Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

দাভোসে বিশ্ব অর্থনৈতিক সম্মেলনে বাংলাদেশ

| প্রকাশের সময় : ২৭ জানুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

মুহাম্মদ রেজাউর রহমান : গত ১৭ জানুয়ারি মঙ্গলবার থেকে সুইজারল্যান্ডের পার্বত্য পর্যটন শহর দাভোসে অনুষ্ঠিত হলো ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের ৪৭তম বার্ষিক সম্মেলন। চার দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত সম্মেলনে যোগ দিয়েছিলেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বাংলাদেশ থেকে এর আগে অন্য কোনো নেতা ডব্লিউইএফের সম্মেলনে যোগ দেননি। সম্মেলনের প্রতিপাদ্য বিষয় ছিলÑ ‘প্রতিবেদনশীল ও দায়িত্বশীল নেতৃত্ব।’ বাংলাদেশের  প্রধানমন্ত্রী যেসব বিবেচনায় সম্মেলনে যোগ দেয়ার জন্য আমন্ত্রণ পেয়েছেন, তার মধ্যে রয়েছে বিশ্বের উন্নয়নশীল ৭৯টি দেশের মধ্যে অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন সূচকে এক বছরে আট ধাপ এগিয়েছে বাংলাদেশ। এক বছর আগে একই সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ৪৪, বর্তমানে ৩৬। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম প্রকাশিত অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন ও প্রবৃদ্ধি ২০১৭ শীর্ষক প্রতিবেদনে এ তথ্য পরিবেশিত হয়েছে। উন্নয়নে বাংলাদেশের অগ্রগতি স্থিতিশীল বলে উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে। তবে প্রতিবেদনটিতে আরো বলা হয়, মাথাপিছু জিডিপি (গ্রস ডোমেস্টিক প্রডাক্টস) বা মাথাপিছু মোট দেশজ উৎপাদনে উন্নতি করলেও বাংলাদেশে সম্পদ বৈষম্য আগের তুলনায় আরো বেড়েছে। দুর্নীতির কারণেও বাংলাদেশে ব্যবসা করা কঠিন হয়ে পড়েছে। বিদেশি বিনিয়োগও স্থবির হয়ে পড়েছে লাল ফিতার দৌরাত্ম্য ও দুর্নীতির কারণে। এর ফলে অনানুষ্ঠানিক অর্থনীতির আকার বাড়ছে। বাংলাদেশের উন্নয়নের সুফল যে ন্যায় ও সুবিচারের ভিত্তিতে বণ্টন করা হচ্ছে না, ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের প্রতিবেদনে তা সঠিকভাবে প্রতিফলিত হয়েছে। অর্থনৈতিক উন্নয়নের সম্পূর্ণ সুবিধা ভোগ করছে ধনী ও বণিক শ্রেণি। শ্রমজীবী মানুষ ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীগণ পরিবারের খাদ্য, বস্ত্র ও চিকিৎসা সম্পর্কিত দৈনন্দিন প্রয়োজন মেটাতে হিমশিম খাচ্ছেন। শিক্ষা ও চিকিৎসাসেবা হয়েছে অত্যন্ত ব্যয়বহুল। এর পাশাপাশি অর্থ ও সম্পদ চলে যাচ্ছে মুষ্টিমেয় ধনীদের হাতে। বিলাসবহুল দেড়/দুই কোটি টাকার ব্যক্তিগত গাড়ি যে ফুটপাতে রাখা হচ্ছে, সেই ফুটপাতেই পরিবার নিয়ে পলিথিন নির্মিত ঝুপড়িতে দিন কাটাচ্ছে দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাসকারী গ্রামাঞ্চল থেকে উদ্বাস্তু হয়ে আসা দরিদ্র জনগোষ্ঠী।
