দেশে দেশে রোজার উৎসব
মাহে রমজান আরবী নবম মাসের নাম। চাঁদের আবর্তন দ্বারা যে এক বৎসর গণনা করা হয়,
১। মোহাম্মদ হাছানুল বারী ফেরদাউস, রামপুরা, ঢাকা।
জিজ্ঞাসা : পবিত্র মদিনার হারম সম্পর্কে আলোকপাত করুন?
জবাব : বিশ্বের বুকে মুসলমানের অতি পবিত্র নগরী হচ্ছে মদিনা মুনাওয়ারা। পবিত্র মক্কা নগরীর যেমনি হারম বা সীমানা রয়েছে তেমনি পবিত্র মদিনার হারম বা সীমানা রয়েছে।
এ প্রসঙ্গে হারম বা হারমের কার্যকারিতা নিয়ে মতভেদ রয়েছে ইমামগণের মধ্যে। ইমাম মালেক, ইমাম শাফেঈ ও ইমাম আহমদের মতে পবিত্র মদিনার হারম অর্থে পবিত্র মক্কার হুবহু অর্থ বুঝাবে। যেমনÑ যুদ্ধ করা, গাছকাটা, শিকার করা নিষেধ। পবিত্র মক্কার হারমের মতো পবিত্র মদিনার হারমেও কার্যকর থাকবে। কিন্তু ইমাম আবু হানিফা (র.)-এর মতে, পবিত্র মক্কার মতো সম্মানের দিক দিয়ে পবিত্র মদিনা কোনো অংশে কম থাকবে না। তবে পবিত্র মদিনায় গাছকাটা, শিকার করা নিষিদ্ধ নয়। অপরদিকে উপমহাদেশের বিখ্যাত সর্বজনশ্রদ্ধেয় মনীষী হযরত আবদুল হক মুহাদ্দিস দেহলভী (র.)-এর মতে, উম্মতে মুহাম্মদির কাছে পবিত্র মক্কা ও পবিত্র মদিনা নগরী অতি পবিত্রতম। অতঃপর জেরুজালেম নগরী। কিন্তু পবিত্র মক্কা নগরীর চেয়ে পবিত্র মদিনা নগরী মর্যাদাবান। পবিত্র মদিনার চেয়ে খানায়ে কাবা মর্যাদাবান। খানায়ে কাবার চেয়ে রওজাপাক মর্যাদাবান। তার মূলে দোজাহানের সর্দার আল্লাহপাকের প্রিয় হাবীবকে পবিত্র মদিনার মাটি বুকে ধারণ করে রেখেছে। হযরত আলী (রা.) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন : পবিত্র মদিনার হারম (সম্মানিত) আইর হতে ছাওর পর্যন্ত। যে তাতে অসৎ প্রথা সৃষ্টি করবে বা অসৎ প্রথা সৃষ্টিকারীকে আশ্রয় দেবে তার ওপর আল্লাহর ফেরেশতাগণ ও মানুষ সকলের অভিশাপসহ তার ফরজ বা নফল কিছুই কবুল করা হবে না। হযরত সাদ ইবনে আবি ওয়াক্কাস (রা.) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন : আমি পবিত্র মদিনা দু’প্রান্তের মধ্যবর্তী স্থানকে হারম করছি। তার মধ্যে বৃক্ষ কাটা যাবে না এবং শিকার করা চলবে না। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, পবিত্র মদিনা তাদের জন্য কল্যাণকর যদি তারা বুঝত, যে ব্যক্তি অনাগ্রহে পবিত্র মদিনা ছেড়ে যাবে তার পরিবর্তে আল্লাহ তার অপেক্ষাও উত্তম ব্যক্তিকে তথায় স্থান দেবে এবং যে এর অনটন ও দুঃখ-কষ্টে ধৈর্যের সাথে টিকে থাকবে কিয়ামতে আমি তার জন্য সুপারিশকারী হব। হযরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যখন লোক (সাহাবা) প্রথম ফল লাভ করতেন তখন তা নবী করীম (সা.)-এর নিকট নিয়ে আসতেন তখন তিনি তা গ্রহণ করে বলতেন, আল্লাহ আমাদের ফল-শস্যে বরকত দাও। আমাদের এ শহরে বরকত দাও আমাদের পরিমাণে ও পরিমাপে বরকত দাও। হে আল্লাহ! ইব্রাহীম (আ.) তোমার বান্দা, তোমার দোস্ত ও তোমার নবী এবং আমিও তোমার বান্দা ও নবী। তিনি তোমার নিকট পবিত্র মক্কার জন্য দোয়া করেছেন আর আমিও তোমার নিকট পবিত্র মদিনার জন্য দোআ করছিÑ যেরূপ দোয়া তিনি তোমার নিকট মক্কার জন্য করেছেন। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সা.) নিজ পরিবারের সর্বকনিষ্ঠ ছেলেকে ডাকতেন এবং তাকে ওই ফল দান করতেন। হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রা.) রাসূলুল্লাহ (সা.) হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেছেন, ইব্রাহীম (আ.) পবিত্র মক্কাকে সম্মানিত করে তাকে হারম করেছেন। আমি পবিত্র মদিনাকে এবং দু’প্রান্তের মধ্যবর্তী স্থানকে সম্মানিত (হারম) করলাম যথাযোগ্য সম্মানে। তাতে রক্তপাত চলবে না, যুদ্ধের জন্য অস্ত্র গ্রহণ করা যাবে না এবং পশুর খাদ্য ব্যতীত তাতে কোনো গাছের পাতা কাটা যাবে না। হযরত আয়েশা (রা.) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) পবিত্র মদিনায় আগমন করলেন। আমার পিতা আবু বকর (রা.) ও মুয়াজ্জিন বেলাল (রা.) ভীষণ জ্বরে আক্রান্ত হলেন। আমি গিয়ে তাঁকে এ খবর দিলে তিনি বললেন, আল্লাহ তুমি আমাদের জন্য পবিত্র মদিনাকে প্রিয় কর যেভাবে পবিত্র মক্কা আমাদের নিকট প্রিয় অথবা তা অপেক্ষাও অধিক। আল্লাহ তাকে আমাদের পক্ষে স্বাস্থ্যকর কর, আমাদের পরিমাণ ও পরিমাপের বরকত দাও। হযরত সুফিয়ান বিন আবু জুহাইর (রা.) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি : ইয়েমেন বিজিত হবে এবং তথায় পবিত্র মদিনা থেকে কতক লোক চলে যাবে এবং সাথে তাদের পরিবার ও অনুগামীদেরকেও নিয়ে যাবে। অথচ পবিত্র মদিনা হচ্ছে তাদের জন্য উত্তম যদি তারা বুঝত। এভাবে শাম বিজিত হবে এবং তথায় কিছু লোক চলে যাবে এবং তাদের পরিবার ও অনুগামীদেরকেও সাথে নিয়ে যাবে। অথচ পবিত্র মদিনা হচ্ছে তাদের জন্য উত্তম যদি তারা বুঝত। অনুরূপ ইরাক বিজিত হবে এবং তথায় একদল চলে যাবে এবং সাথে আপন পরিবার ও অনুগামীদেরও নিয়ে যাবে অথচ পবিত্র মদিনা হচ্ছে তাদের জন্য উত্তম যদি তারা বুঝত। হযরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, কিয়ামত কায়িম হবে না যাবৎ পবিত্র মদিনা-এর মন্দ লোকদেরকে দূর করে দেবে, যেভাবে দূর করে দেয় হাপর লোহার খাদকে। হযরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, মদিনার দ্বারসমূহে ফেরেশতাগণ পাহারায় আছেন সুতরাং যাতে প্রবেশ করতে পারবে না মহামারী ও দজ্জাল। হযরত সাদ (রা.) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে কেউ না পবিত্র মদিনাবাসীর সাথে প্রতারণা করবে সে গলে যাবে, যেভাবে লবণ পানিতে গলে যায়।
হযরত আনাস (রা.) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, তিনি এই দোয়া করেছেন, আল্লাহ পবিত্র মক্কায় তুমি যাহা বরকত দান করেছ পবিত্র মদিনায় তার দ্বিগুণ বরকত দান কর। তাবিঈ হযরত ইয়াহইয়া (রা.) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, আল্লাহর জমিনে এমন কোনো স্থান নেই, যাতে আমার কবর হওয়া মদিনা অপেক্ষা আমার নিকট প্রিয়তর হতে পারে। এই কথা তিনি তিনবার বললেন। বহু হাদিস শরিফ থেকে মাত্র কয়েকটি হাদিস শরিফ সম্মানিত পাঠক মহলে পেশ করলাম, এতে শুধু পবিত্র মদিনার সম্পর্কে হাদিস শরিফ। নবী করিম (সা.)-এর জিয়ারতের সম্পর্কে হাদিস শরিফ এখানে পেশ করা হয়নি। পবিত্র মদিনার সাবেক নাম ইয়ামসরিব। অর্থ তিরস্কার। নবী করীম (সা.) এর নামকরণ করেন (পবিত্র) মদিনা। পবিত্র মক্কা নগরী নবী করীম (সা.)-এর জন্মস্থান। প্রায় প্রত্যেক নবী, রাসূল তথায় এসেছেন, হজ করেছেন, দোয়া করেছেন, তবে নবী করীম (সা.) পবিত্র মক্কার প্রতি ভালোবাসার কোনো কমতি ছিল বলা যাবে না।
উত্তর দিচ্ছেন : আহমদুল ইসলাম চৌধুরী
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।