Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বিপজ্জনক বঙ্গবন্ধু সেতু

প্রকাশের সময় : ২০ জানুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১২:০৫ এএম, ২০ জানুয়ারি, ২০১৬

সিরাজগঞ্জ থেকে সৈয়দ শামীম শিরাজী : যমুনা বিধৌত উত্তরবঙ্গের ‘গেটওয়ে’ ও দেশের সর্ববৃহৎ বহুমুখী বঙ্গবন্ধু যমুনা সেতুর (মেইনটেইন) ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম ভেঙ্গে পড়েছে। দিনযতই যাচ্ছে ততই এ ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম হ্রাস পাচ্ছে। সেতুর গুরুত্বপূর্ণ রাত্রিকালীন আলোর ব্যবস্থা, সিসি ক্যামেরা, সেতুর নিচের নেভিগেসন লাইট, এয়ার ক্রাফট ওয়াকিং লাইট (এইউএস), সোভিয়াম লাইট, টোল প্লাজার কম্পিউটার (মাঝে মধ্যে অকেজো হয়) ওজন স্টেশনের নানাবিদ সমস্যা, নিরাপত্তা বেস্টনির যত্রতত্র খোলা থাকা, সংযোগ সড়কের কালভাট, ব্রীজ প্রভৃতী বহুমুখী সমস্যার জর্জরিত হয়ে নিরাপত্তার ব্যবস্থাও ভেঙ্গে পড়ায় ক্রমাগত বিপজ্জনক হয়ে পড়ছে বঙ্গবন্ধু সেতু। শুধু তাই নয়, সেতুর উত্তর পাশের গাইট বাঁধ সংলগ্ন এলাকা থেকে বালি ধস্যুরা বালি উত্তোলন করলেও দেখেও না দেখার ভান করা হচ্ছে। কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার কারণেই বঙ্গবন্ধু সেতু এখন প্রাণঘাতী স্পটে পরিণত হয়েছে। সেতুতে রাত্রিকালীন বেশিরভাগ দুর্ঘটনার কারণ বাতি থাকলেও, থাকে না আলো। সম্প্রতি বঙ্গবন্ধু সেতুতে সড়ক দুঘটনার মাননীয় ভূমি মন্ত্রীর ছেলে শরীফের প্রাণ হারানোর ঘটনা বাস্তব প্রমাণ বহন করে। দেশের পূর্বাঞ্চলের সঙ্গে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের সংযোগমাধ্যম বঙ্গবন্ধু সেতুর দৈর্ঘ্য ৪ দশমিক ৮ কিলোমিটার।
এর উভয়পাশের ৩৩ দশমিক ৪০ কিলোমিটার রাস্তা সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সেতু বিভাগের আওতাধীন। মূল সেতুর সঙ্গে ‘বিপজ্জনক’ তকমা লেগে গেছে সড়কের এই অংশটুকুরও। সেতু বিভাগ বলছে, বঙ্গবন্ধু সেতুতে মোট ১৫২টি সোডিয়াম লাইট আছে। এরমধ্যে জ্বলে ৪০টি। বাকি ১১২টিই নষ্ট। ঘনকুয়াশা যখন পড়তে শুরু করে, তখনই নিভে থাকা লাইটগুলোর ‘অভিশাপে’ নিভে যায় তরতাজা প্রাণের আলো। সেতু বিভাগের তথ্যমতে, সোডিয়াম লাইট ছাড়াও সেতুর ওপরে ও নিচে (রাত্রিকালীন) ৪৯টি এয়ারক্রাফট ওয়ার্নিং লাইট (এইউএল) আছে। আছে ১৯৮টি নেভিগেশন লাইট (সেতুর নিচে)। সরেজমিনে দেখা যায়, সেতুর এইউএল’র সবগুলোই নষ্ট। জ্বলে না ৬৫-৭০টি নেভিগেশন লাইটও। এই বাতিগুলোই কেবল ‘নিভে’ নেই, পড়ে আছে গত বছর দুর্ঘটনায় ভেঙে পড়া ১৭ নং সোডিয়াম লাইটটিও। এছাড়া, সেতুর উভয়পাশে ১২টি গোপন ক্যামেরা (সিসি ক্যামেরা) স্থাপিত থাকলেও সচল নেই আটটিই। এরমধ্যে আবার ২০১৩ সালে সেতুর পূর্বপাড় ওজন স্টেশনে স্থাপিত দু’টি সিসি ক্যামেরা চুরিও হয়ে যায়। তবে, এতোসব ‘অকেজো-নষ্ট-বন্ধ’ খবরেও দৃশ্যত প্রতিক্রিয়া