এর পাশাপাশি দেশের ধনী সম্প্রদায় ভোগ করছে এক বিলাসবহুল জীবন। তাদের উদ্বৃত্ত অর্থ চলে যাচ্ছে বিদেশে। সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ বা সিপিডির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের সম্মেলন যে দেশে হয়েছে, সেই সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকগুলোতেই গত এক বছরে বাংলাদেশিদের পাচার করা অর্থ আগের বছরের তুলনায় দ্বিগুণ হয়েছে। অন্য এক প্রতিবেদনে জানা যায়, গত ১৩ বছরে মালয়েশিয়ায় জমি ও বাড়ি কেনার কর্মসূচি ‘মাই সেকেন্ড হোম’ কর্মসূচিতে অর্থ পাঠিয়েছেন বাংলাদেশ থেকে তিন হাজারের বেশি ধনী। কানাডার মতো উন্নত অর্থনীতির বিভিন্ন শহরে গড়ে উঠেছে বাংলাদেশিদের কেনা বেগম পাড়া। পত্রিকান্তরে প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেখা যায়, গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইনটেগ্রিটির তদন্তে গত দশ বছরে বাংলাদেশ থেকে বিদেশে পাচার হয়েছে ৫ হাজার ৫৮৭ কোটি ৬০ লাখ ডলার। টাকার অঙ্কে এটা হলো ৪ লাখ ৪১ হাজার ৪২০ কোটি টাকারও বেশি।
ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের সমীক্ষায় দেশের শ্রমশক্তিকে দক্ষ করার প্রয়োজনীয়তাও তুলে ধরা হয়েছে। বাংলাদেশের শ্রমিকদের দক্ষতার আর্থিক মূল্য দেখানো হয়েছে পাঁচ হাজার চারশত তেত্রিশ ডলার। তুলনামূলক বিশ্লেষণে উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে শীর্ষে থাকা লিথুনিয়ার শ্রমিকদের মাথাপিছু কর্মদক্ষতার আর্থিক মূল্য ৫৪ হাজার ২৯৬ ডলার বলে উল্লেখ করা হয়েছে। ডব্লিউইএফের প্রতিবেদনে বাংলাদেশকে অবকাঠামোর অধিকতর উন্নয়ন ও মৌলিক সেবা যথা খাদ্য, আবাসন ও চিকিৎসা ব্যবস্থায় অধিকতর পরিবর্তনের পরামর্শ দেয়া হয়েছে। শিক্ষার মানোন্নয়নের প্রতিও অধিকতর মনোযোগী হওয়ার তাগিদ দেয়া হয়েছে। সম্মেলনের বিষয়ভিত্তিক বিভিন্ন আলোচনা সভায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যথেষ্ট নিপুণতার সাথে বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন প্রচেষ্টার চিত্র তুলে ধরেন।
১৭ জানুয়ারি সন্ধ্যায় ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের মতবিনিময় অনুষ্ঠানে বক্তৃতাকালে উন্নয়নে আঞ্চলিক সহযোগিতার প্রয়োজনের ওপর গুরুত্ব আরোপ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দক্ষিণ এশিয়া আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা বা সার্কের কার্যকারিতা ফুরিয়ে যায়নি। তিনি বলেন, দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য সার্কের মাধ্যমে অনেক কাজ করার সুযোগ রয়েছে। দারিদ্র্য হচ্ছে এই অঞ্চলের প্রধান সমস্যা। দারিদ্র্য দূর করার ওপর আমাদের সর্বাধিক গুরুত্ব দিতে হবে। এক্ষেত্রে সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য আরো প্রসারিত করা এবং দেশগুলোর জনগণের মধ্যে যোগাযোগ আরো বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। সার্কের ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টিভঙ্গি খুবই গঠনমূলক বলে সকলেই স্বীকার করবেন। সার্ককে আরো গতিশীল ও কর্মচঞ্চল করার প্রয়োজনীয়তা রয়েছেÑ এ কথা কেউ অস্বীকার করতে পারবেন না। ১৮ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী দাভোস সম্মেলনে পানিসম্পদ বিষয়ে এক আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন। অর্থনৈতিক উন্নয়নে আন্তঃদেশীয় বিশুদ্ধ পানিসম্পদ ব্যবহারের ওপর গুরুত্ব আরোপ করে তিনি বলেন, পানি হচ্ছে একটি নিত্যপ্রয়োজনীয় সম্পদ। শহর গ্রাম নির্বিশেষে ধনী দরিদ্র সকলের জন্য বিশুদ্ধ পানির প্রয়োজন। ডব্লিউইএফ সম্মেলনের পাশাপাশি ওয়ার্ল্ড আন্ডার ওয়াটার শীর্ষক আলোচনা সভায় যোগদান করেন অন্যান্য দেশের নেতৃবৃন্দ।
