পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
মোঃ ফজলুর রহমান, হবিগঞ্জ থেকে : চৌকিদার থেকে গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান হলেন আব্দুল আলী ‘বাগাল’। হবিগঞ্জের বাহুবল উপজেলার রশিদপুর ও ফয়জাবাদ চা বাগানের কোল ঘেঁষে নিভৃত এক গ্রাম সুন্দ্রাটিকি। বাহুবল সদর থেকে ৫ কিলোমিটার দূরের এ গ্রামের অধিকাংশ লোকই শ্রমজীবী। কাজ করেন চা ও লেবু বাগানে। অন্যান্য টুকটাক কাজও করেন কেউ কেউ। অবস্থাপন্ন হাতেগুনা কিছু পরিবারও রয়েছে ওই গ্রামে। আলাদা কোনো বিশেষত্ব না থাকায় আশপাশের দু’দশ গ্রাম ছাড়া সুন্দ্রাটিকির তেমন কোন পরিচিতিও ছিল না। তবে নৃশংস এক নারকীয় ঘটনায় দেশজুড়ে পরিচিত হয়ে উঠে নিভৃত পল্লীর গ্রামটি। গ্রামের ইছাবিল থেকে চার শিশুর মাটিচাপা লাশ উদ্ধারের পর রাতারাতি গ্রামটি পরিচিতি পায় দেশ-বিদেশে। আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসে গ্রামটি। সাথে আলোচনায় আসে গ্রামটির বাসিন্দা আব্দুল আলী বাগাল ও তার পরিবার।
আব্দুল আলী বাগাল পরিচিতি
সুন্দ্রাটিকি গ্রামের মৃত আব্দুল জব্বারের ছেলে আব্দুল আলী। জীবিকা নির্বাহের তাগিদে একসময় তিনি ফয়জাবাদ চা বাগানে চৌকিদার (পাহারাদারের) কাজ নেন। স্থানীয়ভাবে যার পরিচিতি ‘বাগাল’। দীর্ঘদিন বাগালের কাজ করায় তার নামের সঙ্গেই জুড়ে যায় বাগাল শব্দটি। এ পেশায় যুক্ত থাকার সুবাদে ইতোমধ্যে সে কৌশলে চা বাগানের বেশকিছু ভূমি জবর-দখল করে ফল বাগান প্রতিষ্ঠা করে। এছাড়া চা বাগানের গাছ পাচারেও নিজেকে সম্পৃক্ত করে।
এর আগেও খুনের ঘটনার সঙ্গে জড়িয়ে ছিল আব্দুল আলীর নাম। প্রায় ২৫ বছর আগে সুন্দ্রাটিকি গ্রামে খুন হয়েছিলেন আব্দুল জলিল নামে এক ব্যক্তি। তখন অভিযোগের আঙুল উঠেছিলো আব্দুল আলীর দিকে। এর ৫ বছর পর আরো একটি হত্যার ঘটনা ঘটে সুন্দ্রটিকি গ্রামে। রশিদপুর চা বাগানের নাচঘরের পাশ থেকে উদ্ধার হয় ভাদেশ্বর ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান মোত্তাছির মিয়ার ভাই মোশাহিদ মিয়ার লাশ। এ ঘটনায়ও জড়িত থাকার অভিযোগ উঠে আব্দুল আলীর বিরুদ্ধে। অবশ্য দুটি খুনের ঘটনাতেই আপস-রফার মাধ্যমে বেঁচে যায় সুচতুর আব্দুল আলী বাগাল।
এ দুটো মামলা থেকে বেঁচে গেলেও জেলের গেট দিয়ে ঠিকই তাকে মাথা নিচু করে ঢুকতে হয়েছিলো। প্রায় ২২ বছর পূর্বে ফয়জাবাদ হিলসে শ্রীমঙ্গলের বাসিন্দা শিপার মিয়ার একটি ফল বাগান জোরপূর্বক দখল করতে চেয়েছিলেন। এ ঘটনায় তাকে কিছুদিন হাজতবাসও করতে হয়েছে।
