দেশে দেশে রোজার উৎসব
মাহে রমজান আরবী নবম মাসের নাম। চাঁদের আবর্তন দ্বারা যে এক বৎসর গণনা করা হয়,
মুহাম্মদ নাজমুল ইসলাম
(পূর্ব প্রকাশিতের পর)
এর আগে মাকামে ইব্রাহিম কাবাঘরের দেয়াল ঘেঁষে স্থাপিত ছিল। তিনি সেটাকেও বর্তমান স্থানে স্থানান্তর করেন। এ কারণে কাবাঘরের সর্বপ্রথম সংস্কার সাধনকারী হিসেবে হজরত উমর (রা.)-এর নাম ইতিহাসে স্মরণ করা হয়। যদিও তৃতীয় খোলাফায়ে রাশেদীনের যুগে ২৬ হিজরিতে হজরত ওসমান (রা.) মসজিদুল হারামের দ্বিতীয় দফা সংস্কার ও সম্প্রসারণ করেন। তিনিই প্রথম মসজিদুল হারামের বারান্দা নির্মাণ করেন। যাই হোক, ইতিহাসে সর্বপ্রথম নির্মাণ থেকে সর্বশেষ সময় পর্যন্ত মোট বার বার কাবাঘরের সংস্কার ও স¤প্রসারণ কাজের উল্লেখ আছে। ক্রমানুসারে এগুলো নিম্নরূপÑ
প্রথমবারÑ পৃথিবীতে মানব সৃষ্টির পর ফেরেশতাগণ কর্তৃক প্রথম কাবাঘর নির্মাণ করা হয়।
দ্বিতীয়বারÑ হজরত আদম (আ.) কর্তৃক পুনঃনির্মাণ করা হয়।
তৃতীয়বারÑ হজরত শীষ (আ.) কর্তৃক পুনঃনির্মাণ করা হয়।
চতুর্থবারÑ হজরত ইব্রাহিম (আ.) কর্তৃক পুনঃনির্মাণ করা হয়।
পঞ্চমবারÑ আমালিকা সম্প্রদায় কর্তৃক পুনঃনির্মাণ করা হয়।
ষষ্ঠবারÑ জুরহাম সম্প্রদায় কর্তৃক পুনঃনির্মাণ করা হয়।
সপ্তমবারÑ কুসাই বিন কিলাব কর্তৃক পুনঃনির্মাণ করা হয়।
অষ্টমবারÑ মোযার সম্প্রদায় কর্তৃক পুনঃনির্মাণ করা হয়।
নবমবারÑ কুরাইশগণ কর্তৃক পুনঃনির্মাণ করা হয় মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর নবুওয়াত প্রাপ্তির পাঁচ বছর আগে। তিনি এর নির্মাণকাজে অংশ নিয়েছিলেন এবং হজরে আসওয়াদকে বর্তমান স্থানে স্থাপন করেছিলেন।
দশমবারÑ ৬৪ হিজরিতে হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে যুবায়ের (রা.) মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর অন্তিম ইচ্ছে অনুযায়ী পুনঃনির্মাণ করেন।
এগারতমবার : ৭৪ হিজরিতে হাজ্জাজ ইবনে ইউসুফ কর্তৃক পুনঃনির্মাণ করা হয়। বারতমবারÑ ১০৪০ হিজরিতে ওসমানিয়া খলিফা চতুর্থ মুরাদ কর্তৃক পুনঃনির্মাণ করা হয়। এটাই আজ পর্যন্ত কাবাঘরের সর্বশেষ সংস্কার কাজ। এরপর ছোটখাট সংস্কার ব্যতীত কেউ কাবাঘরে হাত দেয়নি।
