ইভিএম-এ ভোট কেন?
আগামী জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম-এ ১৫০ আসনে ভোট গ্রহণের পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার। কাকতালীয় কিনা জানি না, ১৫০ সংখ্যাটা আমাদের এর আগে চিনিয়েছিলেন রকিবুল
শরদিন্দু ভট্টাচার্য্য টুটুল : বাংলাদেশ ব্যাংকের এক কর্মকর্তা ও সিটি কর্পোরেশনের এক কর্মকর্তাকে মারধরের রেশ কাটতে না কাটতেই, আবারো পুলিশের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ উঠেছে- পুলিশ এক চা দোকানিকে পুড়িয়ে মেরেছে। প্রকাশিত সংবাদে বলা হয়, ঢাকার শাহআলী থানাধীন গুদারাঘাট এলাকার চা বিক্রেতা বাবুল মাতুব্বরকে পুড়িয়ে হত্যা করেছে কয়েকজন পুলিশ সদস্য ও তাদের সোর্স। উল্লেখ করা হয়, রাত সাড়ে নয়টার দিকে রাজধানীর শাহআলী থানা এলাকাধীন গুদারাঘাট এলাকার কিংশুক সমবায় সমিতির কাছে বাবুলের চায়ের দোকানে যায় পুলিশের দুই সোর্স ও পুলিশের কয়েকজন সদস্য। পুলিশ সদস্যরা বাবুল মাতুব্বরকে টহল গাড়িতে তুলে নেয়ার চেষ্টা করে। এক পর্যায়ে বাবুল মাতুব্বর যেতে না চেয়ে ঘরের খুঁটি ধরে বসে পড়ে। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে পুলিশ কেরোসিনের স্টোভে লাঠি দিয়ে আঘাত করে। লাঠির আঘাতে স্টোভটি ছিটকে বাবুল মাতুব্বরের ওপরে পড়ে যায়। এতে তিনি দগ্ধ হন এবং চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
আমাদের দেশে পুলিশের বিরুদ্ধে এমন অনেক অভিযোগ আছে। সাধারণ মানুষ মনে করে থানাতে একটি জিডি করতে গেলেও একশ্রেণীর অসাধু পুলিশ কর্মকর্তাকে টাকা-পয়সা দিতে হয়। টাকা-পয়সা না দিলে কোনো কাজই থানায় হয় না। এক খবরে জানা গেছে পুলিশের অপরাধ বাড়লেও অপরাধ দমনে উল্লেখ করার মতো কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। ২০১৫ সালে রেকর্ড পরিমাণ প্রায় বাইশ হাজার অভিযোগ এসেছে। তার মধ্যে তদন্ত শেষে শাস্তি দেয়া হয়েছে দশ হাজার পুলিশ সদস্যকে। তাদের মধ্যে ছিয়াত্তরজনকে করা হয়েছে চাকরিচ্যুত। দুঃখজনক হলেও সত্য পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ বাড়লেও কমেছে শাস্তি প্রদানের সংখ্যা। ফলে বেড়েই চলছে পুলিশের নৃশংসতা, যা আমাদের জন্য অশনিসংকেত বটে। আমরা উপরের উল্লেখিত বিষয়গুলি নিয়ে যদি আলোচনা করতে যাই, তাহলে দেখতে পাবো গুটিকয়েক পুলিশ সদস্যের অনৈতিক কর্মকা-ের জন্য আমাদের সমগ্র পুলিশ বিভাগ যেন আজ প্রশ্নের সম্মুখীন হয়ে যাচ্ছে। যদিও বলা হয়ে থাকে, কয়েকজন পুলিশ সদস্যের অনৈতিক কিংবা অসৌজন্যমূলক কর্মকা-ের জন্য সমগ্র পুলিশ প্রশাসনকে দায়ী করা যায় না। কথাটা নিশ্চয়ই মিথ্যে নয়। একজনের কাজের জন্য সবাইকে দায়ী করা সমীচীন নয় কিংবা একজনের কাজের জন্য সমগ্র বিভাগকে দায়ী করা উচিতও নয়। কিন্তু প্রশ্ন হল, দিন দিন একশ্রেণীর পুলিশ সদস্যের কর্মকা- এতো মারমুখী হয়ে যাচ্ছে কেন?
