পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ফয়সাল আমীন : নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, সমৃদ্ধ ইতিহাস-ঐতিহ্য, বৈচিত্র্যপূর্ণ সংস্কৃতি, উৎসব-আনন্দ, অকৃত্রিম জীবনাচার বৃহত্তর সিলেটকে করেছে সমৃদ্ধ। এছাড়া এ জনপদের মানুষ বিশ্বের আধুনিক বিভিন্ন দেশে অবস্থান করে উন্নত জীবনমানের সাথেও পরিচিত ও অভিজ্ঞ।
মানুষ আর প্রাকৃতিক সম্পদের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করতে পারলে অর্থনীতির বিপ্লব ঘটতে পারতো সিলেটসহ সারাদেশে। প্রয়োজন একটি মহাপরিকল্পনা। সরকারের আন্তরিক উদ্যোগেই পারে পর্যটন শিল্পের কাক্সিক্ষত বিকাশ ও প্রকাশ ঘটানো। কিন্তু সেরকম কোনো উদ্যোগ এখন নেওয়া হয়নি বা হচ্ছেও না। দিন দিন দেশ বিমুখ হচ্ছে প্রবাসীরা। একই সাথে প্রকৃতি দানবীয় তা-বে বিগড়ে যাচ্ছে। তাই এখনই সময় প্রাকৃতিক উৎসকে সম্পদে পরিণত করার কার্যকর উদ্যোগ। এর মধ্য দিয়ে দেশের অর্থনীতির অনিবার্য অনন্য এক শক্তি হতে পারতো সিলেটের পর্যটন সম্পদের বিপুলতা। কারণ সিলেটের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে বিভিন্ন সময়ে আগত পরিব্রাজকগণ এর প্রশংসায় হয়েছেন পঞ্চমুখ। বাংলাদেশের পর্যটন আকর্ষণগুলোর দিকে তাকালে দেখা যাবে যে, এদেশে রয়েছে বিশ্বের দীর্ঘতম নিরবচ্ছিন্ন প্রাকৃতিক সমুদ্র সৈকত-কক্সবাজার, পৃথিবীর একক বৃহত্তম জীববৈচিত্র্যে ভরপুর ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল সুন্দরবন, একই সৈকত থেকে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত অবলোকনের স্থান সমুদ্রকন্যা-কুয়াকাটা, আদিবাসীদের বৈচিত্র্যপূর্ণ সংস্কৃতি ও কৃষ্টি আচার অনুষ্ঠান সমৃদ্ধ অতীতের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা উত্তরাঞ্চলের পতœতাত্ত্বিক নির্দশনসমূহ, দু’টি পাতা একটি কুঁড়ির সবুজ রংয়ের নয়নাভিরাম চারণভূমি, হযরত শাহজালাল (রহ.) ও হযরত শাহপরাণ (রহ.)সহ ৩৬০ আউলিয়ার পূণ্যভূমি ও শ্রীচৈতন্যদেবের স্মৃতিবিজড়িত স্থান, সুবৃহৎ ও সুউচ্চ জলপ্রপাতখ্যাত মাধবকু- এবং বাংলাদেশের হাওররাজ্যখ্যাত সিলেট বিভাগ, সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের সম্ভাবনাময়ী আকর্ষণীয় পর্যটন শিল্পে পরিণত হয়ে অনন্য ভূমিকা পালন করে চলেছে। সিলেট বিভাগের উত্তরে ভারতের মেঘালয়, দক্ষিণে ভারতের ত্রিপুরা ও মিজোরাম রাজ্য, পূর্বে ভারতের আসাম রাজ্য এবং পশ্চিমে ঢাকা বিভাগ অবস্থিত। বাংলাদেশের প্রাচীন এই বিভাগে রয়েছে চারটি জেলা, যার সবগুলোই পর্যটনে সমৃদ্ধ। পর্যটন আকর্ষণীয় সিলেট বিভাগের জেলাওয়ারি পর্যটন শিল্পের বর্ণনা নি¤œরূপ-সিলেট জেলার পর্যটনকেন্দ্রসমূহ।
