Inqilab Logo

সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ইউপি নির্বাচনে প্রার্থী মনোনয়ন : বিরোধের আগুন তৃণমূলে

প্রকাশের সময় : ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১১:৩৬ পিএম, ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬

স্টালিন সরকার : ‘তুমি যে সুরের আগুন লাগিয়ে দিলে মোর প্রাণে/এ আগুন ছড়িয়ে গেল সবখানে, সবখানে, সবখানে’। রবীন্দ্র নাথ ঠাকুরের এই সুরের আগুন নয়; দলীয় প্রতীকে ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে ‘রাজনৈতিক বিরোধের আগুন’ ছড়িয়ে পড়েছে তৃর্ণমূলের সবখানেই। আগে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের সঙ্গে বিরোধ ছিল; মনোয়ন পাওয়া না পাওয়া নিয়ে সে বিরোধ এখন দলের অভ্যন্তরে ‘দাউ দাউ’ করে জ্বলতে শুরু করেছে। স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞদের মতে এ বিরোধ তথা ক্ষোভের আগুন গ্রামগঞ্জের সামাজিক বন্ধন, সম্প্রীতি তছনছ করে দেবে।
এতদিন রাজনৈতিক বিরোধ কেন্দ্রেই ছিল; তৃণমূলে রাজনৈতিক দলগুলোর তৎপরতা থাকলেও ভয়ঙ্কর বিরোধ তেমন দেখা যায়নি। কিন্তু নৌকা আর ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে ইউপি নির্বাচনে শুরু হয়েছে বিরোধ। চেয়ারম্যান মনোনয়ন নিয়ে দলের মধ্যেই শুরু হয়েছে গৃহদাহ। যারা কেন্দ্র থেকে দলীয় মনোনয়ন পাননি তারা অন্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলছেন; মনোনয়ন বাণিজ্য এবং টাকা খেয়ে অন্যকে প্রার্থী করার অভিযোগ তুলেছেন এমপি-মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে। এমনকি আওয়ামী লীগের নেতারা নিজেদের মধ্যে সংঘাত-সংঘর্ষের পাশাপাশি তারা অন্য দলের নেতাদের নৌকা প্রতীক দেয়ার অভিযোগ তুলেছেন। পুলিশি গ্রেফতারের ভয়ে দৌড়ের ওপর থাকা বিএনপিতে এ অভিযোগ কম হলেও বিশ্লেষকরা আশঙ্কা করছেন দলীয় প্রতীকে নির্বাচনের মাধ্যমে কেন্দ্রের রাজনীতির সংঘাত-সংঘর্ষের আগুন তৃণমূলে ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে। ভবিষ্যতে এই বিরোধ স্থায়ী রূপ ধারণ করলে তৃণমূলে দলের অভ্যন্তরে নেতায় নেতায় বিরোধ গ্রামের শান্তি-শৃঙ্খলা এবং সমাজবদ্ধতার ঐতিহ্যে ফাটল ধরাবে। তৃণমূলে সুস্থ ধারার রাজনীতির চর্চা কঠিন হয়ে পড়বে। স্থানীয় নির্বাচন বিশেষজ্ঞ সুজনের সাধারণ সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার মনে করেন দলীয় প্রতীকে নির্বাচনের কারণে ভোটের আগেই যে হানাহানি শুরু হয়েছে তা ক্রমান্বয়ে বাড়বে। ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে ঘিরে সরকারি দলের কর্মীরা মনোনয়ন বাণিজ্যে মেতে উঠেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘মনোনয়ন বাণিজ্যে লক্ষ ও কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। সরকারি দল থেকে যারা মনোনয়ন পেয়েছেন তারা যে কোনো প্রকারে জয়ের ব্যাপারে চিন্তা-ভাবনা শুরু করে দিয়েছেন। এতে করে হানাহানি আরও বৃদ্ধি পাবে। স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. তোফায়েল আহমদ মনে করেন স্থানীয় সরকারকে ক্ষমতায়ন না করে শুধু দলীয় প্রতীকে নির্বাচন তৃণমূলে বিরোধ বাড়বে। তবে প্রার্থী নির্বাচনে সঠিক পদ্ধতি গ্রহণ হলে ভালো। সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) সাখাওয়াত হোসেন বলেন, নির্বাচন নিরপেক্ষ হবে এমন পরিস্থিতি দেখছি না। তবে এখনই যে বিরোধ শুরু হয়েছে তৃণমূলে তা অব্যাহত থাকলে গোটা দেশে রাজনৈতিক বিরোধের আগুন ছড়িয়ে পড়বে।
নির্বাচন কমিশন ৪ হাজার ২শ’ ৭৯ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন মোট ৬ ধাপে করার ঘোষণা দিয়েছে। ২২ মার্চ অনুষ্ঠিত হবে প্রথম ধাপে ৭৫২ ইউপির ভোট। অতঃপর ৩১ মার্চ ৭১০টি ইউপি, ২৩ এপ্রিল ৭১১টি ইউপি, ৭ মে ৭২৮টি ইউপি, ২৮ মে ৭১৪টি ইউপি এবং ৪ জুন ৬৬০টি ইউপিতে ভোট অনুষ্ঠিত হবে। এবারই প্রথম দলীয় প্রতীকে নির্বাচন হচ্ছে। ভোটে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি, সিপিবি, ইসলামী ধারার দলগুলোসহ অনেকগুলো দল নিজেদের দলীয় প্রতীকে অংশগ্রহণ করবে। তবে মূল লড়াই হবে নৌকা আর ধানের শীষের প্রার্থীদের মধ্যে। নির্বাচন ঘিরে গোটা দেশে শুরু হয়েছে ভোটের আবহ। যদিও বিএনপির নেতারা অভিযোগ করছেন, ভোট শুরুর আগেই তাদের সম্ভাব্য প্রার্থীদের হয়রানি করা হচ্ছে। এমনকি অনেক এলাকায় ভোটাদের মধ্যেও ভোট দিতে পারবেন কিনা তা নিয়ে সংশয় শুরু হয়ে গেছে। নির্বাচন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সারাদেশে নির্বাচনী আবহ সৃষ্টি হলেও নির্বাচন কমিশন কঠোর অবস্থান গ্রহণ না করলে পৌরসভার মতোই ভোটের নামে প্রহসনের নির্বাচন হবে। ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেছেন, বিগত পৌর নির্বাচনে নির্বাচন কমিশন সঠিক দায়িত্ব পালন করতে পারেনি। নির্বাচন কমিশন ন্যায় দায়িত্ব পালন করতে পুরোটাই ব্যর্থ হয়েছে। ফলে বিগত সময়ের প্রতিটি নির্বাচন হয়েছে অত্যন্ত নিম্নমুখী। ইউপি নির্বাচন কেমন হবে তা বোঝা যাবে কয়েকদিনের মধ্যেই।
এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ প্রথম দফা ইউপি নির্বাচনের ৭০২ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী চূড়ান্ত করেছে। বাকি ৩৭ ইউপির চেয়ারম্যান প্রার্থী চূড়ান্তের প্রক্রিয়া চলছে। দলের শীর্ষ নেতৃত্বের সভাপতিত্বে সভায় এসব প্রার্থী চূড়ান্ত করা হয়। বৃহস্পতিবার ১৪৪টি ইউপি’র এবং বুধবার ৫৫৮টির প্রার্থী ঘোষণা দেয়া হয়। বিদ্রোহী প্রার্থীদের সতর্ক করে দিয়েছেন দলটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ। তিনি বলেছেন, দলের সিদ্ধান্ত যারা মানবেন না তাদের দল থেকে বহিষ্কার করা হবে। তবে প্রার্থী চূড়ান্তের কথা জানান যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক। তিনি জানান, দলভিত্তিক ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে তৃণমূলের একক প্রার্থী বাছাইয়ে জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে দলীয় প্রার্থী বাছাইয়ের নামে দাগি আসামি, পুলিশ সোর্স, পুলিশের দালাল, ’৭১-এর রাজাকারের আত্মীয় সুযোগ পেয়েছে। মনোনয়নে টাকা-পয়সাও লেনদেন হচ্ছে। দলের উপজেলা-ইউনিয়ন পর্যায়ে সক্রিয় নেতার সংখ্যা বেশি হওয়ায় সুবিধাভোগীরা সুযোগ নিচ্ছে। এতে দলে খুনোখুনি-মারামারি শুরু হয়ে গেছে। সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার শ্রীউলা ইউনিয়নের মহিষকুড় এলাকায় দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে বর্তমান চেয়ারম্যান ও তার সমর্থকদের কুপিয়ে জখম করেছে আওয়ামী লীগের অপর গ্রুপ। এই হামলায় বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা আবু হেনাসহ ১০ জন আহত হয়। আওয়ামী লীগ নেতারাই জানিয়েছে সংসদ সদস্যরা যাতে ইউপি চেয়ারম্যান প্রার্থী মনোনয়নে কোনো হস্তক্ষেপ না করেন সে নির্দেশনা প্রধানমন্ত্রী আগেই দিয়েছেন। কিন্তু তা কেউ মানছে না। ইউপি চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী মনোনয়নের ক্ষেত্রে স্থানীয় উপজেলা-জেলা আওয়ামী লীগের কমিটির কোনো সুপারিশই কাজে আসছে না; সংসদ সদস্যদের ভূমিকা থাকছেই। দলীয় সভাপতির