বাংলাদেশের জনজীবন ও অর্থনীতিতে ফারাক্কা বাঁধের বিরূপ প্রতিক্রিয়া
ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে প্রবাহিত গঙ্গার ওপর নির্মিত ভারতের ফারাক্কা বাঁধের প্রতিক্রিয়া যেমন বাংলাদেশের অর্থনৈতিক
হোসেন মাহমুদ : ২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল। নারায়ণগঞ্জে সংঘটিত হয় বাংলাদেশের ইতিহাসের অন্যতম বর্বরোচিত হত্যাকা-। ৭ জন মানুষকে দিনে দুপুরে আটক করে মাইক্রোবাসে তুলে নেওয়া হয়। ইঞ্জেকশন দিয়ে সংজ্ঞাহীন করার পর শ^াস রুদ্ধ করে খুন করা হয় তাদের সবাইকে। তারপর তাদের পেট চিরে ফেলে দেওয়া হয় শীতলক্ষ্যা নদীতে। ৩০ এপ্রিল ৬ জন ও ১ মে আরেকজনের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ হতভাগ্যরা হলেন না’গঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের সাবেক প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলাম, তার বন্ধু মনিরুজ্জামান স্বপন, তাজুল ইসলাম, লিটন, গাড়ি চালক জাহাঙ্গীর আলম, আইনজীবী চন্দন সরকার ও তার গাড়ি চালক ইব্রাহীম।
নিহত ৭ ব্যক্তিকে তিনটি গ্রুপে ভাগ করা যায়। প্রথম গ্রুপে পড়েন নূর হোসেনের জানি দুশমন নজরুল ইসলাম ও তার তিন বন্ধু সহ চারজন। তারা নজরুল ইসলামের ভালোমন্দ কাজের সাথে হয়তো সম্পৃক্ত ছিলেন। দি¦তীয় গ্রুপে পড়েন তার ড্রাইভার যিনি সাধারণ অর্থে চাকুরিজীবী মাত্র, তিনি নজরুল ইসলামের কোনো ভালোমন্দ কাজের সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন বা ছিলেন না। তৃতীয় গ্রুপে পড়েন চন্দন সরকার ও তার গাড়ি চালক যারা সম্পূর্ণ নিরপরাধ। নজরুল ইসলাম, তার বন্ধু ও গাড়ি চালকের অপহরণ ঘটনা দেখে ফেলার কারণে অপহরণকারীরা তাদের নামও খরচের খাতায় লিখে ফেেেল। ধরা যাক, প্রবল ক্ষমতা ও অর্থশালী নূর হোসেনের পথের কাঁটা হওয়ায় নজরুলের আর পৃথিবীতে বেঁচে থাকার কোনো অধিকার ছিল না। কিন্তু তার তিন বন্ধু ও গাড়ি চালককে তার সাথী করা হলো কেন? পাঁচজন মানুষকে এভাবে ও একসাথে হত্যা পেশাদার খুনী হলেও করতে চাইত না। তার সাথে আবার আরো দু’জন নিরীহ মানুষকেও অবলীলায় যোগ করা হয়।
একটু চিন্তা করলেই বোঝা যায় যে সাধারণ খুনী হলে কোনোভাবেই এত বড় ঝুঁকি নিত না। সাধারণ খুনীরা অনেক ক্ষমতাধর, কিন্তু অসীম ক্ষমতাধর নয়। এ ঝুঁকি শুধু তারাই নিতে পারে যারা অসীম ক্ষমতার অধিকারী, যারা নিশ্চিত ছিল যে আইন তাদের কখনো ছুঁতে পারবে না। এবং আসলেই ব্যাপারটা তাই ছিল। যারা আইনের মানুষ, তারাই এ ভয়ংকর খুনের ঘটনাটি ঘটিয়েছিলেন, তাদের সহযোগী ছিল সন্ত্রাসী নেতা নূর হোসেনের পাঠানো খুনীর দল।
