Inqilab Logo

সোমবার, ০৮ জুলাই ২০২৪, ২৪ আষাঢ় ১৪৩১, ০১ মুহাররম ১৪৪৬ হিজরী

মানবতায় গেল মহৎ প্রাণ

| প্রকাশের সময় : ২৮ জানুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

স্টাফ রিপোর্টার : এক মা ও তার শিশু কন্যাকে বাঁচাতে গিয়ে ট্রেনে কাটা পড়ে প্রাণ হারিয়েছেন রেল কর্মী বাদল মিয়া (৫৫)। গতকাল শুক্রবার সকালে রাজধানীর কুড়িল বিশ্বরোডে এ ঘটনা ঘটে। নিহত বাদল মিয়া বাংলাদেশ রেলওয়ের ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের কর্মচারী (ক্যান্টেনমেন্ট গ্যাং নম্বর-৭৬)। তার গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহ জেলার গফরগাঁওয়ের মুখী এলকায়। বাবার নাম  হাতেম আলি।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গতকাল সকালে পাঁচ বছরের এক শিশুকে নিয়ে রেল লাইনে বসে রোদ পোহাচ্ছিলেন এক মা। তখন রেলওয়ের লাইন মেরামত করছিলেন বাদল মিয়া। ঠিক এ সময় তিনি দেখতে পান সিলেট থেকে ঢাকাগামী সুরমা এক্সপ্রেসটি এগিয়ে যাচ্ছে সেদিকে। নিশ্চিত ট্রেনে কাটা পড়তে যাচ্ছিলেন রোদ পোহাতে থাকা ওই মা ও তার শিশু কন্যা মেয়ে। এ সময় বাদল মিয়া দৌড়ে গিয়ে শিশুটির মাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেন। আর মৃত্যুর হাত থেকে শিশুটিকে বাঁচাতে গিয়ে ট্রেনে কাটা পড়েন বাদল মিয়া। নিজে মারা যাওয়ার আগে অবশ্য শিশুটিকেও বাঁচিয়ে যান অকুতোভয় এ রেলকর্মী।
বাদলের সহকর্মী সোহেল বলেন, আমরা ২০ জন রেললাইন মেরামতের কাজ করছিলাম। ট্রেনের সংকেত পেয়ে সরে যাই। কিন্তু বোরকা পড়া এক নারী ও কমলা জামা পড়া এক শিশু না দেখেই ট্রেনের লাইনের উপর দাঁড়িয়ে ছিল। প্রথমে তাদের ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয়া হয়। কিন্তু ওই নারী মাটিতে পড়ে গেলেও শিশুটি না বুঝে দৌড়ে আবারও ট্রেনের লাইনে চলে যায়। তখন বাদল মিয়া শিশুটিকে দু’হাতে ধরে রেল লাইনের বাইরে  ছুঁড়ে মারেন। তবে ট্রেনের গতির কারণে তিনি নিজে  আর লাইন থেকে বের হতে পারেন নি। শিশুটিকে বাঁচাতে গিয়ে পা পিছলে পড়ে যান বাদল। এ সময় বাদলের পায়ের উপর থেকে ট্রেন চলে যায়। তার দুই পায়ের চার জায়গায় কাটা পড়ে। এতে ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান বাদল। এ ঘটনার পর ওই নারী ও শিশুকে আর এ এলাকায় দেখা যায়নি। পাঁচ ছেলে ও তিন মেয়ের জনক বাদল মিয়া দক্ষিণ খানের কাউলা এলাকায় একটি ঝুপড়িতে বসবাস করতেন। তার তিন মেয়ে ও এক ছেলের বিয়ে হলেও বাকিরা বাদল মিয়ার উপার্জনের উপরই নির্ভরশীল ছিলেন। পুলিশ নিহতের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল মর্গে পাঠায়। ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল মর্গে বাদল মিয়ার লাশ  নিতে আসা তার ছোট ভাই সিদ্দিকুর রহমান আবুল বলেন, ভাইয়ার মৃত্যুর খবর শুনে ভাবি (বাদলের স্ত্রী আয়েশা খাতুন) বাকরুদ্ধ। একটু পর পর কেঁদে উঠছেন।
এদিকে ওয়ারী থানাধীন টিকাটুলি এলাকায় বাসের ধাক্কায় মো. রেজাউল (৩২) নামে এক অটোরিকশা চালক নিহত হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে দুর্ঘটনা ঘটে। মুমূর্ষু অবস্থায় রেজাউলকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে আসা হয়। রাত দেড়টার দিকে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
ওয়ারী থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) হারুন অর রশিদ তালুকদার জানান, টিকাটুলিতে র‌্যাব অফিসের ২০০ গজ পূর্বদিকের রাস্তায় একটি যাত্রীবাহী বাস সিএনজিকে ধাক্কা দিলে সেটি দুমড়ে-মুচড়ে যায় এবং চালক রেজাউল গুরুতর আহত হয়। ঘটনার পরপরই বাসটির চালক পালিয়ে যায়। বাসটিকে থানায় নেয়া হয়েছে। উভয়ঘটনায় পৃথক পৃথক থানায় অপমৃত্যু মামলা হয়েছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মানবতা

১২ সেপ্টেম্বর, ২০২২
১১ ডিসেম্বর, ২০২১

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