Inqilab Logo

মঙ্গলবার ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ০৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৬ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বেকারের দেশেও প্রয়োজনীয় কাজের লোক নেই

| প্রকাশের সময় : ১৯ জানুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

সরদার সিরাজ : দেশে বর্তমানে তিন কোটির অধিক লোক বেকার। অথচ গত ৭ ও ৮ ডিসেম্বর ’১৬ অনুষ্ঠিত গবেষণা সম্মেলনে বিআইডিএস ডিজি কেএএস মুরশিদ তার গবেষণা রিপোর্টে বলেন, “কৃষি ও খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ খাতে দক্ষতার প্রয়োজন অনুসারে ৭৫% শ্রমিক এবং পোশাক খাতে সব মিলিয়ে ১ লাখ ৭৬ হাজার, পর্যটন সেবায় ২ লাখ ২৫ হাজার, নির্মাণ খাতে ২ লাখ, তথ্য প্রযুক্তি খাতে ৮৮ হাজার, চামড়া শিল্পে ৭৫ হাজার, স্বাস্থসেবায় নার্স ৯৬ হাজার লোক ঘাটতি আছে”। অর্থাৎ কৃষি খাত ছাড়াই বর্ণিত কয়েকটি খাতে মোট ৮ লাখ ৬০ হাজার শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না। কৃষি খাতের সংখ্যা এর চেয়ে কমপক্ষে ৫ গুণ বেশি হবে। অর্থাৎ দেশে প্রায় ৫০ লাখ লোক পাওয়া যাচ্ছে না কাজের জন্য। এর বাইরে আরো বহু খাত আছে, যেখানে কাজ করার মতো লোক পাওয়া যায় না। যার মধ্যে ইলেকট্রনিক্স সংক্রান্ত কাজ বেশি। এমনকি কম্পিউটারে কম্পোজ করার মতোও প্রয়োজনীয় লোক নেই খোদ ঢাকা শহরেই। অন্য শহরে আরো নেই!  তাই সব মিলে কোটির অধিক লোক ঘাটতি রয়েছে বিভিন্ন কাজে।
উক্ত সম্মেলনে বিআইডিএস এর গবেষণা পারিচালক রশিদান ইসলাম রহমান ২০১৩ সালের শ্রমশক্তি জরীপের উদ্ধৃতি দিয়ে তার গবেষণা রির্পোটে বলেন, ‘শ্রমশক্তিতে আছেন কিন্তু কোনো পড়াশোনার সুযোগ পাননি, এমন ব্যক্তিদের মধ্যে প্রায় ৯৭ শতাংশের কোন ধরনের প্রশিক্ষণ নেই। আবার প্রথম শ্রেণি থেকে এসএসসি পাস পর্যন্ত ব্যক্তিদের মধ্যে ৯১ শতাংশও কোন প্রশিক্ষণ পাননি’। অপরদিকে, উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সাবেক তত্ত্বধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ওয়াহিদউদ্দিন  মাহমুদ বলেন, ‘এসডিজি অর্জনে সামাজিক খাতে, বিশেষ করে মানসম্পন্ন শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধি করতে হবে। তা না হলে বিদ্যবান ধনী-গরিবের বৈষম্য আরও বাড়বে’। তিনি আরো বলেন, ‘ঢাকা শহর থেকে দেশের জিডিপির এক তৃতীয়াংশ আসে। আবার বসবাসের দিক দিয়ে ঢাকা পৃথিবীর  অন্যতম অযোগ্য শহর’। জনাব মুরশিদ তার গবেষণায় সুপারিশ করেন, আগামী ৫ বছরে দেশের বিভিন্ন খাতে ৪০ লাখ ও ২০২৫ সালের মধ্যে ৫৬ লাখ শ্রমিককে প্রশিক্ষণ দিতে হবে। অর্থাৎ ৮-৯ বছেরের মধ্যে প্রায় এক কোটি লোককে প্রশিক্ষণ দিতে হবে।  তিনি আরো বলেন, ‘দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তুলতে না পারলে কাক্সিক্ষত প্রবৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হবে।  মানবসম্পদ গড়ে তুলতে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে পারস্পরিক সহযোগিতা দরকার’।