১৯ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হয় দি ফাইট এগেইনস্ট ক্লাইমেট চেঞ্জ শীর্ষক আলোচনা সভা। বাংলাদেশের নির্মাণাধীন কয়লাভিত্তিক রামপাল প্রকল্প বিশ্বের অন্যতম প্রাকৃতিক ঐতিহ্য সুন্দরবনের ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াবে। এই মর্মে মত ব্যক্ত করেন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট ও বিশ্বের পরিবেশ রক্ষা আন্দোলনের অন্যতম সক্রিয় কর্মী আল গোর। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার মন্ত্রীগণ এবং সরকারি দলের নেতৃবৃন্দ অসংখ্যবার জোর দিয়ে বলেছেন যে রামপাল বিদ্যুৎ প্রকল্প সুন্দরবনের বৃক্ষরাজি ও জীববৈচিত্র্যের কোনো ক্ষতি করবে না। এটা হলো এমন একটি অবস্থান যা হচ্ছে সম্পূর্ণ অনুমানভিত্তিক। অন্যদিকে দেশ ও বিদেশের বিশেষ করে ইউনেস্কোর বিশেষজ্ঞগণ সুন্দরবন ও রামপাল পরিদর্শন করে যে মতামত দিয়েছেন, তা হচ্ছে বায়ুপ্রবাহের দ্বারা চালিত হয়ে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত কয়লার তাপমাত্রা পৃথিবীর অন্যতম প্রকৃতি-সৃষ্ট বন সুন্দরবনের গাছপালা ও প্রাণী সম্পদের ওপর বিরূপ জীবনধ্বংসী প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করবেÑ এ সম্বন্ধে আশঙ্কার পরিমাণই বেশি। যে কোনো সরকারের পক্ষেই যে কোনো প্রকল্পের স্থান পরিবর্তন কোনো কঠিন বিষয় নয়। কিন্তু দেশব্যাপী প্রতিবাদের মুখেও সরকার রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের ব্যাপারে দৃঢ় সংকল্প বলেই মনে হচ্ছে। সুন্দরবনের মাত্র পনের কিলোমিটার দূরে এর আগে কয়লা জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করে কোনো বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র শিল্প কারখানা না থাকায় এটা দৃঢ়তার সাথে বলা বাস্তবসম্মত নয় যে, রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের দ্বারা সুন্দরবনের কোনো ক্ষতি হবে না। বিদ্যুৎকেন্দ্রটি চালু হওয়ার দশ থেকে পনের বছর পরে যদি দেখা যায়, এর দ্বারা সুন্দরবনের ক্ষতি হতে শুরু হয়েছে, তখন সুন্দরবন ফিরে পাওয়ার আর কোনো উপায় থাকবে না।
পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে কাজ করেন আল গোর- বাংলাদেশের পরিস্থিতি সম্বন্ধেও তার আগ্রহ ও তথ্য সংগ্রহ যথেষ্ট প্রশংসার দাবি রাখে। আল গোর আলোচনা সভায় বলেছেন, ‘গত বছর পর্যন্ত বাংলাদেশ সৌরশক্তির প্যানেল স্থাপনকারী দেশগুলোর মধ্যে এগিয়ে ছিল কিন্তু এখন পিছিয়ে পড়েছে। এখন সেখানে পরিবেশ দূষণকারী একটি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের কাজ চলছে, যার ফলে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট ও রয়েল বেঙ্গল টাইগারের সর্বশেষ আশ্রয়স্থল সুন্দরবন ধ্বংসের আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে। বাংলাদেশের হাজার হাজার মানুষ এর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করেছে।’ প্রধানমন্ত্রীকে আল গোর বলেন, ‘আমার পরামর্শ হলো পরিবেশ দূষণকারী ওই বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির নির্মাণ বন্ধ করুন। এর পরিবর্তে নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার দ্বিগুণ করুন।’ আল গোর আরও বলেন, ক্ষুদ্র ঋণের মাধ্যমে ড. ইউনূসের সংগঠনসহ বাংলাদেশের অন্যান্য বেসরকারি সংস্থা নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ উৎপাদনের বিশ্ব রেকর্ড গড়েছে। জবাবে প্রধানমন্ত্রী সচরাচর যা বলেন, তারই পুনরাবৃত্তি করে বলেছেন, ‘রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি নির্মিত হচ্ছে সুন্দরবন থেকে নিরাপদ দূরত্বে। পরিবেশ যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সে জন্য সব ধরনের পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি হবে সর্বাধুনিক-পরিবেশ রক্ষায় সব ধরনের পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।’
প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের পরে পুনরায় আল গোর আলোচনায় অংশ নিয়ে যা বলেছেন, তা হলো : ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সেন্টার পরিবেশ দূষণকারী বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি সুন্দরবনের মাত্র ১৫ কিলোমিটার দূরে নির্মাণ না করার অনুরোধ জানিয়েছেন। বিষয়টিতে আল গোরের মনোযোগ যে কতটা গভীর, তা বোঝা যায় তার পরবর্তী বক্তব্যে। তিনি বলেন, এরই মধ্যে নদীতে কয়েকটি কয়লাবাহী জাহাজ ডুবির ঘটনা ঘটেছে। বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি চালু হলে পাঁচ হাজারের মতো ঘনমিটার পানি নিয়মিত নদীতে ফেলার বিষয়টি নিয়েও আপত্তি উঠেছে। ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব নেচার (আইইউসিএন) এলাকাটি রক্ষার জন্য আবেদন জানিয়েছে। রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ সম্পর্কে এই প্রথম কোনো আন্তর্জাতিক সভায় আলোচনা-সমালোচনার মুখে পড়লেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি আল গোরকে বাংলাদেশে এসে সরেজমিন পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের আমন্ত্রণ জানিয়ে দেশে যারা এই প্রকল্পের বিরোধিতা করছেন তাদের কোনো যুক্তি নেই এবং বিরোধিতা করার পেছনে তাদের অন্য কোনো উদ্দেশ্য থাকতে পারে বলে মন্তব্য করেন। প্রধানমন্ত্রীর এ মন্তব্য দেশে নতুনভাবে সমালোচিত হয়। সুন্দরবন রক্ষা জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক সুলতানা কামাল একটি জাতীয় দৈনিককে বলেছেন, ‘আমরা বিনা কারণে রামপাল প্রকল্প বাতিল করে সুন্দরবন রক্ষার জন্য আন্দোলন করছি না। প্রকল্পটি নিয়ে দেশে-বিদেশে যেসব গবেষণা হয়েছে, তার ফলাফল দেখে নিশ্চিত হওয়া গেছে যে এটি নির্মিত হলে সুন্দরবনের ক্ষতি হবে। আন্দোলনকারীদের মনে অন্য কোনো উদ্দেশ্য থাকতে পারেÑ এ সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে সুলতানা কামাল প্রধানমন্ত্রীকে তা জনসমক্ষে প্রকাশ করার অনুরোধ করেছেন।’ বিষয়টি সম্পর্কে দীর্ঘদিন আন্দোলনরত তেল-গ্যাস খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্য-সচিব আনু মুহাম্মদ একটি জাতীয় দৈনিককে বলেছেন, ‘দাভোসে প্রধানমন্ত্রী রামপাল নিয়ে যা বলেছেন, তাতে মনে হয় সরকার অস্বীকৃতির সংস্কৃতিতে ভুগছে। রামপাল কয়লাভিত্তিক বিদুৎ কেন্দ্রের কারণে সুন্দরবনের ক্ষতির বাস্তবতাটি বিজ্ঞান দিয়ে প্রমাণিত।’
