Inqilab Logo

রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

মামলার রায় আজ

নারায়ণগঞ্জে সাত খুন

| প্রকাশের সময় : ১৬ জানুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

মোঃ হাফিজুর রহমান মিন্টু, নারায়ণগঞ্জ থেকে : প্রায় আড়াই বছর বিচারকার্য চলার পর অবশেষে নারায়ণগঞ্জের আলোচিত সাত খুন মামলার রায় ঘোষণা হতে যাচ্ছে। আজ সোমবার (১৬ জানুয়ারী) নারায়ণগঞ্জ সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ আদালত সৈয়দ এনায়েত হোসেন এই রায় ঘোষণা করবেন। যা দেখতে নারায়ণগঞ্জবাসীর ন্যায় অধীর আগ্রহে এখন তাকিয়ে আছে সারা দেশবাসীও।
২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলামসহ সাতজন অপহরণ হওয়ার পর সারা নারায়ণগঞ্জে যে আন্দোলন শুরু হয়েছিল, তার তিনদিন পর শীতলক্ষ্যা নদীর ত্রিমোহনায় বন্দর শান্তিরচর এলাকা থেকে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় প্রত্যেকের বিভৎস্য লাশ উদ্ধারের পর উত্তপ্ত হয়ে উঠে নারায়ণগঞ্জসহ সারা দেশ। উক্ত ঘটনায় নারায়ণগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালতের একজন প্রবীণ আইনজীবী চন্দন সরকার নিহত হওয়ায় রাজপথ থেকে আদালত অঙ্গন পর্যন্ত আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে।
আর এই অপহরণ আর সাতজনকে খুন গুমের নেপথ্যে তৎকালীন সিটি কর্পোরেশনের ৪নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর সিদ্ধিরগঞ্জের ডন নূর হোসেন, র‌্যাব-১১’র সিইও লেফটেন্যান্ট কর্নেল তারেক সাঈদসহ র‌্যাবের শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তাদের জড়িত থাকার তথ্য ফাঁস হওয়ার পর বিশ্ব মিডিয়ার দৃষ্টি চলে আসে নারায়ণগঞ্জের দিকে। নিহতদের পরিবারকে সান্ত¦না দিতে নারায়ণগঞ্জ আসেন বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াসহ আওয়ামী লীগ ও জাতীয়পার্টি শীর্ষস্থানীয় নেতৃবৃন্দরাও।
অপহরণের নির্দেশ দাতা নূর হোসেনের ভারতে পলায়নের ক্ষেত্রে স্থানীয় প্রভাবশালী এক এমপির জড়িত থাকার মোবাইল কথপোকথন গণমাধ্যমে প্রচারিত হওয়ার পর আরো বেশী তোলপাড় সৃষ্টি হয়। একজন কাউন্সিলরের নির্দেশে কয়েক কোটি টাকার বিনিময়ে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়ার মেয়ের জামাই তারেক সাঈদ তার নিম্নপদস্থ র‌্যাব কর্মকর্তাদের দিয়ে এমন জঘন্য ঘটনায় র‌্যাবকে নিয়ে দেশজুড়ে জনমনে বিরূপ ধারণার সৃষ্টি হয়।
সাত খুনের ঘটনার সাথে জড়িত আসামীদের সাথে সখ্যতা থাকার অভিযোগে তৎকালীন র‌্যাবের এডিজি কর্নেল জিয়াউল হক, নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের এমপি শামীম ওসমানসহ হেভীওয়েট অনেককেই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গঠিত তদন্ত কমিটির মুখোমুখি হতে হয়।
এরপর সাত খুন মামলার প্রধান আসামী নূর হোসেনের ভারতে অনুপ্রবেশের দায়ে গ্রেফতার হওয়া, এরপর বাংলাদেশে তাকে ফিরিয়ে এনে বিচারকার্য সম্পন্ন করাকালীন সময়জুড়ে দেশজুড়ে বেশ আলোচিত হয়ে উঠে চাঞ্চল্যকর ৭ খুনের এই ঘটনাটি। অত:পর ঘোষণা হচ্ছে আলোচিত এই সাত খুন মামলার রায়। মামলায় ৩৫ জন আসামীর মধ্যে ২৩ জন গ্রেফতার থাকলেও বাকী ১২ জনকে পলাতক দেখিয়েই সাক্ষ্য ও জেরার পর গত ৩০ নভেম্বর যুক্তিতর্ক শেষ হয়।