হযরত শাহজালাল (রহ.) ও হযরত শাহপরাণ (রহ.) এর মাজার : সুদূর ইয়েমেন থেকে ধর্ম প্রচারের জন্য এদেশে এসেছিলেন সাধক পুরুষ হযরত শাহজালাল (রহ.)। দীর্ঘদিন সিলেটে বিভিন্ন মানুষের মাঝে ৩৬০ জন আউলিয়াসহ ধর্ম প্রচারের কাজে নিয়োজিত ছিলেন তিনি। প্রতিবছর বিপুলসংখ্যক পর্যটক সিলেটে আসেন তার মাজার জিয়ারতে। হযরত শাহজালাল (রহ.) এর ব্যবহৃত কতগুলো মূল্যবান পবিত্র দ্রব্যও মাজারের সন্নিকটে অতীব যতেœর সঙ্গে সংরক্ষিত আছে আজও।
তামাবিল : তামাবিল সিলেট শহরের প্রায় ৫৫ কিলোমিটার উত্তরে সিলেট-শিলং (ভারত) যাতায়াত পথের প্রান্তসীমায় চমৎকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মধ্যে অবস্থিত। মনোমুগ্ধকর পর্বতের দৃশ্য ছাড়াও তামাবিলের প্রাসীমা থেকে জলপ্রপাত দেখা যায় ক্ষীণভাবে। প্রতিদিন ভারত থেকে অসংখ্য ট্রাক স্থলপথে এই বন্দরে কয়লা নিয়ে আগমনের কারণে বাংলাদেশ বছরে কয়েক কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করে থাকে। এছাড়া এখানকার স্থলপথেও অনেক বিদেশি পর্যটক বাংলাদেশে আগমন করে থাকেন।
জাফলং : যারা সৌন্দর্য পিপাসু তাদের পক্ষে জাফলংয়ের আকর্ষণ এড়ানো কিছুতেই সম্ভব নয়। সিলেটের পর্যটনের অন্যতম প্রধান আকর্ষণ এই জাফলং। জাফলং-এর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে বিমোহিত হয়ে প্রতিবছর অগণিত পর্যটক এখানে ভ্রমণে আসেন। গোয়াইনঘাট উপজেলার খাসিয়া-জৈন্তিয়া পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত জাফলং সত্যিকার অর্থেই নৈসর্গের এক লীলা নিকেতন। সবুজ প্রকৃতির পাশাপাশি জাফলং-এর পাথরের সা¤্রাজ্যও দর্শণার্থীদের বিপুলভাবে মুগ্ধ করে। পিয়াইন এবং সারি নদীকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে পাথরের এ নান্দনিক সা¤্রাজ্য।
ঈদগাহ : সিলেট শহরের দক্ষিণ পূর্ব প্রান্তে একটি ছোট টিলার উপরে সিলেটের শাহী ঈদগাহ অবস্থিত। এটি বাংলাদেশের প্রাচীনতম শাহী ঈদগাহের একটি। দৃষ্টিনন্দন, মনোমুগ্ধকর, কারুকার্যময় এই শাহী ঈদগাহের ঐতিহাসিক গুরুত্ব অনেক। ১৭৮২ খ্রিস্টাব্দে এখানে সৈয়দ মুহাম্মদ হাদী ও সৈয়দ মুহাম্মদ মেহেদী ভ্রাতৃদ্বয়ের নেতৃত্বে ইংরেজবিরোধী অভ্যুত্থান সংঘটিত হয় এবং ইংরেজদের সাথে মুখোমুখি সংঘর্ষে সৈয়দ ভ্রাতৃদ্বয় শহীদ হন। এছাড়া বিভিন্ন সময় এই শাহীঈদগাহ ময়দানে দাঁড়িয়ে বক্তব্য রেখে গেছেন কায়েদে আযম মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ, মহাত্মা গান্ধী, মাওলানা মোহাম্মদ আলী, শহীদ সোহ্রাওয়ার্দী, শেরে বাংলাসহ উপমহাদেশের বিখ্যাত রাজনীতিকরা।
মন্দির ও আখড়া : পর্যটন নগরী সিলেট হিন্দু ধর্মাবলম্বীদেরও অন্যতম তীর্থ ভূমি। শহরের মধ্যেই বেশ কয়েকটি ঐতিহ্যবাহী গুরুত্বপূর্ণ মন্দির রয়েছে। প্রতিবছর শত শত পর্যটক এখানে ভ্রমণে এসে আত্মতৃপ্তি লাভ করেন।
