মটর সাইকেল: নিউ নরমাল পরিস্থিতিতে (নতুন বাস্তবতায়)
মটরসাইকেল নিরাপদ, অধিক সুবিধাজনক, খরচ এবং সময় বাঁচায়। গণপরিবহনে একে অন্যের গা ঘেঁষে চলাচলে প্রতিদিন
খন্দকার মারছুছ : বিবাহ বিচ্ছেদ, একটা দুঃসংবাদ যা কারই কাম্য নয়। শীত আসলেই বিয়ের হিড়িক পড়ে যায়। প্রতিদিন ফেসবুকে রং-বেরংয়ের বিয়ের ছবি কিংবা হানিমুনের ছবি। দীর্ঘ প্রতিক্ষার পর বিয়ে, সুখের খবরই বটে। কিন্তু মুদ্রার অপরপিঠের খবরগুলো কিন্তু ফেসবুকে খবু একটা আসে না। যে ঝড় বয়ে যায় শুধু দুই পরিবারের মাঝে।
অতি সাম্প্রতিক কিছু ঘটনা ও সিটি কর্পোরেশন জরিপ ভয়াবহ ফল দিয়েছে।
সিটি কর্পোরেশনের জরিপ অনুসারে শুধু ঢাকাতেই গত ২০১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত ডিভোর্স হয়েছে ২২ হাজার ৪৮৮টি। ২০১৩ সালে ডিভোর্সের ঘটনা ছিল ৮ হাজার ২১৪টি, ২০১২ সালে ৭ হাজার ৬৭২টি। ২০১১ সালে মাত্র ৫ হাজার ৩২২টি। আর এসবের মধ্যে ৭৫ থেকে প্রায় ৮০ শতাংশ ডিভোর্স দিয়েছেন নারীরাই।
হানিমুনের দিনগুলোতে বিষয়গুলো বোঝা না গেলেও খুব শীঘ্রই বিষয়গুলো বড় এক কালবৈশাখীর কারণ হয়ে থাকে। কারণগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় কারণ ফেসবুক, সন্দেহ, ওপেন ফ্রেন্ডশিপ, লোভ ইত্যাদি। কিছু বিষয় খেয়াল করলে অনাকাক্সিক্ষত দুর্ঘটনা এড়ানো সম্ভব।
১. ফেসবুক : ধরা যাক দুইটা নাইট ক্লাব। একটাতে আপনি যান একা একা আর একটাতে আপনার ওয়াইফও একা একা যান। যে ক্লাবে ছেলেমেয়ে উভয়ই আছে। তবে অবশ্যই খারাপ কিছু হওয়ার আশঙ্কা অনেক বেশি। অন্যদিকে একটা নাইট ক্লাব। হাজবেন্ড ওয়াইফ দুজনেই একসাথে যান। সেখানে খারাপির আশঙ্কা কিছুটা হলেও কম।
এটা হলো দুইজনের ফেসবুকের উদাহরণ। পাসওয়ার্ড প্রটেকটেড নাইট ক্লাব।
ক) সবচেয়ে ভালো হয় বিয়ের পর পর যেকোন একজনের ফেসবুক ডিলিট করে দিয়ে দুইজনেই যেকোন একটা ফেসবুক ব্যবহার করা। যদি দুজনে মিলে হাজবেন্ডেরটা ইউজ করা হয় তবে ওয়াইফের আত্মীয়-স্বজনদের হাজবেন্ডের ফ্রেন্ড লিস্টে এড করে দিলেই হলো। একটা বিষয় খেয়াল রাখা চাই বন্ধু-বান্ধবের থেকে যদি হাজবেন্ড-ওয়াইফের গুরুত্ব বেশি না হয় সেই ফ্যামিলিতে শান্তি আসতে পারে না।
খ) প্রথমটা যদি সম্ভব না হয় তবে ফেসবুক পাসওয়ার্ড দুইজনে শেয়ার করে ব্যবহার করা চাই। এবং মেন্টালিটি এমন হওয়া চাই আমার কোনো মেসেজ এলে রিপ্লাই দিয়ে দিও টাইপের।
গ) আপনার ফেসবুক জীবনে অনেক ঘটনা থাকতেই পারে। বিষয়গুলো জানতে চাইলে ট্রান্সপারেন্টলি শেয়ার করুন। কিন্তু কারও অতীত নিয়ে কেউই ঘাঁটাঘাঁটি করবেন না। একটা ডায়লগ থাকা চাই “তুমি না থাকাতেই আমার এই অতীত, তুমি আরও আগে এলে এই অতীত হতো না”।
ঘ) ফেসবুক হিস্টোরি যদি বেশি খারাপ হয় তবে বিয়ের আগেই পুরাতন ফেসবুক ডিলিট করে দিয়ে নতুন একটা ওপেন করুন। আপনার ৫০০০ ফ্রেন্ড থেকে যদি আপনার ওয়াইফকে বেশি কাছের মনে না করেন তবে সেই ফ্যামিলিতে সুখ আসতে পারে না।
তবে কখনই দুটো ফেসবুক একটা গোপনে এবং একটা ওপেনে ব্যবহার করবেন না। এইটা আরও ভয়ানক।
২. প্রথম প্রথম ইন্টারকোর্সের বিষয়গুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ থাকে। প্রথম প্রথম বিভিন্ন সমস্যা হতে পারে। সময়ের সাথে এগুলো ঠিক হয়ে যাবে। এইসব বিষয়ে প্রফেশনাল ডাক্তারদের পরামর্শের থেকে আপনার ক্লোজ বিবাহিত ফ্রেন্ড বা পরিচিত ডাক্তার ফ্রেন্ডদের সাথে শেয়ার করতে পারেন। পর্ন থেকে অর্জিত জ্ঞানের সাথে বাস্তবতার কোনো মিল নেই।
