Inqilab Logo

শুক্রবার ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১, ০৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

রাজস্ব আদায় বাড়ছে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে

| প্রকাশের সময় : ৩ জানুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

রফিকুল ইসলাম সেলিম : চলতি অর্থ বছরের প্রথম ছয় মাসে ১৭ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করেছে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস। যা গত অর্থ বছরের এসময়ের চেয়ে ২ হাজার ৮শ’ কোটি  টাকা বেশি। অথ্যাৎ এ অর্থ বছরে গত বছরের তুলনায় রাজস্ব আদায় ২০ শতাংশ বেড়েছে।
রাজস্ব আদায়ের এই ধারাকে ইতিবাচক উল্লেখ করে কাস্টম হাউসের কর্মকর্তারা বলছেন, এ ধারা অব্যাহত থাকলে অর্থ বছর শেষে ৩৯ হাজার ৬২২ কোটি টাকার বিশাল লক্ষ্যমাত্রা অর্জন কঠিন হবে না।
দেশের প্রধান সমুদ্র বন্দর ভিত্তিক সিংহভাগ রাজস্ব আদায়কারি প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস। চট্টগ্রাম বন্দরের মাধমে দেশের নৌ-বাণিজ্যের প্রায় ৯৮ শতাংশ কন্টেইনার এবং ৯২ শতাংশ পণ্য হ্যান্ডলিং হয়। তাই চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের রাজস্ব আদায়ে রের্কড প্রবৃদ্ধি দেশের সার্বিক আমদানি-রফতানি বাণিজ্যের ইতিবাচক ধারার ইঙ্গিত বহন করে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে চলতি অর্থ বছরে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা ৩৯ হাজার ৬২২ কোটি টাকা। গত ২৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৬ মাসে রাজস্ব আদায় হয়েছে ১৬ হাজার ৯৬০ কোটি টাকা। ওই দিন পর্যন্ত রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৭ হাজার ৯৬০ কোটি টাকা। তবে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১০ হাজার ৪০ কোটি টাকা কম আদায় হয়েছে।
গেল অর্থ বছরের ওই সময়ে রাজস্ব আদায় হয়েছিল ১৪ হাজার ৯১ কোটি টাকা। এবার গত বছরের চেয়ে ২ হাজার ৮২৮ কোটি টাকা বেশি রাজস্ব আদায় হয়েছে। রাজস্ব আদায়ে প্রবৃদ্ধি ২০ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে। গতবছর প্রবৃদ্ধির হার ছিল ১৩ শতাংশ।
চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের অতিরিক্ত কমিশনার শওকত আলী সাদি বলেন, রাজস্ব আদায়ে ২০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হওয়া বড় ঘটনা। রাজস্ব আদায় অতীতের সকল রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। এতে আমরা আশাবাদি রাজস্ব আদায় আরও বাড়বে। তিনি বলেন, অতীতে কখনো এতো বেশি রাজস্ব আদায় হয়নি।
রাজস্ব আদায় বাড়লেও এখনো লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে হাজার কোটি টাকা ঘাটতি থাকার বিষয়টি স্বীকার করে তিনি বলেন, অর্থ বছরের শেষ দিকে রাজস্ব আদায় বাড়ে। সামনের দিনগুলোতে রাজস্ব আদায় আরও বাড়বে। লক্ষ্যমাত্রা শেষ পর্যন্ত অর্জিত হবে কিনা সে বিষয়ে কোন মন্তব্য করবো না, তবে আমরা আশাবাদি লক্ষ্যে পৌঁছানো কঠিন হবে না।
গত অর্থ বছরে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩৩ হাজার ১২১ কোটি টাকা। তবে অর্থ বছরের শেষদিকে এসে রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা কিছুটা কমিয়ে আনা হয়। সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে সক্ষম হয় চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস। রাজস্ব আদায় হয় ৩১ হাজার ২৯৯ কোটি টাকা। চলতি ২০১৬-১৭ অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৯ হাজার ৬২২ কোটি টাকা।
কাস্টম হাউসের কর্মকর্তারা বলছেন, আমদানি-রফতানি ব্যাপকহারে বাড়লেও রাজস্ব আদায় সেহারে বাড়েনি। এর প্রধান কারণ হচ্ছে বিশ্ববাজারে জ্বালানী তেলসহ বেশিরভাগ পণ্যের দরপতন হয়েছে। বিশ্ববাজারে পণ্যের দাম কমে যাওয়ায় রাজস্ব আদায়ে এর প্রভাব পড়েছে। এ কারণে আমদানি বাড়লেও সেহারে রাজস্ব আদায় বাড়েনি।
সাম্প্রতিককালে শুল্ক ফাঁকি দেয়ার প্রবণতাও বাড়ছে। শুল্ক ফাঁকি দিয়ে আনা বেশ কয়েকটি চালান আটক করেছে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর। যে পরিমাণ চালান আটক হয়েছে তার কয়েকগুণ নিরাপদে চলে গেছে। নানা কৌশলে শুল্ক ফাঁকি দেয়ার কারণে রাজস্ব আদায় কম হচ্ছে বলেও মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
তবে কাস্টম হাউসের কর্মকর্তারা বলছেন, অর্থ বছরের শুরু থেকে শুল্ক ফাঁকি রোধে নানা উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। গোয়েন্দা তৎপরতা বাড়ানো হয়েছে। রিস্ক ম্যানেজমেন্ট প্রয়োগ করতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে শুল্ক ফাঁকির চেষ্টা হতে পারে এমন এইচএস কোড ভুক্ত পণ্যের তালিকা তৈরি করে আমদানিকৃত পণ্য নিবিড়ভাবে মনিটরিং করা হচ্ছে। এ কারণে শুল্ক ফাঁকি দেয়ার চেষ্টাকালে অনেক চালান ধরাও পড়ছে।
মামলার কারণে আটকে আছে মোটা অংকের রাজস্ব আদায়। কাস্টম হাউসের কর্মকর্তারা জানান, শুল্ক আদায় করতে আপিল কমিশনারেট, আপিলাত ট্রাইব্যুনাল ও হাইকোর্ট বিভাগে দায়েরকৃত মামলাসমূহ নিষ্পত্তির জন্য উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। দীর্ঘকাল পড়ে থাকা ব্যাংক গ্যারান্টি, ইনডেমনিটি বন্ড, ডেফার্ড পেমেন্ট, দাবিনামা এবং ২০২ ধারা জারীযোগ্য বকেয়া তালিকা ও উক্ত বকেয়া আদায়ের জন্য ২০২ ধারা জারিসহ সার্টিফিকেট মামলা দায়েরসহ আইনানুগ সকল কার্যক্রম জোরদার করায় রাজস্ব আদায়ে গতি এসেছে বলে জানান কাস্টম হাউসের কর্মকর্তারা।
ব্যবসা-বাণিজ্য সংশ্লিষ্টদের মতে, দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা নেই। এ কারণে আমদানি-রফতানি স্বাভাবিক রয়েছে। এর ফলে রাজস্ব আদায়েও গতি এসেছে। এ ধারা অব্যাহত থাকলে সামনের দিনগুলোতে রাজস্ব আদায়ের হার আরও বাড়বে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: কাস্টম হাউসে
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