মটর সাইকেল: নিউ নরমাল পরিস্থিতিতে (নতুন বাস্তবতায়)
মটরসাইকেল নিরাপদ, অধিক সুবিধাজনক, খরচ এবং সময় বাঁচায়। গণপরিবহনে একে অন্যের গা ঘেঁষে চলাচলে প্রতিদিন
ডা. রিয়াজুল ইসলাম রিয়াজ : বছরের প্রথমেই সারাদেশে প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের হাতে সরকার বিনামূল্যে পাঠ্যবই তুলে দিয়েছে। নিঃসন্দেহে এটা সরকারের একটি বিরাট সাফল্য। শুধু এখানেই নয়, দেশের ৯২ ভাগ মুসলমানদের চিন্তা-চেতনার ফসল পাঠ্যপুস্তকে ধর্মীয় বিষয়গুলো সুবিবেচনার আওতায় নেওয়া হয়েছে, এতে কিছুটা হলেও দেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের কাছে সরকারের ভাবমর্যাদা উজ্জ্বল হয়েছে। তবে সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয়, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)-এর কিছু অসাধু কর্মকর্তারা উদ্দেশ্যমূূলকভাবে সরকারের মধ্যে ঘাপটি মেরে থাকা স্বাধীনতা বিরোধী একটি চক্র সরকারের সাফল্যে ঈর্ষান্বিত হয়ে তার জনপ্রিয়তা নষ্ট করার লক্ষ্যে দেশে সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানের ধর্মীয় মূল্যবোধ নস্যাৎ করার জন্য ‘ঋষি, ‘রথ’-এর ছবি দিয়ে শিশুদের জন্য প্রণীত বই প্রকাশ করা হচ্ছে। তাতে কারো কোনো উচ্চ-বাচ্য নেই। অথচ ‘ওড়না’ শব্দটি সার্বজনীন হওয়া সত্ত্বে¡ও জ্ঞানপাপী কিছু ব্যক্তি তাতে সাম্প্রদায়িকতার গন্ধ শুঁকে বেড়াচ্ছেন। নতুন বইয়ের মলাট চকচকে দেখে শিক্ষার্থীরা আনন্দিত হয়েছিল কিন্তু বইয়ের ভেতরে নি¤œমানের কাগজ ও ছাপা দেখে তারা আশাহত হয়েছে। কাগজের উজ্জ্বলতা কম ছিল, আকারে ছোট এবং পুরত্বও কম, এজন্য কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের ৩৬ কোটি টাকার বিল আটকে দেওয়া হয়েছে।
পাঠ্যবইয়ে বানান ভুল থেকে শুরু করে বিষয়বস্তু নির্বাচন পর্যন্ত ভুলের বিস্তৃতি ঘটেছে। আগের বছরের পাঠ্য বইয়ের ভুলগুলো সঠিকভাবে চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়া হলে এবারে এমন ভুল হতো না। ইতোমধ্যে বই বিতরণের পর গণমাধ্যমে যেসব সমালোচনা এসেছে তার মধ্যে একটি প্রশ্ন একেবারেই উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে উত্থাপিত হয়েছেÑ এটাই মনে হয়, দু’একটি পত্রিকায় বড় করে ছাপা হয়েছে যে, প্রথম শ্রেণির একটি শিশুকে ‘ও’ বর্ণ শেখাতে গিয়ে ‘ওড়না’ পরার প্রসঙ্গ টানতে হবে কেন? এই বাক্যটিতে তারা সাম্প্রদায়িকতার গন্ধ পেয়েছেন (প্রথম আলো, ৮ জানুয়ারি ’১৭) অথচ এই ভদ্র সমালোচকরা একই বইয়ের পাঠ ২৩-এ ‘র’ বর্ণকে পরিচয় করাতে গিয়ে ‘রথ টানি’ বলে ৩২ এবং ৩৩ পৃষ্ঠায় যে রথ টানার ছবি প্রদর্শিত হয়েছে তারা তার মধ্যে কোনো সাম্প্রদায়িকতা খুঁজে পাননি। আবার পাঠ ১০-এ ‘ঋ’ বর্ণকে পরিচয় করতে গিয়ে ‘ঋষি ঐ বসে আছে’ বাক্য দিয়ে ১৪ পৃষ্ঠায় ঋষির দু’টি ছবি ছাপা হলো তার মধ্যেও কোনো সাম্প্রদায়িকতা তারা দেখতে পাননি। এদের যত নিন্দা কেবল ওড়নাকে নিয়ে।