অনুষ্ঠানে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘২০৩৫ সালের মধ্যে চীন হবে এক নম্বর ও ভারত হবে  দুই নম্বর অর্থনীতির দেশ। বাংলাদেশকে বাদ দিয়ে এ দুটি পার্শ্ববর্তী দেশ এগিয়ে যেতে পারবে না।  বাংলাদেশের বিপুল সম্ভাবনা আছে। প্রতিবছর ২১ লাখ তরুণ শ্রমশক্তিতে যুক্ত হচ্ছেন। উন্নত দেশগুলোর জনসংখ্যা দিন দিন কমছে। ওইসব দেশে শ্রমশক্তির চাহিদা বাড়ছে। এজন্য বাংলাদেশে দক্ষ শ্রমশক্তি গড়ে তুলতে হবে।’ অপরদিকে, গত ৩১ অক্টোবর মন্ত্রিসভায় অনুমোদিত হিসাব অনুযায়ী ২০১৬ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত সরকারের বিভিন্ন সেক্টরে শূন্য পদের সংখ্যা ৩,৯,৫৯১টি। ১০ হাজারের বেশি করে শূন্য পদ রয়েছে ৯টি মন্ত্রণালয় বা বিভাগে। উল্লেখ, এর পরবর্তী ৬ মাস তথা ডিসেম্বর, ২০১৬ পর্যন্ত কমপক্ষে আরো ৫০ হাজারের অধিক পদ শূন্য হয়েছে। অর্থাৎ বর্তমানে সরকারি খাতে শূন্য পদের সংখ্যা প্রায় ৫ লাখ। অপরদিকে, দেশে যে শিক্ষিত বেকার রয়েছে, তন্মধ্যে অর্ধেকের বেশ্বি ¯œাতক ও ¯œাতকোত্তর। এমনকি ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, বিবিএ, এমবিএম ইত্যাদিও। যেমন, বৃটিশ সাময়িকি ইকোনমিষ্টের ইন্টেলিজৈন্স ইউনিটের এক বিশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী- ‘বর্তমানে বাংলাদেশে শিক্ষিত বেকারের হার সবচেয়ে বেশি। ¯œাতক তরুণ-তরুণীর ৪৭%-ই বেকার’। বাংলাদেশে পরিসংখ্যান ব্যুরোর মতে  ‘ডাক্তার-প্রকৌশলীর ১৪.২৭%, নারি  ডাক্তার-প্রকৌশলীর ৩১%, উচ্চ মাধ্যমিক ডিগ্রিধারীর ১৩.৭৪% বেকার।  ২০টি সর্বাধিক বেকারেত্বের দেশের  মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১২তম’। আইএলও’র বিশ্ব কর্মসংস্থার ও সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গী, ২০১৫ অনুযায়ী  ‘২০১৪ সালে বাংলাদেশে বেকারত্ব বৃদ্ধি পেয়েছে ৪.৩৩%’। জাতিসংঘ  উন্নয়ন কর্মসূচির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘১৯৯০ হতে ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত ১৫ থেকে ২৪ বছর বয়সী বেকার যুবকের সংখ্যা ছিল ২৯ লাখ। কিন্তু ২০০৫  থেকে ২০১০ সালের মধ্যে  তা প্রায় পাঁচগুণ বেড়ে ১ কোটি ৩২ লাখ  হয়েছে’।  বেকারত্ব বৃৃদ্ধির মূল কারণ- ‘কাক্সিক্ষত হারে বিনিয়োগের অভাব ও চাহিদা মাফিক শিক্ষা পদ্ধতি না হওয়া। অর্থাৎ একদিকে এক কোটির অধিক লোক পাওয়া যাচ্ছে না বিভিন্ন কাজে। আবার যারা কর্মরত আছেন, তারা চাকরি জীবনে কোন প্রশিক্ষণ না পাওয়ায় তাদের আউটপুট নগন্য। অন্যদিকে, সরকারি খাতে নিয়োগদানের অভাবে প্রায় ৫ লাখ পদ শূন্য আছে দীর্ঘদিন যাবত। অর্থাৎ মহা হযবরল অবস্থা চলছে দেশের কর্মক্ষেত্রে। যাকে বলে মিস ম্যানেজমেন্ট। এর ফলে একদিকে দেশের উন্নতি চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে, অন্যদিকে, চাকরি না পেয়ে চরম অসহায়ত্বের জীবন-যাপন করছে বেকাররা। ফলে তাদের অনেকেই বিপথে ধাবিত হচ্ছে।