এ নিষ্ঠুর হত্যাকা-ের ঘটনায় পুলিশ সিদ্ধিরগঞ্জ আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও একই এলাকার অপরাধ জগত নিয়ন্ত্রণকারী সন্ত্রাসী নূর হোসেন, নারায়ণগঞ্জের র্যাব-১১’র অধিনায়ক লে. কর্নেল সাইদ মোহাম্মদ তারেক, উপ অধিনায়ক ও কোম্পানি কমান্ডার মেজর আরিফ হোসেন ও সিপিসি-১-এর অধিনায়ক লে. কমান্ডার মাসুদ রানাসহ ৩৫ জনকে আসামী করে চার্জশিট প্রদান করে। প্রায় তিন বছর ধরে চলা এ মামলা রায় দেওয়া হয় ১৬ জানুয়ারি। রায়ে উপর্যুক্তরাসহ ২৬ জনকে ফাঁসির দ- দেওয়া হয়েছে। বাকি ৯ জনের দেওয়া হয়েছে বিভিন্ন মেয়াদের কারাদ-। দ- প্রাপ্ত আসামীদের মধ্যে রয়েছেন র্যাবের ২৫ জন সাবেক সদস্য। আর ফাঁসির দ-াদেশ প্রাপ্তদের মধ্যে র্যাবের সাবেক সদস্যদের সংখ্যা ১৬ জন।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মতে, এ মামলার কয়েকটি বৈশিষ্ট্য রয়েছে। যেমন এ মামলায় কোনো আসামীই খালাস পায়নি অর্থাৎ নিরপরাধ প্রমাণিত হয়নি। অন্যদিকে কোনো ফৌজদারি মামলায় এত অপরাধীর দ- দানের এটি দ্বিতীয় ঘটনা। প্রথমটি হলো বিডিআর বিদ্রোহ মামলার রায়ে ২০১৩ সালে ১৫২ জনের ফাঁসির দ- ও ৪১৭ ব্যক্তির বিভিন্ন মেয়াদের শাস্তি দেওয়া হয়। তৃতীয় ঘটনাটি হলো নাটোরের যুবদল নেতা গামা হত্যার ঘটনায় নি¤œ আদালত ২১ ব্যক্তি ফাঁসির দ- প্রদান করেন।
নারায়ণগঞ্জের সাত হত্যাকা-ের ঘটনা ছিল দেশ তোলপাড় করা একটি ঘটনা। বিশেষ করে এখানে র্যাব সদস্যদের জড়িত হওয়ার ঘটনা সকল শ্রেণির মানুষকে স্তম্ভিত করে দেয়। আইন শৃঙ্খলা রক্ষায় ও সন্ত্রাস দমনে এ বাহিনীর রয়েছে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। এ দেশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার সুদীর্ঘকালের দায়িত্বে নিয়োজিত পুলিশ বাহিনীর যেমন বিশাল সাফল্য আছে, তেমনি বিরাট ব্যর্থতাও আছে। তাদের ব্যর্থতার শূন্যতা পূরণ করতেই র্যাবের জন্ম। অপরাধী ও অপরাধ এবং সন্ত্রাস দমনে র্যাবের যেমন বিপুল সাফল্য আছে, তেমনি র্যাবের বিরুদ্ধে অভিযোগেরও অন্ত নেই। বিশেষ করে ক্রসফায়ার ও অধুনা বন্দুক যুদ্ধে অপরাধীদের পাশাপাশি অসংখ্য নিরপরাধ জনকে হত্যার প্রচুর অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। আছে অপহরণ ও গুমের অভিযোগ। টাকার বিনিময়ে ক্রসফয়ারের নামে মানুষ হত্যার অভিযোগও আছে। তবে বাস্তবতা হলো এসব অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি। অভিযোগকারীরা বাস্তব কারণেই এসব অভিযোগ প্রমাণ করতে পারেননি। তারপরও স্বীকার্য যে এতসব সত্ত্বেও বিপদে ও সংকটে র্যাব ও পুলিশই জনগণের ভরসা। যাহোক, এবারই প্রথম কোনো ফৌজদারি অপরাধে র্যাবের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ অন্য সদস্যদের অপরাধ প্রমাণিত হয়েছে এবং তাদের যথাযথ দ-বিধান করা হয়েছে। সে হিসেবে এ মামলাটি তাৎপর্য বহন করে।