নামকরণ : ইতিহাস থেকে জানা যায় যে, আরবি অক্ষর কাফ, আইন ও বা Ñ এই তিনটি অক্ষর নিয়ে গঠিত হয়েছে কাব বা মুকাআব শব্দ, যার অর্থ চার কোণবিশিষ্ট। যেহেতু কাবাগৃহ চার কোণবিশিষ্ট সেহেতু এর নামকরণ এখানে এভাবেই এসেছে। অন্য আর একটি ব্যাখ্যা অনুযায়ী আরবিতে সুউচ্চ গৃহকে কাবা বলা হয়। কাবাঘর উঁচু বলে এর এই নামকরণ করা হয়েছে। পবিত্র কোরআনের সূরা আল মায়েদাহ-এর দুই জায়গায় এই পবিত্র গৃহকে কাবা নামে সম্বোধন করেছেন। পবিত্র এই গৃহের আরো চারটি নাম রয়েছে। এগুলো হচ্ছে : (১) আল বাইত (২) বাইতুল আতীক (৩) মসজিদুল হারাম ও (৪) বাইতুল মুহাররাম।
পবিত্র কাবাঘরের আয়তন :Ñ কাবাঘরের উচ্চতা ১৫ মিটার। পূর্ব-পশ্চিমে-এর দৈর্ঘ ১২ মিটার এবং উত্তর-দক্ষিণে ১০ মিটার। ভেতরে প্রবেশ করার জন্য একটিমাত্র দরজা রয়েছে যা বছরে তিনবার খোলা হয় অভ্যন্তরভাগ পরিষ্কার করার জন্য।
কাবা শরীফের দরজা : ওসমানিয়া খেলাফতের সময় সর্বপ্রথম রৌপ্য নির্মিত কারুকার্যময় দরজা লাগানো হয় কাবাঘরে। এর আগে মূল্যবান কাঠ দ্বারা নির্মিত একটি দরজা ছিল কাবাঘরে। রুপোর উপর বিভিন্ন নকশা ও পবিত্র কোরআনের আয়াত খোদাই করা হয় ঐ দরজায় এবং গিলাফের সাথে সামঞ্জস্য রেখে দরজার উপর পর্দা ঝুলানো হয়। প্রতি বছর গিলাফ পরিবর্তনের সময় এটাও পরিবর্তন করা হয়। বর্তমানে পবিত্র কাবাঘরের দরজাটি আছে সেটির উচ্চতা ৩.০৩ মিটার ও প্রস্থ ১.৬৮ মিটার। দরজাটি মাতাফ বা মেঝ থেকে ২.৫ মিটার উচ্চতায় স্থাপিত। ২৮০ কেজি খাঁটি সোনা দ্বারা দরজাটি তৈরি করেন প্রয়াত সৌদি বাদশা খালিদ বিন আব্দুল আজিজ। দরজাটি তৈরি করতে মোট ব্যয় হয়েছে ১৩.৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। নবী করিম (সা.)-এর ওসিয়ত অনুযায়ী তার শাসনামল থেকে আজ পর্যন্ত বনি শায়রা গোত্রের নিকট কাবাঘরের দরজার চাবি সংরক্ষিত আছে। বংশ পরম্পরায় তারা আজো এর রক্ষক। কারণ, নবীজী স্বয়ং তাদেরকে এই সম্মানে ভূষিত করে গেছেন।
কাবাঘরের অভ্যন্তরভাগÑ কাবাঘরের অভ্যন্তর ভাগের বিশেষ বিশেষ দিকগুলো হচ্ছেÑ সবসময় আরবীয় সুগগ্ধি উদ ও মেশক আম্বড়ের মন মাতানো সৌরভে ভরপুর থাকে। এজন্য বছরে কয়েক মিলিয়ন ডলার ব্যয় করা হয়।
Ñমেঝেটা মূল্যবান মার্বেল টাইলস দ্বারা তৈরি। চারপাশের কর্ণারগুলো কালো মার্বেল পাথর দ্বারা মোড়ানো। ভেতরের চারপাশের দেয়ালগুলো মেঝ থেকে উপরে চার মিটার পর্যন্ত কারুকার্যময় মার্বেল টাইলস দ্বারা মোড়ানো। তার উপর থেকে ছাদ পর্যন্ত বাকি পাঁচ মিটার দেয়াল কাবার প্রাচীন গিলাফ দ্বারা মোড়ানো। এই গিলাফটিতে সবুজ জমিনের উপর রুপোর ক্যালিওগ্রাফি আঁকা।