২০ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী দাভোসে ‘ডিজিটাল লিডারস পলিসি মিটিং অনজব’ শীর্ষক অধিবেশনে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে বক্তব্য রাখেন। যুবশক্তির সৃজনশীলতা ও উদ্ভাবনী প্রতিভার বিকাশে বাংলাদেশ বিশ্বের প্রযুক্তিগত উৎকর্ষতা বৈশ্বিক ব্যবসা-বাণিজ্যকে কাজে লাগাবে বলে প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন।  
বিশ্বের জ্ঞাননির্ভর অর্থনীতির এমন এক পর্যায়ে বাংলাদেশ উঠে আসছে যেখানে নানা প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও সরকার দেশকে ডিজিটাইলাইজেশনের পথে চালিত করছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলার সাফল্যের অভিজ্ঞতা বিশ্বের সামনে তুলে ধরার জন্য এ বছর ডব্লিউইএফ তাদের বিশেষ অতিথি এবং প্যানেল আলোচক হিসেবে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে মনোনীত করেছিল। প্রধানমন্ত্রী অধিবেশনে বলেন, তথ্যপ্রযুক্তি যে দ্রুত প্রসারলাভ করছে, সে পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ তার যুব সম্প্রদায়ের সাথে এই প্রযুক্তির মেলবন্ধন ঘটাতে চায়। দেশের জনগণের সহজাত প্রতিভা সম্বন্ধে বলতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের জনগণ যে কোনো নতুন প্রযুক্তি তথা তথ্য-প্রযুক্তি যেমন দ্রুত গ্রহণ করতে পারে, তেমনি এর সাথে খাপ খাওয়াতে পারে। এই খাতে অগ্রগতি সম্পর্কে বলতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে এখন মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে ২৩ হাজার মাল্টি মিডিয়া ক্লাস রুম রয়েছে। প্রাথমিক বিদ্যালয়সমূহে আরো ১৪ হাজার মাল্টিমিডিয়া ক্লাস রুম তৈরির কাজ চলছে। তিনি অধিবেশনে আরো জানান, প্রায় দেড় লাখ মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষকদের সমন্বয়ে ‘টিচার্স পোর্টাল’ নামে একটি ওয়েব পোর্টাল গড়ে তোলা হয়েছে। এই পোর্টালে ২০২১ সাল নাগাদ দেশের প্রায় নয় লাখ শিক্ষককে সম্পৃক্ত করা হবে। তিনি উল্লেখ করেন, দেশব্যাপী চার হাজার ডিজিটাল সেন্টার কাজ করছে। স্বনির্ভর ওয়ানস্টপ সার্ভিসকে উৎসাহিত করার ফলে ১০ হাজারেরও বেশি উদ্যোক্তা তৈরি হয়েছে, যাদের অর্ধেকই হচ্ছে নারী। দাভোসে চার দিনব্যাপী ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামে এ বছর বাংলাদেশকে বেছে নেয়া হয়েছিল আলোচনার জন্য প্রধান দেশ হিসেবে। বাংলাদেশে উন্নয়ন প্রচেষ্টার সফলতার স্বীকৃতিস্বরূপই এটা হয়েছিল। উন্নয়নের ধারাবাহিকতা ধরে রাখা ও দেশের উন্নয়নের সুফল জনগণের সর্বস্তরে পৌঁছে দেয়াই হচ্ছে আগামীদিনের চ্যালেঞ্জ।
য় লেখক : গবেষক ও প্রাবন্ধিক



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