জৈন্তা রাজবাড়ি : একটি সমৃদ্ধ, ঐতিহ্যবাহী জনপদ জৈন্তারাজ্য এক সময় ছিল প্রাচীন নারীরাজ্য। ঐতিহাসিক এবং দর্শনীয় অনেক প্রতœতাত্ত্বিক নির্দশন এখনও টিকে আছে জৈন্তা রাজবাড়িতে। সময়ের পরিক্রমায় রাজবাড়ি এবং ফটক ধ্বংসের প্রায় দ্বারপ্রান্তে উপস্থিত হলেও এখনো ইতিহাস ও ঐতিহ্যপ্রিয় পর্যটকরা ঐতিহাসিক এ স্থানে দুর্দ- সময় কাটাতে পছন্দ করেন। এখানে বর্তমানে দেখার মতো অবশিষ্ট আছে শিবপূজার জন্য নির্মিত মন্দিরের ধ্বংসাবশেষ, রাজ্যের সভ্যগণ যে বিরাট পাথরে বসতেন সেসব পাথর খ- যার নাম মেগালিথ। এছাড়া অক্ষত অবস্থায় আছে বধ্যভূমিও। এখানেই অবাধ্যদের হত্যা করা হতো। জৈন্তা রাজবাড়ি একটি ঐতিহাসিক পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে সিলেটের পর্যটন শিল্পে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে।
ভোলাগঞ্জ পাথর কোয়ারি : ভোলাগঞ্জ পাথর কোয়ারি কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ইসলামপুর ইউনিয়নের উত্তর দিকে অবস্থিত। ভোলাগঞ্জ পাথর কোয়ারিকে ‘বাংলার সোনারখনি’ বলা হয়। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত থেকে বন্যার তোড়ে নদী ও ছড়া দিয়ে প্রচুর পাথর এই কোয়ারিতে জমা হয়, যা সারা বছর উত্তোলন করে থাকেন শ্রমিকরা। ভোলাগঞ্জের এই পাথুরে সা¤্রাজ্য সত্যিই চমৎকার। শুধু পাথর নয়, পাহাড়ের মনোরম সৌন্দর্য আরেক নতুন মাত্রা যোগ করেছে। এখানে আছে থরে থরে সাজানো পাহাড়। আকাশছোঁয়া পাহাড়ের ওপারে ভারতের চেরাপুঞ্জি ও শিলংয়ের অবস্থান। সব মিলিয়ে বলা যায় যে, ভোলাগঞ্জ পাথর কোয়ারি সিলেট বিভাগের পর্যটন শিল্পের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছে।
কানাইঘাটের মুলাগুল পাথর কোয়ারি : কানাইঘাটের মুলাগুল পাথর কোয়ারি সাম্প্রতিক সময়ে সিলেটের একটি সম্ভাবনাময় পর্যটন গন্তব্য হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। সিলেটে যে কয়টি বৃহৎ পাথর কোয়ারি রয়েছে এর মধ্যে একটি হচ্ছে মুলাগুল। এ পর্যটন কেন্দ্রে এখনো সেভাবে পর্যটকদের পদচারণা শুরু হয়নি। কারণ এখানে জাফলং ও ভোলাগঞ্জের মতো সহজ যাতায়াত ব্যবস্থা এখনও তৈরি হয়নি। লোভাছড়া নদীর উপর দিয়ে নৌকায় মুলাগুল ভ্রমণে গেলে অসামান্য এক অভিজ্ঞতা সঞ্চিত হবে। নদীর দু’পাড়ের দৃশ্য এতোই মনোমুগ্ধকর যে, পর্যটকরা বিমোহিত না হয়ে পারেন না। এছাড়াও সিলেটে রয়েছে আরো কতগুলো চিত্তবিনোদনও পর্যটন কেন্দ্র। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ড্রিমল্যান্ড অ্যামিউজমেন্ট পার্ক, অ্যাডভেঞ্চার ওয়ার্ল্ড, জাকারিয়া সিটি, নাজিমগড় রিসোর্ট এবং ওসমানী শিশুপার্ক, যা সিলেটের পর্যটন শিল্পে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছে মৌলভীবাজার জেলার পর্যটনকেন্দ্রসমূহ।