Ñমেঝের সাদা মার্বেলের মাঝে একটি গাঢ় সবুজ রং-এর টাইলস দ্বারা মহানবী (সা.)-এর নামাজ ও সেজদার স্থান চিহ্নিত করে রাখা আছে।
Ñএকই সবুজ টাইলস দ্বারা দরজার পাশে মূলতাযীমেও একটি স্থান নির্দিষ্ট করা আছে। নবীজী (সা.) এখানে ডান গাল ও পেট ঠেকিয়ে দীর্ঘক্ষণ ধরে দোয়া করতেন। প্রত্যক্ষদর্শী সাহাবায়ে রোমের মতে, আল্লাহ তায়ালার কাছে চাওয়ার আকুতি ও পাওয়ার আনন্দে নবীজী (সা.) সেদিন এত বেশি কেঁদেছিলেন যে, উনার দাঁড়ি মোবারক, বুক ও পেট ভিজে গিয়েছিল। এই ঘটনার পর থেকে হজরে আসওয়াদ ও দরজার মধ্যবর্তী স্থানটি মূলতাযীম বা দোয়া কবুলের স্থান হিসেবে স্বীকৃত।
Ñকাবাঘরের অভ্যন্তরভাগের ঠিক মাঝখানে প্রতিটি ৯ মিটার লম্বা তিনটি কাঠের খুঁটি রয়েছে। প্রতিটি খুঁটি স্বর্ণের কারুকাজখচিত বেল্ট দিয়ে মোড়ানো।
Ñকাবাঘরের ছাদে ঝোলানো আছে ওসমানিয়া খেলাফত আমলের ৬টি ঝাড়বাতি। এগুলো পিতল, রৌপ্য ও রঙিন কাঁচ দ্বারা তৈরি। প্রায় একই রকম ঝাড়বাতি দেখতে পাওয়া যায় মসজিদে নববীর রিয়াজুল জান্নাতে।
Ñকাবাঘরের ভেতরে পশ্চিম-দক্ষিণ কোণে একটি ছোট এক পাল্লার দরজাবিশিষ্ট কুঠুরী রয়েছে, যার ভেতর একটি সিঁড়ি রাখা আছে। কাবাঘরের ছাদ পরিষ্কার ও গিলাফ পরিবর্তনের সময় ছাদে উঠার জন্য এটি ব্যবহার করা হয়। এখানে উল্লেখ্য যে, প্রতি বছর হজের মওসুমের পূর্বে পবিত্র কাবাঘরের অভ্যন্তরভাগ যমযমের পানি ও সাবান দ্বারা ধৌত করা হয়। এতে উন্নত প্রযুক্তির হাইড্রোলিক ক্লিনিং মেশিন ব্যবহার করা হয়। ধোয়া-মোছার পর মেঝে ও দেয়ালে অতি মূল্যবান সুগন্ধি মেশক আম্বর ও উদ ছিঁটানো হয়। সৌদি সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে মক্কার সম্মানিত গভর্নরের নেতৃত্বে হারমাইনের ইমাম ও মুয়াযযিন-এর অংশগ্রহণে এই পুরো কার্যক্রমটি পরিচালিত হয়। মাঝে মাঝে সেখানে উপস্থিত বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধানগণও এই মহতি কাজে অংশগ্রহণের সুযোগ পান। কাবাঘরের ভেতরে আরো আছে কারুকার্যময় ১১টি টাইলস। এগুলো বিভিন্ন যুগে মসজিদুল হারামের স¤প্রসারণ ও পুনঃনির্মাণের জন্য সংগ্রহ করা হয়েছিল।