চৌকিদার থেকে যেভাবে পঞ্চায়েত প্রধান
সুন্দ্রাটিকি গ্রামে আব্দুল আলী একটি পঞ্চায়েত প্রধানের পরিচয়টি কৌশলে বাগিয়ে নেয়। সে এক সময় ছিল গ্রাম পঞ্চায়েত সর্দার আবদুর রউফের সহযোগী চৌকিদার। আবদুর রউফ মারা গেলে গ্রামের রীতি অনুযায়ী ওই পঞ্চায়েতের প্রধান হন তার ছেলে আব্দুল মঈন সুমন। কিন্তু সুচতুর কৌশলী আব্দুল আলী বাগাল কৌশলে সুমনকে সরিয়ে এ দায়িত্ব দখল করে নেন। তিনি হয়ে যান চৌকিদার থেকে এক পঞ্চায়েতের প্রধান। তার এই প্রধান হওয়া নিয়ে এখনও ওই পঞ্চায়েতের মধ্যে দ্বন্দ্ব টিকে আছে।
প্রায় ৪ হাজার জনগোষ্ঠী অধ্যুষিত সুন্দ্রাটিকি গ্রামে আরো ৭টি পঞ্চায়েত রয়েছে। এসব পঞ্চায়েতের নেতৃস্থানীয়রা হলেন- সুন্দ্রাটিকি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক আব্দুল খালিক তালুকদার, মধু মিয়া, নূর আলী ওরফে নূরাই মিয়া, আব্দুল মঈন সুমন, ফরিদ মিয়া, সেলিম আহমেদ, টেনু মিয়া, আব্দুল হাই, উস্তার মিয়া ও আকল মিয়া।
বিরোধ ভালোবাসেন আব্দুল আলী বাগাল
নানা বিষয়ে সুন্দ্রাটিকি গ্রাম পঞ্চায়েতের মুরুব্বিরা ঐকমত্যে পৌঁছলেও আব্দুল আলী বাগাল একাই থেকে যান ভিন্ন মত ও পথে। ফলে গ্রামের নানা বিরোধ পঞ্চায়েতে শেষ হয়েও হয় না। অনেক বিষয়ই ফের চাঙ্গা হয়ে ওঠে।
সুন্দ্রাটিকি গ্রাম পঞ্চায়েতের হেফাজতে কয়েক একর সরকারি পতিত ভূমি রয়েছে। যা গোচারণ ভূমি, খেলার মাঠ ও কবরস্থান হিসেবে যুগের পর যুগ ধরে ব্যবহার হয়ে আসছে।
সংশ্লিষ্টদের দাবি উক্ত ভূমি তারা সরকারের নিয়ম মেনে লিজ নিয়েছেন। সম্প্রতি ওই ভূমি থেকে প্রায় ৬০ শতাংশ ভূমি ২০ লাখ টাকা মূল্যে বিক্রি করা হয়। ওই টাকা দিয়ে গত বছরের শেষের দিকে স্থানীয় খেলার মাঠে শিরনীর আয়োজন করা হয়। ৯টি গরু ও ১০টি খাসি জবাই করে করা উক্ত শিরনীতে সুন্দ্রাটিকি গ্রামবাসী ছাড়াও আশপাশের বেশ কয়েক গ্রামের লোকজন ভুঁড়িভোজ করেন। সে সময় প্রায় ৪ হাজার লোককে আপ্যায়ন করা হয়েছিল বলে গ্রামবাসীর দাবি। এতে ১০ লাখের কাছাকাছি অর্থ খরচ হয়। এ টাকার হিসাব-নিকাশ নিয়ে অন্য মুরুব্বিদের মাথাব্যথা না থাকলেও আব্দুল আলী বাগালের সন্দেহ ও অবিশ্বাস ছিল। এ নিয়ে গ্রাম পঞ্চায়েতে তিনি দেন-দরবার চালিয়ে যাচ্ছিলেন। এ সব বিষয় নিয়ে গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্যান্য মুরুব্বিদের সাথে দূরত্ব বাড়ে আব্দুল আলী বাঘালের।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।