৩. ওপেন ফ্রেন্ডশিপ থেকে সরে আসুন। বিয়ের আগে ছেলেমেয়ে বিভিন্ন ধরনের ফ্রেন্ড থাকলেও বিয়ের পর যথাসম্ভব কমিয়ে ফেলুন। শুধুমাত্র জরুরি প্রয়োজন ছাড়া হাজবেন্ডের জন্য মেয়ে ফ্রেন্ড এবং ওয়াইফের জন্য ছেলে ফ্রেন্ড থেকে যথা সম্ভব দূরে থাকার চেষ্টা করুন। কারণ কোনো হাজবেন্ডই চায় না তার ওয়াইফ ছেলে ফ্রেন্ডদের সাথে অবাধে মেলামেশা করুক। ঠিক বিপরীতটাও ঘটে থাকে।
৪. সন্দেহ : সবচেয়ে বড় কারণ। ফ্যামিলিতে একবার সন্দেহ ভর করলে সেই ফ্যামিলি টিকা কঠিন। যে বিষয়গুলো সন্দেহের কারণ হতে পারে সেই বিষয়গুলো আগেই শেয়ার করুন। কখনও কোনো প্রবলেম দেখা দিলে শেয়ার করুন। যার ভুল সে অকপটে তা স্বীকার করার অভ্যাস তৈরি করুন। মনে সন্দেহ রাখা সবচেয়ে বড় খারাপ অভ্যাস।
৫. যত দ্রুত সম্ভব বাচ্চা নিয়ে নেন। ক্যারিয়ার বাচ্চা নিয়েও গড়া যায়। কারণ হাজবেন্ড-ওয়াইফের মূল বন্ধন তৈরি হয় বাচ্চার মাধ্যমে। অন্যদিকে সবকিছুর সাইড ইফেক্ট আছে। প্রথম বাচ্চা হওয়ার আগে যথাসম্ভব পিল খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। টিভির বিজ্ঞাপন দেখে জ্ঞান লাভের চিন্তা না করাই ভালো। ক্যারিয়ার ক্যারিয়ার করছেন? ৩-৪ বছর পর এমন হল আপনার আর বাচ্চাই হলো না। তবে আপনার ক্যারিয়ার, টাকা-পয়সার মূল্য কোথায়?
৬. যারা কম্বাইন্ড ফ্যামিলিতে থাকেন। অর্থাৎ বাবা-মা, হাজবেন্ড-ওয়াইফ একসাথে। এক্ষেত্রে হাজবেন্ডের বড় ভূমিকা দরকার। দুইটা অধিকার, মা ও ওয়াইফ। দুইটাকেই সমান এবং স্ট্রিকলি দেখতে হবে। মায়ের জন্য ওয়াইফের অধিকার কিংবা ওয়াইফের জন্য মায়ের অধিকার নেগলেট করা চলবে না।
সাংসারিক কাজ যদি করতে হয় তবে ভাগ করে নিন। ওয়াইফ যদি দুপুরে রান্না করে তবে মা করতে পারেন রাতে। কিন্তু দুজনে মিলে রান্না না করাই ভালো। কারণ আলাদাভাবে করলে প্রত্যেকেই স্বাধীনভাবে নিজের মনে করে কাজগুলো করতে পারবে।
৭. মোবাইল ব্যবহারেও ট্রান্সপারেন্ট থাকতে হবে। বাসায় থাকা অবস্থায় মোবাইল পকেটে না রাখা। কমন প্লেসে মোবাইল রাখা। এবং মেন্টালিটি এরকম রাখা কেউ ফোন করলে রিসিভ করে বলে দিও, আমি ওয়াশরুমে আছি কিংবা ব্যস্ত। এগুলোর দ্বারা ফ্যমিলিতে ট্রান্সপারেন্সি ও পরস্পর নির্ভরশীলতা বাড়বে।
৮. রাগকে নিয়ন্ত্রণ করা। কোনো একজন কোনো কারণে রেগে গেলে ওইসময় আর একজন একটু নরম হয়ে গেলেই অনেক বড় সমস্যা থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। কখনই দুজন একসাথে মাথা গরম করা ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
৯. শেষ পর্যন্ত যদি এমন হয় যে, একসাথে থাকা আর সম্ভব নয়। তবে নিজেরা কোনো ডিসিশন না নেওয়া। বরং ফ্যামিলির এমন কারও সাথে বিষয়গুলো শেয়ার করা যাতে সে একটা ভালো পরামর্শ দিতে পারে।
প্রযুক্তির উন্নয়নের জোয়ার, যাতে পারিবারিক জীবনে বাধা হয়ে না দাঁড়ায় বরং বিবাহ বিচ্ছেদ জিরো’র কোটায় নেমে আসুক এইটাই প্রত্যাশা।
য় লেখক : ম্যানেজিং ডিরেক্টর, রিলায়েন্স হাই টেক লি.
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।