মাধবকুন্ড জলপ্রপাত : মাধবকু- দেশের সর্ববৃহৎ প্রাকৃতিক প্রাণবন্ত ঝর্না। বড়লেখা উপজেলার পাথারিয়া পাহাড়ের পাথুরে গা বেয়ে নেমে এসেছে এ সুন্দরী ঝর্নাধারা। দেশের বৃহত্তম এ জলপ্রপাতের উচ্চতা ১৬২ ফুট। অপরূপ এ ঝর্না দেখার পাশাপাশি দর্শনার্থীরা ঘনসবুজ নিঝুম পাহাড় পাথারিয়া দেখেও মুগ্ধ হন। বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউট : বাংলাদেশের চা-রাজধানী হিসেবে পরিচিত মৌলভীবাজার জেলায় অবস্থিত এদেশের একমাত্র চা-গবেষণা ইনস্টিটিউট। শ্রীমঙ্গল শহর থেকে দুই কিলোমিটার দূরে এটির অবস্থান। এখানে রয়েছে চমৎকার বিভিন্ন ফুলের সমারোহে তৈরি দৃষ্টিনন্দন ফুল বাগান, টি টেস্টিং ল্যাব, ভেষজ উদ্ভিদের বাগান, বিটিআরআই উদ্ভাবিত বিভিন্ন চায়ের প্রজাতি।
মনু ব্যারেজ লেক : মৌলভীবাজারের পর্যটন স্থান হিসেবে বর্তমানে সবচেয়ে আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে মনু নদী প্রকল্পের মনু ব্যারেজ এলাকা। মৌলভীবাজার শহর থেকে পূর্ব দিকে প্রায় দুই কিলোমিটার দূরে অবস্থিত মনু ব্যারেজে প্রতিদিন অনেক পর্যটক ভিড় জমান। মনু ব্যারেজ এলাকার প্রাকৃতিক দৃশ্য সত্যিই চমৎকার। হাকালুকি ও হাইল হাওর : পূর্বে পাথারিয়া পাহাড় এবং পশ্চিমে ভাটেরা পাহাড়ের মধ্যবর্তী স্থানে বিশাল নি¤œাঞ্চল জুড়ে এ হাওরের ভৌগলিক অবস্থান। বর্ষা মৌসুমে এ হাওরকে মনে হয় দিগ বিস্তৃত এক মহাসাগর। চারদিকে অথৈ জলরাশি এমনটা মনে হওয়ার কারণ। এর বিপরীত দৃশ্য চোখে পড়ে শুষ্ক মৌসুমে। এ সময় পুরো হাওরজুড়ে বিস্তৃত থাকে ফসলের মাঠ। অপরদিকে শ্রীমঙ্গল শহরের পশ্চিম প্রান্তে বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে হাইল হাওরের অবস্থান।
সীতেশ বাবুর চিড়িয়াখানা : শ্রীমঙ্গলের অন্যতম পর্যটন আকর্ষণ হচ্ছে সীতেশ বাবুর মিনি চিড়িয়াখানা। শহরের রামকৃষ্ণ মিশন রোডের ‘রূপসপুরে’ অবস্থিত এ চিড়িয়াখানায় প্রতিদিন শত শত দর্শনার্থীদের আগমন ঘটে। এই চিড়িয়াখানায় বিরল প্রজাতির অনেক প্রাণী রয়েছে, যা পর্যটকদের আকৃষ্ট করে। চিড়িয়াখানার উল্লেখযোগ্য পশুপাখিদের মধ্যে রয়েছে সাদা বাঘ, সোনালী বাঘ, লজ্জাবতী বানর, মেছোবাঘ, অজগর, মায়া হরিণ, ভাল্লুুক, সোনালী কচ্ছপ, সজারু, বন্য খরগোসসহ অসংখ্য দেশি-বিদেশি পাখি।
