পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
শুনানিতে আইনজীবীদের মধ্যে উত্তেজনা আমি কারো দ্বারা প্রভাবিত নই -বিচারক
মালেক মল্লিক : জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার আত্মপক্ষ সমর্থনে পরবর্তী শুনানির জন্য ১২ জানুয়ারি ধার্য করেছেন আদালত। গতকাল বৃহস্পতিবার খালেদা জিয়ার সময় আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তৃতীয় বিশেষ জজ আবু আহমেদ জমাদার এদিন ঠিক করে দেন। এছাড়া জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার বিচারকার্য এক সপ্তাহের জন্য মুলতবি করেছেন বিশেষ আদালত। এসময় বিচারক বলেছেন, আমি কারো দ্বারা প্রভাবিত নই। আমার সামনে আসা সাক্ষ্য-প্রমাণ অনুযায়ী আমি বিচারকাজ করব। রায় কী হবে এবং রায়ের পরে কী হবে, সে বিষয়ে আমি ভাবি না। আমি বিশ্বাস করি, সৃষ্টিকর্তা আমায় রক্ষা করবেন। এদিকে গতকাল খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার শুনানিকালে আইনজীবীদের মধ্যে এক ধরনের উত্তেজনা ও হট্টগোল পরিবেশের সৃষ্টি হয়। পরে সিনিয়র আইনজীবীদের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। এজন্য এক আইনজীবী আদালতে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করেন।
রাজধানীর পুরান ঢাকার বকশীবাজারে আলিয়া মাদরাসা সংলগ্ন মাঠে স্থাপিত বিশেষ জজ আদালত-৩-এর অস্থায়ী এজলাসে দুদকের দায়ের করা জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট ও জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় বিচারকার্য চলছে।
গতকাল জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় আত্মপক্ষ সমর্থন করে খালেদা জিয়ার অসমাপ্ত বক্তব্য উপস্থাপনের তারিখ ধার্য ছিল। বেলা সাড়ে ১১টায় গুলশানের বাসভবন থেকে খালেদা জিয়া এ মামলায় হাজিরা দিতে আদালত প্রাঙ্গণে এসে পৌঁছান। এরপর জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় আত্মপক্ষ সমর্থন করে খালেদা জিয়া অসমাপ্ত বক্তব্য দেন। এসময় তার আইনজীবীরা সময় চেয়ে আবেদন করলে আদালত ১২ জানুয়ারি বক্তব্য উপস্থাপনের তারিখ ধার্য করেন। একই সঙ্গে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায়ও আসামিদের আত্মপক্ষ সমর্থনের দিন ধার্য ছিল। তবে খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা এ মামলায় নতুন করে একজনের সাক্ষ্য নেয়ার আবেদন জানালে আদালত তা মঞ্জুর করেন। ফলে এ মামলায় আত্মপক্ষ সমর্থন হয়নি। আদালতে খালেদা জিয়ার পক্ষে ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার, এ জে মোহাম্মদ আলী, জয়নুল আবদিন, সানাউল্লাহ মিয়া, আবদুর রেজাক খান এবং মাহবুব উদ্দিন খোকনও শুনানিতে অংশ নেন। অন্য দিকে, দুদকের পক্ষে মোশারফ হোসেন কাজল শুনানি করেন।
শুরুতে খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা আদালতকে জানান, যেহেতু আত্মপক্ষ সমর্থনের বিষয়ে একটি আবেদন হাইকোর্টে বিচারাধীন রয়েছে, তাই এ মুহূর্তে এই মামলার শুনানি করা যুক্তিযুক্ত হবে না। উচ্চ আদালতের সিদ্ধান্তের পর খালেদা জিয়া আত্মপক্ষ সমর্থনের বিষয়ে বক্তব্য দেবেন বলে জানান আইনজীবীরা।
