বাংলাদেশের জনজীবন ও অর্থনীতিতে ফারাক্কা বাঁধের বিরূপ প্রতিক্রিয়া
ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে প্রবাহিত গঙ্গার ওপর নির্মিত ভারতের ফারাক্কা বাঁধের প্রতিক্রিয়া যেমন বাংলাদেশের অর্থনৈতিক
হোসেন মাহমুদ : সাম্প্রতিক বাংলাদেশে আরো অনেক কিছুই আছে, তবে যা একেবারেই নেই তাহল রাজনৈতিক উত্তাপ-উত্তেজনা আর জনজীবনে তার নেতিবাচক প্রভাব। এর ফলে সারাদেশে নিরবচ্ছিন্ন শান্তি বিরাজ করছে। বাংলাদেশের মানুষ বহুদিন যা দেখে অভ্যস্ত ছিল তা আর এখন দেখতে হয় না। না মিটিং-মিছিল, না বিক্ষোভ-সমাবেশ, না জনতা-পুলিশ সংঘর্ষ, না টিয়ারগ্যাস-লাঠিপেটা, না নিরীহ মালিকের বাস-প্রাইভেট কার ভাংচুর। সাধারণ মানুষ রাজনীতিতে উৎসাহ হারিয়েছে কি না তা নিয়ে গবেষণা হতে পারে, তবে তারা যে বর্তমান বিরাজিত রাজনৈতিক শান্তির ঘোরতর পক্ষপাতী তাতে কোনো সন্দেহ নেই। কারো কারো ধারণা, ২০১৪ সালের পর থেকে এ দেশের রাজনৈতিক চালচিত্রে নীরব পরিবর্তন ঘটেছে। এ পরিবর্তনের আওতায় আগামীতে রাজনৈতিক দলগুলোকে দাবি আদায়ের জন্য আর মিছিল-সেøাগানে রাজপথ কাঁপাতে দেখা যাবে কি না তা নিয়ে সন্দেহ আছে। কারণ, রাজনৈতিক আন্দোলনে প্রকৃতপক্ষে জনগণের আশা-আকাক্সক্ষা বাস্তবায়ন না করার, রাজনৈতিক কর্মকা- সহিংস রূপ নেয়ার ও বিরোধী দলকে দমনের ইতোমধ্যে যে নজির স্থাপিত হয়েছে তা সহজে পরিবর্তিত নাও হতে পারে। আর যদিবা তা পরিবর্তিত হয়ও, তাহলে যারা ক্ষমতায় আসবে তারাও অব্যবহিত পূর্বেরই নজির অনুসরণ করবে। আরেকটু স্পষ্ট করে বললে বলতে হয় যে, প্রধান বিরোধী রাজনৈতিক দলকে মিছিল-আন্দোলন-সভা-সমাবেশ করতে না দেয়ার মধ্যে শক্তিপ্রদর্শন ও আত্মপ্রসাদ লাভের সুযোগ আছে। কারো কারো কাছে শুনতে খারাপ লাগলেও লাগতে পারে, কিন্তু ক্ষমতাসীন দল তারিয়ে তারিয়ে সে সুযোগ উপভোগ করছে। তারা যে প্রচারণার ধারা চালু করেছে বলে দেখা যাচ্ছে তাতে শুধু ক্ষমতাসীন দলই দেশের উন্নয়ন কাজ করে, আর কেউ নয়। সুতরাং যত রাজনৈতিক কর্মকা-ের অধিকার শুধু তাদেরই আছে। যাহোক, এ পরিস্থিতির মধ্যে ৫ জানুয়ারির তৃতীয় বর্ষ পূর্তি উপলক্ষে দেশের দুই প্রধান রাজনৈতিক দলের মধ্যে যৎসামান্য উত্তাপ দেখা দিয়েছে। তবে তা বসে থাকা মানুষের উঠে হাঁটাহাটি করে গা গরমের মতো ব্যাপার, উদ্বেগ সৃষ্টির মতো কিছু নয়।
ফিরে এলো আরেকটি ৫ জানুয়ারি। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি একটি ঐতিহাসিক দিনে পরিণত হয়েছে। এ দিন অনুষ্ঠিত একতরফা ও বিতর্কিত নির্বাচনের পূর্বাপর ঘটনা কারো পক্ষে ভোলা সম্ভব নয়। না ঘটনার দিক দিয়ে, না গুরুত্বের দিক দিয়ে। বিশেষ করে এ ধরনের ঘটনা যে বাংলাদেশের বুকে ঘটতে পারে তা ছিল কল্পনারও বাইরে। ১৯৯১ সালে বাংলাদেশে নতুন গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা চালু হওয়ার পর নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ ব্যক্তির প্রয়োজন দেখা দেয়। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যকার পারস্পরিক অবিশ^াসের পটভূমিতে তাদের মধ্যে কারো উপর কারো আস্থা ন্যস্ত করা সুযোগ না থাকায় তৎকালীন প্রধান বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদের উপর নির্বাচন অনুষ্ঠানের দায়িত্ব বর্তায়। তিনি সাধ্যমত নিষ্ঠার সাথে এ দায়িত্ব পালন করেন। ক্ষমতায় আসে বিএনপি। ’৯৬ সালে অনুষ্ঠেয় নির্বাচন যাতে অবাধ ও সুষ্ঠু হয় সে জন্য আওয়ামী লীগ ও জামায়াতসহ অন্য মিত্রদের সম্মিলিত দাবিতে আসে তত্ত্বাবধায়ক সরকার। প্রাপ্ত তথ্যমতে, ১৯৯৩ সালে প্রথমে জামায়াত ও পরে আওয়ামী লীগ সংসদ সচিবালয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিল পেশ করে। তারপর অনেক ঘটনার পর ১৯৯৬-এর মার্চে ত্রয়োদশ সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার প্রবর্তন ঘটে। বিচারপতি হাবিবুর রহমান হন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান। তার আয়োজনে ১২ জুন অনুষ্ঠিত নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জয়ী হয় এবং সে বিজয় অন্যরা মেনে নেয়্। ২০০১ সালেও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ক্ষমতায় আসে বিএনপি। আওয়ামী লীগও আপত্তি সত্ত্বেও বিএনপির বিজয় মেনে নেয়। ২০০৬ সালে বিএনপি সরকারের মেয়াদের শেষপর্যায়ে সৃষ্ট রাজনৈতিক গোলযোগের পথ ধরে দেশে আসে সামরিক হস্তক্ষেপ ও তার পরিণতিতে সামরিক বাহিনী সমর্থিত তত্ত¦াবধায়ক সরকার; যার প্রধান হন ফখরুদ্দীন আহমদ ও ছায়া নিয়ন্ত্রক হন সেনাপ্রধান জেনারেল মইন ইউ আহমেদ। এ সামরিক সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের তত্ত¦াবধানেই অনুষ্ঠিত হয় ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচন, যাতে বিপুলভাবে বিজয়ী হয় আওয়ামী লীগ এবং শোচনীয়ভাবে পরাজিত হয় বিএনপি।
কারো কারো ধারণা, আওয়ামী লীগ সাত বছর পর ক্ষমতায় এসে ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করার সুপরিকল্পিত চিন্তায় উজ্জীবিত হয়। এদিকে ত্রয়োদশ সংবিধান সংশোধনের বিরুদ্ধে কয়েকজন আইনজীবী একটি রিট করেন। ২০০৪ সালে সে রিটের রায়ে হাইকোর্ট তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে বৈধ ঘোষণা করেন। তার বিরুদ্ধে রিটকারীরা আপিল বিভাগে যান। দীর্ঘ সময় পর ২০১১ সালের ১০ মে প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হকের নেতৃত্বে আপিল বিভাগের ৬ বিচারপতি ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল করেন। রায়ে বলা হয়, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের চেতনা সংবিধানের মূল চেতনার সাথে সাংঘর্ষিক। তবে রায়ে এও বলা হয়, বাংলাদেশে আরো দু’টি নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে হতে পারে। এই রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে। রায়ে আরো দু’টি নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠান প্রসঙ্গে বলা হয় যে, ওটা রায়ের অংশ নয়, পর্যবেক্ষণ। তাতে সংসদের অনুমোদন সাপেক্ষে উল্লেখ ছিল। পরে মন্ত্রিসভার অনুমোদনের পর এটি বিল আকারে জাতীয় সংসদে উত্থাপিত ও অনুমেদিত হয়। বিনপি প্রথমে তত্ত¦াবধায়ক সরকার ব্যবস্থার বিরোধিতা করেছিল। পরে সে বিএনপিই তত্ত¦াবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বহাল রাখা ও পরবর্তী জাতীয় নির্বাচন এ ব্যবস্থাতেই অনুষ্ঠিত করার দাবিতে আন্দোলনে নামে। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকার তাদের দাবি মেনে না নেয়ায় বিএনপি ও তাদের নেতৃত্বাধীন জোট ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় নির্বাচন বর্জন ও প্রতিহত করার ঘোষণা দেয়। সরকার তার সিদ্ধান্তে অনড় থাকে। অবশেষে বিদ্যমান অচলাবস্থার প্রেক্ষাপটে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আলোচনার জন্য বেগম খালেদা জিয়াকে টেলিফোন করেন। উভয়ের মধ্যে বেশ কিছুক্ষণ কথা হলেও তা তিক্ততার ঊর্ধ্বে উঠতে পারেনি। এরপর সরকার ৫ জানুয়ারির নির্বাচন সফল করতে সর্বশক্তি প্রয়োগ করে। র্যাব, পুলিশ ও বিডিআরের সর্বাত্মক সহযোগিতায় তা সম্পন্নও হয়। এ নির্বাচনের বৈশিষ্ট্য ছিল- বিএনপি নির্বাচন বর্জন করায় তাদের নেতৃত্বাধীন জোটের কোনো দল অংশ নেয়নি।
অন্যদিকে নীতিগত কারণে কম্যুনিস্ট পার্টি ও অন্যান্য বামদলগুলোও এ নির্বাচন বর্জন করে। ফলে তা শধু আওয়ামী লীগ ও তার মিত্র দলগুলোর নির্বাচনে পরিণত হয়, যাদের মধ্যে ছিল জাতীয় পার্টি ও জাসদ (ইনু)। এর ফলে কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় নির্বাচনের আগেই ১৫৩টি আসনে আওয়ামী লীগ ও জোট প্রার্থীরা বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। বাকি আসনগুলোতেও নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় নামকাওয়াস্তে প্রায়। ভোটের দিন ৫ জানুয়ারি দেশব্যাপী ভোটকেন্দ্রগুলোর বেশিরভাগই ভোটারশূন্য, প্রায় ভোটারশূন্য দেখা গেছে। কোনো কোনো ভোটকেন্দ্রের প্রাঙ্গনে অবলা প্রাণিদের ঘাস খেতেও দেখা গেছে। কোনো কোনো ভোটকেন্দ্রে হামলা হওয়ার কথাও শোনা যায়। এভাবেই সম্পন্ন হয় নির্বাচন। বেসরকারি পর্যায়ে পর্যবেক্ষকরা ৫ থেকে ১০ শতাংশ ভোট পড়ার কথা বলেন। বিএনপির দাবিও ছিল সে রকমই। তবে নির্বাচন কমিশন ৪০ শতাংশ ভোট পড়ার কথা বলে। বিএনপি চেয়ারপারসন এ নির্বাচন হতে দেয়া হবে না বলে জোর ঘোষণা দিয়েছিলেন। তার আহবানে বিএনপি-জামায়াত ও জোটভুক্ত দলের লোকেরা নিশ্চয়ই নির্বাচনে যাননি। কিন্তু তারা না গেলেও সরকার নির্বাচন অনুষ্ঠান করে। তার ঘোষণা অনুযায়ী নির্বাচন হতে দেয়া হবে নাÑ এ কথাটির মর্যাদা রক্ষিত হয়নি। তার কথামত তার দল ও সমমনা দলের অনুসারীরা ভেবেছিলেন যে তিনি যখন বলেছেন তখন সরকার নির্বাচন করতে সক্ষম হবে না। নির্বাচনের পর সমর্থকরা দেখলেন, তার কথার উপর আস্থা রেখে তারা সুফল পাননি। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ সমর্থক নন এমন বিপুল সংখ্যক মানুষ এবং এমনকি আওয়ামী সমর্থকরাও দেখলেন শেখ হাসিনা যা বলেন তাই-ই করেন। তারা ভোটকেন্দ্রে না গেলেও, ভোটাধিকার প্রয়োগ না করলেও জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়, এমপিরা নিজেদের নির্বাচিতই মনে করেন এবং সরকারও জনগণের ভোটে নির্বাচিত নয় বলে কোনো লজ্জা বা অস্বস্তি বোধ করে না।