এ মামলার রায়ে বিজ্ঞ বিচারক সৈয়দ এনায়েত হোসেন যে কিছু গুরুত্বপূর্ণ অভিমত দিয়েছেন তা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। অভিমতে তিনি বলেন, এই ঘটনা সকল সরকারি কর্মচারীর জন্য লজ্জাজনক। এটা জাতির জন্যও লজ্জাজনক। তিনি রায়ে বলেন, ‘অপহরণ, হত্যার জন্য নূর হোসেনের মতো দুষ্কৃতকারীদের সঙ্গে যখন সরকারের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের যোগাযোগ থাকে তখন আমাদের লজ্জায় মাথা নিচু হয়ে যায়। নূর হোসেন ও তার সহযোগীদের কাছ থেকে সশস্ত্র বাহিনীর কর্মকর্তাদের সুবিধা নেওয়ার বিষয়টি অনেক প্রশ্নের জন্ম দেয়। এই মামলার আসামী ৩৫ জন যাদের মধ্যে ২৫ জনই সশস্ত্র ও আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তা ও সদস্য। বাকিরা সাধারণ মানুষ। এই অপরাধ সাধারণ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা মিলে করেছে। এটা জাতির জন্য খুবই কলঙ্কজনক যে সাধারণ মানুষের জানমালের নিরাপত্তার জন্য নিয়োজিত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা এই জঘন্য অপহরণ, হত্যা এবং প্রমাণ গায়েব করার কাজ করেছে। তারা উভয় গ্রুপ লাভবান হওয়ার জন্য পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী এই হত্যাকা- ও অপরাধ সংঘটিত করেছে। এটা সকল সরকারী কর্মীর জন্য লজ্জার।’
এ হত্যাকা- সংঘটিত হওয়ার পর সারাদেশে অফিসে-আদালতে, পাড়ায়-মহল্লায়, চা’র দোকানে-আড্ডায় তা গণমানুষের আলোচনার বিষয়ে পরিণত হয়। বিশেষ করে এ ঘটনা যার অনুমোদনে ঘটে সেই লে. কর্নেল সাইদ তারেক র্যাব-১১’র অধিনায়ক হওয়ায় এবং তারই অধীনস্থ দুই পদস্থ কর্মকর্তাসহ রাবের বহু সদস্য এতে জড়িত থাকার ঘটনা প্রকাশ হয়ে পড়ার পর বিষয়টি ভিন্ন গুরুত্ব লাভ করে। মানুষের কাছে পরিষ্কার হয়ে যায় যে নূর হোসেন যতই ক্ষমতাশালী হোক, তার মূল শত্রু নজরুলসহ ৫ জন লোককে হত্যা করা তার জন্য সম্ভবপর ছিল না। তাছাড়া তার নিজের ভাষ্যেও বোঝা যায় যে নজরুলই ছিলেন তার মূল টার্গেট। কিন্তু নজরুলের সাথে এতগুলো মানুষকে হত্যা তার পরিকল্পনায় ছিলও না। এ ঘটনার প্রধান দায় পড়ে নজরুল অপহরণ ঘটনার বাস্তবায়নকারী মেজর আরিফের উপর। নজরুল আদালতে হাজিরা দিয়ে একা গাড়িতে ওঠেননি। তার সাথে আরো তিনজন ছিলেন, আরো ছিলেন গাড়ি চালক। নজরুলকে খুন করবেন এ ছিল তাদের পূর্ব পরিকল্পনা। তার গাড়ি আটকে পথের মাঝ থেকে তুলে নেওয়া হবে তাও পরিকল্পনায় ছিল। কিন্তু তার সাথে আরো ৬ জনকে খুন করা ঘাতকচক্রের পরিকল্পনায় ছিল না। তারা নজরুলের সাথে আরো তিন সঙ্গী থাকার কথা ভাবেনি। আরো ভাবেনি আইনজীবী চন্দন সরকার হঠাৎ এসে পড়ে তাদের অপহরণের অপকর্ম দেখে ফেলবেন। তিনি ও তার গাড়ি চালকÑ এ দু’ প্রত্যক্ষদর্শীকে বাঁচিয়ে রেখে কোনো ঝুঁকি নিতে চায়নি মেজর আরিফ। সম্ভবত র্যাবে থাকা অবস্থায় এ রকম আরো একাধিক পূর্ব খুনের অভিজ্ঞতা তাকে এ সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করেছিল। একজন সুপ্রশিক্ষিত সেনা অফিসারের দ্বারা এ রকম নৃশংস খুনের কথা ভাবা যায় না। হতে পারে নজরুলের শ^শুর শহীদুল ইসলাম যেমনটি দাবি করেছেন যে নূর হোসেন ৬ কোটি টাকার বিনিময়ে র্যাবকে ব্যবহার করে এ হত্যাকা- ঘটিয়েছে, সে দাবি সত্য। টাকার জন্য মানুষ অনেক অসম্ভব কাজও করে। এখানেও যে সে