এই অবস্থা চলতে থাকলে দেশের কল্যাণের স্বার্থেই বিদেশ থেকে দক্ষ আমলা ও মন্ত্রী এনে প্রতিষ্ঠান চালাতে হতে পারে। ইতোমধ্যে বেসরকারি বড় বড় কোম্পানিতে তা শুরু হয়ে গেছে। তারা দেশীয় লোক বাদ দিয়ে ৫ গুণ বেশি বেতন দিয়ে বিদেশি লোক নিয়ে কাজ করছেন। কিন্তু  অত্যধিক বেকারের দেশে এটা কাম্য নয়। তাই দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা অনুযায়ী অফিসার পদায়ন, মন্ত্রী নিয়োগ করা প্রয়োজন। উপরন্তু তাদের কাজের পূর্ণ জবাবদিহিতা কায়েম করা আবশ্যক। তাতে যার ব্যর্থতা পরিলক্ষিত হবে তাকে সোজা বিদায়।
যা’হোক, জনাব মুরশিদের বর্ণনা মোতাবেক যে ৫০ লাখ লোক কাজের জন্য পাওয়া যাচ্ছে না, তার ৮০% লোক- শ্রমিক শ্রেণির। তারা কৃষির কাজ বাদ দিয়ে ঢাকা শহরে এসে সব রাস্তায় অবৈধভাবে দোকান বসিয়ে ব্যবসা করছে, যারা হকার বলে খ্যাত। তাদের সংখ্যা ৮-৯ লাখ। তন্মধ্যে দক্ষিণে ৫-৬ লাখ বলে জাতীয় হকার্স লীগের অভিমত। আরো ২-৩ লাখ  অবৈধভাবে বিভিন্ন যানবাহন চালাচ্ছে। তন্মধ্যে অযান্ত্রিক যানবাহনই বেশি। এছাড়া আরো লক্ষাধিক লোক বিভিন্ন অবৈধ কাজে নিয়োজিত আছে। যার অন্যতম মাদক, চোরাচালান ইত্যাদি। সবমিলে ১৩-১৪ লাখ লোক অবৈধভাবে কাজ করছে ঢাকায়। আর এ কারণেই সমস্ত রাস্তা-ঘাট বন্ধ থাকছে বেশিরভাগ সময়ই। ফলে মানুষ ও যানবাহন কিছুই চলতে পারছে না স্বাভাবিকভাবে। ফলে, মানুষের ব্যাপক ভোগান্তি ছাড়াও আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে বিপুল। যার পরিমাণ বছরে ২০ হাজার কোটি টাকার অধিক।
সম্প্রতি এক গবেষণা রিপোর্টে বলা হয়েছে, যানজটের কারণে ব্যবসায়ীদের ৪০% কর্মসময় নষ্ট হচ্ছে। তদ্রুপ যানবাহনেরও। ফলে প্রবৃদ্ধি কম হচ্ছে বছরে ২-৩%। কিছুদিন আগে এক রিপোর্টে বলা হয়েছে,  ‘ঢাকা শহরের বস্তিবাসীর সংখ্যা ৫৫ লাখ’। রিপোটর্টি সাম্প্রতিক নয়। যা’হোক, এই বস্তিবাসীরা অতি মানবেতর জীবন-যাপন করে। তথা বস্তির বেশিরভাগেই পানি, বিদ্যুত, পয়ঃনিষ্কাশন ইত্যাদি নেই বললেই চলে। আর পরিবেশও খুবই ঘিঞ্জি ও চরম অস্বাস্থ্যকর। এরা যেখানেই সরকারি খালি জায়গা পায়, সেখানেই বস্তি গড়ে তোলে। আবার সংশ্লিষ্ট এলাকার মাস্তানরাও বস্তি তৈরি করে ভাড়া খাটায়। বেসরকারি মালিকদের জায়গায়ও কিছু বস্তি আছে। এই বস্তির লোকদের বেশিরভাগ সন্তানই খুব একটা লেখাপড়া করে না। তারা সারাদিন হৈ-হুল্লুর, মারামারি ও অসামাজিক কাজে লিপ্ত। সর্বোপরি বেশিরভাগ বস্তিতে বিভিন্ন অবৈধ কাজ-কর্মও চলে।
উল্লেখ্য, এই বস্তিবাসীদের জন্য প্রয়োজনীয় হাট-বাজার ও যোগাযোগের জন্যও অতিরিক্ত যানবাহন লাগে। তাতেও লক্ষাধিক মানুষ সংশ্লিষ্ট। ঢাকা শহরের লোকসংখ্যা ধারণ ক্ষমতার অতিরিক্ত হওয়ার প্রধান কারণ অবৈধকাজে কর্মরত মানুষ ও তাদের পরিবার-পরিজনের বসবাস। আর এভাবেই ঢাকা শহর বসবাসের জন্য বিশ্বের মধ্যে অন্যতম অনুপযোগী হয়ে পড়েছে !
