ষা করে চিকিৎসক হাসপাতালে নেয়ার পরামর্শ দিলেও তাকে কারাগারেই পাঠানো হয়। সেখানে ঈদের দিনে কেবল স্বামী ও ফুফুকে দেখা করতে দিলেও তাদের বলে দেয়া হয়েছিল মিডিয়ার সামনে মুখ না খুলতে। কিন্তু আমার ফুফুও বঙ্গবন্ধুর বোন, তিনি নিজের বাড়িতে সাংবাদিক ডেকে যখন কারাগারের ভেতরের পরিস্থিতি জানান, তখন আমার চিকিৎসার উদ্যোগ নেয়া হয়, বলেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ যা কিছু অর্জন করেছে, তা মহান ত্যাগের মধ্য দিয়েই অর্জন করেছে। কোনো ত্যাগই বৃথা যায় না। তাইতো বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের স্মারক একুশে ফেব্রুয়ারি আমাদের শহীদ দিবস আজ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। তিনি বলেন, একুশ বছর পর ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে আমরা স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের হারানো ও বিকৃতির কবলে পড়া ইতিহাসকে ফিরিয়ে এনেছি। ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে পাওয়া বাংলা ভাষাকে মর্যাদার আসনে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করেছি। একুশে ফেব্রুয়ারি আমাদের মহান শহীদ দিবসকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালনের উদ্যোগ নিয়ে তা সফল করেছি।
মহান ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে মুক্তিযুদ্ধ ও ২৩ বছরের আন্দোলন-সংগ্রামের শহীদ এবং এ আন্দোলন-সংগ্রামে নেতৃত্ব দানকারী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, জাতীয় চার নেতা, পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুর পরিবারের সদস্যদের শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করে বক্তব্য শুরু করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি স্বাধীনতা-পরবর্তী ভোট ও ভাতের অধিকার রক্ষার আন্দোলনে শহীদদেরও স্মরণ করেন।
ভাষা আন্দোলনে বঙ্গবন্ধুর অবদান তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। বঙ্গবন্ধুর প্রস্তাবেই আটচল্লিশে প্রথম সর্বদলীয় ভাষা সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয় এবং ওই বছরের ১৬ মার্চ তার সভাপতিত্বে রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয় বলেও উল্লেখ করেন তিনি। ওই বছরের ১১ সেপ্টেম্বর ভাষার দাবিতে বক্তৃতা করার অপরাধে পাকিস্তান সরকার তাকে গ্রেফতার করে। এরপর থেকে রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের কারণেই বারবার গ্রেফতার হন এবং বায়ান্নর ২৭ ফেব্রুয়ারি মুক্তি পান। একুশে ফেব্রুয়ারি ১৪৪ ধারা ভঙ্গের মাধ্যমে মিছিল করার আগে বঙ্গবন্ধুর পরামর্শ নিয়েছিলেন ছাত্রনেতারা। বঙ্গবন্ধুও এ দাবিতে জেলে অনশন করেন।
আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য ও সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তৃতা করেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য তোফায়েল আহমেদ, সভাপতিম-লীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম প্রমুখ। সভায় মন্ত্রী, সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।