দেশে দেশে রোজার উৎসব
মাহে রমজান আরবী নবম মাসের নাম। চাঁদের আবর্তন দ্বারা যে এক বৎসর গণনা করা হয়,
মুহাম্মদ নাজমুল ইসলাম
হারাম শরীফের বাইরের একাংশ :
কোরআন হাদিসের আলোকে জানা যায় যে, মহান আল্লাহ তায়ালার নির্দেশে ফেরেশতাগণ কর্তৃক পবিত্র কাবাঘর নির্মাণের মাধ্যমে পৃথিবীর সূচনা হয়েছিল। সেটি আরবের মক্কা মুকাররামায় অবস্থিত পৃথিবীর সবচেয়ে পবিত্র ও সর্বশ্রেষ্ট মসজিদÑমসজিদুল হারামে অবস্থিত। কাবা ঘরকে মুসলিম উম্মাহর কেবলা ও তীর্থস্থান হিসেবে মসজিদুল হারামের ভিতরে নির্মাণ করা হয়েছে। আল্লাহর এই ঘর সমস্ত পৃথিবীর কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত এবং সারা বিশ্বের ভারসাম্য রক্ষাকারী এটি। পবিত্র কোরআনে কাবা ঘরকে বিশ্বের সবচেয়ে পবিত্র ও মূল্যবান স্থান হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। সৌদি বাদশাহ আবদুল্লাহ বিন আজিজ কর্তৃক সম্প্রসারণের পর ২০১১ সালের হিসাব অনুযায়ী এই কাবা ঘরকে ঘিরে নির্মিত মসজিদুল হারামের আয়তন ৪ লক্ষ বর্গমিটার বা ৪৩ লক্ষ বর্গফুট। স্বাভাবিক ধারণক্ষমতা অনুযায়ী এতে একসাথে ৯ লক্ষ মুসুল্লি নামাজ আদায় করতে পারে। তবে হজ বা রমজানের মওসুমে অতিরিক্ত আরো ৪০ লক্ষ লোকের স্থান সংকুলান হয় মসজিদুল হারামে। এই মসজিদুল হারামে এক রাকাত নামাজ পড়ার সওয়াব অন্য যে কোনো জায়গায় এক লক্ষ রাকাত নামাজ পড়ার সওয়াবের সমান। এর উচ্চতা ৮৯ মিটার বা ২৯২ ফুট। এতে মিনার আছে ৯টি। উল্লেখযোগ্য গেট বা প্রবেশদ্বারগুলো হচ্ছেÑ
(১) বাদশা আব্দুল আজিজ গেট (২) বাদশাহ ফাহাদ গেট (৩) আল ফাতাহ গেট (৪) ওমরাহ গেট (৫) আজইয়াদ গেট (৬) হজরত বেলাল (রা.) গেট (৭) হুনাইন গেট (৮) হজরত ইসমাইল (রা.) গেট (৯) সাফা গেট (১০) বনী হাশে গেট (১১) হজরত আলী (রা.) গেট (১২) হজরত আব্বাস (রা.) গেট (১৩) নবী (সা.) গেট (১৪) আস সালাম গেট (১৫) শায়রা গেট (১৬) আল হুজুন গেট (১৭) উমলাত গেট (১৮) আল মুদ্দাআ গেট (১৯) আল মারওয়া গেট (২০) আল মুহসাব গেট (২১) আল আরাফাহ গেট (২২) মীনা গেট (২৩) হজরত ওমর (রা.) গেট (২৪) আর নাদওয়া গেট (২৫) আল সামিয়া গেট (২৬) আল কুদস গেট (২৭) আল মদিনা গেট (২৮) আল হুদায়বিয়া গেট। এরমধ্যে প্রথম চারটি গেটকে প্রধান গেট হিসেবে বিবেচনা করা হয়। মসজিদুল হারামের কতিপয় অনন্য বৈশিষ্ট্য :
পবিত্র কাবা ঘরকে ঘিরে তৈরি মসজিদুল হারামের কতিপয় বিভাগ রয়েছে যেগুলো বিশেষ বৈশিষ্টম-িত। এগুলো হচ্ছে :Ñ
