Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ০৭ নভেম্বর ২০২৪, ২২ কার্তিক ১৪৩১, ০৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

হবিগঞ্জে ৪ শিশু হত্যা : উঠে দাঁড়িয়েছেন নিহতদের স্বজনরা ফাঁসি দাবিতে সোচ্চার জেলাবাসী

প্রকাশের সময় : ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম

মোঃ ফজলুর রহমান, হবিগঞ্জ থেকে : হবিগঞ্জের বাহুবল উপজেলার সুন্দ্রাটিকি গ্রামে ৪ শিশুকে শ্বাসরোধে হত্যার রহস্য উন্মোচিত হওয়ায় এবং ঘাতকের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির খবরে বিছানা থেকে উঠে দাঁড়িয়েছেন নিহত শিশুদের মা, বাবা ও স্বজনরা। তারা এখন ঘাতকদের ফাঁসি দেখতে চান।
সন্ত্রাসী ও ইভটিজার হিসেবে পরিচিত স্থানীয় ফয়েজাবাদ হাইস্কুলের ছাত্র চলতি এসএসসি পরীক্ষার্থী রুবেল ঘাতক হিসেবে ধরা পড়ায় ওই স্কুলের ছাত্র/ছাত্রীরা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছেন। তার সহপাঠী ছাত্র/ছাত্রীরাও হত্যাকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করছেন। ৪ শিশু হত্যাকা-ের ঘটনায় দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী ধরা পড়ায় তার অপকর্মের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষ মুখ খুলতে শুরু করেছেন।
এমনকি ঘাতক রুবেল যে স্কুলে অধ্যয়ন করছে সেই স্কুলের প্রধান শিক্ষক প্রসিত কুমার দেব তার সন্ত্রাসের চিত্র তুলে ধরে বলেন, রুবেল স্কুলে যাওয়া আসার পথে সাধারণ ছাত্র/ছাত্রীদের খুবই বিরক্ত করত। এমনকি স্কুলের কয়েকজন ছাত্রকে প্রায়শই রাস্তায় উত্ত্যক্ত করতো। বিষয়টি একাধিকবার তার পরিবারকে জানালেও কোন কাজ হয়নি। উপরন্তু তার নির্যাতনের মাত্রা আরো বৃদ্ধি পেত।
একই স্কুলের সহকারী প্রধান শিক্ষিকা নূরে জান্নাত শেফা জানান, নির্মম খুনের ঘটনায় আতঙ্কে স্কুলে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা কমে গিয়েছিল। রুবেলের স্বীকারোক্তি ও গ্রেফতারের খবর প্রচার হওয়ায় শনিবার থেকে স্কুলে শিক্ষার্থীর উপস্থিতির সংখ্যা অনেক বেড়েছে। তবে এখনো পুরো পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়নি। বাকি অপরাধীরা ধরা পড়লে আশা করছি একেবারেই স্বাভাবিক হয়ে যাবে। তিনি দ্রুত হত্যাকারী নরপিশাচদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবী করেন।
এদিকে, নিহত শিশুদের বাবা-মায়েরা অবিলম্বে ঘাতকদের ফাঁসি দাবি করে বলেন- তাদের শিশুদের যেভাবে হত্যা করা হয়েছে ঘাতকদের যেন সেভাবেই মৃত্যুদ- কার্যকর করা হয়। তারা বলেন, ঘাতকদের এমন শাস্তি দেয়া হোক যাতে ভবিষ্যতে এমন নির্মম ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে। আর কোন মাকে যেন সন্তানহারা না হতে হয়। কোন বাবাকে যেন পুত্র হারা না হতে হয়। কোন ভাই-বোন যেন তাদের ভাই হারা না হতে হয়।
