পোশাক রপ্তানিতে উৎসে কর ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব
আগামী পাঁচ বছরের জন্য তৈরি পোশাক রপ্তানির বিপরীতে প্রযোজ্য উৎসে করহার ১ শতাংশ থেকে হ্রাস করে ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব করেছে পোশাক খাতের দুই সংগঠন
আইয়ুব আলী : ভোগ্যপণ্যের বাজার ওঠানামা, বাজার কারসাজি, বিশ্ববাজারে অব্যাহতভাবে দরপতনসহ বিভিন্ন কারণে লোকসান বাড়ায় ভোগ্যপণ্য আমদানির হার আগের তুলনায় সীমিত করেছে বড় কর্পোরেট গ্রæপগুলো। একসময় দেশে চাক্তাই খাতুনগঞ্জকেন্দ্রিক ভোগ্যপণ্য ব্যবসার প্রায় ৮০ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ করতেন চট্টগ্রামের বনেদি ব্যবসায়ীরা। দেশের বড় বড় শিল্পগ্রæপ এ ব্যবসার সাথে যুক্ত ছিল। উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া এই ‘সওদাগরি’ ব্যবসার সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন আমদানিকারক ব্যবসায়ী গ্রæপগুলোর কয়েক প্রজন্মের সদস্যরা। তবে সা¤প্রতিক সময়ে তৃতীয় প্রজন্মের প্রতিনিধিরা ভোগ্যপণ্যের চেয়ে উৎপাদনমুখী শিল্পেই বেশি আগ্রহী। পুরনো ব্যবসায়ীদের এ প্রস্থানে ভোগ্যপণ্য আমদানিতে নাম লেখাচ্ছে ছোট ও নতুন প্রতিষ্ঠান।
ভোগ্যপণ্য ব্যবসায় সবচেয়ে আলোচিত পণ্য ভোজ্যতেল। চট্টগ্রামের প্রতিষ্ঠিত সব ভোগ্যপণ্য আমদানিকারকের ভোজ্যতেল পরিশোধন কারখানা রয়েছে। কয়েক বছর ধরে ভোজ্যতেলের বাজারে বড় কর্পোরেটদের আধিপত্য কমে আসায় নতুন ও ছোট প্রতিষ্ঠানগুলো এ খাতে আমদানি শুরু করেছে। মিল মালিকরা অপরিশোধিত ভোজ্যতেল আমদানি করলেও নতুন প্রতিষ্ঠানগুলো পরিশোধিত ভোজ্যতেল আমদানির মাধ্যমে ব্যবসা পরিচালনা করছে। তবে এ খাতে নতুন প্রতিষ্ঠানগুলোর কোন সুফল ভোক্তারা পাচ্ছেন না। এ খাতে বার বার অস্থির হচ্ছে চাক্তাই খাতুনগঞ্জের বাজার।
ভোগ্যপণ্যের আমদানি সীমিত করে এনেছে চট্টগ্রামের শীর্ষস্থানীয় শিল্পগ্রæপগুলো। বিকল্প হিসেবে ইস্পাত, তৈরি পোশাক, নির্মাণ, অ্যাকসেসরিজ, কাগজ, প্যাকেজিং, টেক্সটাইল ও নিটিং ব্যবসায় বিনিয়োগ বাড়াচ্ছে তারা। দেশে ভোজ্যতেল আমদানিতে এক সময়ের শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠান নূরজাহান গ্রæপ। ভোজ্যতেলের পাশাপাশি গমসহ ভোগ্যপণ্য ব্যবসার অন্যান্য খাতেও বিচরণ ছিল গ্রæপটির। ভোগ্যপণ্য ব্যবসায় অব্যাহত লোকসানের ফলে পণ্য আমদানি কার্যত বন্ধ রেখেছে নূরজাহান গ্রæপ। শিক্ষা, কৃষিজ শিল্প, মৎস্য খামারের পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের শিল্প খাতে বিনিয়োগ বাড়াচ্ছে তারা।
এছাড়া চট্টগ্রামের বড় কর্পোরেট হাউসগুলো ঢেউটিন, ইস্পাত, গাস, স্পিনিং খাতে ব্যবসা স¤প্রসারণ করছে। টি কে গ্রæপ সা¤প্রতিক সময়ে ভোজ্যতেল ব্যবসায় শীর্ষস্থানে থাকলেও বিশ্ববাজারে অপরিশোধিত ভোজ্যতেলের দরপতনসহ লোকসানের কারণে তারাও এর আমদানি কমিয়ে দিয়েছে। কাগজ, সুজ, কেমিক্যাল ছাড়াও অন্যান্য শিল্প খাতে বিনিয়োগ বাড়াচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। টানা লোকসানের পর বড় প্রতিষ্ঠানগুলো ভোগ্যপণ্য ব্যবসায় এখন যথেষ্ট সচেতন। ঢালাওভাবে কিংবা আবেগের বশে এখন আর সেভাবে আমদানি করছেন না বিভিন্ন শিল্পগ্রæপ।
দেশে ভোগ্যপণ্যের সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা জানান, বড় শিল্প গ্রæপগুলোর ভোগ্যপণ্য আমদানিতে অনীহার কারণে নতুন ও ছোট প্রতিষ্ঠান এ খাতে প্রবেশ করছে। লোকসানে পড়লেও ব্যবসায়িক ব্যাপ্তির কারণে বড় প্রতিষ্ঠানগুলোর ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ থাকলেও ছোট প্রতিষ্ঠানগুলোর দেউলিয়া হওয়ার ঘটনা বাড়ছে। যা খাতুনগঞ্জের ভোগ্যপণ্য ব্যবসাকে বারবার অস্থির করে তুলছে। ২০১০ সালে খাতুনগঞ্জের মেসার্স চৌধুরী এন্টারপ্রাইজ স্থানীয় ব্যবসায়ীদের প্রায় ১৫০ কোটি টাকা পাওনা অনাদায়ী রেখে গা-ঢাকা দেয়। এ ঘটনার পর খাতুনগঞ্জের প্রায় এক ডজন প্রতিষ্ঠান ব্যবসা গুটিয়ে নিতে বাধ্য হয়।
খাতুনগঞ্জের একজন ভোগ্যপণ্য আমদানিকারক বলেন, বিশ্ববাজারে ধারাবাহিক দরপতনের পাশাপাশি স্থানীয় বাজারে ভোগ্যপণ্য ব্যবসায় অসম প্রতিযোগিতা খাতটিকে অস্থির করে তুলেছে। চাহিদার তুলনায় অতিরিক্ত আমদানি প্রবণতায় অধিকাংশ সময় ভুক্তভোগী হচ্ছেন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ীরা। পণ্য আমদানিতে অভিজ্ঞতার বিকল্প না থাকলেও নীতিগত দুর্বলতায় এ খাতে বিনিয়োগ এখন ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। নতুন আসা প্রতিষ্ঠানগুলো সাময়িক ব্যবসা করলেও সংকটকালীন চাহিদা মেটাতে পুরনো ব্যবসায়ীদের বিকল্প নেই।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।