আরো দেখা গেল যে, এ সংসদ নিয়ে সরকার দিব্যি সংসদীয় কার্যক্রম পরিচালনা করছে। যথারীতি আইন পাশ হচ্ছে এবং এ সংসদে নিয়ম মোতাবেক বিরোধী দলও সৃষ্টি করা হয়েছে, যারা কিনা সরকারিদলের নেতৃত্বাধীন জোটের প্রধান সহযোগী দল। আর সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে বিশে^ গণতন্ত্রের প্রবক্তা, রক্ষক, পাহারাদার বলে যারা পরিচিত সেই যুক্তরাষ্ট্র এ নির্বাচনে অসন্তোষ প্রকাশ করে সকল রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের উপর গুরুত্ব আরোপ করলেও, যুক্তরাজ্যসহ ইউরোপীয় ইউনিয়ন একে ত্রুটিপূর্ণ নির্বাচন বলে আখ্যায়িত করা সত্ত্বেও নতুন একটি সর্বজনের গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য কেউই সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি করেনি। বরং যতদিন গেছে, ভারতের ব্যাপক সমর্থনের উপর ভিত্তি করে সরকার ত্রুটিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের অস্বস্তি কাটিয়ে উঠে শক্তিশালী হয়ে উঠছে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, সরকার এখন ৫ জানুয়ারির নির্বাচনকে সম্পূর্ণ বৈধ বলেই মনে করছে।
তাহলে দেখা যাচ্ছে যে, এক সময় দেশ্রে অন্যূন ৩৫ থেকে ৪০ শতাংশ জনসমর্থন (বর্তমানে একই সংখ্যক সমর্থন নাও থাকতে পারে) প্রাপ্ত দল বিএনপি ও তার নেতৃত্বাধীন জোট এবং কম্যুনিস্ট পার্টিসহ সকল বামদলের দেশের জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক) ছাড়াও সাধারণ নির্বাচন করা যায়। সে নির্বাচনের সংসদ নিয়ে দেশও পরিচালনা করা যায়।
এ নির্বাচনের পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহ সবারই জানা। বিএনপি গোটা ২০১৪ সাল নিশ্চুপ থাকার পর বছর শেষে এসে ২০১৫ সালে ৫ জানুয়ারি তাদের ভাষায় প্রহসনের নির্বাচনের প্রথম বর্ষপূর্তিতে প্রতিবাদ সমাবেশের কর্মসূচি ঘোষণা করে। তারপর সরকার গুলশানে বিএনপি কার্যালয় বালির ট্রাক দিয়ে ঘেরাও করে। ৫ জানুয়ারি সমাবেশে যোগদানের জন্য বেগম খালেদা জিয়াকে অফিস থেকে বের হতে না দেয়ায় তিনি একটানা অবরোধ কর্মসূচির ঘোষণা দেন। এর পরপরই শুরু হয় বাংলাদেশের ইতিহাসের সহিংসতম অধ্যায়। দেশের নানা স্থানে যাত্রীবাহী বাস, ট্রাকসহ অন্যান্য যানবাহনে নিষ্ঠুরভাবে অগ্নি সংযোগের ঘটনা ঘটে। এতে অনেক নিরীহ মানুষের প্রাণহানি ঘটে। বহু মানুষ অগ্নিদগ্ধ হয়। সরকার এর জন্য বিএনপিকে দায়ী করে। ৯২ দিন পর অনানুষ্ঠানিকভাবে এ কর্মসূিচর অবসান ঘটে। বিএনপি আগাগোড়াই এ সহিংসতার জন্য তাদের দায় থাকার কথা অস্বীকার করে। তখন এবং পর বিএনপির প্রায় সকল কেন্দ্রীয় নেতাসহ সাধারণ কর্মীদের এই সহিংসতা ও মানুষ হত্যার দায়ে অভিযুক্ত করে তাদের নামে হাজার হাজার মামলা দায়ের করা হয়। শোনা যায়, কোনো নেতার নামে শ’ খানেক বা তার বেশিও মামলা আছে। এ সব মামলায় তাদের গ্রেফতার, রিমান্ডে নেয়া, জামিন না পাওয়া, দীর্ঘদিন কারাগারে থাকার মতো নানা ঘটনা আছে। বিএনপি নেতা-কর্মীদের দাবি, বিশে^র আর কোনো দেশে বিরোধী দলের বিরুদ্ধে এ রকম অগুণতি মামলা দিয়ে হয়রানি করার নজির নেই।