নিহত প্রথম শ্রেণির ছাত্র মনির-এর পিতা আবদাল মিয়া জানান, আমরাতো আর কখনো সন্তানদের ফিরে পাব না। আমার নিষ্পাপ শিশুকে যেভাবে হত্যা করেছে ঘাতকদের ঠিক সেইভাবে মৃত্যু কামনা করি। সরকার ও প্রশাসনের কাছে একটাই দাবী এদেরকে দ্রুত শাস্তির আওতায় আনার ব্যবস্থা করা হোক।
নিহত শিশু জাকারিয়া আহমেদ শুভর পিতা ওয়াহিদ মিয়া গতকালও কান্না জড়িত কণ্ঠে পুত্রকে ডাকছেন। বার বারই মূর্ছা যাচ্ছেন কিছুতেই যেন পুত্র শোক ভুলতে পারছেন না তিনি।
এদিকে তালুকদার পঞ্চায়েতের সর্দার অবসরপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষক আব্দুল খালেক জানান, আমরা ভাবতেও পারিনি এত বড় নির্মম ঘটনা আমাদের গ্রামে ঘটতে পারে। পঞ্চায়েত বিরোধের জের চার চারটি নিষ্পাপ শিশুকে হত্যাকারী নরঘাতক। আমরা এর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।
নিহত মাদ্রাসা ছাত্র ইসমাইলের মা মিনারা বেগম এক মাত্র পুত্রকে হারিয়ে এখনো কান্নায় বাকরুদ্ধ হয়ে পড়ছেন। আর হত্যাকারীদের ফাঁসির দাবী জানাচ্ছেন। তিনি বার বারই বলছেন, হত্যাকারীদের বাঁচাতে এখনো একটি পক্ষ সক্রিয় রয়েছে। এ নিয়ে যেন কোন রাজনীতি না করা হয়।
এদিকে বাহুবলের সুন্দ্রাটিকি গ্রামের চাঞ্চল্যকর ৪ শিশু হত্যার ঘটনায় নিহতদের পরিবারের সন্দেহের প্রেক্ষিতে সালেহ উদ্দিন আহমেদ (২৭) নামে এক যুবককে আটক করে পুলিশে দিয়েছে স্থানীয় জনতা। শনিবার সকাল ১১টায় তাকে সুন্দ্রাটিকি গ্রাম থেকে তাকে আটক করা হয়। আটকের পর সালেহ উদ্দিন আহমেদকে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ কার্যালয়ে নিয়ে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। আটক সালেহ উদ্দিন আহমেদ গ্রেফতারকৃত বশির মিয়ার ভাই।
এর আগে পুলিশ আরো ৫ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। গ্রেফতারকৃতরা হলো- ওই গ্রামের আব্দুল আলী বাগাল, তার পুত্র জুয়েল মিয়া ও রুবেল মিয়া, বশির, আরজু। এর মাঝে আব্দুল আলী বাগাল ও তার ছেলে জুয়েল মিয়াকে ১০ দিন করে রিমান্ডে পুলিশ। এছাড়া আব্দুল আলী বাগালের পুত্র রুবেল ইতিমধ্যে শুক্রবার সন্ধ্যায় ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করে সে হত্যার লোমহর্ষক বর্ণনা দেয়।
লোমহর্ষক হত্যাকা-ের ঘটনায় জড়িতদের ফাঁসির দাবিতে ফুঁসে উঠছে বাহুবলসহ জেলার মানুষ। শিক্ষক, শিক্ষার্থী, সচেতন নাগরিক সমাজসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ মানববন্ধনের আয়োজন করে। শনিবার দিনভর এসব মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
বাহুবল থানার ওসি মোশাররফ হোসেন জানান, শনিবার সকালে স্থানীয় লোকজন সালেহ উদ্দিন আহমেদকে ঘেরাও করে পুলিশে খবর দেয়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে তাকে আটক করে। পরে বাহুবল থানা পুলিশ সালেহকে ডিবি পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে। বর্তমানে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: হবিগঞ্জে ৪ শিশু হত্যা : উঠে দাঁড়িয়েছেন নিহতদের স্বজনরা ফাঁসি দাবিতে সোচ্চার জেলাবাসী
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