পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
শফিউল আলম : চট্টগ্রাম বন্দর অবকাঠামো সুবিধায় বন্দরের ভেতরে-বাইরে ও কাছাকাছি জায়গায় খাদ্যশস্যসহ আমদানিকৃত বিভিন্ন পণ্যসামগ্রীর গুদাম খুবই অপ্রতুল। কন্টেইনারের অবকাঠামো বাড়লেও বস্তাজাত ও খোলা পণ্যের (বাল্ক কার্গো) ক্ষেত্রে দিন দিন গুদাম সুবিধা আরও সংকুচিত হয়ে আসছে। এতে করে আপৎকালীন অবস্থায় এবং সাময়িক বা ট্রানজিট ব্যবস্থায় খাদ্য ও অন্যান্য পণ্যসামগ্রীর মজুদ ব্যবস্থাপনা গুরুতরভাবে ব্যাহত হচ্ছে। আমদানিকৃত বিপুল পরিমাণ খাদ্যপণ্য বিনষ্ট হয়ে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। জরুরি খাদ্য নিরাপত্তার বিষয়টি সরকারের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারপূর্ণ বিষয়। চট্টগ্রাম বন্দরে গুদাম সুবিধার প্রশ্নে এর গুরুত্ব উপেক্ষিত হচ্ছে। চাল, গম, চিনি, ভোজ্যতেল, সার, সরিষা, ডাল, কৃষিবীজসহ জরুরি খাদ্য ও নিত্যপণ্যের মজুদ ও ট্রানজিট (সাময়িক) সংরক্ষণের জন্য পর্যাপ্ত গুদাম সুবিধা প্রসারের বিষয়ে বন্দর ব্যবহারকারীরা তাগিদ দিয়ে আসছেন।
বর্তমানে বন্দরে বার্ষিক ২০ লাখ টিইইউএসেরও বেশি কন্টেইনার ওঠানামার জন্য প্রায় পর্যাপ্ত সুবিধা ও ধারণক্ষমতা রয়েছে। কিন্তু আমদানিকৃত খাদ্যশস্য ও নিত্যপণ্যের ট্রানজিট গুদাম, শেড বা ওয়্যারহাউস সুবিধা প্রকৃত চাহিদার তুলনায় খুবই অপর্যাপ্ত। দেশে খাদ্য মজুদ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হলে প্রধান এই সমুদ্র বন্দরে খাদ্যশস্য, নিত্যপণ্য তথা খোলা সাধারণ পণ্যের (ব্রেকবাল্ক কার্গো) পর্যাপ্ত ট্রানজিট গুদাম সুবিধা থাকা অপরিহার্য। চট্টগ্রাম বন্দরে বার্ষিক সাড়ে ৭ কোটি মেট্রিক টন আমদানি ও রফতানিমুখী পণ্যসামগ্রী হ্যান্ডলিং করা হয়। এর মধ্যে প্রতিমাসে গড়ে ১৫ লাখ মেট্রিক টন আমদানিকৃত খাদ্যশস্য, নিত্যপণ্য ও ভোগ্যপণ্য, শিল্পের কাঁচামাল হ্যান্ডলিং ও খালাস করা হয়ে থাকে। বন্দর জেটিসমূহ থেকে সরাসরি (হুক পয়েন্ট) ডেলিভারি পরিবহন সচল রাখতে হলে বন্দরের খুব কাছাকাছি ট্রানজিট গুদামে পর্যাপ্ত পরিমাণ সাময়িক মজুদ সুবিধা থাকা অত্যাবশ্যক। ট্রানজিট গুদাম থেকেই চাহিদামাফিক দেশের প্রত্যন্ত এলাকায় সড়ক ও রেল ওয়াগনে খাদ্যশস্য, সার, বীজসহ বিভিন্ন পণ্য পরিবহন ব্যবস্থা সুবিধাজনক হয়ে থাকে। তবে অবকাঠামো সুবিধার অপর্যাপ্ততার কারণে এই সরবরাহ চেইন বা প্রক্রিয়া ব্যাহত হচ্ছে।
বন্দর ব্যবহারকারী তথা স্টেক হোল্ডারদের সূত্রে জানা গেছে, নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয় ও বন্দর কর্তৃপক্ষের অসম বা বৈষম্যমূলক নীতির কারণেই বন্দরে খাদ্যপণ্যের ট্রানজিট গুদাম অবকাঠামো সুবিধা সংকুচিত হয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় কন্টেইনার ফিডার জাহাজের তুলনায় চাল, গম, চিনি, ভোজ্যতেল, সার, সরিষা, ডাল, কৃষিবীজসহ জরুরি খাদ্যশস্য ও নিত্যপণ্যের মতো যাবতীয় খোলা পণ্যসামগ্রী সাময়িক ট্রানজিট মজুদ ও সংরক্ষণের স্থান সংকুলান সমস্যা বর্তমানে প্রকট। এতে করে খোলা পণ্যবাহী (ব্রেকবাল্ক কার্গো) সাধারণ জাহাজের গড় অবস্থানকাল (টার্ন অ্যারাউন্ড টাইম) বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর সমানুপাতে বেড়েছে জাহাজের পরিচালন খরচ। সাধারণ বাল্ক কার্গো জাহাজ ছাড়াও কন্টেইনার জাহাজযোগেও ইদানীং চাল, ডাল, আদা, ফলমূল, খাদ্যশস্যের বীজসহ বিভিন্ন নিত্য ও ভোগ্যপণ্য আমদানি ও রফতানি করা হচ্ছে। শ্রমিক বহর অনুপাতে কাজের হার, গড় উৎপাদনশীলতা ও দক্ষতার অন্যান্য সূচক খাদ্যশস্য ও নিত্যপণ্য হ্যান্ডলিংয়ের ক্ষেত্রে নেতিবাচক অবস্থানে রয়েছে। এর ফলে সার্বিক বন্দর ব্যয় বেড়েই চলেছে। তবে বাড়তি এই খরচের জন্য ব্যবসায়ীরা নিজেরা কখনও লোকসান দেয় না। বরং তা দ্বিগুণ তিনগুণ পর্যন্ত পুষিয়ে তুলতে গিয়ে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি করা হয়। পকেট থেকে বাড়তি ব্যয় করে সার্বিকভাবে তার খেসারত দিতে হয় ভোক্তা সাধারণকেই।
এদিকে জরুরী খাদ্য নিরাপত্তার সাথে বন্দরে খাদ্যশস্য ও নিত্যপণ্যের ট্রানজিট গুদাম, ওয়্যারহাউস অবকাঠামো সুবিধা অপরিহার্য। দেশের প্রধান এ বন্দরে চাল, গম, ডাল, চিনি, সরিষা, কৃষিবীজ, ভোজ্যতেলসহ যাবতীয় আমদানী খাদ্যশস্যের ট্রানজিট গুদাম অপর্যাপ্ত হওয়ার কারণে খাদ্যশস্য সময়মতো খালাস, ডেলিভারি পরিবহন করে বন্দর থেকে দেশের প্রত্যন্ত এলাকার গন্তব্যে পৌঁছাতে জটিলতা, সময় ও খরচ বেড়ে যায়। আবার বন্দর থেকে ট্রানজিট শেডে না তুলে ট্রাক, ট্যাংকলরি যোগে দেশের সর্বত্র চাল, গম, ভোজ্যতেল, চিনিসহ খাদ্যশস্য ও নিত্যপণ্য পরিবহন করতে গেলে বর্তমানে যত সংখ্যক ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান রয়েছে, তার চেয়ে ৪-৬ গুণ বেশি সংখ্যক ট্রাক দিয়েও পরিবহন সামাল দেয়া সম্ভব নয়। দূরপাল্লায় প্রতিটি ট্রাক গড়ে এক সপ্তাহে দু’তিনটির চেয়ে বেশি ট্রিপ দিতে পারে না। বর্তমানে চট্টগ্রাম বন্দরমুখী ও বহির্মুখী পণ্যসামগ্রী পরিবহনে গড়ে প্রায় সাড়ে ৪ হাজার ট্রাক, ট্যাংকলরি ও কাভার্ডভ্যান চলাচল করছে।
বিশেষত প্রাকৃতিক দুর্যোগজনিত পরিস্থিতি, বৈরী আবহাওয়া ও খাদ্য সংকটের সময়ে আপৎকালীন প্রয়োজন মেটাতে খুব দ্রুত খাদ্যপণ্য পরিবহন আরও কঠিন হয়ে পড়ে। দেশে নতুন খাদ্য গুদাম নির্মাণ করে ধারণক্ষমতা বৃদ্ধি, পুরনো জরাজীর্ণ সকল গুদামের সংস্কারের জন্য সরকারি নির্দেশনা রয়েছে। উত্তরাঞ্চলে নতুন খাদ্যগুদাম নির্মাণ করা হচ্ছে। চট্টগ্রাম বন্দরের অদূরে হালিশহর খাদ্যগুদাম উচ্ছেদ করে অতীতে ইপিজেড করার যে অদূরদর্শী সিদ্ধান্ত নেয়া হয়, পরবর্তীতে তা বাতিল করে খাদ্য গুদামগুলো খাদ্য বিভাগকে ফিরিয়ে দেয়া হয়েছে।
অভিজ্ঞ বন্দর ব্যবহারকারীরা জানান, ট্রানজিট (সাময়িক মজুদের জন্য) গুদাম পৃথিবীর যে কোনো বন্দরের জন্যই অপরিহার্য কাঠামো। প্রতিবেশী দেশের বন্দরগুলোতেও রয়েছে পর্যাপ্ত ট্রানজিট অবকাঠামো সুবিধা। অথচ চট্টগ্রাম বন্দরে এর ঘাটতি প্রকট। আরও ট্রানজিট গুদাম অচিরেই নির্মাণ করা না হলে জেটি-বার্থে নোঙ্গররত জাহাজ থেকে হুক পয়েন্ট অর্থাৎ সরাসরি ডেলিভারির পুরনো ও অপরিহার্য ব্যবস্থা সম্পূর্ণরূপে ভেঙে পড়বে। এ কারণে কার্গোজট ও জাহাজজট সমস্যা সৃষ্টি হবে। এর ফলে বন্দর ব্যয়ও ক্রমাগত বৃদ্ধি পাবে। বন্দরের কাছাকাছি পর্যাপ্ত ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন ট্রানজিট শেড, গোডাউন বা ওয়্যারহাউস সুবিধা নিশ্চিত হলে সারাদেশে খাদ্যশস্য ও নিত্যপণ্যের যোগান, বাজারজাত প্রক্রিয়ায় একটি সুষ্ঠু সরবরাহ ব্যবস্থা (সাপ্লাই চেইন) বজায় থাকবে। ফলে চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরের কাছাকাছি জায়গায় আরও পর্যাপ্ত গুদাম নির্মাণ করা অত্যাবশ্যক।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।