টি রিসোর্ট : শ্রীমঙ্গল-কমলগঞ্জ সড়কের পাশে ভাড়াউড়া চা বাগান সংলগ্ন ২৫ দশমিক ৮৩ একর জায়গার উপর প্রতিষ্ঠিত চা রিসোর্টটি শ্রীমঙ্গলের পর্যটন শিল্পের বিকাশে ব্যাপক ভূমিকা রাখছে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর এই ‘টি রিসোর্ট’ একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ প্রতিষ্ঠান। এখানে আগত পর্যটকদের আবাসনের জন্য রয়েছে সকল প্রকার সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত অত্যাধুনিক রেস্ট হাউস। এছাড়াও রয়েছে দৃষ্টিনন্দন সুইমিংপুল।
হযরত শাহ্ মোস্তফা (রহ.) এর মাজার : মৌলভীবাজার শহরের শাহ্ মোস্তফা সড়কে হযরত শাহজালাল (রহ.)-এর অন্যতম সফরসঙ্গি হযরত শাহ মোস্তফা (রহ.) এর মাজার রয়েছে। মাজারের পুকুরে রয়েছে শতবর্ষী গজার মাছ। এছাড়া মাজারের পাশের বেড়িলেকের পাড়ে রয়েছে হযরত নূর আলী শাহ’র মাজার। এখানে আগত পর্যটকগণ মাজার জিয়ারতের মাধ্যমে নিজেদের তৃপ্ত করেন। এছাড়াও কোনো কোনো পর্যটক বেড়িলেকে নৌকা নিয়ে ঘুরে বেড়িয়ে নিজেদের পরিতৃপ্ত করেন।
নীলকণ্ঠের চা : শ্রীমঙ্গলে ভ্রমণে আসা পর্যটকদের জন্য রয়েছে নীলকণ্ঠের ‘সাত রঙের চা’ পানের সুবর্ণ সুযোগ। চা গবেষণা ইনস্টিটিউট চত্বরের কাছেই অবস্থিত নীলকণ্ঠের চা-এর দোকানটি। চা শ্রমিক রমেশের আবিষ্কৃৃত সাত রঙের চা ইতোমধ্যে দেশ-বিদেশে অগণিত পর্যটককে মুগ্ধ করতে সক্ষম হয়েছে।
লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান ও শ্যামলী পিকনিক স্পট : শ্রীমঙ্গল শহর থেকে ৮ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে রয়েছে হাজার হাজার প্রজাতির বৃক্ষ। প্রকৃতিকে যারা ভালোবাসেন তারা অবশ্যই লাউয়াছড়ার ঘন সবুজ অরণ্যে বার বার চলে আসেন। শুধু বৃক্ষ নয়, লাউয়াছড়া নানান প্রজাতির পশুপাখির অভয়াশ্রমও।
পর্যটনপল্লি কমলগঞ্জ : নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলা নিকেতনের আরেক স্থান মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলা। প্রকৃতির নিপুণ হাতে গড়া, বিভিন্ন জাতি, উপজাতি ও সম্প্রদায়ের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যসমৃদ্ধ বৈচিত্র্যময় পর্যটন পল্লি কমলগঞ্জ।
অসংখ্য হাওর : হাওর জেলা সুনামগঞ্জে রয়েছে ছোট-বড় প্রায় শতাধিক হাওর। এখানকার সর্ববৃহৎ হাওর হলো টাংগুয়ার হাওর। প্রচুর পর্যটকের আগমনের প্রেক্ষিতে এবং পরিবেশ বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষার নিমিত্তে ইউনেস্কো অতিসম্প্রতি টাংগুয়ার হাওরকে ‘পরিবেশ সংকটাপন্ন এলাকা’ হিসেবে ঘোষণা করেছে। এর প্রেক্ষিতে বছরের একটি নির্দিষ্ট সময়ে এই হাওরে মাছধরা এবং হাওরে পরিভ্রমণ করা নিষিদ্ধ। এই হাওরে প্রচুর ফসল উৎপাদিত হয়। দেশ-বিদেশের বহু পর্যটককে এখানে ভ্রমণ করতে দেখা গেছে। এখানে আগত পর্যটকদের অনেককে আবার গবেষণা কার্যে ব্যস্ত থাকতে দেখা যায়।