ঢাকার এ অবস্থা নতুন নয়। দীর্ঘদিন যাবত চলছে। তাই ঢাকাকে বাসোপযোগী করার জন্য প্রবল দাবি চলছে দীর্ঘদিন ধরেই এবং তা বিভিন্ন পর্যায় থেকেই। সকলেরই প্রধান দাবি- রাস্তা দখলমুক্ত করা। তাই নির্বাচনকালে প্রার্থীরা যে প্রতিশ্রুতি দেন, তারও অন্যতম হচ্ছে ‘রাস্তা দখলমুক্ত করা’। এবারও ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনকালে সকল কমিশনার প্রার্থীর অন্যতম প্রতিশ্রুতি ছিল ‘ঢাকাকে যানজটমুক্ত করা’। এমনকি মেয়র প্রার্থীগণও এই প্রতিশ্রুতিই দিয়েছিলেন। তাই দক্ষিণের মেয়র প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী হকার ও যানবাহনের অবৈধ স্ট্যান্ড উচ্ছেদের উদ্যোগও নিয়েছেন। কিন্তু হকার উচ্ছেদ করতে গিয়ে গুলিস্তানে রীতিমত সশস্ত্রযুদ্ধ হয়েছে, যার সচিত্র প্রতিবেদন সব মিডিয়াতেই ফলাও করে প্রচারিত হয়েছে। এর আগেও এরূপ হকার-পুলিশ লুকোচুরি হয়েছে মাঝে-মধ্যে এবং তা দীর্ঘদিন ধরেই। যা’হোক, প্রায় একই সময়ে পুরান ঢাকায় এক অবৈধ যানবাহনের স্ট্যান্ড উচ্ছেদের সময়ও খ- যুদ্ধ হয়েছে। অবৈধ বিলবোর্ড উচ্ছেদও তেমন সফল হয়নি। তেমনি পরিচ্ছন্নতার বিষয়টিও। এমনকি বাসা-বাড়ির ময়লাও ঠিকমতো নিয়ে যায় না কর্পোরেশন কর্তৃক অনুমোদিত ক্লিনাররা। আর সমগ্র রাস্তায় যে অবৈধভাবে গাড়ি রাখা হয়, তা বন্ধ করার তো কোন পদক্ষেপই নেয়া হয়নি (হয়তো গাড়িগুলো ধনীদের তাই?)।
উল্লেখ্য, উত্তরের মেয়র তেজগাঁও থেকে অবৈধ ট্রাক স্ট্যান্ড উচ্ছেদ করেছেন। সে সময় ছোটখাট যুদ্ধও হয়েছিল। কিন্তু তাতে তিনি পিছপা না হয়ে সাহসের সাথে পরিস্থিতি মোকাবেলা করে উচ্ছেদকর্ম সম্পন্ন করেছেন। ফলে উক্ত এলাকা যানজটমুক্ত ও বিভিন্ন অপকর্ম বন্ধ হয়েছে। তেমনি অনেক অবৈধ বিলবোর্ডও সরিয়েছেন। বিভিন্নস্থান হকারমুক্তও করেছেন।
নায়ারণগঞ্জের মেয়রও শপথ নিয়ে ঘোষণা করেছের, ‘কোন টেন্ডারবাজী ও দখলবাজী করতে দেয়া হবে না’। এই অবস্থায় ঢাকা দক্ষিণের মেয়র সাহস করে উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। তিনি হকার নেতাদের সাথে এক বৈঠকে বলেছেন, ‘গুলিস্তান ও আশপাশের এলাকার রাস্তা ও ফুটপাতে ১৫ জানুয়ারি থেকে কর্মদিবসে সন্ধ্যা সাড়ে ৬ টার আগে কোনো হকার বসতে দেয়া হবে না।’ এরপর পর্যায়ক্রমে সমস্ত এলাকা অবৈধ হকারমুক্ত করা হবে। হকার নেতারা বলেছেন, আগে পুনর্বাসন পরে উচ্ছেদ করতে হবে। কিন্তু মেয়র সাহেব তাতে সম্মত হননি। স্বীয় সিদ্ধান্তেই অনঢ় থেকেছেন। অবশ্য তিনি উক্ত সভায় এবারও অবৈধ যানবাহন চলাচল ও তা পার্কিং এবং অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের কথা বলেননি। তাহলে সেসব কি বহাল থাকবে? কিন্তু  শুধুমাত্র হকার উচ্ছেদ করলেই ঢাকার যানজটমুক্ত হবে না। কারণ ভয়াবহ যানজটের জন্য অবৈধ হকার, যানবাহন, গাড়ি পার্কিং ও বিভিন্ন স্থাপনা প্রত্যেইটিই সমান দায়ী। তাই এসব উচ্ছেদ না করে শুধুমাত্র হকার উচ্ছেদ করলে কাক্সিক্ষত সুফল পাওয়া যাবে না তা নিশ্চিত। উপরন্তু শ্রেণি বৈষম্যের প্রশ্নও উঠবে।
উল্লেখ্য, ঢাকা থেকে শুধুমাত্র অবৈধ দোকান-পাট আর যানবাহন বন্ধ করতে পারলেই কমপক্ষে এক কোটির মতো মানুষ বাধ্য হয়ে আউট হয়ে যাবে। ঢাকায় মানুষের আধিক্য হ্রাস পাবে, পরিবেশ উন্নত হবে এবং মানুষ ও যানবাহনের চলাচলের স্বাভাবিক অবস্থা সৃষ্টি হবে। উন্নতি বৃদ্ধি পাবে। উপরন্তু নতুন করে অবৈধ কাজের জন্য নতুন করে লোকের আসাও বন্ধ হয়ে যাবে। এই একই অবস্থা অন্য সব শহরেও হবে। ফলে এই লোকগুলো বাধ্য হয়েই গ্রামে ফিরে যাবে এবং প্রথমে বর্ণিত যেসব কর্মে কাজের লোক পাওয়া যাচ্ছে না, সেখানে নিয়োজিত হবে জীবিকার স্বার্থেই। বিশেষ করে কৃষি কাজে। দেশে এখন কৃষি কাজের অভাব নেই। এছাড়া পশু, মাছ ও হাঁস-মুরগীর খামার এবং ধান-চালের বয়লার গড়ে উঠেছে লাখ লাখ। দিনমজুরদের মজুরিও আগের চেয়ে কয়েকগুণ বেড়েছে। সর্বোপরি, তাদের মধ্যে অন্তত ৯০% লোকের বাড়ি-ঘর ও কিছু জমি আছে (বাকি ১০% নদী ভাঙনে গৃহ ও ভূমিহীন হয়ে পড়েছে)।
স্মরণীয় যে, মানুষ উন্নতর জীবন-যাপনের আকাক্সক্ষী। এটা তার অধিকারও। তাই গ্রামাঞ্চলে প্রয়োজনীয় উন্নতর শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, বিদ্যুত ও বিনোদনের ব্যবস্থা করতে হবে। আর সব কিছু ঢাকা কেন্দ্রিক করার প্রবণতা বন্ধ করে উৎপাদনশীল সব কর্ম দেশের সমগ্র এলাকায়, বিশেষ করে অনুন্নত এলাকায় এবং বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি সদর দপ্তর (যেগুলোর বিকল্প নেই সেগুলো ছাড়া) দেশের বিভাগীয় শহরে স্থানান্তর করতে হবে। তাহলেই মানুষের শহরমুখী হওয়ার প্রবণতা বন্ধ হয়ে যাবে। মানুষের কর্মবণ্টনেও ভারসাম্য আসবে। কমবে বেকারের সংখ্যাও।
য় লেখক : সাংবাদিক ও কলামিস্ট
ংধৎফধৎংরৎধল১৯৫৫@মসধরষ.পড়স



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