পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
স্টাফ রিপোর্টার : ‘ভারতীয় টিভি চ্যানেলগুলোয় প্রচারিত অপসংস্কৃতিতে ভরা নাটক-সিরিয়ালে উদ্বুদ্ধ হয়ে বাংলাদেশের শতকরা ৮০ শতাংশ বিবাহ বিচ্ছেদ হচ্ছে’ বলে মন্তব্য করেছেন নাট্য ব্যক্তিত্ব মামুনুর রশীদ। ফেডারেশন অব টেলিভিশন প্রফেশনালস অর্গানাইজেশনের (এফটিপিও) এই সভাপতি বলেন, ‘ইদানিংকালে দেশে শতকরা ৮০ শতাংশ বিবাহ বিচ্ছেদের প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ কারণ হলো ভারতীয় সিরিয়াল।’
তিনি সুনির্দিষ্টভাবে দাবি করেন ২০০৬ সালের সরকারি আইন টেলিভিশন চ্যানেলগুলোকে মানতে হবে। বিজ্ঞাপনের অত্যাচার থেকে আমাদের বাঁচাতে হবে। বিদেশি শিল্পীদেরও আনার ক্ষেত্রে আইন মানতে হবে। গতকাল একটি অনলাইন মিডিয়া আয়োজিত ‘বিদেশি সিরিয়াল : সংস্কৃতির আপনপর’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এ চিত্র তুলে ধরেন। সংস্কৃতিকর্মীদের আন্দোলন, বিদেশি সিরিয়াল ও ভারতীয় চ্যানেলগুলোর দৌরাত্ম্যকে সামনে রেখে সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, মিডিয়া কর্মী, বিজ্ঞাপনদাতাসহ টেলিভিশন শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের ভূমিকা নিয়ে আলোচনা হয়। মামুনুর রশীদ ছাড়াও বক্তৃতা করেন ডিরেক্টরস গিল্ডের সভাপতি গাজী রাকায়েত, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ফাহমিদুল হক, দীপ্ত টিভির উরফী আহমদ, গ্রে অ্যাডভার্টাইজ লিমিটেডের গাউসুল আলম শাওন, উদিসা ইসলাম, জুলফিকার রাসেল প্রমুখ।
আলোচনার শুরুতেই সংস্কৃতি কর্মীদের দাবি নিয়ে আলোচনা উঠে আসে। জানানো হয় ভারতের জি-বাংলা প্রতি বছর বাংলাদেশ থেকে ১শ’ কোটি টাকা নিয়ে যাচ্ছে। নাট্য ব্যক্তিত্ব মামুনুর রশীদ বলেন, ‘টেলিভিশন শিল্প সিনেমার চেয়েও বড়। একটি এক ঘণ্টার নাটকে ২০ মিনিটের বিজ্ঞাপন দেয়া হচ্ছে। বিদেশে থেকে কলকুশলী আনা হয়। আবার বিপুল পরিমাণ অর্থ ডাউনলিংকের মাধ্যমে বিদেশে চলে যাচ্ছে। আরেকটি বিষয়, আমাদের মূল্যবোধের ওপর আক্রমণ হচ্ছে। ভারতের কিছু চ্যানেলের সিরিয়াল এটি করছে। বিদেশি সিরিয়ালগুলো যে ধরনের সংস্কৃতির ধারক-বাহক তা আমাদের সংস্কৃতি ও মূল্যবোধের বিরুদ্ধে। তিনি বলেন, ‘ইদানিংকালে দেশে শতকরা ৮০ শতাংশ বিবাহ বিচ্ছেদের প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ কারণ হলো ভারতীয় সিরিয়াল।