অন্যদিকে লক্ষ্যযোগ্য যে গাড়িতে আগুন দেয়া বা লোক পুড়িয়ে মারার ঘটনায় খালেদা জিয়াসহ শীর্ষ বিএনপি নেতা যেমন মির্জা ফখরুল, রিজভী আহমেদের মতো লোকদের আসামি করা হলেও র্যাব-পুলিশ-বিডিআর অকুস্থল থেকে আজ পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি। ফলে এটা কোনোভাবেই বলা সমীচীন হয় না যে বিএনপিই গাড়িতে আগুন দেয়া ও মানুষ হত্যার জন্য দায়ী। এক কথায়, এ অভিযোগের হাতেনাতে কোনো প্রমাণ নেই। তা সত্ত্বেও তখন থেকে আজ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ ও তাদের শীর্ষস্তরের নেতা-বুদ্ধিজীবীরা বিএনপিকে এর সাথে সম্পৃক্ত করে চলেছেন। দুর্বল বিএনপির ক্ষীণকন্ঠের প্রতিবাদ তেমন শোনাও যায় না, শোনা গেলেও হালে পানি পায় না। যতটুকু বোঝা যায়, সরকার মামলা-প্রচারণার মধ্য দিয়ে বিএনপি যে একটি সন্ত্রাসী দল তা প্রমাণের ব্যাপক চেষ্টা চালায়। তাতে সম্পূর্ণ সফল হতে না পারলেও দলটির পরিচ্ছন্ন ইমেজে কিছুটা হলেও চিড় ধরাতে পেরেছে।
২০১৬ সালেও বিএনপি এদিনে সমাবেশ করতে পারেনি, করতে দেয়া হয়নি। যথারীতি গুলশান অফিস থেকে খালেদা জিয়া বের হতে পারেননি। এ বছর অর্থাৎ ২০১৭ সালে এসে ৫ জানুয়ারির তৃতীয় বছর পূর্তিতে বিএনপি গণতন্ত্র হত্যা দিবস পালনের কর্মসূচি ঘোষণা করে। এ কর্মসূিচতে ৫ জানুয়ারি কালো পতাকা উত্তোলন ও কালো ব্যাজ ধারণ করবে বিএনপি কর্মীরা। পরে ৭ জানুয়ারি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশের কথা ঘোষণা করা হয়েছে যদিও ৩ জানুয়ারি পর্যন্ত তার অনুমতি মেলেনি। এর বিপরীতে আওয়ামী লীগ ৫ জানুয়ারিতে সারাদেশে গণতন্ত্রের বিজয় দিবস উদযাপন এবং ঢাকায় দু’টি সমাবেশ করবে। দু’ দলের এ পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি পরস্পরের বিপরীত, তবে সাংঘর্ষিক নয়। এ জন্য জনমনে তেমন কোনো উদ্বেগও সৃষ্টি হয়নি।
আরেকবার প্রমাণিত হলো যে দেশে বিএনপি রাজনৈতিকভাবে এখন একেবারেই কোণঠাসা। তাদের সভা-সমাবেশের অনুমতি সিটি কর্পোরেশন-পুলিশের অনুমতি নির্ভর। রাজনৈতিকভাবে কোনো বিষয়ে গণতান্ত্রিক পন্থা মোতাবেক তারা সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি করতে অপারগ, পাশাপাশি তারা ভুলে গেছে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে দেশের বেশিরভাগ মানুষ ভোটাধিকার প্রয়োগের অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়। সে অধিকারের মর্যাদা রক্ষায় তারা কিছু করতে পারেনি। শুধু তাই নয়, তাদের কথিত প্রহসনের নির্বাচনের স্থলে একটি নতুন অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনে সরকারকে বাধ্য করা তো দূরের কথা, অসম্ভব নিষ্ক্রিয়তা ও ব্যর্থতার ভেলায় চেপে তারা সরকারের ইচ্ছানুযায়ী এ সরকারের অধীনেই আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণের দিকে এগিয়ে চলেছে।
য় লেখক : সাংবাদিক
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।