ধানমন্ডিস্থ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেছেন, দলীয়ভাবে স্থানীয় সরকার নির্বাচন হওয়ার ফলে গণতন্ত্রের ভিত্তিই কেবল মজবুত হবে না, বাংলাদেশে গণতন্ত্র প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পাবে। কেন্দ্র থেকে তৃণমূল অনেক শক্তিশালী, সেটি প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই মনোনয়নব্যবস্থাকে তৃণমূল পর্যায়ে নিয়ে গেছেন। বাংলাদেশের গণতন্ত্রের ইতিহাসে এটা মাইলফলক হয়ে থাকবে। মুক্তিযুদ্ধবিরোধী, রাজাকার, আলশামস, জামায়াতে ইসলামী বা বিএনপির কেউ যাতে নৌকা প্রতীক না পায়, এ জন্য কঠোর সতর্কতা অবলম্বন করা হয়েছে। অথচ আওয়ামী লীগের নেতারাই অভিযোগ করছেন নানা পন্থায় ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে নৌকা প্রতীকের মনোনয়ন দেয়া হচ্ছে। জানা যায়, বাগেরহাটের কচুয়া উপজেলার মখিয়া ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পান পংকজ কান্তি অধিকার। তিনি ১৫ দিন আগে ওই ইউনিয়ন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। একই জেলার মোরেলগঞ্জে সদর ইউনিয়নে যুদ্ধাপরাধী মাহমুদ আলী ও বারইখালিতে তালিকাভুক্ত আলবদর শফিকুর রহমান লাল পেয়েছেন নৌকা প্রতীক। সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার খাজরা ইউনিয়নে নৌকা প্রতীক পেয়েছেন আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচারধীন থাকা মামলার আসামি মাজহার উদ্দিন সর্দারের ছেলে শাহনেওয়াজ। এমন অভিযোগ শুধু বাগেরহাট, সাতক্ষীরাতেই নয়; আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থী মনোনয়ন প্রক্রিয়া শুরু হওয়ায় সঙ্গে সঙ্গে দেশের কয়েকটি জেলা থেকে আওয়ামী লীগের সভাপতির দফতরে এমন অভিযোগ আসছে। মিডিয়ায় খবর এসেছে, বেশ কয়েকটি ইউনিয়নে রাজাকারপুত্র, ছিনতাইকারী, বিএনপি নেতা, মাদক ব্যবসায়ীকে নৌকার প্রতীক দেওয়া হয়েছে। আবার কোথাও তৃণমূল থেকে পাঠানো নাম পরিবর্তন করা হয়েছে। দলীয় মনোনয়ন বঞ্চিত হচ্ছেন আওয়ামী লীগের দীর্ঘদিনের পরীক্ষিত ও ত্যাগীরা। সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার খাজরা ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়া শাহনেওয়াজের বাবা মাজহার উদ্দিন সর্দারের নামে আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ বিশেষ ট্রাইব্যুনালে মামলা বিচারাধীন রয়েছে। শাহনেওয়াজের বড় ভাই আবদুল আলীম উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও আরেক ভাই জুলফিকার শলু উপজেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ সদরে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন চিহ্নিত রাজাকার মৃত আফছার আলীর ছেলে মাহমুদ আলী। মোরেলগঞ্জ পৌর যুবলীগের সভাপতি পরিচয়দানকারী এইচ এম মুরাদ হোসেন অভিযোগ করেন, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক টাকা খেয়ে নৌকা বিক্রি করেছেন। খুলনার তেরখাদা উপজেলার সাচিয়াদহ ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন যুবলীগ হত্যা মামলার আসামি এ বি এম আলমগীর শিকদার। পটুয়াখালী জেলার নেতারা অর্থের বিনিময়ে একক সিদ্ধান্তে প্রার্থী মনোনয়ন দিয়েছেন বলে তাদের বিরুদ্ধে কেন্দ্রে অভিযোগ দিয়েছেন বিভিন্ন ইউনিয়নের নেতারা। প্রার্থী চূড়ান্তে তৃণমূলের সঙ্গে কোনো আলোচনা করেননি, পরামর্শ নেননি। যদিও নেত্রী নির্দেশ দিয়েছেন ইউনিয়ন নেতাদের নিয়ে ভোটাভুটির মাধ্যমে প্রার্থী মনোনয়ন দেওয়ার। একই অভিযোগ করেছেন জেলার মরিচবুনিয়া ইউনিয়নের দেলোয়ার হোসেন।
