পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ইনকিলাব ডেস্ক : বাংলাদেশের দু’টি শীর্ষস্থানীয় পত্রিকা ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনাম ও প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে সব ফৌজদারি (ক্রিমিনাল) অভিযোগ প্রত্যাহার করার জন্য বাংলাদেশ সরকারকে আহ্বান জানিয়েছে নিউ ইয়র্কভিত্তিক মানবাধিকার বিষয়ক সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ। একই সঙ্গে মানহানি ও রাষ্ট্রদ্রোহের আইন আন্তর্জাতিক মানদ- লঙ্ঘন করে বলে তা বাতিল করা উচিত বলেও মন্তব্য করেছেন। গত শনিবার নিজস্ব ওয়েবসাইটে প্রকাশিত ‘বাংলাদেশ : চার্জিং এডিটরস ইজ ড্রামাটিক ব্যাকসাইড’ (অর্থাৎ সম্পাদকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ নাটকীয়ভাবে পশ্চাৎধাবন) শীর্ষক প্রতিবেদনে এসব কথা বলা হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশের শীর্ষস্থানীয় পত্রিকার সম্পাদকদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি অভিযোগ থেকে পরিষ্কার যে, এর উদ্দেশ্য হলো দেশের সব মিডিয়াকে ভীতি প্রদর্শন করা। সরকারকে প্রেসের স্বাধীনতা রক্ষা করতে হবে। তা নাহলে বাংলাদেশ কর্তৃত্বপরায়ণ একটি রাষ্ট্রে পরিণত হবে। এতে দৈনিক আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে বিচারহীন অবস্থায় ২০১৩ সাল থেকে জেলে আটকে রাখার প্রসঙ্গও তুলে ধরা হয়েছে। দীর্ঘ ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০ ফেব্রুয়ারি এই প্রতিবেদন লেখার সময় পর্যন্ত ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনাম মোট ৫৪টি মানহানি ও ১৫টি রাষ্ট্রদ্রোহের মামলার মুখোমুখি। কয়েক বছর আগে সেনা সূত্র থেকে দুর্নীতি সংক্রান্ত পাওয়া রিপোর্ট প্রকাশের কারণে এসব মামলা হয়েছে।
একজন আইনজীবীর করা মামলায় এ বছরের ১৬ ই ফেব্রুয়ারি নারায়ণগঞ্জের একটি আদালত তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে ৫৫টি মামলা হয়েছে। মামলা রয়েছে পত্রিকাটি ও এর কিছু সাংবাদিকের বিরুদ্ধেও। এগুলো মানহানি ও ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করার অভিযোগে করা মামলা। প্রতিটি মানহানি মামলায় শাস্তি হিসেবে দুই বছরের জেল হতে পারে। রাষ্ট্রদ্রোহের মামলায় তিন বছরের জেল হতে পারে।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশিয়া বিষয়ক পরিচালক ব্রাড এডামস বলেন, বাংলাদেশের শীর্ষ স্থানীয় পত্রিকার সম্পাদকদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি অভিযোগ আনার মধ্যদিয়ে পরিষ্কার যে, দেশের সব মিডিয়াকে ভীতি প্রদর্শন করাই উদ্দেশ্য। বাংলাদেশে এখন পার্লামেন্টের বেশির ভাগ আসন নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে এমন সরকার ক্ষমতায়। তাদের এবং জাতীয় নির্বাহী সব কর্তৃপক্ষের উচিত মিডিয়ার স্বাধীনতা রক্ষা করা। তা না হলে বাংলাদেশ পরিণত হবে একটি কর্তৃত্বপরায়ণ রাষ্ট্রে।
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, বাংলাদেশের নিরপেক্ষ মিডিয়ার বিরুদ্ধে এমন মামলা কয়েক বছর ধরেই একটি সংগঠিত প্রচেষ্টা। বাংলাদেশী কর্তৃপক্ষ সমালোচনা করে এমন মিডিয়া হাউজ বন্ধ করে দিয়েছে। সম্পাদকদের জেলে দিয়েছে। ব্লগারদের বিচার করেছে। সরকারের পক্ষে যায় না এমন রিপোর্টের কারণে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ আনা হয়েছে। ২০১৩ সাল থেকে বিচার ছাড়াই আটকে রাখা হয়েছে দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে। তার বিরুদ্ধে আনা হয়েছে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগ ও টেলিফোন সংলাপ প্রকাশ করার। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলছে, এর আগে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে সেনাবাহিনী ও বাংলাদেশের একটি অংশ আওয়ামী লীগ প্রধান ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের প্রধান, সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে রাজনীতি থেকে সরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করেছিল। তারা এ দু’জনের বিরুদ্ধেই দুর্নীতির অভিযোগ আনে।
মামলা প্রত্যাহারে প্রধানমন্ত্রীকে এএনএন’র চিঠি
বাংলাদেশী ইংরেজি দৈনিক দ্য ডেইলি স্টারের সম্পাদক ও প্রকাশক মাহফুজ আনামের বিরুদ্ধে করা সকল মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন দ্য এশিয়া নিউজ নেটওয়ার্ক (এএনএন)। এএনএন’র সদস্যভুক্ত সম্পাদকরা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে উদ্বেগ প্রকাশ করে একটি চিঠিতে তার বিরুদ্ধে করা সকল মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন। ডেইলি স্টারের সম্পাদকের বিরুদ্ধে মামলা বাংলাদেশের গণমাধ্যমের জন্য হয়রানি ও ভীতিপ্রদর্শন বলেও মনে করে এএনএন।
বাংলাদেশের ডেইলি স্টারসহ এশিয়ার ১৯টি দেশের ২২টি মিডিয়ার একটি সংগঠন এএনএন। মাহফুজ আনাম এই সংগঠনের নির্বাহী বোর্ডের সদস্য।
আনামের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের দক্ষিণ এশিয়ার দেশ বাংলাদেশের গণমাধ্যমে হয়রানি ও ভীতি প্রদর্শন করা হচ্ছে বলে মনে করে এএনএন। এটি বাংলাদেশের গণমাধ্যমকে হুমকি ও চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি করবে। মাহফুজ আনামের কর্মকা- বিগত দিনগুলোতে এই সংগঠনের অন্য সদস্যদের উৎসাহিত করে সাংবাদিকতায় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে বলেও চিঠিতে বলা হয়।
একই সঙ্গে এই সম্পাদকীয় জোটকে ১৭ বছর ধরে সহায়তা করছেন আনাম। কিছু প্রকাশিত প্রতিবেদনের জন্য তিনি বিরলভাবে নিজের ভুল স্বীকার করেছেন। ২০০৭ সালে টাস্কফোর্স ইনটেরোগেশন সেল (টিএফআইসি) এর কিছু প্রতিবেদন যাচাই না করেই তিনি ডেইলি স্টারে প্রকাশ করেছিলেন তিনি। ওই সংস্থার দেওয়া ভুল তথ্য ছাপানো ভুল সিদ্ধান্ত ছিল বলে তিনি স্বীকার করেন। তার জন্যেই আনামের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
উপরোক্ত কারণেই মাহফুজ আনামের বিরুদ্ধে ৭৫টি মামলা দায়ের করা হয়েছে চিঠিতে সম্পাদকরা উল্লেখ করেছেন। রাজনৈতিক আক্রোশের কারণেই তার বিরুদ্ধে এই ধরনের মামলা দায়ের করা রাষ্ট্রের জন্য মঙ্গলজনক নয়। ৩ ফেব্রুয়ারি একটি টেলিভিশন টক শোতে মাহফুজ আনাম টিএফআইসি’র কিছু প্রতিবেদন যথাযথ যাচাই বাছাই না করে প্রকাশ করেন বলে স্বীকার করেন। তার পরেই তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করতে শুরু করে।
১৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তার বিরুদ্ধে ৫০ জেলায় ৭৫টি মামলা করা হয়। এর মধ্যে ১৭টি রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগ করা হয়েছে। আর বাকিগুলো মানহানির মামলা। ১৬ ফেব্রুয়ারি একটি আদালত তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে। তবে তার একদিন পরেই তা সমন বলে ব্যাখ্যা করা হয়। ২৮ মার্চের আগেই তার জবাব দিতে বলা হয়েছে মামলাগুলোতে। সূত্র: দ্য স্টার অনলাইন মালয়েশিয়া ও ওয়েবসাইট।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।