নেই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেটালজিক্যাল কনস্ট্রাকশন কোম্পানি অব চায়না (এমসিসিসি) ও ইউডিসি (জয়েন্ট ভেঞ্চার) কোম্পানির। অবশ্য, সরেজমিনে ঘুরে পাওয়া লাইট বন্ধ-নষ্ট থাকার খবরে দ্বিমত পোষণ করেছেন সেতু বিভাগের সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু সেতুর ওপরের লাইটগুলো ফটো সিস্টেম লাইট। সুইচ অন অফের কোনো সুযোগ নেই। এতে করে লাইট বন্ধ হওয়ারও কোনো সুযোগ নেই। রাতে সেতু এলাকায় পরিদর্শনে গেলে এ দৃশ দেখা যায়। তবে দু’একটা বন্ধ থাকতে পারে উল্লেখ করে আনোয়ারুল ইসলাম। এদিকে, বঙ্গবন্ধু সেতুর উভয়পাশে সেতুর বিভাগের আওতাধীন যে ৩৩ দশমিক ৪০ কিলোমিটার সড়ক রয়েছে তা-ও হয়ে উঠেছে সমান বিপজ্জনক। এর পশ্চিম পাশে সিরাজগঞ্জের হাটিকুমরুল পর্যন্ত অংশটুকু সেতু বিভাগের উদ্যোগে ফোর লেনে করার কথা থাকলেও তা এখনও অধরা। সেতুর পূর্বপাশে টাঙ্গাইলের এলেঙ্গা, ভুয়াপুর, চরগাবসারা সড়কে যে ১৫টি ছোট সেতু ও একটি কালভার্ট রয়েছে সেগুলোও ক্ষতিগ্রস্ত বিপজ্জনকভাবে। তাছাড়া, দেশের অন্যতম ব্যস্ত এই সড়কে ডিভাইডারও নেই। সে কারণে প্রায়ই সেখান থেকে খবর আসছে মর্মান্তিক দুর্ঘটনার। যদিও ও ছোট ছোট ১৫টি সেতু মেরামতের জন্য প্রকল্প তৈরি করেছে সেতু মন্ত্রণালয়। এগুলো নির্মাণের জন্য ইতোমধ্যে ১১৯ কোটি টাকা ব্যয় নির্ধারণও করা হয়েছে। গত মঙ্গলবার পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবে দেখা যায়, এলেঙ্গা, ভুয়াপুর, চরগাবসারা আঞ্চলিক মহাসড়কে ১৫টি পিসি গার্ডার সেতু ক্ষতিগ্রস্ত। এগুলোর মোট দৈর্ঘ্য ৪০০ মিটার। অন্যদিকে তিনটি আবাসিক বক্স কালভার্টও ক্ষতিগ্রস্ত। এগুলোর মোট দৈর্ঘ্য ৪৮ মিটার। ক্ষতিগ্রস্ত সেতুগুলো হলো টাঙ্গাইলের রাজাবাড়ি সেতু-১, রাজাবাড়ি সেতু-২, ছায়া সেতু-১, ছায়া সেতু-২, ফুলতলা সেতু-১, ফুলতলা সেতু-২, ফুলতলা সেতু-৩, তাঁতিহারা সেতু, নারান্দিয়া সেতু-১, নারান্দিয়া সেতু-২, সিংগাড়া সেতু, কামারি সেতু-১, কামারি সেতু-২, সিকাহল সেতু ও বাগবাড়ি সেতু। এ সড়কে যাতায়াতকারী যাত্রীরা বলছেন, সড়কের তুলনায় সেতুগুলো অনেক সরু। এর ওপর ক্ষতিগ্রস্তও। এ কারণে প্রায়ই সেতুগুলোতে দুর্ঘটনা ঘটে। বঙ্গবন্ধু সেতু নির্মাণের সময় এগুলো সামান্য মেরামত করা হয়েছিল। তারপর পড়ে আছে ‘বিপদের কারণ হয়ে’। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ‘বিপদের কারণ’টা দূর করতে এই সেতুগুলো মেরামতের পাশাপাশি বঙ্গবন্ধু সেতুকেও চলাচলের ‘পুরোপুরি উপযোগী’ করতে কর্তৃপক্ষের নজর দেয়া উচিত। সেই সাথে যমুনা সেতুর নিরাপত্তার বেষ্টনির যত্রতত্র খোলা স্থানগুলো বন্ধ করে নিরাপত্তা ব্যবস্থাও জোরদার করার প্রয়োজন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বিপজ্জনক বঙ্গবন্ধু সেতু

২০ জানুয়ারি, ২০১৬
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