মটর সাইকেল: নিউ নরমাল পরিস্থিতিতে (নতুন বাস্তবতায়)
মটরসাইকেল নিরাপদ, অধিক সুবিধাজনক, খরচ এবং সময় বাঁচায়। গণপরিবহনে একে অন্যের গা ঘেঁষে চলাচলে প্রতিদিন
আবু মালিহা : মানুষ খাওয়ার জন্য বাঁচে না, বেঁচে থাকার জন্য খায়। সামাজিক এ আপ্ত বাক্যটি আমরা অনেক সময়ই শুনে থাকি। বাস্তবিক অর্থেই আমরা বেঁচে থাকার জন্যই খাই এবং খাওয়া-দাওয়ার জন্যই মানুষ সুস্থতার সাথে বেঁচে থাকতে পারে।
তবে সে খাদ্যে যদি ভেজাল থাকে, তা অবশ্যই মানুষের সুস্থতার বদলে অসুস্থতা নিয়ে আসে। ফলশ্রুতিতে তার মৃত্যু ঘটারও সম্ভাবনা থাকে। অতএব আমরা কেউই চাই না খাদ্য খাবারে কোন ধরনের ভেজালমিশ্রিত কোন অপখাদ্যের উপকরণ থাকুক এবং সে খাবার খেয়ে মানুষের সুস্থতার বদলে অপুষ্টিতে অথবা অসুস্থতাজনিত মৃত্যু পীড়ার কারণ ঘটুক। সুস্থ জাতির জন্য নির্ভেজাল এবং সুস্থ খাবার প্রয়োজন। কিন্তু আমাদের দেশে খাদ্য খাবারের মধ্যে ভেজালের পরিমাণ এতো বেশি যে সুস্থ খাবার বা পুষ্টিকর খাবার বলতে কী বুঝায় সেটা সম্ভবত বুঝে উঠার যোগ্যতাও হারিয়ে ফেলছি।
প্রসঙ্গত, খাদ্যে ভেজাল মিশ্রণ সংক্রান্ত আজকের লেখা দেশের কোন সেক্টরে দুর্নীতি বা ভেজাল নেই সেটাই এখন ভাবনার বিষয়। ভেজাল মিশ্রণে বা দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরবও নাকি বিশে^ আমাদের অনেক নাম ডাক আছে। তাই দুর্নীতি বা ভেজাল কোনটিতে নেই, না বলে কোনটি ভেজালহীন একথা বলাই সমীচীন!
সাবেক প্রেসিডেন্ট হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ দুর্নীতির বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণা দিয়ে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা জোর করে দখল করে নিয়েছিলেন। পরবর্তীতে দুর্নীতি বা ভেজাল প্রক্রিয়াজাতকরণে রাষ্ট্রকে গভীর অন্ধকারে নিয়ে গিয়েছিলেন! যাই হোক, এরপরও কোন সুখকর পরিবেশ জাতির সামনে আসেনি। ভেজালে ভেজালে দেশ এগিয়ে চলেছে। বিশেষ করে খাদ্যে ভেজাল দূরীকরণে কোন পদক্ষেপ তো নেই-ই, প্রকারান্তরে ভেজাল প্রমাণে প্রোটেকশনে ফরমালিন কাভারেজ দেয়া হয়েছে। যাতে মানুষ টাটকা খাদ্য ভ্রমে নিশ্চিন্তে নিয়ে যেতে পারে। বাস্তব কথা হলো যে, জাতির প্রশাসনের শীর্ষ পদ থেকে অধস্তন সকল ক্ষেত্রে ভেজালের সমাহার সেখানে সুস্থতা বা ভেজালমুক্ত পরিবেশ কামনা করা বাতুলতা মাত্র। বস্তুত খাদ্যে ভেজালের কারণেই মানুষের রোগাক্রান্ত হওয়ার জন্য সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টি হয়। মানুষ যখন সুস্থ থাকবে না, তখন তার কর্মস্পৃহা লোপ পেতে থাকে। ফলে জাতির উন্নতি, অগ্রগতি ও সমৃদ্ধির পথে বাধা সৃষ্টি করে। অতএব কর্মঠ এবং সুস্থ জাতি পেতে হলে সুস্থ-সবল মানুষ প্রয়োজন।
প্রসঙ্গত, আমাদের দেশের প্রতিটি খাদ্য উপকরণের মধ্যে ভেজাল মারাত্মকভাবে বিস্তার লাভ করে আছে। তবে তা প্রকৃতগতভাবে নয়, মনুষ্য সৃষ্ট। দুর্নীতি প্রতিটি বিভাগেই গ্রাস করে আছে। ভেজাল মিশ্রিত খাদ্যদ্রব্য জনগণের মধ্যে বিতরণ করে জনগণের পুষ্টি বৃদ্ধিতে রোধ এবং বিভিন্ন রোগের সংক্রমণ এবং প্রভাব সৃষ্টিতে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল বিভাগ যথেষ্ট ভূমিকা রাখছে বলেই জনগণ ধারণা করছে এবং দুর্নীতি পরায়ন কর্মকর্তাদের দৌরাত্ম্যে এ সমস্ত ভেজাল খাদ্যদ্রব্য বিতরণের মাত্রাকে বাড়িয়ে দিচ্ছে দুষ্ট প্রকৃতির ক্ষমতালোভী সরকারের মদদপুষ্ট এক শ্রেণির