অন্য দিকে, দুদকের আইনজীবীরা বলেন, আত্মপক্ষ সমর্থনে আদালত খালেদা জিয়াকে তিনটি প্রশ্ন করেছিলেন। এ প্রশ্নগুলোর উত্তর তিনি প্রায় দিয়ে দিয়েছেন। শুধু একটি প্রশ্নের আংশিক উত্তর বাকি রয়েছে। এ অবস্থায় মামলার কার্যক্রমকে ব্যাহত করতে অতিরিক্ত সময় চাওয়া হচ্ছে। এরপর আদালত ১২ জানুয়ারি বক্তব্য উপস্থাপনের তারিখ ধার্য করেন। এরপর শুরু হয় জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার শুনানি। এসময় খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা ঘটনার অনুসন্ধান কর্মকর্তা দুদকের তৎকালীন পরিচালক নূর মোহাম্মদের সাক্ষ্য গ্রহণের আবেদন জানান। এরপর আদালত বিরতিতে যান।
বিরতি চলাকালে আদালত কক্ষে খালেদা জিয়াকে চা-বিস্কুট খেতে দেখা যায়। আর আদালতে উপস্থিত বিএনপি নেতাদের কলা-রুটি দিয়ে দুপুরের খাবার সারতে দেখা যায়। বেলা আড়াইটার দিকে বিচারক এজলাসে এলে উভয় পক্ষের আইনজীবীরা আদালতে তাদের বক্তব্য দেন। এসময় আদালত প্রাঙ্গণে উভয় পক্ষের মধ্যে এক ধরনের উত্তেজনাকর পরিবেশ সৃষ্টি হয়। বিএনপি সমর্থিত আইনজীবীরা বলেন, খালেদা জিয়া অসুস্থ, তিনি দুপুরের খাবার খেতে পারেননি, নামাজও পড়তে পারেননি, ওষুধ খেতে পারেননি এসব কথা বলতে থাকেন। এক পর্যায়ে বিএনপিপন্থী একজন আইনজীবী টেবিল চাপড়াতে থাকেন। বিএনপির আইনজীবীরা বিচারককে উদ্দেশ্য করে বলেন, আপনি মানবাধিকার লংঘন করেছেন। আপনি খেয়েছেন, অথচ বেগম জিয়া এখনো কিছুই খাননি।
বিএনপির আরেক আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া বলেন, আপনি আগে বললে আমরা ম্যাডামের খাওয়ার প্রস্তুতি নিয়ে আসতাম। সিনিয়র আইনজীবীদের উদ্দেশ্য করে বিচারক বলেন, ডায়াসে কে থাপ্পড় মেরেছেন, তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেব। শুনেছি, আমি আসার আগে নাকি আদালতে এ ধরনের কর্মকা- হতো। আজ তার বাস্তব প্রমাণ পেলাম। চলতে থাকে আইনজীবীদের মধ্যে হট্টগোল। পরে সিনিয়র আইনজীবীদের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হয়। এরপর বিচারকের সামনে এসে আইনজীবী হোসেন আলী খান হাসান বলেন, স্যার আমি থাপ্পড় মেরেছি। ভুল হয়ে গেছে। এবারের মতো ক্ষমা করে দেন। তখন বিচারক তাকে ক্ষমা করে দেন।
এই পর্যায়ে এসে আদালত বলেন, আমি কারো দ্বারা প্রভাবিত নই। আমার সামনে আসা সাক্ষ্য-প্রমাণ অনুযায়ী আমি বিচারকাজ করব। রায় কী হবে এবং রায়ের পরে কী হবে, সে বিষয়ে আমি ভাবি না। আমি বিশ্বাস করি, সৃষ্টিকর্তা আমাকে রক্ষা করবেন। আদালত এই বক্তব্য দিয়ে এক সপ্তাহ সময় মঞ্জুর করে এ মামলার কার্যক্রম মুলতবি করেন। এরপর খালেদা জিয়াও আদালত ত্যাগ করেন।
গত ১ ডিসেম্বর খালেদা জিয়া তার আত্মপক্ষ সমর্থনে আংশিক বক্তব্য রাখেন। পরবর্তী সময়ে ১৫ ডিসেম্বর খালেদা জিয়া ধার্য তারিখে আদালতে হাজির না হয়ে সময়ের আবেদন করেন। ওইদিন বিচারক সময়ের আবেদন মঞ্জুর করে খালেদা জিয়াকে ২২ ডিসেম্বর আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেন। এরপর ২২ ডিসেম্বর আদালতে হাজির হলে ৫ জানুয়ারি হাজিরার পরবর্তী দিন ঠিক করা হয়।
অন্য দিকে, গত ১ ডিসেম্বর চ্যারিটেবল মামলার রাষ্ট্রপক্ষের ৩২ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য বাতিল করে আবার নেয়ার জন্য খালেদা জিয়ার আবেদন শুনানি শেষে আবেদনটি খারিজ করে দেয়া হয়। এই খারিজ আদেশের বিরুদ্ধে ৬ ডিসেম্বর খালেদা জিয়া হাইকোর্টে একটি রিভিশন আবেদন করেন। উচ্চ আদালতে ওই আবেদন শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।