Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মেলবোর্নে ওষুধ গবেষণায় কুমিল্লার আখতারের সাফল্য

| প্রকাশের সময় : ২৮ জানুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

সাদিক মামুন, কুমিল্লা থেকে : আখতার হোছাইন কুমিল্লার সন্তান। অষ্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নে বসে ওষুধ গবেষণায় আন্তর্জাতিক খ্যাতির আসনে রয়েছে আখতার। কুমিল্লা শহরের চকবাজার এলাকায় অবস্থিত ইসলামিয়া আলিয়া মাদরাসার মেধাবী ছাত্র আখতার হোছাইন দাখিল ও আলিমের পাঠ চুকিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণরসায়ন বিভাগ থেকে পড়াশোনা শেষ করে আর দশজনের মতো নিজেকে নির্দিষ্ট গ-ির মধ্যে আটকে রাখেননি, আর তাইতো তিনি এখন বিজ্ঞানী। আখতার হোছাইন তাঁর বৈজ্ঞানিক গবেষণায় পেয়েছেন দারুণ সাফল্য। তার আবিষ্কৃত ফ্রিজে সংরক্ষণ ছাড়া ডায়াবেটিস রোগের ইনসুলিন-৫ এবং ফুসফুস ও হাঁপানি রোগের নিরাময়ে ওষুধ একদিন বিশ্বজয় করবে। এমন খুশির খবরটি দেশের একটি গণমাধ্যমের বদৌলতে কুমিল্লাসহ বিশ্বের বাঙলা ভাষাভাষি কোটি কোটি মানুষের দৃষ্টি কাড়ে। আর বেরিয়ে আসে মেলবোর্নে অবস্থানরত ৪২ বছর বয়সী সুদর্শন এ যুবকের শেকড় কুমিল্লাতে। যার ছাত্রজীবন শুরু হয়েছিল দ্বীনি শিক্ষার নূরানী আলোয়।
কুমিল্লার সদর উপজেলার অলিপুর গ্রামের একেবারে সাধারণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন আখতার হোছাইন। ছোটবেলা বেলা থেকে আখতার ছিল চুপচাপ স্বভাবের। দুই বছর বয়সে মা হারা হন। দাদা, দাদী আর বাবার আদর স্নেহ ও ইসলামি অনুশাসনের মধ্যে বেড়ে ওঠে আখতার। তার কৃষক পিতা আবদুর রহমানের ইচ্ছায় নিজ গ্রামের কাছাকাছি ধনুয়াখলা মাদরাসায় ভর্তি করানো হয় আখতার হোছাইনকে। ওই মাদরাসা থেকে অষ্টম শ্রেণির বৃত্তি পরীক্ষায় প্রথম হন আখতার। তারপর কুমিল্লা শহরের চকবাজারে অবস্থিত ঐতিহ্যবাহী ইসলামিয়া আলিয়া মাদরাসায় নবম শ্রেণিতে বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হন। ১৯৮৮ সালে কৃতিত্বের সাথে দাখিলে প্রথম বিভাগে প্রথম স্থান এবং ১৯৯০ সালে আলিম পরীক্ষায় রেকর্ড ৯০১ নম্বর পেয়ে মাদরাসা শিক্ষাবোর্ডে মেধা তালিকায় প্রথম স্থান অর্জন করেন। চকবাজার ইসলামিয়া আলিয়া মাদরাসায় অধ্যয়নকালীন সময়ে আখতার কুমিল্লা শহরে অন্যের বাড়িতে গৃহশিক্ষক থেকে নিজের পড়াশোনা চালিয়ে গেছেন। আলিম পাসের পর ভর্তি হন প্রাচ্যের অক্সফোর্ড ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রাণরসায়ন বিভাগে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণি অর্জনের পর জাপান সরকারের মনবুসো বৃত্তি নিয়ে পিএইচডি করতে চলে যান টোকিওর ইনস্টিটিউটি অব টেকনোলজিতে। সেখান থেকে পোস্ট ডক্টরেট গবেষণা করেন ফ্রান্সের জোসেফ ফুরিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ে।        
তারপর ২০০৫ সালে আখতার হোছাইনের স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথচলা এসে দাঁড়ায় অস্ট্রেলিয়ায়। যোগ দেন সেখানকার মেলবোর্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ফ্লোরে নিউরোসায়েন্স অ্যান্ড মেন্টাল হেলথ ইনস্টিটিউটের ইনসুলিন পেপটাইডস ল্যাবের প্রধান হিসেবে। যোগদানের তিন বছরের মাথায় আখতারের গবেষণার ফসল হিসেবে ডায়াবেটিস রোগের জন্য এমন এক ইনসুলিন তৈরি করেন যা ফ্রিজ ছাড়াও সংরক্ষণ করা যাবে। আবার হাঁপানির মতো ফুসফুসঘটিত নানা রোগের নিরাময়ে সম্ভাব্য ওষুধও তৈরি করেছেন তিনি। মানবদেহের রোগ সারাতে আখতারের আবিষ্কৃত ওষুধ নিয়ে জাপানের ওষুধ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান তাকেদা ও যুক্তরাজ্যের ক্যামব্রিজ ইউনিভার্সিটির বিজ্ঞানীরা গবেষণাও শুরু করেছেন। একদিন এই কুমিল্লার সন্তান আলিয়া মাদরাসার মেধাবীমুখ বিজ্ঞানী আখতারের আবিষ্কৃত ওষুধ বাংলাদেশসহ বিশ্ববাজারে সুনাম নিয়ে জ্বলে ওঠবে।
কুমিল্লা ইসলামিয়া আলিয়া মাদরাসার বর্তমান অধ্যক্ষ আলহাজ মাওলানা আবদুল মতিন বলেন, ‘একটি জাতীয় দৈনিকের ক্রোড়পত্রে ওষুধ বিজ্ঞানী আখতার হোছাইনের লেখাটি পড়ে যখন জানতে পারলাম সে আমাদের মাদরাসার মেধাবী ছাত্র, তখন তার ব্যাপারে মাদরাসার নথিপত্র বের করে আরও জানা গেলো সে দাখিল ও আলিমে মেধা তালিকায় কেবল সেরা নয়, পরীক্ষায় নম্বর প্রাপ্তিতে রেকর্ড গড়েছে। আমরা মাদরাসার পক্ষ থেকে আখতার হোছাইনের ব্যাপারে তার বাড়িতে যোগাযোগ শুরু করবো, সে কবে দেশে আসে। আর দেশে আসলে আমরা তাকে মাদরাসার পক্ষ থেকে সম্মাননা দেবো।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