রকম কিছু হয়েছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। এ পর্যায়ে তিন র্যাব অফিসারের মধ্যে ৩ কোটি ও বাকি ২২ জনের মধ্যে আর ৩ কোটি টাকা ভাগাভাগি হয়েছেÑ এ রকম একটি কল্পনা করা যেতেই পারে। কারণ, নিহতদের কেউই র্যাব কর্মকর্তাদের শত্রু ছিলেন না, তারা অপরাধীও ছিলেন না। বা অপরাধী হয়ে থাকলেও নূর হোসেনের চেয়ে বড় অপরাধী ছিলেন না। বিপুল পরিমাণ টাকার লোভেই শুধু এ ধরনের নৃশংস হত্যাকা- ঘটানো যেতে পারে।
সাধারণ মানুষ কত কথা বলে। তাদের সবার মুখ কি আইন দিয়ে, পুলিশ দিয়ে বন্ধ করা যায়? ঘটনার পরপরই মানুষ দেখতে পায় যে হত্যার মূল হোতা নূর হোসেনকে গ্রেফতারের ব্যাপারে পুলিশ কোনো পদক্ষেপ নেওয়ার আগেই সে নিখোঁজ হয়ে যায়। হত্যাকা-ের পর তার সাথে নারায়ণগঞ্জের শীর্ষ আওয়ামী লীগ নেতা শামীম ওসমানের টেলিফোন কথাবার্তার খবর প্রকাশিত হয়। কিন্তু তিনি এ হত্যাকা- বা নূর হোসেনকে সহযোগিতা করা সংক্রান্ত কোনো দায় অস্বীকার করেন। অথচ সবারই জানা যে আদালতের উল্লেখিত দুষ্কৃতকারী নূর হোসেনের সাথে তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। তাদের টেলিফোন কথাবার্তায়ও তার পরিচয় মেলে। যাহোক, খুনের হোতা নূর হোসেনের খবর পরে মেলে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে। এক পর্যায়ে তাকে দেশে ফেরত আনা হয়, বিচারের সম্মুখীন করা হয়। অভিযোগ আছে যে রায়ের পর নূর হোসেন এখন কারাগারের কনডেম সেলে স্থানান্তরিত হলেও তার আগে তিনি সাধারণ কয়েদিদের তুলনায় নানারকম সুবিধা ভোগ করেছেন।
অন্যদিকে অন্য আসামীদের সাথে র্যাবের তিন অফিসারকেও কারাগারে প্রেরণ করা হয়। তাদের অন্য দু’জনের ব্যাপারে তেমন কোনো কথা না উঠলেও তারেক সাইদের ব্যাপারে নানা কথা শোনা যায়। তিনি মুক্তিযোদ্ধা, আওয়ামী লীগের অন্যতম শীর্ষ নেতা ও মন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন মায়ার জামাতা হওয়ার কারণে নানা রকম কথা ডালপালা মেলে। তার ক্ষেত্রে আইনের প্রয়োগ শিথিল হওয়ার কথা ওঠে। বিভিন্ন সময়ে সংবাদ মাধ্যমের খবরে জানা যায় যে, তারেক সাইদের জন্য কারাগারে টিভি, ফ্রিজ, এয়ার কন্ডিশনার, পানির ফিল্টার ইত্যাদি পাঠানো হয়েছিল। আবার অসুস্থ না হয়েও হাসপাতালে থাকার সুবিধাও তিনি ভোগ করেন বলা হয়। অর্থাৎ এ কথা বলা যায় যে, প্রভাবশালী ব্যক্তির জামাই কারাগারেও জামাই আদরেই ছিলেন। তবে এখন সে অবস্থা আর নেই। নিয়মানুযায়ী তারও কনডেম সেলে থাকার কথা। সেখানে এসব সুবিধা প্রদান কারা বিধিতে অনুমোদিত নয়। এখন বরং প্রশ্ন উঠেছে অন্যখানে। বহু মানুষেরই প্রশ্ন যে, এ রায়ে পর নিয়মানুযায়ী দ-িতরা হাইকোর্টে আপিল করতে পারবেন এবং তারা তা করবেন বলেও জানিয়েছেন। হাইকোর্টে মৃত্যুদ- বহাল থাকতেও পারে, নাও পারে। আবার হাইকোর্টে বহাল যদি থাকেও তারপর আপিল বিভাগ রয়েছে। আপিল বিভাগে এ মৃত্যুদ- বহাল থাকতও পারে, নাও পারে। ধরা যাক, সেখানেও মৃত্যুদ- বহাল থাকল। তারপর রয়েছে প্রেসিডেন্টের ক্ষমার সুযোগ। তিনি সব আসামীকে বা নির্দিষ্ট কাউকে ক্ষমা করেও দিতে পারেন। এ রকম ক্ষমা প্রদর্শনের ঘটনা কয়েকবার ঘটেছে। অনেকের ধারণা, মন্ত্রী মায়ার জামাতার ক্ষেত্রে এ রকম কিছু ঘটলেও ঘটতে পারে। যাহোক, এসব কিছুই হচ্ছে ধারণা বা জল্পনা-কল্পনা। ভবিষ্যতে কী ঘটবে তা ভবিষ্যতই বলতে পারে।