হজরে আসওয়াদ : পবিত্র কাবাঘরের বাইরের দিকের পূর্ব-দক্ষিণ কোণের দেয়ালে স্থাপিত রয়েছে জান্নাতের পবিত্র পাথর হজরে আসওয়াদ। এই কোণ থেকে তাওয়াফ শুরু করতে হয় এবং এখানেই শেষ করতে হয়। এই কোণকে রুকনে শারকী বলা হয়। শারকী শব্দের অর্থ হচ্ছে পূর্ব। এই কোণের ঠিক সামনেই রয়েছে যমযম কূপ। হজরে আসওয়াদ থেকে তাওয়াফ শুরু করে প্রথম যে কোণটি অতিক্রম করতে হয় সেটাকে বলা হয় রুকনে ইরাকি। ভৌগোলিকভাবে ইরাকের দিকে অবস্থিত বলে এটাকে রুকনে ইরাকি বলা হয়। তাওয়াফের ধারাবাহিকতায় রুকনে ইরাকির পরই অতিক্রম করতে হয় রুকনে গারবী। এটাকে রুকনে শামীও বলা হয় ভৌগোলিকভাবে শামী বা সিরিয়ার দিকে অবস্থিত বলে। কাবাঘরের চতুর্থ কোণ হচ্ছে রুকনে ইয়ামানী, ভৌগোলিকভাবে ইয়েমেনের দিকে অবস্থিত বলে। এটা দক্ষিণ-পূর্ব দিকে অবস্থিত বলে এটাকে দক্ষিণ কোণও বলা হয়। প্রতিবার তাওয়াফ শেষ নবী করিম (সা.) রুকনে ইয়ামানী স্পর্শ করতেন। তাই এটি তাওয়াফের অন্যতম একটি সুন্নত। কিন্তু আজকাল ভিড়ের কারণে সবার পক্ষে এটি স্পর্শ করা সম্ভব হয় না। তাই দূর থেকে ইশারায় একাজটি করা হয়। হজরে আসওয়াদ ও মাকামে ইব্রাহীম সম্পর্কে নবীজী (সা.) বলেছেন, নিশ্চয়ই হজরে আসওয়াদ ও মাকামে ইব্রাহীম জান্নাতের দুটি অতি মূল্যবান ইয়াকুত পাথর। পৃথিবীতে প্রেরণের সময় মহান আল্লাহ তায়ালা এই পাথর দুটির ঔজ্জল্য ম্লান করে তারপর প্রেরণ করেছেন। তা নাহলে এদের আলোতে সমস্ত পৃথিবী এমনভাবে আলোকিত হয়ে থাকত যে দিন-রাত্রির পার্থক্য বোঝা যেত না।
অন্য এক হাদিছে বলা হয়েছে যে, পৃথিবীতে প্রেরণের সময় হজরে আসওয়াদ দুধের মতো সাদা ছিল। কিন্তু মানুষের পাপের স্পর্শে সেটা কালো রং ধারণ করেছে। খোলাফায়ে রাশেদীনের শেষদিকে মক্কার প্রশাসক সাহাবী হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে যুবায়ের (রা.) সর্বপ্রথম হজরে আসওয়াদকে রুপোর ফ্রেম দিয়ে বাঁধাই করেন। এরপর প্রত্যেক যুগেই মুসলিম খলিফাগণ এই বাঁধাই-এর সংস্কার ও পরিবর্তন করেছেন। সর্বশেষ ১৩৭৫ হিজরিতে সউদী বাদশা সউদ ইবনে আব্দুল আজিজ নতুন করে রুপোর ফ্রেমে হজরে আসওয়াদকে বাঁধাই করেন এবং ১৪২২ হিজরিতে বাদশাহ ফাহাদ ইবনে আব্দুল আজিজ মসজিদুল হারামের স¤প্রসারণকালে এই রুপোর ফ্রেমটিকে আরো উন্নত সংস্করণে রূপান্তর করেন।
মাকামে ইব্রাহিম : মাকামে ইব্রাহিম হচ্ছে জান্নাতের অতি মূল্যবান ইয়াকুত পাথর। হজরত ইব্রাহিম (আ.) এটির উপর দাঁড়িয়ে কাবাঘর নির্মাণ করেছেন। উনার পুত্র হজরত ইসমাইল (আ.) পাথর সংগ্রহ করে এনে এগিয়ে দিতেন। আর তিনি এই পাথরের উপর দাঁড়িয়ে কাবাঘরের দেয়াল নির্মাণ করেছেন। এ সময় তার প্রয়োজন অনুযায়ী পাথরটি উঠানামা করত। তিনি পাথরটির উপর উঠে দাঁড়ালে সেটি নরম হয়ে যেত এবং তিনি যাতে শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে পারেন সেজন্য উনার পা পাথরের ভিতর অনেকটা দেবে থাকত। এর পবিত্র স্মৃতি হিসেবে হজরত ইব্রাহীম (আ.)-এর পায়ের ছাপ সংবলিত পাথরটি আজো কাবা চত্বরে সুরক্ষিত আছে।