এ দেশের সাধারণ মানুষ এমনিতেই বহু সংকটে আজ বিপর্যস্ত। তার মধ্যে যদি পুলিশ সদস্যরা তাদের সামনে অর্থাৎ দেশের সাধারণ মানুষের কাছে মূর্তিমান আতঙ্ক হয়ে দাঁড়ায়, তাহলে তো মানুষের জীবনযাপনই আরও কঠিন হয়ে পড়বে। অভিযোগ করা হয়ে থাকে, একশ্রেণীর পুলিশ সদস্যের সাথে অপরাধ জগতের লোকদের নিবিড় সখ্য গড়ে উঠেছে। এসব অভিযোগ আমরা সাধারণ মানুষ বিশ্বাস করতে চাই না। আমরা সাধারণ মানুষ মনে করি না এ দেশের কিছু সংখ্যক পুলিশ সদস্যের অনৈতিক কর্মকা- মানুষের জন্য নিবেদিত যেসব পুলিশ সদস্য আছেন, তারা মেনে নেবেন। যদি চোর ও পুলিশের মাঝে নিবিড় বন্ধুত্ব গড়ে উঠে, তাহলে শান্তিপ্রিয় অসহায় মানুষের হয়ে উঠবে অনিশ্চিত। অপরাধীরা হয়ে ওঠবে সমাজ সংসারের চালিকাশক্তির একটা অংশ। অপরাধীরা যদি সমাজের চালিকা শক্তির অংশ হলে মানুষ তাদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়বে। অপরাধীরা তখন ভাববে তারা যা করবে তাই ঠিক। তাদের কে কি বলবে? একটা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থায় অপরাধীরা যদি মনে করে তাদের বলার কেউ নেই কিংবা পুলিশ ও অপরাধীর মধ্যে যদি সম্পর্ক গড়ে ওঠে, তাহলে সেই গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থায় যতই উন্নয়ন উন্নয়ন বলে চিৎকার করা হোক না কেন, কোন লাভ হবে না।
আমরা বিশ্বাস করতে চাই আমাদের পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের বৃহৎ অংশ কোনো অপরাধ করে না। পুলিশ বাহিনীর লোকজনের মধ্যে যে ক্ষুদ্র অংশ ক্ষমতার অপব্যবহার করে শান্তি আনয়ন না করে সমাজের শান্তি বিনষ্ট করে থাকে, আমাদের পুলিশ বাহিনীর দায়িত্ববান সদস্যরাও তাদের ঘৃণা করে থাকে। বাবুল মাতুব্বরের মৃত্যুর জন্য যেসব পুলিশ সদস্য দায়ী তাদের শুধু প্রত্যাহার করলেই চলবে না। তাদের পুলিশের লোকজন হিসেবে না দেখে সাধারণ অপরাধী হিসাবেই গণ্য করা উচিত। কোনো ওষুধ যখন রোগ নিরাময়ের জন্য ব্যবহার হয়, তখন তাকে ওষুধই বলা হয়ে থাকে। আবার সেই ওষুধ যখন মরণ নেশা মাদকে পরিণত হয়, তখন তাকে আর ওষুধ হিসাবে গণ্য করা হয় না, মাদক হিসাবেই চিহ্নিত করা হয়ে থাকে।
যখনই কোনো পুলিশ সদস্য নিজের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন না করে, নিজে অপরাধী হয়ে রাষ্ট্র ও সমাজের শান্তি বিনষ্ট করে থাকে, তখন সে আর পুলিশ সদস্য থাকে না। হয়ে যায় অন্যান্য অপরাধীর মতো অপরাধী। অপরাধকারী পুলিশকে পুলিশ সদস্য হিসেবে না দেখে অপরাধী হিসাবেই দেখা হোক। তাদের আইনানুগ শাস্তি হলে পুলিশের ভাবমর্যাদা বৃদ্ধি পাবে।
লেখক : কবি, গল্পকার ও আইনজীবী, কালীবাড়ী রোড, হবিগঞ্জ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।