নিহতদের স্বজনদের সাথে সাধারণ মানুষ সাত হত্যাকা-ের রায়ে দ-িতদের দ-ের দ্রুত বাস্তবায়ন চান। কিন্তু মনে রাখতে হবে যে, আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করেই শুধু তার বাস্তবায়ন সম্ভব। এক্ষেত্রে আপিল প্রক্রিয়া শুরু ও চূড়ান্ত রায়ের জন্য অপেক্ষা করতে হবে। সেক্ষেত্রে কয়েক বছর লেগে যেতে পারে। এদিকে এ রায়ের ব্যাপারে সরকারের ঊর্ধ্বতন মন্ত্রীরা তাদের মতামত ব্যক্ত করেছেন। তাদের মধ্যে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, এ রায় উচ্চ আদালতে বহাল থাকবে বলে তিনি আশাবাদী। তিনি বলেন, যত শক্তিশালীই হোক অপরাধ করে কেউ রেহাই পাবে না। আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, সাত খুন মামলার রায়ে জনগণ সন্তুষ্ট। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, এ রায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর জন্য কঠিন বার্তা। আর প্রধান বিচারপতি বলেছেন, সাত খুনের রায়ে বিচার বিভাগে আস্থা বেড়েছে। তবে কেউ কেউ রায়ের ব্যাপারে ভিন্ন কথাও বলেছেন। তাদের মতে, নিহতদের মধ্যে দু’জন গাড়ি চালকসহ আরো দু’একজনের পরিবার ভীষণ দুর্ভোগের সম্মুখীন। কারণ, তারা তাদের পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়েছেন। সবচেয়ে দুরবস্থায় আছে চন্দন সরকারের নিহত গাড়ি চালক ইব্রাহীমের পরিবার। তার সন্তানদের এখন আশ্রয় হয়েছে এতিমখানায়। এ বিষয়ে লক্ষ্য রেখে আদালত আসামীদের উপর আর্থিক দ- আরোপ করলে এবং সে অর্থ দূরাবস্থায় থাকা নিহতদের পরিবারকে প্রদানের ব্যবস্থা করলে ভালো হতো। অন্যদিকে সরকারও এসব দুঃস্থ পরিবারগুলোকে সাহায্য প্রদান করলে রাষ্ট্রের দায়িত্ব পালন করা হতো।
নারায়ণগঞ্জ সাত হত্যার ঘটনা দেশের অন্যতম প্রধান বিভীষিকাময় ও কলঙ্কজনক ঘটনা। নূর হোসেনের সতীর্থরা সারা বাংলাদেশেই ছড়িয়ে আছে। তাদের সন্ত্রাস, ভীতির শিকার অসংখ্য ভুক্তভোগী। সব খবর সব সময় প্রকাশিত হয় না বলে তাদের কুকর্ম, অত্যাচারের খবর অজানা রয়ে যায়। তারা থেকে যায় আইনের আওতার ঊর্ধ্বে। অন্যদিকে তারেক সাইদ, আরিফ হোসেন ও মাসুদ রানার মতো অফিসার যে র্যাবে নেই বা ভবিষ্যতে আসবে না এ কথা নিশ্চিত করে বলা যায় না। সরকারের নজরদারি ও সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোর সতর্কতাই শুধু এ ধরনের বিভীষিকার পুনরাবৃত্তি থেকে জনগণকে রক্ষা করতে পারে।
লেখক : সাংবাদিক
[email protected]
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।