মটর সাইকেল: নিউ নরমাল পরিস্থিতিতে (নতুন বাস্তবতায়)
মটরসাইকেল নিরাপদ, অধিক সুবিধাজনক, খরচ এবং সময় বাঁচায়। গণপরিবহনে একে অন্যের গা ঘেঁষে চলাচলে প্রতিদিন
ইফতেখার আহমেদ টিপু : দেশে অগ্নিকান্ডের ঘটনা আশঙ্কাজনকহারে বেড়ে চলেছে। বাড়ছে জীবনহানি ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণও। বেশির ভাগ অগ্নিকা- ঘটছে বৈদ্যুতিক ত্রুটির কারণে। ত্রুটিপূর্ণ বৈদ্যুতিক উপকরণ ব্যবহার এবং রক্ষণাবেক্ষণে অবহেলা বিপর্যয় ডেকে আনছে।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের পরিসংখ্যান অনুযায়ী প্রতিবছর গড়ে অন্তত ১৬ হাজার অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটছে। গত ৮ বছরে সারা দেশে ১ লাখ ৩০ হাজার ২১৫টি অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। এতে নিহত হয়েছেন ১ হাজার ৯২৮ জন। আহত হয়েছেন ১২ হাজার ৮২৫ জন। ক্ষতির পরিমাণ সোয়া ৪ হাজার কোটি টাকারও বেশি। সংঘটিত অগ্নিকা-ের ৬৫ থেকে ৭০ ভাগ বৈদ্যুতিক ত্রুটির কারণে ঘটছে। দেশে বিদ্যুৎ ও আগুনের ব্যবহার বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে অগ্নিকা-ের ঘটনাও বাড়ছে। অগ্নিকা- কখন ঘটবে সে বিষয়টি অনুমান করার উপায় নেই। তবে সচেতন হলে দুর্ঘটনা অনেকাংশেই কমিয়ে আনা সম্ভব হয়। এ জন্য বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম, তার ইত্যাদি ব্যবহারের সময় তার মান সম্পর্কে নিশ্চিত হতে হবে। বাড়িঘর কলকারখানায় অগ্নিনির্বাপকের ব্যবস্থা থাকতে হবে। কোথাও আগুন লাগলে সঙ্গে সঙ্গে ফায়ার সার্ভিসকে জানালেও প্রাণহানি এবং ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কমিয়ে আনা সম্ভব। ব্যাপক প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতির কারণে বড় অগ্নিকা- সবার দৃষ্টি কাড়লেও প্রকৃতপক্ষে প্রতিদিনই দেশের কোথাও না কোথাও আগুনের ঘটনা ঘটছে। বৈদ্যুতিক ত্রুটির পাশাপাশি সিগারেটের আগুন, গ্যাসের চুলা, গ্যাস সিলিন্ডার, রাসায়নিক দ্রব্য, বিস্ফোরণ, আগুন নিয়ে খেলা ও অসতর্কতাসহ নানা কারণে ঘটছে প্রলয়ঙ্করী অগ্নিকা-। অগ্নিকা-ে বিপুল সংখ্যক মানুষের হতাহতের ঘটনা যেমন ঘটছে তেমন ভস্মীভূত হচ্ছে কোটি কোটি টাকার সম্পদ। বছরে গড়ে ৫০০ কোটি টাকারও বেশি সম্পদ নষ্ট হচ্ছে।
পাঁচ বছরের মধ্যে গত বছর অগ্নিকা-ের ঘটনা কিছুটা কমে এলেও চলতি বছরের শুরুতেই গুলশানের ডিএনসিসি মার্কেটের অগ্নিকা-ে যে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তার পরিমাণ পাঁচ থেকে ছয়শ কোটি টাকা বলে মনে করা হচ্ছে। এ দুর্ঘটনার সঠিক কারণ এখন পর্যন্ত নির্ণয় করা না গেলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে, বৈদ্যুতিক ত্রুটির কারণে ঘটেছে এ বিপর্যয়। এ ব্যাপারে সচেতন হলে অগ্নিকা-ের আশঙ্কা যে কিছুটা হলেও কমানো যাবে সহজেই অনুমেয়। দেশে অগ্নিকা-ের ঘটনা আশঙ্কাজনকহারে বেড়ে চলেছে। বাড়ছে জীবনহানি ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণও। বেশির ভাগ অগ্নিকা- ঘটছে বৈদ্যুতিক ত্রুটির কারণে। ত্রুটিপূণ বৈদ্যুতিক উপকরণ ব্যবহার এবং রক্ষণাবেক্ষণে অবহেলা বিপর্যয় ডেকে আনছে।
আরেকটি বিষয় হচ্ছে, প্রতি বছর অনেকগুলি দুর্ঘটনা ঘটছে গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিগুলিতে। এই দুর্ঘটনার বেশির ভাগই আগুন লাগার ঘটনা। কিন্তু বার বার দেখা যাচ্ছে আগুন লাগলে ভবন থেকে বের হবার পর্যাপ্ত সিঁড়ি, দরজা এবং ঝুলন্ত সিঁড়ি (ফায়ার এক্সিট) থাকে না। ফলে বের হতে না পেরে আগুনে পুড়ে, পদদলিত হয়ে, অথবা উঁচু ভবন থেকে বাঁচার উদ্দেশ্যে লাফ দিয়ে, অকালে প্রাণ হারাচ্ছে শ্রমিকরা। যে মরে গেল, মৃত্যুর পরে তার কি হচ্ছে সেটা আমরা জানছি না, কিন্তু তার যে সমস্ত শিশু-সন্তান, বৃদ্ধ পিতামাতা এবং পোষ্য থেকে যাচ্ছে তাদের জীবনে নেমে আসছে ঘোর অন্ধকার, নিভে যাচ্ছে তাদের সকল আশার প্রদীপ।
দেশে আইন আছে প্রতিটি কারখানায় পর্যন্ত দরজা থাকতে হবে, প্রশস্ত সিঁড়ি থাকতে হবে। বিল্ডিং এর উপরের তলাগুলো থেকে দ্রুত বের হওয়ার জন্য পর্যাপ্ত সংখ্যক ঝুলন্ত সিঁড়ি (ফায়ার এক্সিট) থাকতে হবে। শুধু তাই নয়, এর পাশাপাশি অগ্নি নির্বাপনের যন্ত্রপাতিসহ পর্যাপ্ত ব্যবস্থা থাকতে হবে। কিন্তু অনেক গার্মেন্টস মালিক এই সব আইন-কানুন মানছেন না। যারা মানছেন তারা পুরোপুরি মানছেন না। এ ক্ষেত্রে তাদের অবহেলাজনিত কারণে দুর্ঘটনায় মৃত্যুর পরোক্ষ দায় দায়িত্ব তাদের ওপর বর্তায়। এমনকি যেসব কর্তৃপক্ষের এইসব আইন কার্যকর করার কথা তারাও দায়িত্ব এড়াতে পারেন না।
আমাদের দেশে দুর্যোগ মোকাবিলার প্রস্তুতি খুবই অপ্রতুল। বিশেষ করে দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে। যে ক্ষেত্রে আগুন নেভানো, মানুষকে সরিয়ে নেয়া এবং জরুরি উদ্ধার কার্য পরিচালনা করা দরকার, সেই সব ক্ষেত্রে আমাদেরকে আরো প্রস্তুতি নিতে হবে।
য় লেখক : সম্পাদক ও প্রকাশক, দৈনিক নবরাজ
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।