কাবাঘরের গিলাফ : পবিত্র কাবা শরীফের গিলাফ পাঁচটি খ-ে তৈরি করা হয়। চারদিকের চারটি খ- এবং দরজার জন্য একটি। ২০ মিলিয়ন সৌদি রিয়াল বা ৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয়ে প্রতি বছর নতুন করে এই গিলাফ তৈরি করা হয়। প্রথমে খাঁটি রেশম থেকে সূতা তৈরি করে সেগুলোকে কালো রং করা হয়। অতঃপর সেই সূতো দিয়ে ১৪ মিটার চওড়া বহরের কাপড় বুনা হয়, যার উপরের এক তৃতীয়াংশে স্বর্ণের সূতো দিয়ে পবিত্র কোরআনের ক্যালিওগ্রাফি করা হয়। এই ক্যালিওগ্রাফির দৈর্ঘ ৪৭ মিটার এবং প্রস্থ ৯৫ সেন্টিমিটার। অর্থাৎ পবিত্র কাবার চারপাশের বেষ্টনী ৪৭ মিটার। এই স্বর্ণালী সূতোর ক্যালিওগ্রাফি ১৬টি ভিন্ন ভিন্ন টুকরোয় তৈরি করে চারপাশের গিলাফে স্থাপন করা হয়।
উল্লেখ্য যে, শুধুমাত্র কাবাঘরের গিলাফ তৈরির জন্য মক্কা নগরীতে একটি অত্যাধুনিক ফ্যাক্টরি রয়েছে, যাকে আরবিতে ‘মাসনা কিস্ওয়াতুল কাবা’ বলা হয়। ২০০ জন সুদক্ষ কারিগর এখানে কাজ করে এক বছরে এই একটিমাত্র গিলাফ তৈরি করে। প্রতি বছর হজের মওসুমে নতুন এই গিলাফ দিয়ে কাবাঘর আচ্ছাদিত করা হয়। অপসারিত পুরাতন গিলাফটি সৌদি কর্তৃপক্ষ টুকরো টুকরো করে মুসলিম বিশ্বের স্বনামধন্য ব্যক্তিত্ব রাষ্ট্রপ্রধানদের উপহার হিসেবে দিয়ে থাকেন। আমাদের জাতীয় মসজিদ বায়তুল মুকাররমেও এর একটি অংশ রক্ষিত আছে, যেটি সৌদি বাদশা ফাহাদ ইবনে আব্দুল আজিজ আল সউদ ভ্রাতৃপ্রতীম বাংলাদেশকে উপহার হিসেবে দিয়েছিলেন এবং বাংলাদেশের পক্ষে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান সেটি গ্রহণ করেছিলেন।
বাইতুল্লাহ শরীফ সম্পর্কে কোরআন-হাদিস যা বলে :
* এটি নিঃসন্দেহে পৃথিবীর সর্বপ্রথম ঘর ও সর্বশ্রেষ্ট উপাসনালয়, যা সারা জাহানের মানুষের জন্য হেদায়েত ও বরকতময়।
* পৃথিবীর প্রথম মানব হজরত আদম (আ.) দুনিয়ার বুকে প্রেরিত হয়ে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের একমাত্র নিদর্শনস্বরূপ এই কাবাঘরকেই পেয়েছিলেন।
* হজরত আদম (আ.) ও বিবি হাওয়া (রা.) পৃথিবীতে আগমনের পর আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে কাবাঘর তাওয়াফের নির্দেশ দেন।