জানা গেছে, ইউনিয়ন পরিষদে চেয়ারম্যান পদে দলীয় মনোনয়ন নিয়ে শুরু থেকেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কয়েকজন সিনিয়র ও জুনিয়র নেতার আচরণে উষ্মা প্রকাশ করে আসছেন। তারা দলকে সুসংগঠিত ও সুসংহত করা এবং দলের সভাপতির ইচ্ছাকে গুরুত্ব না দিয়ে নিজেদের গোষ্ঠীপ্রীতিকে বেশি প্রাধান্য দিয়েছেন। কিছু নেতার বিরুদ্ধে ‘মনোনয়ন বাণিজ্যের’ অভিযোগ উঠেছে। গত কয়েকদিনে দলের সভাপতিম-লীর সদস্য, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও কয়েকজন সাংগঠনিক সম্পাদকের কথায় আভাস পাওয়া যায়, তৃণমূলে দলের একশ্রেণীর এমপি আধিপত্য ও ‘মাস্তানি’ বজায় রাখার উদ্দেশ্যে পরীক্ষিত ও পরিচ্ছন্ন ইমেজের ব্যক্তিদের বদলে ‘খারাপ’ মানুষদের ইউপি নির্বাচনে দলের চেয়ারম্যান প্রার্থী মনোনীত করেছেন। সেখানে এমপিরা ‘পকেটে’র ব্যক্তিদের সংগঠনে ঢুকিয়েছিলেন। তাদের আবার এমপির পিএস, এপিএস বানিয়েছেন এমপিরাই।
দলীয় প্রতীকে নির্বাচন হওয়ায় তৃণমূলের ‘মাঠ’ ঠিক রাখতে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে মাঠের বিরোধী দল বিএনপি। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত সাড়ে ৫শ’ ইউপিতে ধানের শীষ প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী চূড়ান্তের কথা জানানো হয়েছে। দলের বাকি প্রার্থী চূড়ান্ত করার কাজও চলছে। এ সংক্রান্ত একাধিক কমিটি গঠন করে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী মনোনীতের জন্য ইউনিয়ন শাখার সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, উপজেলা শাখার সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ ৫ জনের সুপরিশকে প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে। কিন্তু নির্বাচনে দলের মনোনয়ন পাওয়ার আগেই বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীরা নানা প্রতিবন্ধকতার মধ্যে পড়ছে বলে অভিযোগ করছেন দলের যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। গতকাল সংবাদ সম্মেলন করে তিনি বলেছেন, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বিএনপির চেয়ারম্যান পদপার্থীদের ‘গ্রফতার ও গুম’ করে তাদের ভয়-ভীতি দেখানো হচ্ছে। ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের পাশাপাশি আইন প্রয়োগকারী সংস্থাও এই কাজ করছে। তার অভিযোগ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সারা দেশে বিএনপির প্রার্থী ও সমর্থকদের গ্রেফতার ও গুম করে ভীতির পরিবেশ সৃষ্টি করছে। তিনি জানান, সাতক্ষীরার যুবদল নেতা নির্বাচনের টাকা ব্যাংকে জমা দিতে গেলে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায়। জয়পুরহাটে বিএনপির চেয়ারম্যান প্রার্থী আব্দুর রব বুলুকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তুলে নিয়ে গেছে। এখন পর্যন্ত তার খোঁজ মেলেনি। মানুষ যাতে কোনোভাবেই স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে না পারে, সেজন্য নৃশংসতা দিয়ে তাদের টিকে থাকার পথ তৈরি করছে। সারাদেশে বিএনপির দলীয় কার্যালয় ভেঙে তছনছ করছে, গ্রেফতারের নামে নেতাকর্মীদের বাড়িতে বাড়িতে হানা দিয়ে পরিবারের সদস্যদের হুমকি দিচ্ছে ও আসবাবপত্র ভেঙে ফেলছে। এর উদ্দেশ্য ইউপি নির্বাচনে যাতে বিএনপির প্রার্থীরা ভোট করতে না পারে। এর আগে বিএনপি ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, সরকার ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনেও ‘পাতানো’ ভোট করে নিজেদের প্রার্থীদের বিজয়ী করবে। ভোটের আগেই ভোট হয়ে যাবে। কোথাও ভোটের দিন দখল হয়ে যাবে। সরকার ও পুলিশ প্রশাসনকে ব্যবহার করে সবকিছুই নিয়ে নেবে। পূর্ব অভিজ্ঞতা এটাই বলে। কিন্তু তৃণমূলের নেতাকর্মীদের ধরে রাখা এবং চাঙ্গা করার জন্যই আমরা ভোটে অংশগ্রহণ করছি।