গৌরারং জমিদার বাড়ি : সুনামগঞ্জের একটি ঐতিহ্যবাহী স্থান হচ্ছে গৌরারং জমিদার বাড়ি। উপজেলা সদরের গৌরারং-এ অবস্থিত এ জমিদার বাড়ির বয়স ৫ শতাধিক বছর। এক সময় গৌরারংয়ের জমিদারি বিশাল ও প্রসিদ্ধ ছিল। বাড়িটির অপূর্ব নির্মাণশৈলী দেখেও তা আন্দাজ করা যায়। সুনামগঞ্জ শহরের সাহেব বাড়িঘাট থেকে নৌকায় টুকেরঘাট এবং সেখান থেকে রিকশায় গৌরারং জমিদার বাড়িতে যাওয়া যায়। নারায়ণতলা : আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত একটি স্থান নারায়ণতলা। সুনামগঞ্জ শহর থেকে ১২ কিলোমিটার দূরের নারায়ণতলার ডলুরায় ৪৮ জন মুক্তিযোদ্ধা শায়িত আছেন। এ গণকবরটি বেশ যতেœর সাথে সংরক্ষণ করা হয়েছে। শুধু ঐতিহাসিক কারণে নয়, নারায়ণতলা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের কারণেও দর্শনার্থীদের আকৃষ্ট করে।
হাসন রাজার বাড়ি ও সমাধিসৌধ : হাসন রাজার দেশ হিসেবে পরিচিত সুনামগঞ্জের সুখ্যাতি দীর্ঘদিনের। সুরমা নদীর তীরেই লক্ষ্মণশ্রীতে রয়েছে এই মরমী সাধকের বাড়ি এবং বাড়ির পাশেই তার সমাধিসৌধ। শুধু সিলেট অঞ্চলে নয় হাসন রাজার গান সারা দেশেই সমাদৃত। মরমী এ কবির বাড়িতে রয়েছে তার কিছু স্মৃতিচিহ্ন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য-হাসন রাজার ছবি, পাদুকা, বংশতালিকা, তলোয়ার, পোশাকাদি প্রভৃতি। যাদুকাটা নদী ও রাজবাড়ি : সুনামগঞ্জ জেলার তাহিরপুর উপজেলার উপর দিয়ে অসাধারণ একটি নদী প্রবাহিত হয়েছে; যার নাম যাদুকাটা। বালু ও পাথর বয়ে আনা এ নদীর এলাকার বিপুলসংখ্যক মানুষের জীবিকা নির্বাহের একমাত্র অবলম্বন। যাদুকাটা নদীতে বারকী নৌকা করে পাথর সংগ্রহের দৃশ্য সত্যিই মনোমুগ্ধকর। এছাড়া নদীর পশ্চিম তীরে বড়দল ইউনিয়নে সুনামগঞ্জের আইফেল টাওয়ার খ্যাত বারেকটিলা। পাশেই হলহলিয়া গ্রামে কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে প্রাচীন লাউড় রাজ্যের ৮০০ বছরের পুরনো রাজবাড়ির ধ্বংসাবশেষ। এগুলো দর্শন করতে প্রতিদিন বহু পর্যটক এখানে আসেন।
সুখাইর জমিদার বাড়ি : সুখাইর জমিদার বাড়িকে এক সময় বলা হতো হাওর রাজ্যের রাজমহল। ধরমপাশা উপজেলার অবস্থিত পাশোয়া বিলকে সামনে রেখে নির্মিত এ বাড়ি দূর থেকে দেখলে মনে হয় ভাসমান কোনো নগরী। সুখাইর জমিদার বাড়িটি বর্তমানে তার জৌলুস হারিয়ে ধ্বংসের ক্ষণ গুণছে। জমিদার বাড়ির গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস ও ঐতিহ্যে আকৃষ্ট হয়ে প্রতিদিন এখানে বহু পর্যটক আসেন। এছাড়াও সুনামগঞ্জ জেলায় আরো একাধিক সম্ভাবনাময় পর্যটন কেন্দ্র রয়েছে। সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- ছাতকের জর্জ ইংলিশ টিলা, সিমেন্ট ফ্যাক্টরি, জগন্নাথপুরের বাসুদেব মন্দির, রাধারমণ দত্তের সমাধি, দোয়ারাবাজারের দোহালিয়া জমিদার বাড়ি, টেংরাটিলা গ্যাস ফিল্ড প্রভৃতি হবিগঞ্জ জেলার পর্যটন কেন্দ্রসমূহ।