* হজরত আদম (আ.) হচ্ছেন সর্বপ্রথম মানব যিনি কাবাঘর তাওয়াফ করেন।
* এখা!ন হজ করা হলো আল্লাহ তায়ালার উপর মানুষের প্রাপ্য।
* যে ব্যক্তি এর ভিতর প্রবেশ করে সে নিরাপত্তা লাভ করে।
* পবিত্র কাবাঘরকে সমস্ত পৃথিবীর মানুষের স্থিতিশীলতার মাধ্যম হিসেবে তৈরি করা হয়েছে। সূরা : আল মায়েদাহ, আয়াত-৯৭।
* যতদিন পর্যন্ত পৃথিবীর প্রতিটি দেশের মানুষ বাইতুল্লাহ শরীফের দিকে মুখ করে নামাজ আদায় করতে থাকবে ততদিন পর্যন্ত পৃথিবী প্রতিষ্ঠিত ও সংরক্ষিত থাকবে। কিন্তু যদি এমন হয় এক বৎসর ধরে একজন মানুষও কাবাঘর তাওয়াফ করল না কিংবা বাইতুল্লাহ শরীফের দিকে মুখ করে নামাজ আদায় করল না তাহলে পৃথিবীতে ব্যাপক আযাব নেমে আসবে। অন্য একটি হাদিসে আছে পবিত্র কাবাঘরের সম্মান যেদিন বিলুপ্ত হয়ে যাবে সেদিন পৃথিবীকেও বিলুপ্ত করে দেয়া হবে।
আল্লাহ রাব্বুল আলামিন সেই জাহেলিয়াতের যুগ থেকে বাইতুল্লাহ শরীফের সম্মান ও মাহাত্ম্য সাধারণ মানুষের মনে এমনভাবে স্থাপন করে দিয়েছেন যে, কেউ এই পবিত্র ঘরকে অসম্মান করার সাহস পায় না। সে সময় আরবদের মধ্যে রণউন্মাদনা ও গোত্রগত বিদ্বেষ চরমভাবে বিদ্যমান ছিল। কিন্তু মহান আল্লাহ তায়ালা তাদের মনে বাইতুল্লাহ শরীফ ও এর আনুষঙ্গিক বস্তুসামগ্রীর প্রতি সম্মান ও মাহাত্ম্য এমন বদ্ধমূলভাবে স্থাপন করেছিলেন যে ঘোরতর শত্রু কিংবা কঠিনতম অপরাধিও যদি একবার হারাম শরীফে আশ্রয় নিতে পারত তবে তার অপরাধ মাফ হয়ে যেত। এমনকি হারাম শরীফের ভিতর পিতৃ হত্যাকারীকে হাতের কাছে পেয়েও তারা চক্ষু নত করে চলে যেত। হজরত ইব্রাহিম (আ.) কাবাঘর তৈরির পর মহান আল্লাহ তায়ালার নিকট এই বলে দোয়া করেছিলেন যে, হে আল্লাহ, তুমি এই শহরটিকে একটি শান্তির ধাম বানিয়ে দাও যাতে এখানে বসবাস করা আতঙ্কজনক না হয়ে উঠে। হত্যা, লণ্ঠন, কাফেরদের অধিকার স্থাপন ও অন্যান্য বিপদ-আপদ থেকে এই শহরটিকে তুমি সুরক্ষিত ও নিরাপদ রেখো। এখানে জীবন ধারণের প্রয়োজনীয় সামগ্রী যেন সহজলভ্য হয়। হজরত ইব্রাহীম (আ.)-এর এই দোয়া আল্লাহ তায়ালা কবুল করেছিলেন। ফলে মক্কা মুকাররমা এমনভাবে সুরক্ষিত ও নিরাপদ হয়েছে যে, আজ পর্যন্ত কোনো শত্রু জাতি এই শহরের উপর অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি। তাছাড়া এই শহরটি হত্যা, লুটতরাজ থেকেও নিরাপদ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।