বাংলাদেশের জনজীবন ও অর্থনীতিতে ফারাক্কা বাঁধের বিরূপ প্রতিক্রিয়া
ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে প্রবাহিত গঙ্গার ওপর নির্মিত ভারতের ফারাক্কা বাঁধের প্রতিক্রিয়া যেমন বাংলাদেশের অর্থনৈতিক
গোলাম আশরাফ খান উজ্জ্বল : ঢাকাকে বলা হয় মসজিদের শহর। ঢাকার হাজারো মসজিদের মধ্যে আকর্ষণীয় মসজিদটি হলো বাইতুল মোকাররম মসজিদ। এ মুসলিম স্থাপত্য নিদর্শনটি রাজধানী ঢাকার কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত। প্রতিদিন এখানে দূর-দূরান্ত হতে আগত মুসলিদের সমাগম ঘটে। কৌতূহলী দর্শকেরা অপলক নয়নে দীর্ঘ সময় তাকিয়ে থাকেন এ মসজিদটির দিকে। অনেকে আবার এ মসজিদের ছবি তুলে নিয়ে যান। অনেক ক্যালেন্ডারেও এ মসজিদটির ছবি স্থান পেয়েছে।
১৯৫৯ সালের কথা। বাংলাদেশ তখনো স্বাধীন হয়নি। এ ভূ-খ-টি তখন পূর্ব পাকিস্তান নামে পরিচিত। এখানে তখন সামরিক শাসন চলছিল। সে সময়ের বিখ্যাত শিল্পপতি আবদুল লতিফ বাওয়ানী। তিনি পূর্ব পাকিস্তান সামরিক শাসক মেজর জেনারেল ওমরাও খানের নিকট বাইতুল মোকাররম মসজিদ নির্মাণের ইচ্ছা প্রকাশ করেন। ওমরাও খান মসজিদ নির্মাণের ব্যাপারে সরকারের সহযোগিতার আশ্বাস দেন। ২৭ এপ্রিল ১৯৫৯ সালে আবদুল লতিফ বাওয়ানীর বাড়িতে মসজিদ নির্মাণের একটি সভা হয়। এ সভায় উপস্থিত ছিলেন জি এ মাদানী, হাজী আব্দুল লতিফ বাওয়ানী, এম এইচ আদমজী, এস সাত্তার, মুহাম্মদ সাদিক, এ জেড এন রেজাই করিম ও মেজর ওমরাও খান। সভায় সিদ্ধান্ত হয় যে, পল্টন পুকুর ভরাট করে বাইতুল মোকররম মসজিদ নির্মাণ করা হবে। পুকুর ভরাট হলে ১৯৬০ সালের ২৭ জানুয়ারি পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ফিল্ড মার্শাল আইয়ুব খান এ মসজিদের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন। বাইতুল মোকাররম মসজিদের নকশা প্রদান করেন প্রকৌশলী আবুল হোসেন থারিয়ানী। কাজ দেখাশোনা করেন প্রকৌশলী মঈনুল হোসেন।
৬০ হাজার বর্গফুট আয়তনের এ মসজিদের জন্য সরকার বরাদ্দ দেয় ৮.৩০ একর জমি। বাইতুল মোকাররম মসজিদটি প্রধানত ৮ তলা। এর নিচতলায় রয়েছে বিপণি বিতান ও গুদামঘর। প্রথম থেকে ষষ্ঠতলা ভবন বা ইমারত। কিন্তু সব সময় ৬ তলা পর্যন্ত ব্যবহার করা হয় না। নামাজের জন্য ব্যবহার করা হয় প্রথম তলায় ২৬,৫১৭ বর্গফুট, মেজনাইন ফ্লোর ১৮৪০ বর্গফুট। ২য় তলার আয়তন ১০,৬৬০ বর্গফুট। তৃতীয় তলার আয়তন ১০,৭২৩ বর্গফুট। চতুর্থ তলার আয়তন ৭,৩৭০ বর্গফুট। পঞ্চম তলার ৬,৯২৫ বর্গফুট এবং ষষ্ঠতলার আয়তন ৭,৪৩৮ বর্গফুট। আর জুমার নামাজ আদায় করা হয় বাড়তি আরো ৩৯,৮৯৯ বর্গফুটে।
এ মসজিদে মহিলাদের নামাজের স্থানও রয়েছে। এর আয়তন ৬,৩৮২ বর্গফুট। মসজিদ বেলকনি সবমিলিয়ে মুসল্লিরা বাইতুল মোকাররম মসজিদের ১ লাখ ২৫ হাজার ৬২ বর্গফুট এলাকা নামাজের জন্য ব্যবহার করে থাকেন। মসজিদটি বাইরে থেকে দেখতে ‘কাবার’ ম-লের মতো। প্রধান প্রবেশ পথটি রাস্তা হতে ৯৯ ফুট উঁচুতে। প্রবেশ পথের ঠিক উপরে ‘আলাহু আকবার’ লেখা রয়েছে আরবি ভাষায়। বাংলাদেশের এ জাতীয় মসজিদে কবে কখন নামাজ পড়া শুরু হয় তা জানার ইচ্ছা অনেকের। ২৫ জানুয়ারি ১৯৬৩ সাল। শুক্রবার জুমার নামাজ দিয়ে শুরু হয় নামাজ আদায়। তারাবিহ নামাজ শুরু হয় ২৬ জানুয়ারি ১৯৬৩ সালে।
বাইতুল মোকাররম মসজিদের প্রথম খতিব ছিলেন মাওলানা আব্দুর রহমান বেখুদ (রহ.) ১৯৬৩, এরপর খতিবের দায়িত্ব পালন করে ক্বারী মাওলানা ওসমান মাদানী (১৯৬৩-৬৪), মুফতি সাইয়েদ মুহাম্মদ আমীনুল ইহসান (১৯৬৪-৭৪), মুফতি মাওলানা মুইজ (১৯৭৪-৮৪), এরপর খতিবের দায়িত্ব পালন করেন মাওলানা উবায়দুল হক (১৯৮৪-২০০৯), এরপর ভারপ্রাপ্ত খতিবের এক বছরের মতো দায়িত্ব পালন করেন মাওলানা নুর উদ্দিন, ২০০৯ সালের ৫ জানুয়ারি থেকে বাইতুল মোকাররম মসজিদের দায়িত্ব পালন করে আসছেন প্রফেসর মাওলানা মো. সালাহ উদ্দিন। মসজিদের সৌন্দর্য বাড়াতে সরকার দক্ষিণ দিকে সুউচ্চ প্রবেশদ্বার ও সুউচ্চ মিনার নির্মাণ করেছেন। পৃথিবীর বিখ্যাত মসজিদগুলোর মধ্যে ঢাকার বাইতুল মোকাররম মসজিদ নির্মাণশৈলীতে ভিন্ন। বাংলাদেশের মুসলমানদের গর্ব ও অহংকারের বিষয় এ বাইতুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ।
লেখক : সাংবাদিক ও প্রাবন্ধিক
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।