পুঁজিপতি ব্যবসায়ীগণ। যাদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যই হচ্ছে অর্থবিত্তের পাহাড় গড়ে তোলা। ক্রমান্বয়ে তাদেরই যোগসাজসে ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট তৈরির মাধ্যমে বাজার ব্যবস্থাপনায় অস্থিতিশীল করা সহ নানান ধরনের অসুস্থ বাজার সৃষ্টিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করছে। এতে করে পুষ্টিকর এবং সুস্থ খাদ্য খাবার বিতরণের কোন সম্ভাবনাই আর দেখা যাচ্ছে না। বাণিজ্যের মাধ্যমে বিদেশ থেকে খাদ্যদ্রব্য ক্রয়েও দেখা যাচ্ছে নিম্নমানের পোকাক্রান্ত গম, চাল সহ ভোজ্য সকল প্রকার খাদ্য আমদানিতেও ভেজাল খাদ্য ক্রয়ে সরকারের ঊর্ধ্বতন মহল জড়িত থাকছে।
অতএব, দেশের মানুষের ভেজালমুক্ত খাদ্য সরবরাহ করতে হলে প্রথমেই দুর্নীতিমুক্ত মানুষকে সরকারের বিভিন্ন বিভাগে বসাতে হবে। বিশেষ করে খাদ্য মন্ত্রণালয় বিভাগে আমরা আজও খাদ্য নিরাপত্তা পাইনি। সুস্থ জাতি গঠনে সর্বাগ্রে যা প্রয়োজন তা হচ্ছে খাদ্য নিরাপত্তা। এ ব্যাপারে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নিজস্ব তত্ত্বাবধানে যদি এ মন্ত্রণালয়ের সঠিক খোঁজ খবর না নেন, তবে খাদ্য নিরাপত্তার অভাব থেকেই যাবে এবং পুষ্টিহীনতায় দেশের মানুষ স্বাস্থ্য নিরাপত্তার ঝুঁকিতে থাকবে। যা দেশের জন্য হবে দুর্ভাগ্যজনক। নতুবা সেই গল্পের মতই দেশের নাজুক পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে গল্পটি হলো, “এক সরকারি কর্মকর্তা দীর্ঘদিন যাবৎ তার স্থানীয় মার্কেটের একজন বিশ^স্ত দোকানদারের কাছ থেকে নিয়মিত বিভিন্ন খাদ্যদ্রব্য কিনে নেন। দোকানদারও বিশ^স্ততার সাথে বিভিন্ন দ্রব্য বিক্রয় করেন। অন্যান্য দ্রব্যের মতো বনস্পতি ডালডাও ক্রয় করেন ভদ্রলোক। একদিন বিক্রেতা বলল, স্যার আপনার জন্য আজ ভালো ডালডা নিয়ে এসেছি, যাবার পথে নিয়ে যাবেন। ভদ্রলোক বিশ^স্ততার সাথে ফিরতি পথে ডালডা কিনে নিয়ে গেলেন। এরি মধ্যে প্রায় সপ্তাহ দিনের মতো আর তার দোকানে যাওয়া-আসা করেননি। দোকানদার বিচলিত হয়ে পড়ল। বিষয় কি তিনি তো প্রতিদিনই একবার হলেও দোকানে আসেন। অথচ আজ এক সপ্তাহ হয়ে গেলো আর যে এলেন না। এমনি চিন্তা ভাবনার মধ্যে ভদ্রলোক হঠাৎ দোকানে এসে ঢুকলেন। একটু বিরক্ত ভাব নিয়ে বললেন, তোমাকে তো বিশ^াস করতাম জিনিসপত্র কিনে নিয়ে যেতাম ভাল মনে করে। কিন্তু এতো বাজে ডালডা আমাকে কেন দিলে, যা খেয়ে আমি এবং আমার পরিবার অসুস্থ হয়ে পড়লাম। তুমি বিশ^াস ভঙ্গ করেছ। আমাকে ২ নম্বর ডালডা দিয়েছ। কাজটা ভালো করোনি। দোকানদার মিনতি করে বলল, একী বলেন স্যার, আমি তো আপনাকে ১ নম্বর ডালডা দিয়েছি। এতোদিন যা খেয়েছেন বরং তাই ছিল ২ নম্বর। আসলে ব্যাপার কী স্যার! আমরা ২ নম্বর জিনিস খেয়ে খেয়ে শরীরকে মানিয়ে ফেলেছি, তাই এখন ভালো জিনিস আর শরীরে সয় না; আমি দুঃখিত। আপনি পুরনোটাই আবার নিবেন”। যাই হোক গল্পচ্ছলে আমাদের দেশের খাদ্যদ্রব্যের ভেজাল সংস্কৃতির চিত্র ফুটে উঠল।
আসুন, জাতির মেধা বিকাশে ভেজালমুক্ত খাদ্য খাবার সরবরাহ, বিতরণ ও বিপণনের ব্যবস্থা করি এবং সুস্থ জাতি গঠনে খাদ্যদ্রব্যে ভেজালমুক্তকরণে সকলের এগিয়ে আসা উচিত। পরিশেষে বলতে চাই- খাদ্যদ্রব্যে ভেজাল মিশ্রিতকারীরা দেশ, জাতি ও মানবতার শত্রু।
ষ লেখক : সাংবাদিক ও সহ-সভাপতি, সিলেট লেখক ফোরাম
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।