পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
৫০ বছর আগে ১৯৬৬ সালে চীনে একটি বই প্রকাশ করা হয়। পরবর্তীকালে এই বইটি বিশ্বব্যাপী বেস্ট সেলারের মর্যাদা পায়। পশ্চিমা বিশ্বে এই বইটির নাম চেয়ারম্যান মাওয়ের ছোট্ট লাল বই।
চীনের কমিউনিস্ট পার্টির এই অবিসংবাদিত নেতার কিছু রাজনৈতিক পরামর্শ এবং কঠোর কিছু উপদেশের সমাহার এই বইটি সারা বিশ্বে ছাত্রদের বইয়ের শেলফে জায়গা করে নেয়।
১৯৪৯ সালের অক্টোবর মাসে চীনের কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটি গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের শাসনভার পরিচালনা করবে বলে যখন ঘোষণা করেন, তখন মাওয়ের বয়স ৫০ বছরের মাঝামাঝি।
এর ১৫ বছর পর চীনা কমিউনিস্ট পার্টি চেয়ারম্যান মাওয়ের রাজনৈতিক দর্শনের ওপর ছোট্ট একটি বই প্রকাশ করে। বেসরকারিভাবে বইটির নাম ছিল ছোট্ট লাল বই।
কারণ বইটির কভার ছিল সাদামাটা লাল ভাইনাল প্লাস্টিকে মোড়া।
চীনের সংস্কৃতি থেকে শুরু করে রাজনীতি ও যুদ্ধ পরিচালনার কলাকৌশল সম্পর্কে চেয়ারম্যান মাও কী ভাবতেন, তার সবই ছিল এই বইয়ের বিষয়বস্তু।
লাল বইয়ের প্রকাশনায় শুধু চীনা ভাষাতেই যে কত সংখ্যক কপি ছাপা হয়েছিল তা অবাক করার মতো।
এই বইটির ইংরেজি সংস্করণে সম্পাদনা করেছে ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া অ্যাট বার্কেলের অ্যালেক্সান্ডার কুক।
তিনি জানান, এটা মোটামুটি নিশ্চিত হয়েই বলা যায় যে, শুধু চীনা ভাষাতেই এই বইটির ১০০ কোটি কপি ছাপা হয়েছিল। ১৯৬০ সালের মাঝামাঝি বিশ্বের জনসংখ্যা ছিল সাড়ে ৩০০ কোটি। ফলে বইটির ১০০ কোটি কপি ছিল বিশাল এক সংখ্যা। বিশ্ব প্রকাশনার ইতিহাসে কোনো বই এত বেশি কপি আর কখনো ছাপা হয়নি। ভবিষ্যতেও হয়তো হবে না।
তিনি বলেন, লাল বইটির আকার এত ছোট এবং এটা বৃষ্টিরোধী ভাইনাল প্লাস্টিক জ্যাকেট দিয়ে মোড়ার কারণ হলো এটি থাকবে সেনাবাহিনীর সামরিক পোশাকের বুকের পকেটে। কিন্তু সামরিক নির্দেশাবলী, সামরিক কৌশল ইত্যাদির জায়গায় এই বইটি হচ্ছে আদর্শগত বিষয়ে একটি ফিল্ড গাইড। আপনার মনে যদি আদর্শগত বিষয়ে কোনো প্রশ্ন তৈরি হয়, তাহলে বুক পকেট থেকে বইটি বের করুন এবং দেখে নিন এতে কী উপদেশ দেয়া হয়েছে।
চীনে চেয়ারম্যান মাওয়ের লাল বই পড়া ছিল সবার জন্য বাধ্যতামূলক। সামরিক বাহিনী, স্কুল এবং বড় বড় প্রতিষ্ঠানে এটা সবাই পড়তেন।
কিন্তু ১৯৬৬ সাল নাগাদ এই বইটিকে নানা ভাষায় তর্জমা করার এক বিশাল প্রকল্প হাতে নেয়া হয়। লক্ষ্য ছিল আন্তর্জাতিক পাঠকদের কাছে বইটিকে পৌঁছে দেয়া।
চীনের প্রচার বিভাগ বিশাল এক আন্তর্জাতিক প্রকাশনা বিভাগ তৈরি করে। এর লক্ষ্য ছিল চীনা দর্শন, ভাবনা বিশ্বদরবারে তুলে ধরা এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে চীনের স্বার্থ রক্ষা করা।
চীনের অভ্যন্তরে লাল বইটি সবার হাতে পৌঁছানোমাত্রই তারা বিভিন্ন দেশে এই বইটি প্রকাশ করতে শুরু করে। চীনা অনুবাদকরা প্রায় দু’ডজন বিদেশি ভাষায় লাল বইয়ের অনুবাদ করেন।
সম্ভবত ৫০টি ভাষায় এই বইটির সংস্করণ প্রকাশিত হয়।
১৯৬৬ সালের বসন্তে চীনে শুরু হয় তথাকথিত সাংস্কৃতিক বিপ্লব। মাও সে তুং চীনকে একটি বিশুদ্ধ কমিউনিস্ট দেশে পরিণত করার কাজ শুরু করেন।
এই কথিত বিপ্লব মাওকে সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী করে তোলে। বিরোধী পক্ষকে কঠোর হাতে দমন করা হয়।
বিভিন্ন দেশে চীনা দূতাবাস থেকে লাল বইয়ের লক্ষ লক্ষ কপি বিতরণ করা হয়। পশ্চিমা বিশ্বে ছোট্ট লাল বইকে লাল বই হিসেবেই দেখা হতো। কিন্তু অ্যালেক্স কুক বলছেন, ১৯৬০ সালের মাঝামাঝি থেকে যুক্তরাষ্ট্রে এই বইকে দেখা হতো ভিন্নমতের প্রতীক হিসেবে।
তিনি বলেন, বেশিরভাগ প্রতিবাদ ছিল ভিয়েতনাম যুদ্ধকে ঘিরে, কারণ একটা শঙ্কা তৈরি হয়েছিল যে বিশ্বে নতুন এক ধরনের সা¤্রাজ্যবাদ তৈরি হয়েছে।
কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভেতরেই এই বইকে ভিন্ন এক ধরনের সা¤্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে একটা প্রতীক হিসেবে বিবেচনা করা হতো। তিনি জানান, যুক্তরাষ্ট্রের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়Ñকৃষ্ণাঙ্গরা, এশিয়ানরা, ল্যাটিনোরা মনে করতেন তাদের জীবনের কোনো উন্নতি নেই, অগ্রগতি নেই। সেই পটভূমিতে এই লাল বই ছিল প্রতিবাদের প্রতীক, যেমনটি করেছিল আমেরিকার ব্ল্যাক প্যান্থার গোষ্ঠী।
মাও ১৯৭৬ সালে মৃত্যুবরণ করেন। কিন্তু এরপর থেকে ছোট্ট লাল বই ধীরে ধীরে হারিয়ে যেতে শুরু করে।
অ্যালেক্স কুক বলছেন, এখন এই বই শুধু পাওয়া যায় চীনের টুরিস্ট এলাকাগুলোতে। তিনি বলেন, আজকের সম্পূর্ণ ভিন্ন এক চীনে বেশিরভাগ লাল বই আসলে নকল। সূত্র : বিবিসি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।