Inqilab Logo

শনিবার ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ধ্বংস হচ্ছে গোলগাছ

| প্রকাশের সময় : ২৪ জানুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

এএম মিজানুর রহমান বুলেট, কলাপাড়া : পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় শতাধিক কৃষক প্রতিদিন সূর্য ওঠার সাথে সাথে প্রচÐ শীত উপেক্ষা করে ঘর থেকে বেরিয়ে পড়ে গোলের রস সংগ্রহ করতে। এরপর বাড়ির উঠানে বসে শুরু হয় রস দিয়ে গুড় তৈরি কাজ। আর সেই গুড় স্থানীয় বাজারে বিক্রি করছে ওই সব কৃষক। কিন্তু জলবায়ুর প্রভাবজনিত কারণ ও প্রয়োজনীয় রক্ষণাবেক্ষণ আর চাষাবাদের অভাবে ঐতিহ্যবাহী এ গোলগাছ এখন ক্রমশই ধ্বংস হতে বসেছে। এক সময় এ উপক‚লীয় এলাকার বিভিন্ন খাল-বিল ও নদীর তীরে প্রচুর গোলের বাগান দেখা যেতো। গাছের নাম গোল হলেও আকৃতি অনেকটা নারিকেল পাতার মতো। এর উচ্চতা প্রায় ১৫ থেকে ২০ ফুটের বেশি। সাধারণত লবণাক্ত পলিযুক্ত মাটিতে ভালো জন্মায় বলে স্থানীয় কৃষকরা জানিয়েছেন।
সোমবার দুপুরে উপজেলার নীলগঞ্জ ইউনিয়নের নবীপুর গ্রামের গিয়ে দেখা গেছে প্রায় ৭০ বছরের ঊর্র্ধ্বে বৃদ্ধা শিখা রানী হাওলাদার তাফালে কুটা দিয়ে আগুন জ্বালিয়ে ঢোঙ্গায় রস দিয়ে গুড় তৈরি করছে। এসময় তিনি বলেন, বাবারে বিয়ের পর থেকেই প্রতি বছর এই সময় রস জাল দিতে হইছে। আগে বেশি ছিলো। এখন কমে গেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দেশের সর্ববৃহৎ বনাঞ্চল সুন্দরবনসহ উপক‚লীয় দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন স্থানে গোলগাছ রয়েছে। তবে বঙ্গোপসাগরের তীরবর্তী পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া, কুয়াকাটা, রাঙ্গাবালি, গলাচিপা, দশমিনা, বাউফল, বরগুনার আমতলী, তালতলী, পাথরঘাটা, ভোলা ও খুলনা জেলার বিস্তীর্ণ এলাকাসহ চরাঞ্চলে গোল গাছের বাগান রয়েছে।
স্থানীয়দের সূত্রে জানা গেছে, এই জনপদের সর্বত্র রাখাইন সম্প্রদায়ের লোকজনসহ নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারের ঘরের ছাউনী হিসাবে গোলপাতা ব্যবহার করা হয়। এছাড়া শীত মৌসুমে গোল বাগানের মালিকরা এর রস দিয়ে গুড় উৎপাদন করে বাড়তি অর্থ উপার্জন করে থাকে। রস দিয়ে সুস্বাদু পায়েস তৈরি করা হয়। গোলের গুড় কৃমিনাশক বলে অনেকেই মন্তব্য করেন। সংশ্লিষ্ট কৃষকদের সাথে আলাপ করলে তারা জনান, উপক‚লীয় এলাকায় যে সকল গোলগাছের বাগান রয়েছে তা প্রকৃতির অশেষ দান। বনবিভাগের এক শ্রেণির অসাধু বনকর্মীদের সহযোগিতায় বনদস্যুরা অবাধে গাছ কেটে নিয়ে যাওয়ার সাথে সাথে এ গোল বাগানগুলো ধ্বংস হতে বসেছে। গোলগাছ চাষী নিঠুর হাওলাদার জানান, গোলগাছ চাষাবাদ অত্যন্ত লাভজনক, সহজসাধ্য এবং ব্যয়ও খুব কম। রাসায়নিক সার ও কীটনাশক প্রয়োজন হয় না। এতে কোনো পরিচর্যা করতে হয় না।
একই এলাকার অমল ঘরামি জানান, শুধুমাত্র গোলগাছের বীজ (গাবনা) সংরক্ষণ করে তা নিচু জমিতে পুঁতে রাখলেই চারা গজায়। এর এক একটি ছড়ায় একশ’ থেকে দেড়শ’টি বীজ থাকে। এতে ব্যয়ের চেয়ে আয় অনেক গুণ বেশি। তবে এ বছর ছড়া থেকে রস অনেক কম বের হচ্ছে।
বনবিভাগের মহিপুর রেঞ্জ কর্মকর্তা এস এম শামসুর দোহা জানান, পরীক্ষামূলকভাবে বেশ কয়েকটি স্থানে গোলগাছের বিচী রোপণ করা হয়েছে। এতে আমরা ব্যাপক সফলতা পেয়েছি। এ গাছ গুলো উপক‚লীয় এলাকার প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষায় বিরাট সহায়ক হবে বলে তিনি জানিয়েছেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: গোলগাছ
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