বিদেশী টিভি চ্যানেলে অপসংস্কৃতি এবং বিজ্ঞাপন প্রসঙ্গে ডিরেক্টরস গিল্ডের সভাপতি ও নাট্যব্যক্তিত্ব গাজী রাকায়েত বলেন, ‘তথ্য মন্ত্রণালয়কে ভ্যাট-ট্যাক্স দিয়ে মোটামুটি বোঝাতে পারা যায়। কিন্তু একটি সুনির্দিষ্ট সিরিয়াল অনুমোদিত কিনা সেটি কী করে বুঝব। কারণ একটি নির্দিষ্ট কমিটি রয়েছে যারা এই সিরিয়ালগুলোর ছাড়পত্র দেয়। সেই কমিটির ছাড়পত্র রয়েছে কিনা তা যাচাই করা উচিৎ। সে কারণে সম্প্রতি জারি করা তথ্য মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, ‘যতক্ষণ না ছাড়পত্র দেয়া হয় ততক্ষণ পর্যন্ত বিদেশি সিরিয়াল দেখানো যাবে না। এসব বিদেশি সিরিয়াল কোন সময় প্রচার হবে সেটি নিয়েও টেলিভিশন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে এফটিপিও’র কথা হয়েছে। এগুলো যথাযথ নিয়ম মেনে প্রচার হচ্ছে কিনা তাও দেখতে হবে। গাউসুল আলম শাওন বলেন, ‘আমাদের টোটাল প্যাকেজ নিয়ে ভাবতে হবে। টেলিভিশন চ্যানেলগুলো কেউ রেসপন্সিবল না। বিজ্ঞাপন তারা কতক্ষণ চালাবেন এটা তাদের ব্যাপার। সিদ্ধান্ত তাদের নিতে হবে। বিশ্বায়নের যুগে বড় বড় বাজেট নিয়ন্ত্রণ হচ্ছে অনলাইনের মাধ্যমে। তাদের থামাবেন কীভাবে? আমাদের আন্দোলন হবে চ্যানেলগুলোর বিপক্ষে। জি-বাংলা বছরে ১শ’ কোটি টাকা নেয়। এভাবে সাড়ে ৮ হাজার কোটি টাকা মাটির নিচ দিয়ে চলে যায় সেটি নিয়ে আমরা কথা বলি না। আমরা পড়ে আছি ৮শ’ কোটি টাকা নিয়ে। তিনি বলেন, ‘ভারতীয়দের মধ্যে ৪০ বছরের বেশি আর বাংলাদেশে ৩০-এর নিচের দর্শকরা মূলত সিরিয়ালগুলো দেখেন। এগুলো নিয়েও আমাদের আরও গবেষণা করতে হবে।’ টেলিভিশনে মূল্যবোধ তৈরি নিয়ে কথা বলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ফাহমিদুল হক। তিনি বলেন, ‘মিডিয়া পলিসি যারা প্রণয়ন করছে তাদের দূরদৃষ্টি থাকা দরকার। ভবিষ্যতে আমরা টেলিভিশন শিল্পকে কোথায় দেখতে চাই তা নিয়েও ভাবতে হবে। তাছাড়া বর্তমানে একটা অনুষ্ঠানে কতক্ষণ বিজ্ঞাপন চলবে এটা টেলিভিশন কর্তৃপক্ষ ঠিক করছে, কিন্তু এটি ঠিক করা উচিৎ সম্প্রচার নীতিমালার মাধ্যমে।’ তিনি আরও বলেন, মূল্যবোধ কিন্তু স্থির কোনও বিষয় নয়। সময়ের সঙ্গে বদলাচ্ছে মূল্যবোধ। এখন মানছি না পরে সেটিকে মেনে নিচ্ছি। আর এটি মনে রাখতে হবে সংস্কৃতি কিন্তু উন্মুক্ত। টেলিভিশন ডাউনলিংক বন্ধ করতে পারবেন কিন্তু ইন্টারনেট ডাউনলিংক কী করে আটকাবেন? আপনি বাধা দিলেও দর্শক কিন্তু ভিন্ন সোর্স থেকে সেই জিনিস দেখে ফেলছে। এখানে দর্শক রুচিই মুখ্য। আমাদের সেটাই ভাবতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।