জানা গেছে, পৗরসভা নির্বাচনের ‘অভিজ্ঞতা’ কাজে লাগিয়ে আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের সিদ্ধান্ত নেয় বিএনপি। পৌরসভা নির্বাচনে দলের স্থানীয় নেতাদের ভূমিকা, দলের প্রতি আনুগত্য ও আন্তরিকতা, যোগ্যতা, দক্ষতার পর্যালোচনা করে ইউপি নির্বাচনে দায়িত্ব বণ্টনের ছক তৈরি করা হয়েছে। এ প্রেক্ষাপটে পৌর নির্বাচন নিয়ে আত্মবিশ্লেষণসহ মোট চার দফা কর্মসূচি বাস্তবায়নে ব্যস্ত কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। বিএনপি নেতাদের বক্তব্য হলো, পৌরসভা নির্বাচনে ব্যাপক ভোট ডাকাতির ঘটনায় বিএনপি সমর্থকসহ সাধারণ ভোটারদের মধ্যেও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। এর মাধ্যমে প্রত্যন্ত এলাকার নেতাকর্মীরা নতুন প্রাণচাঞ্চল্য নিয়ে সক্রিয় রাজনীতির মাঠে ফিরেছেন। তৃণমূলের এই জেগে ওঠার শক্তিকে দল পুনর্গঠন ও আগামীদিনের আন্দোলন ও নির্বাচনে কাজে লাগানো হবে। পৌর নির্বাচনের মতো ইউনিয়ন পরিষদের ভোটে অংশ নিয়ে দলের তৃণমূল পর্যন্ত গতিশীলতা আনতে চান। এ কারণে ইউপি চেয়ারম্যান পদে দলীয় মনোনয়নের বিষয়ে সিদ্ধান্ত যা-ই হোক, বিএনপি এতে সংশ্লিষ্টতা থাকার সিদ্ধান্ত নেয়। দায়িত্বশীল নেতা জানান, দীর্ঘদিন নিষ্ক্রিয় থাকা তৃণমূলের বিএনপি নেতাকর্মীরা গত পৌর ভোটে অংশগ্রহণের মাধ্যমে জেগে উঠেছেন বলে মনে করছেন দলের নীতি নির্ধারকরা। এ কারণেই আগামী মার্চে অনুষ্ঠেয় দ্বিতীয় দফা পৌর ভোট ও আসন্ন ইউপি নির্বাচনে সমান গুরুত্ব দিয়ে মাঠে নামছে। ওই নেতা বলেন, ‘মাঠে নামলেই হামলা বা গ্রেফতার হতে হবে’ বিএনপির তৃণমূলে যে ‘গৎবাঁধা ধারণা’ ছিল পৌর ভোটে তার অনেকটাই দূর হয়েছে। মাঠ নেতাদের মধ্যে স্বাভাবিক রাজনীতি করার সাহস ফিরে এসেছে। ইউপি নির্বাচনে সেটা অব্যাহত থাকলেও ভোট থেকে নড়বে না দলটি। এ অবস্থায় প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ বলেছেন, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন যদি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ না হয় তাহলে দেশে জঙ্গির উত্থান ঘটবে। কারণ এ নির্বাচন নিয়ে নেতায় নেতায় বিরোধ শুরু হয়েছে।



 

Show all comments
  • কাওসার আহমেদ ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ১১:৪৩ এএম says : 0
    এগুলো কোন ব্যাপার না।
    Total Reply(0) Reply
  • Santa ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ৪:৩৬ পিএম says : 0
    এ বিরোধ তথা ক্ষোভের আগুন গ্রামগঞ্জের সামাজিক বন্ধন, সম্প্রীতি তছনছ করে দেবে।
    Total Reply(0) Reply
  • Tanvir ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ৪:৩৮ পিএম says : 0
    ai nirbachon o ager nirbachon gulor moto hobe bole mone hosse
    Total Reply(0) Reply
  • ফিরোজ ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ৪:৪০ পিএম says : 0
    প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ সাহেবের এই কথার যুক্তি আছে।
    Total Reply(0) Reply
  • তুষার ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ৪:৪১ পিএম says : 0
    ইউনিয়ান পরিষদ নির্বাচন দলীয়ভাবে না করলেই ভালো হতো।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইউপি নির্বাচনে প্রার্থী মনোনয়ন : বিরোধের আগুন তৃণমূলে
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