শংকরপাশা শাহী মসজিদ : সাড়ে ৬০০ বছরের পুরাতন ঐতিহ্যবাহী উচাইল শংকরপাশা শাহী মসজিদ একটি নান্দনিক শিল্প নির্দশন। বাংলার সুলতান আলাউদ্দিন হোসেন শাহ্ এটি নির্মাণ করেন। নয়নাভিরাম এ মসজিদটি হবিগঞ্জ জেলা সদরের রাজিউড়া ইউনিয়নের অন্তর্গত উচাইলের শংকরপাশায় অবস্থিত। তেলিয়াপাড়া স্মৃতিসৌধ ও বাংলো : বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে মাধবপুরের তেলিয়াপাড়া চা বাগান এবং বড় বাংলো একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এ স্থান দুইটি পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে স্বমহিমায় উদ্ভাসিত। ঐতিহাসিক তেলিয়াপাড়া চা বাগানের বাংলোতে বসে মুক্তিযুদ্ধের মূল পরিকল্পনা হয়েছিল এবং পরে এখানে বসেই মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ও সেনা সদস্যরা গুরুত্বপূর্ণ অনেক সিদ্ধান্ত নেন।
বানিয়াচংয়ের রাজবাড়ি : বানিয়াচংয়ের একটি দর্শনীয় স্থান হচ্ছে হাবিব খাঁ কর্তৃক নির্মিত রাজবাড়ি। দৃষ্টিনন্দন রাজবাড়ির সেই জৌলুস এখন না থাকলেও এর ধ্বংসাবশেষ প্রমাণ করে একদিন এখানে মাথা তুলে দাঁড়িয়েছিল এক বিশাল রাজবাড়ি। রাজপ্রাসাদের পাশেই আছে কয়েকটি মসৃণ পাথরের স্তম্ভ। রাজবাড়িটি সাম্প্রতিক সময়ে হবিগঞ্জ জেলার সবচেয়ে আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। বানিয়াচং-এর প্রধান আকর্ষণ হচ্ছে ‘সাগরদীঘি’। আয়তনে বিশাল বলেই এ দীঘির স্বচ্ছন্দে সাগর শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে। প্রায় দুই কিলোমিটার দৈর্ঘ্য ও প্রায় এক কিলোমিটার প্রস্থের এই সাগরখ্যাত দীঘি দেখার জন্য প্রতিদিন এখানে পর্যটকদের সমাগম ঘটে। পর্যটনের ক্ষেত্রে অপার সম্ভাবনাময় সিলেট। এখানে যেমন রয়েছে হযরত শাহজালাল (রহ.) ও হযরত শাহপরাণ (রহ.)সহ ৩৬০ আউলিয়ার মাজার শরিফ, অসংখ্য চা-বাগান, প্রাকৃতিক উদ্যান, ইকোপার্ক তেমনি রয়েছে প্রচুর হাওর। এছাড়াও রয়েছে ইতিহাস ও ঐতিহ্যনির্ভর বহু আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্র। সব মিলিয়ে বলা যায় যে, সিলেট বিভাগে পর্যটন শিল্পের উন্নয়নের ক্ষেত্রে যে সকল সুযোগ-সুবিধা রয়েছে; যদি সেগুলোকে পরিকল্পিতভাবে কাজে লাগানো যায় তা হলে আগামীদিনে সিলেট বিভাগই হবে বাংলাদেশের সবচেয়ে আকর্ষণীয়, দৃষ্টিনন্দন ও উৎকর্ষময়ী পর্যটন কেন্দ্র, যা বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে সক্ষম হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।