তাদের কেউ কেউ ‘ও’ বর্ণকে ওলকচু বা ‘ওলকপি’ শব্দ দিয়ে পরিচিত করতে পরামর্শ দিয়েছেন; ভেবে দেখা বড়ই প্রয়োজন শিশুদের কাছে কোন বিষয়টি বেশি পরিচিত। ‘ওলকচু, ‘ওলকপি’ না কি ‘ওড়না’ সে বিবেচনায় ‘ও’ বর্ণকে পরিচিত করাতে যারা ওড়নাকে নির্বাচন করেছেন তারা ভুল করেননি। কারণ প্রথম শ্রেণির কোমলমতি শিক্ষার্থীদের ঋষির সাথে পরিচিত করানো হয়েছে বাংলা বইয়ে পাঠ-১০ এ ১৪ পৃষ্ঠায় ঋষি ঐ বসে আছে, এটা যদি শিশুদের বুঝানো হয় তাহলে ‘ও’ বর্ণকে ওড়না শব্দ দিয়ে পরিচিত করানো সাম্প্রদায়িকতা আছে মনে করার যুক্তিযুক্ত কোন কারণ নেই। এদেশের ৯২ ভাগ নাগরিক মুসলমান হওয়ার পরেও শিক্ষার্থীদের ইমাম এর সঙ্গে অথবা ঈদগাহ’র সাথে পরিচিত করালে যুক্তিসঙ্গত হতো কিন্তু তা করা হয়নি তার পরিবর্তে ‘ই’ বর্ণকে পাঠ-৮ এর ১২ পৃষ্ঠায় ‘ইট আনি’ বাক্য দিয়ে পরিচিত করানো হয়েছে। একইভাবে এদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ নাগরিকদের ধর্ম ইসলাম হওয়া সত্ত্বেও মুসলমানদের কোন ধর্মীয় উৎসবকে পরিচিত না করলেও ‘র’ বর্ণকে পাঠ-২৩ এ ৩২ পৃষ্ঠায় ‘রথ টানি বাক্য’ এবং ৩২ ও ৩৩ পৃষ্ঠায় রথ টানার দু’টি ছবি দিয়ে পরিচিত করানো হয়েছে। যেহেতু ‘ওড়না’ সকল ধর্মের নারী-শিশুরা ব্যবহার করে আসছে। তাই আমার মতে ‘ওড়না’ শব্দের বিপরীতে অন্যকিছু হওয়া উচিত নয়।
প্রথম শ্রেণির বাংলা বইয়ে পাঠ ১১ এর ৩০ পৃষ্ঠায় রোকনুজ্জামান খানের কবিতা কতটা প্রাসঙ্গিক তা নতুন করে ভাবতে হবে এ কবিতায় বলা হচ্ছে : বাক বাকুম পায়রা, মাথায় দিয়ে টায়রা, বৌ সাজবে কালকি, চড়বে সোনার পালকি এ কবিতার সঙ্গে লাল হলুদ রঙ্গের পালকিতে চড়ে সুসজ্জিত বৌয়ের ছবি কোমল মতি নারী শিক্ষার্থীদের দ্রুত বৌ হতে প্রলুব্ধ করবে কিনা সে বিষয়টি সরকারের ভেবে দেখা দরকার।
এর চেয়েও অবান্তর যে ঘটনাটি তা হলো প্রথম শ্রেণির বাংলা বইয়ের পাঠ-৭ পৃষ্ঠায় ‘আম খাই’ বাক্যটির সঙ্গে একটি ছাগলের গাছে ওঠে আম খাবার যে ছবি ছাপা হয়েছে তার চেয়ে আর অভিনয় কী হতে পারে। বিষয়বস্তু নির্বাচনে ভুল, ছবি নির্বাচনে ভুল বিবেচনা করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্য পুস্তক বোর্ড (এনটিসিবি) পাঠ্য বইয়ে এসব ভুল হওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে ১টি সংশোধনীর ব্যবস্থা ইতোমধ্যে হাতে নিয়েছে। এনসিটিবির চেয়ারম্যান নারায়ণ চন্দ্র সাহা কিন্তু এসব ভুলের কোনো দায় দায়িত্ব নেননি তিনি বরং একটি সংশোধনী প্রস্তুত করেছেন তার বক্তব্য অনুযায়ী এটি প্রত্যেকটি স্কুলে পৌঁছে দেওয়া হবে। শিক্ষকরা পাঠ দেওয়ার সময় সংশোধনী অনুযায়ী শুদ্ধ করে পড়াবেন, এ এক অদ্ভুত ব্যাপার! কোনো দেশে পাঠ্যপুস্তকে এ ধরনের ভুল রেখে শিক্ষা চালিয়ে যাওয়ার নজির আছে বলে জানা নেই। কোনো স্বাধীন দেশে শিশুদের পাঠ্যে এমন গাফিলতিজনিত ভুল করার পর সেই দেশের পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের চেয়ারম্যান নিজ দায়িত্বে কোনো ধরনের জবাবদিহিতাহীনভাবে বহাল থাকতে পারেন এটা শুধু বাংলাদেশেই সম্ভব। যা আমরা বাস্তবে দেখতে পেলাম।
লেখক : রাজনীতিবিদ ও কলামিস্ট
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।