১. পবিত্র কাবা শরীফ ২. হাজরে ইসমাইল ৩. যমযম কূপ ৪. মাকামে ইব্রাহীম ৫. সাফা-মারওয়া ৬. মাতাফ ও মাসওয়া ( তাওয়াফ ও সায়ীর স্থানসমূহ) ৭. হজরে আসওয়াদ ৮. মীযাবে রহমত ৯. মূলতাযীম (দোয়া কবুলের স্থান)
পবিত্র কাবা শরীফ নির্মাণ ইতিহাস-
আল্লাহ তায়ালার নির্দেশে মানব সৃষ্টিরও পূর্বে কাবা ঘর সর্বপ্রথম তৈরি করেন ফেরেশতাগণ। এরপর আদি মানব হজরত আদম (আ.) এটি পুনঃনির্মাণ করেন। হজরত নূহ (আ.)-এর সময়ে মহাপ্লাবণে কাবাঘর প্রায় নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছিল। তখন আল্লাহ তায়ালা ওহীর মাধ্যমে হজরত ইব্রাহীম (আ.)-কে কাবার স্থান দেখিয়ে দেন এবং পুনঃনির্মাণের নির্দেশ দেন। নির্দেশমতো হজরত ইব্রাহিম (আ.) স্বীয় পুত্র হজরত ইসমাইল (আ.)-কে সাথে নিয়ে কাবাঘর পুনঃনির্মাণ করেন। এরপর হজরত জিবরাইল (আ.) জান্নাত থেকে হজরে আসওয়াদ পাথর নিয়ে এসে এটিকে কাবাঘরে স্থাপনের নির্দেশ দেন। জান্নাতের এই পবিত্র পাথরটি তখন বরফ খ- বা দুধের মতো ধবধবে সাদা ছিল। কিন্তু পরবর্তীতে মানুষের পাপের স্পর্শ নিতে নিতে এটি কালো রং ধারণ করেছে। যাই হোক, হজরত ইব্রাহিম (আ.) কর্তৃক পুনঃনির্মাণের তিরিশ বছর পর জনৈক মহিলা কর্তৃক কাবাঘরে সুগন্ধি দানকালে আগর বাতির ধোঁয়া থেকে অগ্নিকা-ে কাবাঘরের ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়। তখন কুরাইশরা কাবাঘরের সংস্কার সাধনের উদ্যোগ গ্রহণ করে এবং হজরত ইব্রাহিম (আ.) কর্তৃক স্থাপিত ভিত্তির কিছুটা পরিবর্তন সাধন করেন। হজরত ইব্রাহিম (আ.) কর্তৃক নির্মিত কাবাঘরের দরজা ছিল দুটি। একটি কাবাঘরে প্রবেশের জন্য আর অন্যটি পশ্চাৎমুখী হয়ে কাবাঘর থেকে বের হওয়ার জন্য। কিন্তু কুরাইশরা সংস্কারের সময় কাবাঘরের শুধু পূর্বদিকের দরজাটি খোলা রাখে। তাছাড়া ঐ সময় কাবাঘরের দরজা অনেক উঁচুতে তৈরি করা হয় যাতে যে কেউ যখন ইচ্ছে বিনা অনুমতিতে কাবাঘরে প্রবেশ করতে না পারে। পরবর্তীতে মক্কা বিজয়ের পর মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) কাবাঘর থেকে সমস্ত মূর্তি অপসারণ করেন এবং এটাকে ধুয়ে-মুছে পরিষ্কার করে পবিত্র গিলাফ দিয়ে ঢেকে দেন। এরপর জিয়ারতকারীদের সংখ্যা অত্যধিক বৃদ্ধির কারণে দ্বিতীয় খোলাফায়ে রাশেদীন হজরত উমর ইবনুল খাত্তাব (রা.) মসজিদুল হারামের সংস্কার ও সম্প্রসারণ করেন। সেজন্যে তিনি মসজিদ সংলগ্ন জমি ও ব্যক্তিগত বাড়িঘর উপযুক্ত মূল্যে কিনে নিয়ে মসজিদুল হারামের আয়তন বৃদ্ধি করেন। ফলে মাতাফ ও তাওয়াফের স্থান সম্প্রসারিত হয়। (চলবে)
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।