Inqilab Logo

শুক্রবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

প্রচন্ড ঝুঁকিতে যমুনা নদীতীর রক্ষা প্রকল্প

সিরাজগঞ্জে শিমলা স্পার অরক্ষিত : বন্যায় বদ্বীপে পরিণতের শঙ্কা

| প্রকাশের সময় : ৩০ জানুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

সিরাজগঞ্জ থেকে সৈয়দ শামীম শিরাজী : সিরাজগঞ্জে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (বাপাউবো) ব্রহ্মপুত্র  বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ সংলগ্ন শিমলা স্পারটি অরক্ষিত হয়ে পড়েছে। ফলে ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে  সাড়ে ৮ কিলোমিটার বিস্তৃত নদী তীর রক্ষা প্রকল্পটি। এতে করে বর্ষা মৌসুমে সিরাজগঞ্জ শহরটি বদ্বীপে পরিণত হবার শঙ্কা রয়েছে।
জানা গেছে, ৩ মাস আগে সদর উপজেলার পাউবো’র এ স্পারটি চলতি শুষ্ক মৌসুমেই ভাঙনের কবলে পড়ে। যমুনার প্রবল ঢেউয়ের কারণে স্পার সংলগ্ন মাটির স্যাঙ্কের প্রায় ৫০ মিটার অংশ নদীতে বিলীন হয়ে যায়। সেই সঙ্গে স্পারের উজানে তীর রক্ষা বাঁধও ৫০ মিটার ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বরাদ্দ স্বল্পতা এবং প্রকল্প এলাকার বাইরে হওয়ায় পাউবো এটি সংস্কার করছে না। ফলে স্পারের আশেপাশের বিশাল এলাকা আগামী বর্ষায় ঝুঁকির মধ্যে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন এলাকাবাসী। স্পারটি যমুনায় বিলীন হলে প্রথমে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধটি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এরপর পুরো সদর কাজীপুর উপজেলাসহ জেলা শহরও বন্যার প্রকোপের মধ্যে পড়ে শহরটি বদ্বীপে পরিণত হবার আশঙ্কা রয়েছে বলে এসব অঞ্চলের নদী পাড়ের মানুষেরা জানিয়েছেন। তাই বর্ষার আগেই এটির দ্রুত সংস্কার ও মেরামত করা জরুরী বলে অভিজ্ঞমহুল মনে করেন।
জানা গেছে, দুন্দশক আগে নির্মিত সদরের শিমলা সলিড কংক্রিট স্পার ও মাটির স্যাঙ্ক বা আড়াআড়ি বাঁধের প্রায় ৫০ মিটার আংশ ধসে যমুনায় বিলীন হয়ে গেছে। ধসের পর পরই পাউবো বেশ ক’জন ঠিকাদার দিয়ে কিছু জিওব্যাগ ও সিনথেটিক বস্তায় বালি ভরে ফেলে সাময়িক ভাঙন নিয়ন্ত্রণ করে। এর আগেও এ স্পারের প্রায় দেড়শ মিটার উজানে তীর রক্ষা বাঁধে পর পর দু’বার ভাঙন দেখা দিলেও টনক নড়েনি পাউবোর।
পাউবোর সেকশনাল অফিসার রণজিৎ কুমার সরকার জানান, শিমলা স্পারটি আমাদের চলমান প্রকল্পের বাইরে। তাই এটি জরুরি ভিত্তিতে সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণের বরাদ্দ ও টেন্ডার আহ্বান করার জন্য বোর্ডে প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে। উপবিভাগীয় প্রকৌশলী একেএম ফজলুল হক জানান,শিমলা স্পারটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ভাটিতে শৈলাবাড়ি পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ৮ কিলোমিটার নদী তীর রক্ষা প্রকল্প শিমলা স্পারের কারণে সুরক্ষিত ছিল। তাই জরুরি ভিত্তিতে এটির মেরামত প্রয়োজন। কিন্তু বরাদ্দ নেই।
নির্বাহী প্রকৌশলী সৈয়দ হাসান ইমাম বলেন, বরাদ্দ না পাওয়ায় আমরাও গভীর উদ্বেগের মধ্যে আছি। স্পারটি মেরামত না করা হলে আগামীতে নদী তীর রক্ষা প্রকল্পও ঝুঁকির মধ্যে পড়বে। শিমলা স্পার  সংস্কার ও মেরামতের জন্য সাড়ে ৭ কোটি টাকার বরাদ্দ চেয়ে টেন্ডার আহ্বানের অনুমতির জন্য বোর্ডে দু’বার নোটিশ পাঠানো হয়েছে। বোর্ড বরাদ্দ ও অনুমোদন না দিলে কাজ শুরু করা অসম্ভব।
এদিকে সিরাজগঞ্জ স্বার্থরক্ষা সংগ্রাম কমিটি ও ভুক্তভোগীরা জানান, প্রতি বছরই বিরাট অংকের বরাদ্দ পেলেও সিরাজগঞ্জ ঠিকাদারদের সিন্ডিকেট ও পাউবোর কিছু অসৎ কর্মকর্তাদের যোগসাজশে কাজের  কাজ কিছুই হয় না, শুধু অর্থ ব্যয় হয়ে থাকে। এ সব এলাকার বরাদ্দ দিয়ে সেনাবাহিনীর মাধ্যমে কাজ করালে ভাঙন কবলিত মানুষ যেমন উপকৃত হবে, তেমনি সরকারের অর্থেরও সাশ্রয় ঘটবে। এলাকাবাসী দুঃখ ও ক্ষোভের সাথে আরও জানায়,পাউবো বরাদ্দ বরাবরই অতি মাত্রায় চেয়ে থাকে। আর বরাদ্দ কিছু কম হলে তার দোহাই দিয়ে সঠিকভাবে কাজ করা থেকে বিরত থাকে। তাই বরাদ্দটি সঠিকভাবে যাচাই-বাচাই করারও প্রয়োজন রয়েছে। কেননা এ যাবৎকাল পর্যন্ত যত টাকা যমুনা নদী ভাঙন রক্ষায় বরাদ্দ দেয়া হয়েছে সে অর্থ কাঁচা টাকায় রূপান্তরিত করে বস্তায় ভরে যমুনায় ফেলা হলে,যমুনা নদীটি ভরাট হয়ে  যেত। তাই এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা যথাযথভাবে পালন করার জন্য সিরাজগঞ্জের সচেতন মহল তাদের সুচিন্তিত মতামত ব্যক্ত করেছেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: নদীতীর
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