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন, প্রধান আসামি নূর হোসেন, চাকরিচ্যুত র‌্যাব-১১-এর তৎকালীন অধিনায়ক লে. কর্নেল তারেক মোহাম্মদ সাঈদ, উপ-অধিনায়ক মেজর আরিফ হোসেন, লে. কমান্ডার এমএম রানা, ল্যান্সনায়েক বিল্লাল হোসেন, সাবেক এসআই পুর্ণেন্দু বালা, হাবিলদার মো. ইমদাদুল হক, ল্যান্স নায়েক হীরা মিয়া, ল্যান্স কর্পোরাল রুহুল আমিন, সিপাহী আবু তৈয়ব, কনস্টেবল মো. সিহাব উদ্দিন, রেডিও অপারেটর গেইন (আরওজি) মো. আরিফ হোসেন, এএসআই বজলুর রহমান, এএসআই আবুল কালাম আজাদ, হাবিলদার ও গাড়িচালক নাসিরউদ্দিন, সিপাহী নুরুজ্জামান, বাবুল হাছান, সিপাহী সাবেক সেনা সদস্য আসাদুজ্জামান এবং নূর হোসেনের প্রধান বডিগার্ড মর্তুজা জামান চার্চিল, প্রধান ক্যাশিয়ার আলী মোহাম্মদ, ক্যাশিয়ার সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সহ-প্রচার সম্পাদক আবুল বাশার, মাদক স্পট পরিচালনাকারী রহম আলী ও মিজানুর রহমান।
আর পলাতকরা হলেন, নূর হোসেনের সহযোগী ভারতে গ্রেফতার সেলিম, সানাউল্লাহ সানা, শাহজাহান ও জামাল উদ্দিন, র‌্যাবের কর্পোরাল লতিফুর রহমান, সৈনিক আবদুল আলী, সৈনিক মহিউদ্দিন মুন্সী, সৈনিক আলামিন শরীফ, সৈনিক তাজুল ইসলাম, সার্জেন্ট এনামুল কবির, এএসআই কামাল হোসেন, কনস্টেবল হাবিবুর রহমান। সাত খুনের ঘটনায় দু’টি মামলা দায়ের হলেও ১২৭ জনকে অভিন্ন সাক্ষী করা হয়। যার মধ্যে ১০৭ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়েছে।
এব্যাপারে রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলী এড. ওয়াজেদ আলী খোকন বলেন, নারায়ণগঞ্জের আলোচিত সাত খুন মামলার বিত্তশালী আসামীদের স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে নিহত দরিদ্র পরিবারের মধ্যে বণ্টনের আবেদন জানিয়েছি। সেই সাথে সকল আসামির বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত করতে পারায় আদালতের কাছে সকলের সর্বোচ্চ শাস্তি ফাঁসির দড়িতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদ- কার্যকরের আবেদন করেছি।
বাদীপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান বলেন, সাত খুনের মামলার সুষ্ঠু বিচার হবেÑ এ প্রত্যাশা শুধু নারায়ণগঞ্জবাসীর না, সমগ্র দেশবাসীর। আদালতের প্রতি মানুষের আস্থা রয়েছে। সেই আস্থা থেকেই আমার প্রত্যাশা, আদালত আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদ- প্রদান করবেন।
আর নিহত নজরুল ইসলামের স্ত্রী ও একটি মামলার বাদী সেলিনা ইসলাম বিউটি বলেন, আমরা আদালতে আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করেছি। আমরা চাই, আদালত আসামিদের মৃত্যুদ- দিবেন। আরেক মামলার বাদী নিহত আইনজীবী চন্দন সরকারের জামাতা ডা. বিজয় কুমার পাল বলেন, বিচার শেষে আসামিদের দৃষ্টান্তমূলক সাজা হবে এমনটাই প্রত্যাশা করছি।
প্রসঙ্গত, ২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল দুপুরে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডের খান সাহেব ওসমান আলী স্টেডিয়ামের সামনে থেকে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের প্যানেল মেয়র ও ২ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর নজরুল ইসলামসহ তার পাঁচ সহযোগীকে অপহরণ করা হয়। একই সময় একই স্থান থেকে অপর একটি গাড়ীতে থাকা নারায়ণগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালতের প্রবীণ আইনজীবী চন্দন কুমার সরকার ও তার গাড়ির চালককেও অপহরণ করা হয়। ঘটনার তিনদিন পর বন্দর উপজেলার শান্তির চর এলাকার শীতলক্ষ্যা নদীর তীর থেকে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় সাতজনের লাশ উদ্ধার করা হয়।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: নারায়ণগঞ্জে সাত খুন

১৬ জানুয়ারি, ২০১৭
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